রাতে কোন খাবার শরীরের জন্য ভালো ভাত নাকি রুটি বিস্তারিত জানুন
কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙ্গালী। ভাত না হলে যেন আমাদের চলেইনা। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ তিন বেলায় ভাত খেয়ে থাকেন। তবে অনেকে সকালে এবং রাতে রুটি খেতে পছন্দ করেন। আমরা কি জানি রাতে কোন খাবার শরীরের জন্য উপকারি ?
বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে আলোকপাত করবো- রাতের খাবার নির্বাচন নিয়ে। এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা কি বলেছেন তা তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। তো বন্ধুরা এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
সূচিপত্রঃ রাতে ভাত নাকি রুটি, কোনটি শরীরের জন্য ভালো।
রাতে ভাত নাকি রুটি কোনটি শরীরের জন্য ভালো
ভাত ও রুটির মধ্যে পার্থক্য
ভাত খাওয়া ভালো নাকি রুটি খাওয়া ভালো
ওজন কমাতে ভাত নাকি রুটি
১০০ গ্রাম ভাতে প্রোটিন ও শর্ককরার পরিমান কত
রুটি কি শর্করা জাতীয় খাদ্য
লেখকের মন্তব্যঃ
রাতে ভাত নাকি রুটি কোনটি শরীরের জন্য ভালো
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতের খাবার সবসময় হালকা হওয়া উচিত। ওজন কমানোর জন্য ভাত না রুটি -কোনটি উপকারী তা জানানো হয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাত ও রুটির মধ্যে পুষ্টিগুণে খুব একটা পার্থক্য নেই। দুটি শস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
দুটির একমাত্র পার্থক্য হলো সোডিয়ামের পরিমাণ। চালে খুব সামান্য পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। যে পরিমাণ চালে ১২০ গ্রাম সোডিয়াম পাওয়া যায়, ঠিক একই পরিমাণ গমে ১৯০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে। ভাত আর রুটি দুটিই শর্করা। সব শর্করাই খাওয়ার পর পরিপাকতন্ত্রে গিয়ে ভেঙে যায়, তারপর রক্তে গ্লুকোজ বা মনোস্যাকারাইড হিসেবে শোষিত হয়।
সেই গ্লুকোজ হলো আমাদের মূল চালিকা শক্তি। শরীরের প্রায় প্রতিটি শারীরবৃত্তীয় কাজে দরকার হয় এ গ্লুকোজ। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্লুকোজ বা শর্করা দেহে সঞ্চিত হয় চর্বি বা ফ্যাট হিসেবে। ডায়েটেশিয়ান লাভলিন কৌরের মতে, ভাত ও রুটি- দুটিরই স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। কৌর জানান, ভাত বা রুটি দুটিই দিনে খাওয়া যায়।
তবে ওজন কমানোর জন্য রাতে খেলে অবশ্যই রাত ৮ টার মধ্যে খাবার খেয়ে নিতে হবে। তিনি আরও জানান, বেশি রাতে শর্করাসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে পেট ফোলাভাব হতে পারে। সেক্ষেত্রে শরীর পুষ্টি শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। রুটির গুণাগুণ বিবেচনা করলে এটি ফাইবার সমৃদ্ধ। এছাড়াও এটি আপনাকে দীর্ঘক্ষণ তৃপ্ত রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও রুটির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম রয়েছে। এটি ভাতের মতো দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না। অন্যদিকে ভাতে রুটির তুলনায় কম পরিমাণে ডায়াটরি ফাইবার, প্রোটিন ও ফ্যাট থাকে। যদি রুটি খান, তাহলে ময়দার রুটি একদমই খাবেন না। দুটি রুটির সঙ্গে এক বাটি সবজির তরকারি অবশ্যই রাখবেন।
সেক্ষেত্রে এমন সবজি বেছে নেবেন যাতে শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং যাতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকবে। রাতে যদি ভাত খাওয়ার পরিকল্পনা করেন তাহলে হালকা পরিমানে ভাত খাবেন। ভাতের সঙ্গে ডাল ও এক বাটি সবজির তরকারি খেলেই যথেষ্ট। সেক্ষেত্রে ব্রাউন রাইস বেছে নেওয়াই ভাল।
ভাত ও রুটির মধ্যে পার্থক্য
সাধারণত রুটির পরিবর্তে ভাতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকে । ফলে ভাত খেলে তাড়াতাড়ি পেট ভরে যায়। এছাড়াও, বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে রুটির তুলনায় ভাত অনেক দ্রুত হজম হয় । বলা হয় রুটি খেলে দীর্ঘ সময় খিদে লাগে না । অনেকক্ষণ পেট ভরে থাকে। তবে ভাত খাওয়া খারাপ বা ক্ষতিকর একথা বলা যাবেনা। দুটোর মধ্যেই উপকারিতা রয়েছে।
ভাত খাওয়া ভালো নাকি রুটি খাওয়া ভালো
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাতের তুলনায় রুটিতে কম ক্যালোরি রয়েছে । সুতরাং, যারা কম ক্যালোরি গ্রহণ করতে চান তাদের জন্য রুটি একটি ভালো বিকল্প । বিশেষজ্ঞরা বলেন, "ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাতের চেয়ে রুটি বেশি উপকারী । গমের আটা দিয়ে তৈরি রুটি কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ । এজন্য তাদের ক্ষেত্রে ভাতের পরিবর্তে রুটিই বেশি উপকারি।
ওজন কমাতে ভাত নাকি রুটি
শরীরে শর্করার চাহিদা পূরণ করতে তাঁদের পরিমিত পরিমাণ ভাত খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা। ভাতের গ্লিসেমিক ইনডেক্স রুটির চেয়ে বেশি। অর্থাৎ ভাত খাওয়ার পর বিদ্যমান চিনি হজম হয়ে যতক্ষণে রক্তের সঙ্গে মিশবে, রুটির ক্ষেত্রে তা আরও কিছুক্ষণ দেরিতে ঘটবে। তাই যাঁদের গ্লুটেনে কোনো সমস্যা নেই, ওজন কমাতে তাঁরা রুটি খেতে পারেন।
ওজন কমাতে হলে, ডায়াবেটিস কমাতে হলে ভাতের বদলে রুটি খান। ডাক্তার ও পুষ্টিবিদেরা হরদম এ পরামর্শ দেন, সাধারণ মানুষও আজকাল তা ভালোই জানেন ও মানেন। আর সে জন্যই বিগত দশকগুলোতে বাঙালির পাতে ভাতের বদলে রুটির দেখা মিলছে একাধিক বেলায়। তবে শুধু অসুখের কারণে রুটি খাবেন, এমনটি না করে সারাজীবনের জন্য রাতে রুটি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
১০০ গ্রাম ভাতে প্রোটিন ও শর্ককরার পরিমান কত
১০০ গ্রাম সাদা ভাতে ক্যালরির পরিমাণ প্রায় ১২০ এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ প্রায় ২৫ গ্রাম। প্রতিদিন কায়িক শ্রম, ব্যায়ামের মাধ্যমে এই ক্যালরি খরচ করে ফেলতে পারলে সমস্যা নেই। শর্করা থাকে ০০.০৫ গ্রাম, প্রোটিন বা আমিষ থাকে ০২.৬৯ গ্রাম। যা মানব দেহের জন্য অত্যান্ত কার্যকরি।
রুটি কি শর্করা জাতীয় খাদ্য
রুটি আর ভাত দুটিই শর্করা জাতীয় খাবার। সব শর্করাই খাওয়ার পর পরিপাকতন্ত্রে গিয়ে ভেঙে যায়, তারপর রক্তে গ্লুকোজ বা মনোস্যাকারাইড হিসেবে শোষিত হয়। সেই গ্লুকোজ হলো আমাদের মূল চালিকা শক্তি। বেশির ভাগ খাদ্যে কম-বেশি খাদ্য উপাদান থাকে। শর্করা বিভিন্ন রুপে বিভিন্ন খাদ্যে থাকে। যেমন- চাল, গম, ভূট্টা, আলু, ওলকপি, কচু, বীট, গাজর ইত্যাদিতে।
লেখকের মন্তব্যঃ
রাতের বেলায় খুব বেশি খাবার খাওয়া উচিত নয়। এটা রুটিই হোক কিংবা ভাত। যা খাবেন অল্প পরিমানে খাবেন। তবে সবজি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। সম্ভব হলে রাতে রুটি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। বাজারের ময়দা না খেয়ে গম কিনে আটা তৈরি করে রুটি বানিয়ে খাবেন এতে বেশি উপকার পাবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url