রোজা রেখে স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম কি - স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙ্গে যায় ?
রমজান মাসের রোজ প্রাপ্ত বয়স্কো মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ। অনেকেই আছেন যাদের প্রায়ই স্বপ্নদোষ হয়। এই রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে গোসল করার নিয়ম কি বা রোজা রেখে স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙ্গে যায় কি না তা কি আপনারা জানেন ?
বন্ধুরা আজ আপনাদের জানাবো- রমজান মাসের বা অন্য যে কোন রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কিভাবে গোসল করতে হবে এবং রোজা রেখে স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙ্গে যায় কি না সে সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ
রোজা রেখে স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম
স্বপ্নদোষ কাকে বলে
স্বপ্নদোষ হলে কি গোসল ফরজ হয়
স্বপ্নদোষ হলে কি কি কাজ করা যাবেনা
সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে করণীয় কি
রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙ্গে যায়
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি
রোজা রেখে বেশিক্ষণ গোসল করলে কি রোজার কোন ক্ষতি হয়
রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলালে কি রোজা ভেঙ্গে যায়
লেখকের মন্তব্যঃ
রোজা রেখে স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম
রোজা রাখা অবস্থায় যদি স্বপ্নদোষ হয়ে যায় তবে ভয়ের কিছু নেই। রোজার কোন ক্ষতি হবেনা। তবে হ্যাঁ গোসল ফরজ হয়ে যাবে তার উপর। আর এই ফরজ গোসলের নিয়ম একই। তবে শুধু কুলি করার সময় গড় গড়া করা যাবেনা। কেননা গড় গড়া করার সময় পেটের ভেতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
তবে সাহরি খাওয়ার আগেই যদি ফরজ গোসল করার সময় থাকে তবে সেই সময় অবশ্যয় গড় গড়া সহ কুলি করতে হবে। রমজান মাসের রাতে ঘুমিয়ে আছেন, হঠাৎ জেগে দেখলে যে গোসল করতে গেলে সাহরি খেতে পারবেন না, তখন আগে সাহরি খাবেন এবং পরে গোসল করবেন।
স্বপ্নদোষ কাকে বলে
মানব সন্তান বিশেষত ছেলেরা, বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছালে তাদের বীর্যথলিতে বীর্য এবং অন্ডকোষে শুক্রাণু তৈরি হয়। সময়ের সাথে সাথে বীর্য ক্রমাগত বীর্যথলিতে জমা হতে থাকে। বীর্যথলির ধারণক্ষমতা পূর্ণ হওয়ার পর নিদ্রারত অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপথে বীর্যপাত ঘটে দেহে বীর্যের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রিত হয়, একেই স্বপ্নদোষ বলা হয়।
বিশেষ করে স্বপ্নের মাধ্যমে যৌনউত্তেজনামুলক কিছু দেখলে বা করলে বীর্যপাত হয়। আর তাকেই বলে স্বপ্নদোষ। যদিও তা দূষনীয় নয়, যদি তা বেশী আকারে না হয়। দোষের হয় তখনি, যখন মাসে ৪ থেকে ৫ বারের অধিক হতে থাকে। খুব বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তা না হলে শরীর দূর্বল হয়ে পড়বে।
স্বপ্নদোষ হলে কি গোসল ফরজ হয়
হ্যাঁ অবশ্যয়। স্বপ্নদোষ হলে গোসল ফরজ হয়ে যায়। স্ত্রী সহবাস করলে যেমন গোসল ফরজ হয়, তেমনি স্বপ্নদোষ হলেও গোসল ফরজ হয়। প্রপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীদের মাঝে মাঝে স্বপ্নদোষ হওয়া বা স্বপ্নে যৌন কর্মকাণ্ড করতে দেখা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাগমোচন ও বীর্যপাত হওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে কোন গুনাহ নেই।
কারণ ঘুমন্ত অবস্থায় যা ঘটে তার উপর কোন মানুষের নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। স্বপ্নে যৌন কর্মকাণ্ড করতে দেখলে ঘুম থেকে ওঠার পর যদি বীর্যপাত হয়, শরীর বা পোশাকে সিক্ততা বা নাপাকির দাগ দেখা যায়, তাহলে গোসল ফরজ হয়। স্বপ্নে যৌন কর্মকাণ্ড করতে দেখা সত্ত্বেও যদি বীর্যপাত না হয়, শরীর বা কাপড়ে সিক্ততা বা নাপাকির চিহ্ন না দেখা যায়, তাহলে গোসল ফরজ হয় না।
স্বপ্নদোষ হলে কি কি কাজ করা যাবেনা
নারীপুরুষ যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন তাদের মধ্যে স্বপ্নদোষের প্রবণতা দেখা যায় এই স্বপ্নদোষ করার স্বপ্নদোষ হলে কি কি করতে পারবেন আর কি কি করতে পারবেন না এ সম্পর্কিত সাধারণ কিছু তথ্য তুলে ধরতে চেষ্টা করবো যা সকলের জানা জরুরি। কারণ যে কেউ এই সমস্যাতে পড়তে পারেন যে কোন সময়।
এক্ষেত্রে শুধু নাভির নিচ থেকে পা পর্যন্ত ধুয়ে ফেলে, প্যান্ট বা কাপড় পরিবর্তন করলেই পাক হবেনা। বরং যেমন ভাবে সহবাসের পর ওযু করে গোসল করতে হয় সেভাবে গোসল করতে হবে। এক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি সমস্যা মনে হলে গরম পানি ব্যবহার করা যাবে।
স্বপ্নদোষ হলে কোরআন স্পর্শ করা যাবেনা। তবে নাপাকি ধুয়ে ফেলে ওযু করে সংসারের অন্য সব কাজ করতে পারবেন। সমাজে অনেক কুসংস্কার রয়েছে যে- গোসল ফরজ হলে গোসল না করে কোন কাজ করা যাবে না। তবে সম্ভোব হলে যত তাড়াতাড়ি গোসল করে নিবেন।
সেহরি খাওয়ার পর স্বপ্নদোষ হলে করণীয় কি
সেহেরী খেয়ে ঘুমানোর পর স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভেঙে যায় না, রোজার কোনই ক্ষতি হয় না। আর, গোসল ফরয হলে গোসল করে সাহরি খাওয়া উত্তম, তবে সময় যদি কম থাকে তবে সাহরি খেয়ে নিয়ে পরে গোসল করলেও কোন সমস্যা নাই। অনেকের মধ্যে ভূল ধারনা আছে এই স্বপ্নদোষ নিয়ে।
রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙ্গে যায়
রোজা থাকা অবস্থায় দুপুরে ঘুমানো নিষেধ নয়। এমনকি ঘুমের ভেতরে স্বপ্নদোষ হলে স্বপ্নদোষের কারণেও রোজা ভাঙে না। তবে স্বপ্নদোষের কারণে গোসল ফরজ হয়। কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন, রোজা অবস্থায় যদি স্বপ্নদোষ হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে তাদের এ ধারণা সঠিক নয়। আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে নবী কারিম (সাঃ) বলেন, ‘তিনটি জিনিস রোজা ভঙ্গের কারণ নয়- বমি, শিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ।
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি
এ প্রসঙ্গে ইসলামি চিন্তাবিদ শায়খ আহমাদুল্লাহ এক পশ্নের জবাবে বলেন, রোজার প্রথম শর্ত হলো, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোনো কিছু পান ও আহার না করা এবং এ সময় সব ধরনের শারীরিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ। তবে স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হয় না। রোজা ভঙ্গের কারণগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
১. ইচ্ছা করে বমি করা
২. বমির বেশির ভাগ মুখে আসার পর তা গিলে ফেলা
৩. মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব
৪. ইসলাম ত্যাগ করলে
৫. গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন দিলে
৬. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ঔষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে
৭. রোজাদারকে জোর করে কেউ কিছু খাওয়ালে
৮. ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে
৯. মুখ ভরে বমি করলে
১০. ভুলবশত কোনো কিছু খেয়ে, রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছা করে আরও কিছু খেলে
১১. বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেললে
১২. কান বা নাক দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে
১৩. জিহ্বা দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলা পরিমাণ কোনো কিছু বের করে খেয়ে ফেললে
১৪. অল্প বমি মুখে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেললে
১৫. রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজুতে কুলি বা নাকে পানি দেয়ার সময় ভেতরে পানি চলে গেলে।
রোজা রেখে বেশিক্ষণ গোসল করলে কি রোজার কোন ক্ষতি হয়
রোজাদারের জন্য গোসল করা বৈধ। গোসল রোজার উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। ইবনে কুদামা 'আল-মুগনি' (৩/১৮) গ্রন্থে বলেন- রোজাদারের জন্য গোসল করতে কোন অসুবিধা নেই। অল্প সময় হোক বা বেশি সময় হোক। দিনের মধ্যে যদি কয়েক বার গোসল করে করে তবুও রোজার কোন ক্ষতি হবেনা।
রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলালে কি রোজা ভেঙ্গে যায়
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন না, যে সীমা লঙ্ঘনকারী, মিথ্যাবাদী'। রোজা রেখে মিথ্যা কথা বললে রোজার গুণাগুণ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। রোজা এবং মিথ্যা কথা বলা দুটোই এক সাথে থাকতে পারেনা। এমন রোজা আল্লাহর দরবারে কোন প্রয়োজন নাই। তবে কোন কারণে মিথ্যা বলে ফেললে ইস্তেগফার পাঠ করবেন।
লেখকের মন্তব্যঃ
রোজা হচ্ছে আল্লাহর অন্যতম বিধান। বিশেষ করে রমজান মাসের রোজা। তবে রোজা ফরজ হোক বা নফল রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে যে রোজার কোন ক্ষতি হয় না নিশ্চয় এতক্ষণে জেনে গেছেন। তবে রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা এবং গিবত করা থেকে অবশ্যয় বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক ভাবে রোজা পালনের তৈফিক দান করুন। আমিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url