সকালে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা - সুস্থ থাকতে প্রতিদিন কয়টি ডিম খাওয়া উচিত
ডিম একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। যা খেলে মানব শরীরে শক্তি যোগায়। ডিম আমরা সবায় খেতে ভালোবাসি এবং প্রায়ই খেয়ে থাকি। কিন্তু সকালে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কি আমরা জানি ?
বন্ধুরা আজ আপনাদের জানাবো- সকালে সিদ্ধ ডিম খেলে কি কি উপকার পাবেন। কিভাবে ডিম খেলে বেশি উপকার পাবেন। সুস্থ থাকতে চাইলে প্রতিদিন কয়টি করে ডিম খাওয়া উচিত ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন আজকের আলোচনা থেকে।
সূচিপত্রঃ সকালে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা।
ডিমের পুষ্টিগুণ
সকালে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সিদ্ধ ডিম কখন খাওয়া উচিত
কিভাবে ডিম খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়
হাফ বয়েল ডিমের উপকারিতা
রাতে সিদ্ধ ডিম খেলে কি হয়
প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা
রাতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
লেখকের মন্তব্যঃ
ডিমের পুষ্টিগুণ
একটি ডিমে যে কি কি উপাদান আছে তা শুনলে আপনি নিজেই অবাক হবেন। একটি ডিমে আছে অনেকগুলো উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। একটি ডিমে এনার্জি আছে ১৪৩ ক্যালোরির মত, কার্বোহাইড্রেট আছে ০.৭২ গ্রাম, ফ্যাট আছে ৯.৫১ গ্রাম, প্রোটিন আছে ১২.৫৬ গ্রাম। ফসফরাস আছে ১৯৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৩৮ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক আছে ১.২৯ মিলিগ্রাম। এছাড়াও ভিটামিন এ,ডি,ই,বি ১২, আয়রন, কোলিন, কোলেস্টেরল ইত্যাদি থাকে।
ডিমের সাদা অংশটুকু উচ্চ মানের জৈব আমিষ, আর কুসুমে স্নেহ পদার্থ, লৌহ ও ভিটামিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থাকে। সব বয়সের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিম অত্যন্ত কার্যকর। শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় গড়নে ও মেধার বিকাশে ডিম খুবই কার্যকর। কেননা ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
সকালে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সকালে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা- সিদ্ধ ডিম শরীরের জন্য উপকারী তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা যায় সকাল ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খেলে শরীরের অন্দরে এক বিশাল পরিবর্তন আসে। তবে অনেকে বলে খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খাওয়া ভালো না। চলুন তাহলে দেখে নেই সেই পরিবর্তন গুলো কি কি।
চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়ঃ- সকাল বেলা খালি পেটে ডিম খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। ডিমে রয়েছে লুয়েটিন এবং জিয়াক্সেনথিন নামে দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আলট্রাভায়োলেট রশ্মির থেকে চোখকে রক্ষা করে। সেই সঙ্গে রেটিনার কর্মক্ষমতা বাড়ায়। ফলে ছানি সহ একাধিক চোখের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পেতে শুরু করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়ঃ- খালি পেটে ডিম খেলে রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ডিমে উপস্থিত সেলেনিয়াম দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটা শক্তিশালী করে তোলে যে, কোনও ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
দেহে অ্যামাইনো অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়ঃ- খালি পেটে ডিম খেলে দেহের অ্যামাইনো অ্যাসিডের ঘাটতি দূর হয়। ডিমে অ্যামাইনো অ্যাসিডের পরিমান প্রচুর, যদি খালি পেটে ডিম খাওয়া হয় তাহলে এই অ্যামাইনো অ্যাসিড ভালো ভাবে কাজ করতে পারে।
শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দূর করেঃ- খালি পেটে ডিম খেলে শরীরের প্রোটিনের ঘাটতি দূর হয়। ডিমে উপস্থিত অ্যালবুমিন নামে এক ধরনের প্রোটিন পেশির গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চুল পড়া কমে যায়ঃ- খালি পেটে ডিম খেলে চুল পড়া কমে কারণ অনেক সময় প্রোটিনের অভাবে চুল পরে যায়। ডিম শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দূর করে চুল পড়া রোধ করে।
ওজন কমে যায়ঃ- খালি পেটে ডিম খেলে শরীরের ওজন কমে। ফলে স্থূলতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কারণ সকালে ডিম খেলে ক্ষিদে মরে যায় ফলে অন্য কিছু খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না।
মস্তিস্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়ঃ- খালি পেটে ডিম খেলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ডিমে উপস্থিত বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদান মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে একদিকে যেমন বুদ্ধির বিকাশ ঘটে, তেমনি স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগও বৃদ্ধি পায়।
হাড় শক্ত হয়ঃ- ডিমে ভিটামিন -ডি পরিপূর্ণ থাকে ফলে খালি পেটে ডিম খেলে শরীরের হাড় শক্ত হয়। ডিম মানুষের শরীরের জন্য বেশ কার্যকরী।
তাই নিয়মিত সকলেরই উচিত কমবেশি ডিম খাওয়া। তবে নিয়ম মাফিক ভাবে, কারন ডিমে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন থাকায় এটি একসাথে বেশি খাওয়াও শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই নিয়মিত ডিম খেলে ১/২ ডিম খাবেন। তবে এক সঙ্গে না খেয়ে সকালে একটা বিকালে একটা ডিম খাবেন।
অপকারিতা
প্রতিটা খাবারের যেমন ভাল কিছু দিক আছে তেমনি তার খারাপ দিকও আছে। ডিমের ক্ষেত্রেও ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে। অতি মাত্রায় ডিম খেলে আপনার ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত ডিম খেলে ওজন বেড়ে যায়। ডিম বেশি খেলে শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও ডিমের কুসুম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
উচ্চ কোলেস্টেরলঃ- যদিও ডিমগুলি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেশিরভাগ লোকের জন্য কোলেস্টেরলের মাত্রার উপর তাদের প্রভাবের বিষয়ে মুক্ত করা হয়েছে, তবুও তারা খাদ্যতালিকায় কোলেস্টেরল তুলনামূলকভাবে বেশি। পারিবারিক হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়ার মতো নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসা অবস্থার ব্যক্তিদের তাদের ডিম খাওয়া সীমিত করতে হতে পারে।
অ্যালার্জিঃ ডিমের অ্যালার্জি তুলনামূলকভাবে সাধারণ, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। ডিমের প্রতি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে এবং এতে আমবাত, হজমের সমস্যা এবং অ্যানাফিল্যাক্সিসের মতো উপসর্গ থাকতে পারে।
স্যাচুরেটেড ফ্যাটঃ ডিমে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি না থাকলেও সেগুলি যেভাবে তৈরি করা হয় তাতে অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট যোগ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মাখন বা তেলে ডিম ভাজলে খাবারের স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেড়ে যায়।
সিদ্ধ ডিম কখন খাওয়া উচিত
কলকাতার পুষ্টিবিদ মীনাক্ষী মজুমদার বলছেন, খালি পেটে ডিম খাওয়ার অভ্যাস তখনই স্বাস্থ্যকর হবে যখন ডিমকে অন্যভাবে না খেয়ে সিদ্ধ করে খাওয়া হবে। তাই পুষ্টিবিদ মীনাক্ষী সিদ্ধ ডিমের চপ, সালাদ কিংবা কোরমা সকালের নাশতায় রাখার পরামর্শ দেন। কারণ ডিমের এমন পদই দ্রুত ও ভালো কাজ করে শরীরে।
সকালে ডিম খাওয়ার বিষয়ে মত বেশিরভাগ পুষ্টিবিদের। কারণ সকালের খাবারটা ভারী হলেও খুব একটা সমস্যা হয় না। সকালের নাস্তায় ডিম খেলে তার সবটুকু পুষ্টি শরীর কাজে লাগাতে পারে। তবে দুপুরের পর ডিম না খাওয়াই ভালো। এতে এই গরমে শরীর আরও গরম হয়ে যেতে পারে। রাতের দিকে শরীরে খুব বেশি শক্তির দরকার পড়ে না তাই রাতেও ডিম বাদ দেওয়া যেতে পারে।
কিভাবে ডিম খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়
ডিম আপনি যেভাবেই খাবেন উপকার পাবেন। সেদ্ধ, অমলেট/ ভাজি, পোচ। ডিম খাওয়ার আরো অনেক নিয়ম আছে যেগুলোতে ডিম ব্যবহার করে খাবার তৈরি হয়। ডিম থেকে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ পেতে হলে সেদ্ধ ডিমই খান। তবে কোন সময় কাঁচা ডিম খেতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
হাফ বয়েল ডিমের উপকারিতা
অনেকের ধারণা, হাফ-বয়েল ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যকর, কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। উলটে হাফ-বয়েল ডিম খাওয়া ক্ষতিকারক। অর্ধসিদ্ধ ডিমে সালমোনেল্লা নামক একটি ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা পেটের অসুখ-বমি-ডায়ারিয়ার মতো একাধিক সমস্যার কারণ হতে পারে। সালমোনেল্লা ঘটিত ইনফেকশন ভয়ানক আকার নিতে পারে।
রাতে সিদ্ধ ডিম খেলে কি হয়
ডিম সব সমতেই পুষ্টিকর। দিনই কি, আর রাতই কি ? তবে পুষ্টিবিদদের মতে রাতে খাওয়ার পর অনেক ক্ষন ঘুমানোর কারণে অনাহারে থাকতে হয় বেশ কিছু সময়, তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে সিদ্ধ ডিম খাওয়াটা বেশ উপকারি এবং এই ব্যাপারে জোর দিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। যেহেতু প্রোটিন বেশি দরকার হয় দিনে, সেহেতু সকালে ডিম খাওয়াটাই বেশি উপকারি রাতের থেকে।
প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ডিম খেলে শরীরে একাধিক পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়। তবে অতিরিক্ত ডিম খাওয়া উচিত নয়। স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা না থাকলে একটি বা দুটি ডিম দৈনিক খাওয়া যেতেই পারে। ডিম ভিটামিন এ, ডি, এবং বি১২ এর একটি বড় উৎস। একটি ডিম সকালের নাস্তা বা রাতের খাবারের জন্য স্বাস্থ্যকর বিকল্প।
রাতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
ডিম এমন একটি খাবার যে আপনি যেভাবেই খাবেন, যখনই খাবেন উপকার পাবেন। শুধু যে সকালে ডিম খেতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই বা কথা নেই। রাতেও ডিম খাওয়া যায়। রাতে ডিম খেলে যে সমস্ত উপকার পাবেন তার মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ-
- মন শান্ত করেঃ ডিমে প্রচুর ট্রিপটোফেন থাকে, যা মানসিক চাপ কমাতে ভূমিকা রাখে।
- ভালো ঘুমের জন্যঃ ডিম মেলাটোনিনের বড় উৎস। রাতে ডিম খেলে ভালো ঘুম হয়।
- শরীরে ভালো কোলেস্টেরল জমা হয়ঃ ডিম হাড় এবং মস্তিষ্কের কোষগুলোর কার্যকারিতা উন্নত করে।
- পাকস্থলীর গতি বাড়ায়ঃ রাতে ডিম খাওয়া ওজন কমাতে দুভাবে কাজ করে। যার ফলে পাকস্থলীর গতি বাড়ায়।
লেখকের মন্তব্যঃ
ডিমের সাদা অংশ এবং কুসুম দুটোই হচ্ছে প্রোটিন ও ভিটামিনে ভরপুর। সব বয়সের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিম অত্যন্ত কার্যকর। শিশুর দৈহিক বিকাশ থেকে শুরু করে, হাড় গঠন ও মেধা বিকাশেও ডিম অত্যন্ত কার্যকর। শুধু শিশুদের জন্যই নয়, যুবক, বয়স্কো সকলের জন্য সকালে একটি করে সিদ্ধ ডিম খাওয়া উচিত। ভালো থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url