রোজা রাখা অবস্থায় মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড হলে করণীয় সম্পর্কে জানুন
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার মনোনিত ধর্ম ও জীবন বিধান হচ্ছে ইসলাম। ইসলামের ৫ টি স্তম্ভ। এর মধ্যে অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে রোজা। রমজান মাসের রোজা বালেগ প্রতিটি নারী-পুরুষের উপর ফরজ করা হয়েছে। সে রোজা রাখা অবস্থায় মেয়েদের মাসিক হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে কি জানেন ?
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো- রোজা রাখা অবস্থায় যদি কোন মেয়ের মাসিক বা পিরিয়ড হয়ে যায় তাহলে কি করতে হবে। একেবারে বিকেল বেলায় মাসিক দেখা দিলে কি রোজা হয়ে যাবে, জানুন বিস্তারিত আজকের আলোচনায়।
সূচিপত্রঃ রোজা অবস্থায় মেয়েদের মাসিক হলে করণীয় সম্পর্কে।
রোজা অবস্থায় মাসিক হলে করণীয় কি
মেয়েদের রোজা বঙ্গের কারণ
অনিয়মিত মাসিক হলে রোজা হবে কি
মাসিকের কাযা রোজা রাখার বিধান কি
মাসিকের সময় মেয়েরা কোন কোন আমল করতে পারবে
লেখকের মন্তব্যঃ
রোজা অবস্থায় মাসিক হলে করণীয় কি
বছরে ১২টি মাসের মধ্যে একটি মাস খুব ফজিলত ও বরকতপূর্ণ সেটা হচ্ছে রমজান মাস। এই মাসে মুসলিমরা পুরো মাস রোজা রাখার পাশাপাশি বেশি বেশি অন্যান্য এবাদত করার চেষ্টা করে থাকেন। মুসলিম পুরুষরা পুরো মাস রোজা রাখার সুযোগ পেলেও বেশির ভাগ মেয়েরা সেই সুযোগ পায় না। তবে এজন্য তারা রোজাকে কাযা করবে।
পবিত্র রমজান মাসে যদি কোনো নারীর পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব শুরু হয় তবে সেই নারী রোজা রাখতে পারবে না। তবে কাযা রোজাগুলো পরবর্তী সময়ে পালন করতে হবে। পিরিয়ডের রক্ত থাকাকালীন নারী আপন অবস্থায় থাকে। সুস্থ হলে গোসল করে নামাজ আদায় করে রোজা রাখা শুরু করতে পারবেন।
সূর্যাস্তে আগ মূহুর্তে রিপিয়ড হলেঃ- রোজা পালনকারী নারীর যদি সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগেও পিরিয়ড দেখা দেয়, তা হলে তার ঐ দিনের রোজা বাতিল হয়ে যাবে। পরে রোজাটি কাযা আদায় করতে হবে। তবে নামাজের কাযা আদায় করা লাগবে না।
নফল রোজা রাখার বিধানঃ- নফল রোজা হলে এর কাযাও হবে নফল। যদি রমজানে দিনের মধ্যভাগে পিরিয়ড থেকে পবিত্র হওয়া যায়, তবে দিনের শুরুতে রোজা পালনের প্রতিবন্ধকতা থাকায় ঐ দিনের রোজা পালন করা না হবে তবে পরের দিনের রোজা পালন করতে হবে।
সুবহে সাদিকের আগে পবিত্রতা অর্জন হলে করণীয়ঃ- যদি রমজানের রাতে সুবহে সাদিক হওয়ার সামান্য আগে যদি কোন নারী পিরিয়ড থেকে পবিত্রতা অর্জন করে তবে তার উপর রোজা রাখা ফরজ। কারণ তিনি রোজা পালনে সক্ষমদের অন্তর্ভুক্ত। তার রোজা পালনে এখন আর কোন অন্তরায় না থাকায় রোজা পালন তার জন্য ওয়াজিব। তবে তিনি পবিত্র হওয়ার জন্য পরে গোসল করলেও চলবে।
পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোজাঃ- আধুনিক যুগে ঔষুধ খেয়ে পিরিয়ড সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা যায়। কোনো নারী যদি ঔষুধ খেয়ে রোজা রাখতে চান, তা হলে তার রোজা হয়ে যাবে। তবে প্রাকৃতিক নিয়মে ব্যত্যয় ঘটানো অনেক সময় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। তাই আল্লাহর স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী চলা এবং ঔষুধ গ্রহণ না করাই শ্রেয়।
প্রসব-পরবর্তী সময়ে রোজার বিধানঃ- নিফাস তথা সন্তান প্রসবকারী নারীর বিধান পূর্বোক্ত হায়েজ বা মাসিকগ্রস্ত নারীর বিধানের মতোই। তিনিও পবিত্র হওয়া পর্যন্ত রোজা করবেন না। তবে নিফাসের মেয়াদ হচ্ছে ৪০ দিন।
স্তনদানকারী বা অন্তঃসত্ত্বা নারীর রোজাঃ- যে স্তনদানকারী কিংবা অন্তঃসত্ত্বা নারী রোজার কারণে নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করেন, তিনি রোজা ছেড়ে দিতে পারবেন। আনাস বিন মালেক আল কাবি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ মুসাফিরদের সালাত অর্ধেক করেছেন। আর গর্ভবতী, স্তনদানকারিণী ও মুসাফির থেকে রোজা শিথিল করেছেন।’ (আবু দাউদ ঃ ২৪০৮)।
বাদপড়া রোজার কাযাঃ- হায়েজ ও নিফাসের কারণে যে কয়দিন রোজা বাদ পড়বে, সে দিনগুলোর কাযা আদায় করা ওয়াজিব। কারণ আল্লাহ তায়ালা রোজা সম্পর্কিত দীর্ঘ আলোচনায় রমজানে সঙ্গত কারণে বাদপড়া রোজা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তবে অন্য দিনে এগুলো গণনা (কাযা) করে নেবে।’ (সুরা আল বাকারাঃ ১৮৪)।
মেয়েদের রোজা বঙ্গের কারণ
এমন কিছু কাজ আছে যেগুলো করলে রোজা ভেঙে যায়। এগুলো নারী-পুরুষ সবার জন্য প্রযোজ্য। যেমনঃ ইচ্ছা করে বমি করা, বমির বেশির ভাগ মুখে আসার পর তা গিলে ফেলা, ইসলাম ত্যাগ করলে, কান বা নাক দিয়ে ঔষুধ প্রবেশ করালে, রোজাদারকে জোর করে কেউ কিছু খাওয়ালে। এমন আরও অনেক কারণ রয়েছে, যেগুলোর ফলে রোজা ভেঙে যায়।
তবে পুরুষের চেয়ে মেয়েদের আলাদা কিছু রোজা ভাঙ্গার কারণ রয়েছে। যার ফলে রোজা ভেঙ্গে যায় যেমন- হায়েজ ও নিফাসের কারণে নারীদের রোজা ভেঙে যায়। নবী করিম (সাঃ) বলেন, ‘যখন নারীদের হায়েজ হয়, তখন কি তারা নামাজ ও রোজা ত্যাগ করে না!?’ সহিহ বুখারি (৩০৪)
তাই কোনো নারীর হায়েজ কিংবা নিফাস শুরু হলে তার রোজা ভেঙে যাবে। এমনকি সেটা সূর্যাস্তের সামান্য কিছু সময় আগে হলেও। আর কোনো নারী যদি অনুভব করেন যে, তার হায়েজ শুরু হতে যাচ্ছে, কিন্তু সূর্যাস্তের আগপর্যন্ত রক্ত বের হয়নি, তাহলে তার রোজা শুদ্ধ হবে। সেদিনের রোজা তাকে কাযা করতে হবে না।
আর হায়েজ ও নিফাসগ্রস্ত নারীর রক্ত যদি রাত থাকতে বন্ধ হয়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি রোজার নিয়ত করেন, তাহলে গোসল করার আগেই রোজা ফজর হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত হচ্ছে তার রোজা শুদ্ধ হবে। এক্ষেত্রে তিনি পরে গোসল করে নিবেন পবিত্রতা অর্জনের জন্য।
অনিয়মিত মাসিক হলে রোজা হবে কি
অনিয়মিত পিরিয়ড রোজা রাখার নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে , এবং কিছু মহিলা তাদের পিরিয়ড স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি দেখতে পেতে পারেন। এটি একটি চিহ্ন হতে পারে যে আপনার শরীর খুব বেশি চাপের মধ্যে রয়েছে, তাই আপনার উপবাসের উইন্ডোটি কমিয়ে দিন এবং আপনি যে খাবারগুলি খাচ্ছেন সেগুলিতেও মনোযোগ দিন।
মাসিকের কাযা রোজা রাখার বিধান কি
রোজা পালনকারী নারীর যদি সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগেও পিরিয়ড দেখা দেয়, তা হলে তার ওই দিনের রোজা বাতিল হয়ে যাবে। পরে রোজাটি কাযা করতে হবে। যদি রমজানের রাতে সুবহে সাদিক হওয়ার সামান্য আগেও কোনো নারী পিরিয়ড থেকে পবিত্র হন, তবে তার ওপর রোজা রাখা ফরজ। কারণ তিনি রোজা পালনে সক্ষমদের অন্তর্ভুক্ত।
মাসিকের কারণে কাযা রোজা বছরের যে কোন সময় রাখা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পরের বছরের রমজানের রোজা চলে না আসে। আবার রমজানের পরে যে ৬টি নফল রোজা রাখা হয় সেটা আগে পালন করার পরও কাযা আদায় করা যাবে। অনেকে বলে থাকেন যে কাযা না আদায় করে নফল রোজা রাখা যাবে না, এই কথা ঠিক নয়।
মাসিকের সময় মেয়েরা কোন কোন আমল করতে পারবে
মাসিক চলাকালে সব ধরনের নামাজ আদায় ও রোজা রাখা নিষিদ্ধ। পরে এই সময়ের ফরজ নামাজগুলোর কাযা করতে হয় না। তবে ফরজ রোজা ছুটে গেলে পরে আদায় করে নিতে হয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমরা নবী (সাঃ)-এর সময়ে ঋতুমতী হলে নামাজের কাযা আদায় করতাম না।’ (মুসলিম: ৩৩৫)
পবিত্র কোরআন স্পর্শ না করে এবং পুরো আয়াত তিলাওয়াত করা যাবে তাতে কোনো সমস্যা নেই। এ ছাড়া পবিত্র কোরআনের যেসব আয়াত দোয়া হিসেবে পাঠ করা হয়, সেগুলো কেবল দোয়া হিসেবে পাঠ করলেও কোনো সমস্যা নেই। নারী যদি কোরআনের শিক্ষক হন, তবে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর সময় পুরো আয়াত একসঙ্গে তিলাওয়াত করে পড়াতে কোনো সমস্যা নেই।
পিরিয়ডের সময় সব ধরনের দোয়া ও তাসবিহ পাঠ করা যাবে। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সাঃ) সব সময় আল্লাহর স্মরণ করতেন। (মুসলিমঃ ৭১২) কারণ দোয়া বা তাসবিহ পাঠের জন্য পবিত্রতা অর্জন জরুরি নয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিনঃ ৬০)
সুতরাং এই সময়ে নারীরা কালিমা তাইয়েবা, কালিমা শাহাদাত, কালিমা তাওহিদ, দুরুদ শরিফ, ইস্তিগফার, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাসসহ সব ধরনের দোয়া ও জিকির করতে পারবেন। এ ছাড়া আজানের জবাব দিতেও কোনো সমস্যা নেই। (ফাতাওয়া হিন্দিয়াঃ ১/ ৩৮)
লেখকের মন্তব্যঃ
পিরিয়ডের সময় রোজা ও নামাজ আদায় নিসিদ্ধ। তবে নামাজ ও রোজার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। নামাজ পরোপুরি মাফ হয়ে যায়, কখনো কাযা আদায় করতে হয় না। কিন্তু রোজা পরবর্তীতে কাযা আদায় করতে হয়। এই সময় তাসবিহ, তাহলিল, দুরুদ শরিফ ও দোয়া ইস্তেগফার বেশি বেশি পড়বে। ভালো হওয়ার সাথে সাথেই তার উপর নামাজ ও রোজা ফরজ হয়ে যাবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url