ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
আমাদের সমাজে ডায়াবেটিস খুব পরিচিত একটি সমস্যার নাম। ডায়াবেটিস নাই এমন পরিবার খুজে পাওয়া খুব দুস্কর। আপনি কি এই সমস্যায় পড়েছেন ? বা এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় খুজছেন ?
তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আজ আপনাদের জানাবো যে ডায়াবেটিস কি কারণে হয় এবং ডায়াবেটিস হয়ে গেছে এর মোকাবেলা করে ভালো থাকার উপায় সম্পর্কে। ডায়াবেটিস থেকে প্রতিকারের বিভিন্ন দিক আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো।
ভূমিকাঃ
ডায়াবেটিস বলতে আমরা সবাই বুঝি। কিন্তু বহুমূত্ররোগ বললে অনেকেই বুঝতে পারবেনা বাঙালি হওয়া সত্বেও। আমাদের সমাজে একটি প্রচলন আছে যে ডায়াবেটিস হলে তার সব কিছু শেষ হয়ে গেল। আসলে তা নয়। ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ হলেও সঠিক চিকিৎসা এবং জীবন যাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রেখে ভালো থাকা যায়।
সূচিপত্রঃ
ডায়াবেটিস কি ?
ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়
বেশি মিষ্টি খেলে কি ডায়াবেটিস হয়
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয়
ডায়াবেটিস হলে কি খাবেন আর কি খাবেন না
লেখকের মন্তব্যঃ
ডায়াবেটিস কি ?
ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যাতে শরীর রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজ আমাদের শরীরের প্রধান জ্বালানি। ইনসুলিন নামক একটি হরমোন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিসে ইনসুলিনের উৎপাদন কম হয় বা শরীর ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। এই ইনসুলি উৎপাদন কমে যাওয়া বা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারাটায় ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ
বিভিন্ন কারণে আমাদের ডায়াবেটি হয়ে থাকে। তার মধ্যে যেগুলো উল্লেখ যোগ্য সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ-
টাইপ ১ ডায়াবেটিসঃ
ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, টাইপ ১ ডায়াবেটিসে, ইমিউন সিস্টেম ইনসুলিন তৈরির জন্য দায়ী অগ্ন্যাশয়ের কোষগুলিকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে। এই কারণে আপনার শরীরে খুব কম ইনসুলিন রয়েছে। চিনি কোষে স্থানান্তরিত না হয়ে রক্তে গঠন করে। জিনগত প্রবণতা এবং পরিবেশগত কারণগুলি টাইপ ১ ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসঃ
এই ধরণের ডায়াবেটিসে কোষগুলি ইনসুলিনের ক্রিয়া প্রতিরোধের বিকাশ ঘটায়। অগ্ন্যাশয় এই প্রতিরোধ প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না। চিনির শক্তির জন্য কোষে স্থানান্তরিত না হয়ে রক্তে গড়া থাকে। পরিবেশগত এবং জিনগত কারণগুলির কারণে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হয়। বেশি ওজনের লোকেরা এই ধরণের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসযুক্ত প্রত্যেকেরই ওজনযুক্ত নয়।
আগেকার দিনে সাধারণত ডায়াবেটিস কে বড় লোকদের রোগ বলা হতো। তবে বর্তমানে সব ধরণের লোকের যে কোন বয়সে এই রোগ হচ্ছে। যারা পরিশ্রম কম করে, যাদের ওজন অনেক বেশি এবং যারা ব্যায়াম করেনা, হাটাহাটি করেনা, একেবারে পরিশ্রম করেনা শুধু বসে বসে অনেক খায় তাদের ডায়াবেটিস বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
আপনি কখন ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাবেন। কিভাবে বুঝবেন যে আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা। যখনই নিচের উপসর্গগুলো আপনার মধ্যে দেখবেন তখনই আপনি ডাক্তারের কাছে গিয়ে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাবেন। আসুন জেনে নেয়া যাক লক্ষণ ও উপসর্গগুলোঃ-
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
- পানি পিপাসা বেশি বেশি লাগবে
- শরীরে ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হবে
- বেশি বেশি ক্ষুধা পাবে
- স্বাভাবিকভাবে খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমতে থাকবে
- যেকোনো ধরনের ক্ষত শুকাতে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক দেরী হবে
- নানান রকম চর্মরোগ যেমন খোশ পাঁচড়া, ফোঁড়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে
- চোখে কম দেখা, দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।
ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়
দীর্ঘকাল ধরে উচ্চ শর্করার মাত্রা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের রক্তনালী গুলোর গুরুতর ক্ষতি করতে পারে, যা অবশেষে শরীরের বিভিন্ন অংশের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। যদি রক্তনালী গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ টিস্যু এবং অঙ্গগুলিতে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহিত করতে পারবে না, ফলে স্নায়ুগুলো সঠিকভাবে কাজ করবে না।
এই স্নায়ুর ক্ষতির ফলে রোগীরা তাদের শরীরের কিছু অংশে অনুভূতি হারাতে পারেন এবং এটি অন্যান্য অঙ্গের আরও জটিলতা বাড়ানোর জন্য পথ প্রশস্ত করে। ডায়াবেটিস যখন অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তখন এটি হৃদযন্ত্র, চোখ, কিডনি, স্নায়ু সিস্টেম এবং দাঁত এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম গুলিকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করে।
ডায়াবেটিস সংক্রমণের প্রবণতা বাড়ায় এবং বিশ্বের উচ্চ-আয়ের দেশ গুলিতে এটি কার্ডিওভাস্কুলার রোগ, অন্ধত্ব, কিডনি ফেইলর, এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বিচ্ছেদের একটি প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত। একবার এই রোগ হলে আর ভালো হতে চাইনা। শুধু নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে ভালো থাকার চেষ্টা করতে হবে।
অতএব, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা, রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের স্তরকে স্বাভাবিক পরিসীমার মধ্যে রাখা খুবই জরুরি। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে, সঠিক ডায়েট, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং সচেতনতা দ্বারা ডায়াবেটিসের এই সমস্ত জটিলতা গুলি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বেশি মিষ্টি খেলে কি ডায়াবেটিস হয়
বেশি মিষ্টি খাওয়ার সাথে ডায়াবেটিসের কোন সম্পর্ক নেই। তবে ডায়াবেটিস হলে বেশি মিষ্টি খাওয়া যাবেনা। বিশেষ করে ৪৫ বছরের পর মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। কারণ বেশি মিষ্টি খাওয়া ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ প্রভাব না ফেললেও পরোক্ষ ভাবে প্রভাব ফেলে। বেশি মিষ্টি খেল ডায়াবেটিস না হলেও আপনি মোটা হয়ে যাবেন, যা ডায়াবেটিস হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয়
প্রি-ডায়াবেটিস প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় এবং কার্যকরী উপায় হলো ডায়েট ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা। যেমন-
- শারীরিক ওজন বেশি হলে তা কমিয়ে ফেলতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
- ঘন চিনিযুক্ত খাবার যেমন- মিষ্টি চকলেট, কোমল পানীয়, ফাস্টফুড, অ্যালকোহল, ধূমপান বাদ দিতে হবে।
- মাঝে মাঝে খালি পেটে ও খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে রক্তে সুগার মাপতে হবে।
- এ ছাড়া রক্তে HbA1C পরীক্ষা করে ডাক্তারকে দেখানো উচিত।
আমাদের দেশে অনেক মানুষ জানেন না যে তিনি প্রি-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সঠিক সময় প্রি-ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে পারলে এবং প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য জটিল রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
ডায়াবেটিস হলে কি খাবেন আর কি খাবেন না
আপনার দৈনিক কতটুকু খাবার ও পানীয় প্রয়োজন তা নির্ভর করে আপনার বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক পরিশ্রম এবং আপনি আপনার ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণ করছেন তার ওপর। একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম ডায়েটের জন্য পাচঁটি প্রধান গ্রুপ বা পদের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এসব হচ্ছে—
- ফলমূল ও শাকসবজি
- শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: লাল বা বাদামী চালের ভাত, লাল আটার রুটি বা পাউরুটি
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: ডিম, মাছ, মাংস, শিম ও অন্যান্য বীন, ডাল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার। যেমন: দই, ছানা ও পনির
- বিভিন্ন ধরনের তেল, মাখন, ঘি
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য যে সব খাবার খাওয়া যাবেনা, তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার
- চর্বিযুক্ত / তেলভাজা খাবার
- দুধের তৈরি খাবার
- লবণ
- শুকনো ফল
- প্রক্রিয়াজাত মাংস
- দুধ চা ও কফি
- কিসমিস
লেখকের মন্তব্যঃ
বন্ধুরা এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন যে ডায়াবেটিস রোগ কাদের হয়, কেন হয় এবং কারো হয়ে গেলে করণীয় সম্পর্কে। তবে ডায়াবেটিস হলে তবে সতর্ক হবেন এমনটি ভাবা মোটেও ঠিক হবেনা। ডায়াবেটিস হওয়ার আগে থেকেই সতর্ক থাকাটা সব চেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। তাই উপরে বর্ণিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে ভালো থাকলে সার্থক হবে আমার লেখা। ভালো থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url