AI বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কী ? এর কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

সবার মুখে মুখে শুনা যাচ্ছে, বর্তমান যুগ হচ্ছে প্রযুক্তির যুগ (Artificial Intelligence বা AI) এর যুগ। AI দিয়ে নাকি সব কিছু চলছে, সব কিছুই হচ্ছে। AI টা আসলে কী আপনারা কী জানেন ?

হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের জানাবো- AI টা আসলে কী ? এর কাজ কী ? এর দ্বারা কী কী কাজ করা যায়। এর কোন সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিতা জানতে পারবেন আজকের আলোচনা থেকে। আসুন আর দেরি না করে শুরু করা যাক-

সূচিপত্রঃ AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

AI বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি কী ?
AI কিভাবে কাজ করে
AI এর ব্যবহার
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা অসুবিধা
AI এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
লেখকের মন্তব্যঃ

AI বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি কী ?

চিন্তাশক্তি, বুদ্ধি কিংবা বিশ্লেষণ ক্ষমতা মানুষের সহজাত। কিন্তু একটি যন্ত্রকে মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, সেটিকে চিন্তা করানো কিংবা বিশ্লেষণ করানোর ক্ষমতা দেওয়ার ধারণাটিকে সাধারণভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI) হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা, 

যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা, শেখার ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধানের মতো গুণাবলিকে কম্পিউটার বা মেশিনের মাধ্যমে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। কিছুদিন আগেও (AI) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ছিল দূর ভবিষ্যতের একটি কাল্পনিক বিষয়। 

কিন্তু অতি সম্প্রতি এই দূরবর্তী ভবিষ্যতের বিষয়টি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হতে শুরু করেছে। তার প্রধান কারণ, পৃথিবীর মানুষ ডিজিটাল বিশ্বে এমনভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে যে, হঠাৎ করে অচিন্তনীয় পরিমাণ ডেটা সৃষ্টি হয়েছে এবং সেই ডেটাকে প্রক্রিয়া করার মত ক্ষমতাশালী কম্পিউটার বর্তমানে আমাদের হাতে চলে এসেছে। 

এই ডেটা বা তথ্যকে প্রক্রিয়া করার জন্য বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদরা এমন একটি পদ্ধতি বেছে নিয়েছে যেটি মানুষের মস্তিষ্কের মতো করে কাজ করে। সাধারণভাবে এটা নিউরাল নেট নামে পরিচিত। সহজভাবে বলা যায় এর একটি ইনপুট স্তর এবং আউটপুট স্তর রয়েছে যার মাঝখানের স্তরটি হচ্ছে ‘লুক্কায়িত’ স্তর।

AI কিভাবে কাজ করে

সাধারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিভিন্ন সোর্স থেকে ডাটা সংগ্রহ করে, এবং পরবর্তীতে সেই সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে সেই ডাটা বিশ্লেষণ করে উত্তর প্রদান করে। প্রথমে, AI অ্যালগরিদম ব্যবহার করে কম্পিউটারে মেমোরির মধ্যে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তী ধাপে এলগারিদম সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে, যেটাকে বলা হয় মেশিন লার্নিং প্রসেস।

যেহেতু এ আই ব্যবহার করে পৃথিবীর সমস্ত তথ্য ভান্ডার সংগ্রহ করা সম্ভব যার ফলে, সেই তথ্যভাণ্ডার থেকে যেকোন প্রশ্নের নতুন উত্তর প্রদান করা সম্ভব হয় । উদাহরণস্বরূপ, ইমেজ রিকগনিশন সিস্টেমে হাজার হাজার ছবি দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যাতে সে ছবি চিহ্নিত করতে পারে। যদি পরবর্তীতে AI কে বলা হয় একই ধরনের একটা ইমেজ তৈরি করার জন্য তখন এআই সেইম প্যাটার্নের নতুন ছবি জেনারেট করতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial intelligence বা AI) হল একটি কম্পিউটার সফটওয়্যার, যা তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে যন্ত্র বা অ্যাপ্লিকেশনকে মানুষের বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তির আদলে কাজের উপযোগী করে তোলে। অন্যভাবে বলতে গেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI মানুষের বুদ্ধিমত্তার আদলে প্রোগ্রামকে বোঝায় যা মানুষের মতো চিন্তা করে এবং তাদের কার্যাবলী অনুকরণ করে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি Artificial intelligence Technology বা AI Technology নামে পরিচিত। সাধারণত অ্যালগরিদম ও মেশিন লার্নিং-সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিশাল তথ্যভান্ডার বিশ্লেষণ করে ফলাফল ও অনুমান জানিয়ে থাকে। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে ফলাফল জানাতে তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নিতে হয় না। খুব দ্রুতই কাজ করে থাকে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এর বিরতির কোন প্রয়োজন নেই। অপরদিকে মানুষ বেশি কাজ করলে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং বিরতির প্রয়োজন হয়। এ কারনে একসঙ্গে হাজার হাজার কাজ দ্রুত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা করতে পারে। পাশাপাশি খুব অল্প সময়ে নতুন অনেক বিষয় শিখতে পারে। যা মানুষের পক্ষে একেবারে অসম্ভব।

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি মানুষের আচরণ ও চিন্তাশক্তির আদলে জটিল সমস্যার সমাধান করে আসছে। ফলে দিন দিন বিভিন্ন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির চাহিদা বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে মানুষের মস্তিষ্কের আদলে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে পারবে। যা মানুষের চিন্তা শক্তির বাইরে।

AI এর ব্যবহার

AI (Artificial Intelligence) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো একটি প্রযুক্তি যা মানুষের মতো চিন্তা এবং কাজ করার ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার সিস্টেম বা মেশিন তৈরি করে। এটি কম্পিউটারকে তথ্য বিশ্লেষণ, শিখতে, সিদ্ধান্ত নিতে, এবং কিছু ক্ষেত্রে মানুষের মতো কাজ করতে সক্ষম করে তোলে। AI-কে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়ঃ-

১।  Narrow AI (বিভিন্ন নির্দিষ্ট কাজের জন্য)ঃ যেমন, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, Siri বা Google Assistant, এবং চ্যাটবট।
২।  General AI (সাধারণ বুদ্ধিমত্তা)ঃ এটি মানুষের মতো অনেক ধরনের কাজ করতে সক্ষম। তবে, এটি এখনও পুরোপুরি বিকশিত হয়নি।

AI এর ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে করা হয়। এর কয়েকটি উদাহরণ হলোঃ-
  • স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং (Autonomous Driving): AI ড্রাইভারবিহীন গাড়ি চালাতে সাহায্য করে, যেমন Tesla এর স্বয়ংক্রিয় গাড়ি।
  • স্বাস্থ্যসেবা (Healthcare): রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরামর্শ, এবং রোগীর তথ্য বিশ্লেষণে AI ব্যবহার করা হয়।
  • ব্যবসা ও বাণিজ্য (Business & Commerce): কাস্টমার সার্ভিস, ডেটা বিশ্লেষণ, এবং মার্কেট ট্রেন্ড পূর্বাভাস দিতে AI ব্যবহার করা হয়।
  • শিক্ষা (Education): শিক্ষার্থীদের জন্য কাস্টমাইজড লার্নিং প্ল্যান তৈরি করতে এবং শিক্ষকদের সহায়তা করতে AI ব্যবহার করা হয়।
  • বিনোদন (Entertainment): AI মিউজিক এবং ফিল্ম তৈরি, ভিডিও গেম ডেভেলপমেন্ট, এবং রিকমেন্ডেশন সিস্টেমে ব্যবহার করা হয় (যেমন, Netflix বা YouTube এর রিকমেন্ডেশন)।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা অসুবিধা

বর্তমানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের অনেক সুযোগ সুবিধা প্রদান করলেও অনেক অসুবিধা রয়েছে যেমনঃ AI ব্যবহারের ফলে মানুষ জবলেস হয়ে যাবে। বলা হয়ে থাকে সব ক্ষেত্রেই AI প্রভাব বাড়তে পারে, যেটা মানব সভ্যতার জন্য হুমকির কারণ হয়ে যেতে পারে। তবে বর্তমানে AI অনেক সুবিধা প্রদান করে থাকে। যেকোনো কঠিন কাজের সময় এবং খরচ কমাতে সহায়তা করে, এবং নির্ভুলভাবে দীর্ঘ সময় কাজ করতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমতার সবচেয়ে অসুবিধা হলো সে এখনো মানুষের মতো করে ইউনিক চিন্তা করতে পারেনা। তাকে যা কমান্ড দেওয়া হয় সেই কমান্ডের উপর কাজ করে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দিন দিন উন্নতি সাধন করছে। ধারণা করা হচ্ছে সুপার AI নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে যা মানব সভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ।

AI এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতে একটা সময় সময় আসবে যখন আমরা AI ছাড়া একটা মুহূর্তও কল্পনা করতে পারবো না। দিনে দিনে প্রত্যেকটি সেক্টরে AI এর গুরুত্ব অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে , বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কোম্পানিতে রোবট ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের পণ্যের উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়িয়ে নিয়েছে তাছাড়া এর ফলে কাজের মধ্যে কোনো বিরতি দিতে হয় না।

২০২২ সালে AI এর মার্কেট সাইজ যেখানে ৩৮৭ বিলিয়ন ডলার ছিল ২০২৯ সালে সেটি ১৩৯৪ বিলিয়ন ডলার ছড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর থেকেই আমরা কিঞ্চিৎ ধারণা করতে পারি যে ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চাহিদা কি পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই আমরা সকলে এই বিষয়টির উপর জ্ঞান অর্জন করে নিজেদের সময়ের থেকে এগিয়ে রাখতে পারি।

লেখকের মন্তব্যঃ

AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো এমন একটি সিস্টেম যা সারা বিশ্বের মানুষের পরিশ্রমের কাজকে ভাগ করে নিয়েছে। এমন একদিন আসবে যেদিন আমরা AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছাড়া কোন কাজের চিন্তাও করবো না। তবে AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে অনেক উন্নতি করতে পারি। তবে অবশ্যয় খারাপ কাজগুলো বর্জন করতে হবে। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪