হার্ট ভালো রাখতে যে সব খাবার খাওয়া বাদ দিবেন বিস্তারিত জেনে নিন
আমরা জীবন ধারনের জন্য যা কিছু খেয়ে থাকি তার সব কি স্বাস্থ্যকর ? বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের হার্ট ভালো রাখতে কোন খাবার খাওয়া যাবে এবং কোন খাবার খাওয়া যাবেনা এগুলো বিষয়ে জানা প্রয়োজন। আপনি কি জানেন হার্ট ভালো রাখতে কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা।
আজ আপনাদের জানাবো হার্ট এর অসুখ যদি হয়েই যায় তবে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যাবেন। নিম্নে উল্লেখিত খাবারগুলো না খেলে আপনার হার্ট ভালো থাকবে, আপনি সুস্থ মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারবেন। আসুন জেনে যাক খাবারগুলো সম্পর্কে-
ভূমিকাঃ
রক্তে কোলেস্টেরল পরিমাণ বেড়ে গেলে হার্ট এটাক ও স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে পারলে হার্টের রোগের আশঙ্কা কমে। আবার কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার কম খেলেও রক্তে এর পরিমাণ কমে যায়। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
পেজ সূচিপত্রঃ
পাউরুটি
কলিজা ও মগজ
রেড মিট বা লাল মাংস
চিংড়ি মাছ
মাছের ডিম
ঘি-মাখন ও ডালডা
ফাস্টফুড
সোডা বা কমল পানীয়
অতিরিক্ত ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার
ডিমের কুসুম
নারিকেল
লেখকের মন্তব্যঃ
পাউরুটি
পাউরুটি খেতে অনেকেই পছন্দ করে থাকেন। পাউরুটিকে বিভিন্ন ভাবে খাওয়া হয়। এটি একটি সুস্বাদু খাবার হিসেবে আমরা প্রায় প্রতিনিয়ত খেয়ে থাকি। অনেকে সকালের নাস্তায় পাউরুটি খেয়ে থাকেন জেলি দিয়ে। তবে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তারা পাউরুটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। পাউরুটি খেলে হার্টের রোগীদের সমস্যা হতে পারে, তাই এটি না খাওয়াই ভালো।
কলিজা ও মগজ
কলিজা ও মগজ একটি উৎকৃষ্টমানের খাবার হলেও সবার জন্য তা উপকারি নয়। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তারা কলিজা ও মগজ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কলিজা, মগজ ও হাড়ের মজ্জায় সব থেকে বেশি কোলেষ্টেরল থাকে তাই হার্টের রোগীদের এই সব খাবার বর্জন করা উচিৎ।
রেড মিট বা লাল মাংস
অতিমাত্রায় রেডমিট হার্টের রোগের কারণ-এটা নতুন তথ্য নয়। তবে সেটা যে কেবল রেডমিটের ফ্যাট বা কোলেস্টেরলের কারণে তা কিন্তু নয়, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, রেডমিট ভেঙে কারনিটাইন নামে একটি যৌগ দেহে তৈরি হয়, যা ট্রিমাথাইলেমাইন এন অক্সাইড নিঃসরণ করে। আর এথেরোসক্লেরোসিস বা আর্টারিতে ব্লক সৃষ্টিতে এই ট্রিমাথাইলেমাইনের একটা সক্রিয় ভূমিকা আছে।
চিংড়ি মাছ
হার্টের রোগীর জন্য আরেকটি বর্জনীয় খাবার হলো চিংড়ি। দেখা গেছে, ক্যালরি এবং ফ্যাট কম থাকলেও চিংড়িতে আছে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল। সাড়ে তিন আউন্স ওজনের একপিস রান্না করা স্যামন মাছে যেখানে মাত্র ৬২ মিগ্রা কোলেস্টেরল, সেখানে একই পরিমাণ চিংড়িমাছে পাওয়া গেছে ১৮৯ মিগ্রা কোলেস্টেরল।
মাছের ডিম
রক্তের লিপিড প্রোফাইল বাড়িয়ে দেয় যে উপাদানগুলো, সেই এলডিএল বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উৎস হচ্ছে মাছের মাথা বা মাছের ডিম। মাছের ডিম অন্যদের ক্ষেত্রে দারুন উপকারি হলেও হার্টের রোগীর জন্য ক্ষতিকর। তাই এই সব খাবার এড়িয়ে চলুন। হার্টের রোগীর জন্য বিশেষ করে লাইফ স্টাইল ও খাবার দাবারে বেশি সচেতন হোন।
ঘি-মাখন ও ডালডা
অতিথি আপ্যায়নে অভিজাত খাবারের তালিকায় ঘি-মাখন এক অনিবার্য অনুষঙ্গ হলেও এতে আছে উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট। সেইসাথে আছে পালমিটিক এসিড, যা আর্টারি ব্লকের কারণ হতে পারে- বলেছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানী ওয়াহিদা কর্মালি। এর বদলে অলিভ অয়েল, সান ফ্লাওয়ার অয়েল বা মার্জারিন ব্যবহার করতে পারেন।
ফাস্টফুড
আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন জার্নালের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে একবার নিয়মিতভাবে যারা ফাস্ট ফুড খায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের মারা যাওয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে ২০% বেশি। যারা একের বেশি অর্থাৎ দুই/তিন বার খায়, তাদের হার আরো বেশি- ৫০%। শুধু তা-ই নয়, সপ্তাহে যারা চার বা তার চেয়েও বেশি বার ফাস্ট ফুড খায়, তাদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি ৮০% এরও বেশি।
সোডা বা কমল পানীয়
এই কোমল পানীয় শরীরের উপর কি ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব ফেলে। ইদানিং কম বয়সে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকে মৃতের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। আমরা সকলেই জানি কোমল পানীয়ের ব্যবহার কতখানি বেড়ে গেছে এখন। তাই, যে কোন বয়সে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের অনেকগুলো কারণের মধ্যে অতিরিক্ত সোডা বা কোমল পানীয়ের ব্যবহার।
অতিরিক্ত ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার
ডিপ ফ্রাই খাবার মুখরোচক তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু খাবার যত ভাজা হয়, তার খাদ্যমান তত কমতে থাকে, তত তাতে যুক্ত হতে থাকে ক্ষতিকারক ফ্যাট। এমনও দেখা গেছে, একটা পর্যায়ে খাবারে আর কোনো ক্যালরিই অবশিষ্ট থাকে না। যেমন, মাংস বা কোনো কিছু ভাজার সময় দেখবেন তেলের মধ্যে প্রচুর বুদবুদ উঠছে।
এর কারণ হলো খাবারটার ভেতরে যে পানিটা আছে, তেলে ছেড়ে দেয়ার ফলে তা বেরিয়ে এসেছে এবং তেলের তাপ এবং চাপে তা শুকোতে শুরু করেছে। ডিপ ফ্রাই হতে হতে পানি যখন পুরোপুরি শুকিয়ে যায়, বুদবুদ ওঠাও তখন বন্ধ হয়ে যায়। খাবারের ভেতরে পানির বদলে তখন ঢুকে যায় তেল। তো এমনিতেই মাংস বা এই জাতীয় খাবারগুলোতে আছে স্যাচারেটেড ফ্যাট, তার ওপর তেল যুক্ত হয়ে তার ফ্যাটের পরিমাণ বাড়ে আরো।
ডিমের কুসুম
ডিমের সাদা অংশ খাওয়া গেলেও হৃদরোগীদের জন্যে ডিমের কুসুমটা এড়িয়ে চলাই উত্তম। কারণ ডিমের কুসুমে আছে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল। দেখা গেছে, একটি বড় আকারের মুরগির ডিমে যে ১৮৬ মিলিগ্রাম পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে, তার পুরোটাই আছে কুসুমে। আর একজন হৃদরোগীর দিনে ২০০ মিগ্রা-র বেশি কোলেস্টেরল গ্রহণ করা উচিত নয়।
নারিকেল
হংকং আর সিঙ্গাপুরের দুটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে যে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যত লোক হংকংয়ে মারা গেছে, তার অন্তত তিনগুণ বেশি মানুষ মারা গেছে সিঙ্গাপুরে। গবেষকদের মতে, এর একটি কারণ হলো, সিঙ্গাপুরের অধিবাসীদের খাবারে নারিকেল ও পাম তেল ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। নারিকেল তেলের ৮৫ থেকে ৯০ ভাগই হলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা হৃদরোগীদের জন্যে ক্ষতিকর।
লেখকের মন্তব্যঃ
হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে হলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন অনিবার্য। যেসব প্রাণীর বেশি পা থাকে তাদের দেহে খারাপ কলেস্টেরল বেশি থাকে। যেমন- গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি। তাই হার্টের রোগের ঝুঁকি এড়াতে এসব প্রাণী থেকে তৈরি খাদ্য আপনার আহার তালিকা থেকে বাদ দিন। প্রতিদিন নিয়ম মাফিক সুষম খাবার গ্রহণ করুন।
হার্টের রোগের ঝুঁকি থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট খাবার তালিকা অনুসরণ করতে হবে। আর খাবারের তালিকা থেকে বাদ দেয়া খাবারগুলো অবশ্যই বাদ দিতে হবে, তা নাহলে হার্ট এটাকের সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যেতে পারে। উপরে বর্ণিত খাবার খাওয়া বাদ দিন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url