কোন ভিটামিনের অভাবে বাচ্চারা পড়া ভূলে যায় ? কমে যায় স্মৃতিশক্তি জেনে নিন
শিশুরা অল্প বয়সে যত বেশি পুষ্টি গ্রহণ করবে, তাদের মস্তিস্কের বিকাশ তত ভালো হবে। কোন পুষ্টিগুলি আরও ভালো ফোকাস, ভালো স্মৃতিশক্তি এবং তীক্ষ্ণ চিন্তা প্রক্রিয়াতে ভূমিকা পালন করে তাকি জানেন ?
বন্ধুরা মানুষের মস্তিস্কের বিকাশ এবং সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অনেক পুষ্টির প্রয়োজন হয়। শিশুর বুদ্ধিমত্তার দিকে নজর রাখাও জরুরি। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবারও খাওয়াতে হবে যাতে পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়। তো বন্ধুরা আর দেরি না করে আসুন শুরু করা যাক-
ভূমিকাঃ
বেশির ভাগ বাচ্চারাই খাবার খেতে অনীহা প্রকাশ করে। তারা সহজে খেতে চায়না। তাদের খাওয়া বাবা-মায়েরা কত যে সমস্যায় পড়েন। তবে সঠিক সময় সঠিক পুষ্টি না পেলে তো পুষ্টির ঘাটতি থেকেই যায়। শিশুদের শারীর ও মানসিক বিকাশের বয়স তাই এই সময় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যাতে শরীরে যায় তা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি।
সূচিপত্রঃ
বাচ্চাদের ডিম খাওয়ান নিয়মিত
প্রতিদিন দুধ খাওয়ান
মিষ্টি কুমড়ো, গাজর ও টমেটো
সামুদ্রিক মাছ খাওয়ান
লেখকের মন্তব্যঃ
বাচ্চাদের ডিম খাওয়ান নিয়মিত
নিয়মিত বাচ্চাকে ডিম খাওয়াবেন। ডিম খেলে শিশুর মাংসপেশি, মস্তিস্কের টিস্যু গঠন ও মেধা বিকাশে সাহায্য করে। ডিম শিশুদের অবসাদ দূর করে মানসিক ভাবে চাঙা রাখে। প্রতিদিন ডিম খাওয়ার ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান নিয়ন্ত্রণ করে। রাতকানার ঝুঁকিও কমে এই ডিম খাওয়ার ফলে। তাই বাচ্চাদের খাবারের তালিকায় ডিম রাখা খুবই জরুরি।
ডিমকে সুষম খাবার বলা হয়। পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও সস্তা হওয়ায় সবার কাছেই ডিম প্রিয় খাবার। শিশুদের জন্য ডিম প্রতিদিন খেতে বললেও বড়দের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। ডিম খেলে হৃৎপিন্ডের কার্যক্ষমতা ভালো থাকে। ডিমে থাকে ভিটামিন ডি যা হাড় ও দাঁত শক্ত ও মজবুত করে তোলে। তবে দেশি মুরগির ডিম হলে সব থেকে ভালো ফল পাবেন।
প্রতিদিন দুধ খাওয়ান
২ বছরের আগে বাচ্চাকে গরুর দুধ দেয়া যাবে না– এটি পুরানো ধারণা। আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এরকম নির্দেশনা দিত। এখন অধিকাংশ উন্নত দেশে গরুর দুধ বাচ্চার ১ বছর বা ১২ মাস থেকে খাওয়ানো শুরু করা হয়। এখানে কিন্তু বড় বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর কথা বলা হচ্ছে। দুধ খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়তে, ব্রেণ বুদ্ধি বাড়ে।
দুধ সুপার ফুড হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ক্যালসিয়ামে ভরপুর। আর স্বাস্থ্যকর হাড়, পেশি তৈরি করে। ভিটামিন এ, ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টির শোষণ, বৃদ্ধি এবং হরমোন উৎপাদনে এর জুড়ি নেই। দুধের উচ্চ ক্যালসিয়াম মাত্রা হাড়ের ঘনত্বের জন্য অপরিহার্য। ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব এবং রক্তের জমাট বাঁধা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
মস্তিষ্কের উন্নয়ন এবং কোলোরেক্টাল ক্যানসার প্রতিরোধেও দুধের ভূমিকা রয়েছে। সব বয়সীর দেহের চাহিদা অনুযায়ী দুধ খাওয়া দরকার। ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয় মাত্রা না পেলে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। শিশুর বিকাশের বছরগুলোতে স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রয়োজন, যা হাড় ও দাঁত শক্তিশালী করে।
দুধে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১২, রিবোফ্লেভিন এবং জিঙ্ক। যা রক্তের গঠন, অনাক্রম্যতা, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, পেশি এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা, শক্তি, বৃদ্ধি এবং কোষ মেরামতের জন্য উপকারী। কিশোর বয়সীদের এক গ্লাস অর্থাৎ ২৫০ মিলি দুধ পান করতে পারে।
মিষ্টি কুমড়ো, গাজর ও টমেটো
সন্তানের সঠিক পুষ্টি পেয়ে বেড়ে ওঠা নিয়ে অভিভাবকদের চিন্তার শেষ নেই। বিশেষ করে সন্তানের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও বুদ্ধিমত্তা বিকাশের ব্যাপারে অধিকাংশ মা বাবা সচেতন থাকেন। গবেষকদের মতে, এক থেকে দুই বছরের মধ্যে শিশুদের মস্তিষ্কের দ্রুত বিকাশ ঘটে। এ কারণে এই সময় অবশ্যই তাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।
মিষ্টি কুমড়ো, গাজর ও টমেটো রঙিন সবজির মধ্যে পড়ছে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে তা মস্তিষ্কের কোষকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনার শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ বাড়াতে টমেটো, মিষ্টি আলু, কুমড়া, গাজর বা পালং শাকজাতীয় সবজি খাওয়াতে পারেন। এসব খাবার যেমন স্বাস্থকর তেমনি পুষ্টিতে ভরা।
সামুদ্রিক মাছ খাওয়ান
শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শরীরিক গঠনে ভূমিকা পালন করে সামুদ্রিক মাছ। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু অংশের ক্ষমতা বাড়ায়, যেটি স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ডিমনেশিয়া বা অ্যালজাইমারের মত রোগ প্রতিরোধ করে। সামুদ্রিক মাছে উপস্থিত ভিটামিন এ ও ভিটামিন ডি কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে।
সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, লইট্যা, রূপচাঁদা, বাটার ফিশ ইত্যাদি মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলিতে পাওয়া যায় প্রোটিন, জিঙ্ক, আয়রন, আয়োডিন এবং ওমেগা-৩ নামক ফ্যাটি অ্যাসিড। শরীরে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে থাকলে ব্রেনের বিশেষ কিছু অংশের ক্ষমতা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে ডিমেনশিয়া মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
লেখকের মন্তব্যঃ
আশা করছি আজকের আর্টিকেল পড়ে এতক্ষনে বুঝে গেছেন বাচ্চাদের স্মরণশক্তি বৃদ্ধির উপায়গুলো এবং জেনে গেছেন উপকারি খাবারের তালিকাগুলো। তবে স্মরণশক্তি বাড়াতে অনেক দামি খাবারের প্রয়োজন পড়ে তা কিন্তু নয়, আপনার চার পাশে কমদামি খাবারের মধ্যেও লুকিয়ে আছে বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপাদান। বাচ্চাদের খেয়াল রাখুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url