সব সময় শান্তিতে থাকতে চাইলে এই সব কাজ করবেন না
মানুষ সামাজিক জীব। আমরা চাই সব সময় সুখে থাকতে, শান্তিতে থাকতে। কিন্তু এর পরও হঠাৎ হঠাৎ অশান্তি নেমে আসে আমাদের জীবনে। সব সময় শান্তিতে থাকলে চাইলে কোন কাজগুলো করতে হবে তাকি জানেন ?
বন্ধুরা আজ আপনাদের জানাবো- সারা জীবন সুখে-শান্তিতে থাকতে চাইলে কোন কোন কাজগুলো করা যাবেনা। ভালো থাকতে চাইলে নিচের এই কাজগুলা না করলে আপনি সব সময় ভালো থাকবেন। আসুন জেনে নেয়া যাক-
ভূমিকাঃ
সুখ-শান্তির দেওয়ার একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ। তাই সর্বাবস্থায় আল্লাহর ইবাদত করুন। তার সকল বিধান মেনে চলুন। এর পর আরো কিছু কাজ আছে যে করা থেকে বিরত থাকুন। এই কাজগুলো না করাটাও মূলত আল্লাহর বিধানের মধ্যে অন্তর্ভূক্তির মধ্যে পড়বে। তবুও আসুন জেনে যাক যে কোন কাজগুলো করা যাবেনা।
পেজ সূচিপত্রঃ
রাজনীতি করবেন না
মানুষের ক্ষতি করবেন না
অসৎ কাজে সঙ্গ দিনেব না
বেশি কথা বলবেন না
সেজে উপকার করতে যাবেন না
কাউকে বেশি বিশ্বাস করবেন না
বেশি টেনশন করবেন না
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস হারাবেন না
পাপ কাজ করবেন না
আত্নীয়দের অবজ্ঞা করবেন না
অল্পতে রাগ করবেন না
লেখকের মন্তব্যঃ
রাজনীতি করবেন না
ভালো থাকতে চাইলে, শান্তিতে থাকতে চাইলে রাজনীতি করা যাবেনা। বর্তমানে রাজনীতিটা নোংরা জায়গায় চলে গেছে। বর্তমানে কেউই দেশের জন্য রাজনীতি করেনা। সবায় নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি, ক্ষমতার জোর, অন্য মতাদর্শের প্রতি জুলুল নির্যাতন চালাতেই ব্যস্ত। তবে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন হলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে এটাই সঠিক।
মানুষের ক্ষতি করবেন না
জেনে শুনে সজ্ঞানে মানুষের ক্ষতি করবেন না। পারলে উপকার করবেন, ক্ষতি করতে যাবেন না। মানুষের উপকার করলে তৃপ্তি পাওয়া যায়। নিজের দ্বারা অন্যের ক্ষতি হয়ে গেলে অনেক দুশ্চিন্তা হয়। অন্যের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়ে যায়। যে অন্যের ক্ষতি করল আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন এবং যে তার সঙ্গে শত্রুতা করবে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন।
অসৎ কাজে সঙ্গ দিনেব না
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে চলতে গেলে অনেক মানুষের সাথে সঙ্গ দিতে হয়। তাই বলে অসৎ কাজে কোন সময় সঙ্গ দিবেন না। সে যত আপনই হোক না কেন। নেতা হোক, বাবা হোক বা মা হোক অসৎ কাজ অসৎ কাজই। তবে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে, আমরা যাদের সঙ্গে চলাফেরা ও বন্ধুত্ব করব, তারা কেমন? তাদের স্বভাব-চরিত্র কেমন? কারণ সৎ সঙ্গীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করা ও নেককার লোকের সঙ্গে ওঠাবসা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বেশি কথা বলবেন না
মুখ আছে বলেই শুধু আপনিই কথা বলে যাবেন এমনটি যেন না হয়। কারণ কথা বলার জন্য একটি মুখ আর কথা শোনার জন্য দুইটি কান দিয়েছেন আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা। তাই উত্তম কথা বলতে হবে নতুবা চুপ থাকতে হবে। রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে।
সেজে উপকার করতে যাবেন না
অন্যের উপকার করা ভালো কাজের মধ্যে একটি। তবে অজাচিত ভাবে নিজে থেকে সেজে অন্যের উপকার করতে যাবেন না। কেউ আপনার কাছে এসে আপনার সাহায্য চাইলে তাকে উপকার করুন। তবে আপনি যখন নিজে থেকে অন্যের উপকার করতে যাবেন, তখন হয়তো আপনার এই উপকার তার পছন্দ নাও হতে পারে বা আপনাকে সে অপছন্দ করার কারণে আপনার উপকার নাও নিতে পারে।
কাউকে বেশি বিশ্বাস করবেন না
আমরা সমাজে বসবাস করার কারণে একে অন্যের সাথে চলাফেরা করাতে হয়। করতে হয় নেলদেন। অনেকের সাথে তৈরি হয় গাঢ বন্ধুত্ব। জীবন সংগ্রামে বাঁচতে হলে কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করতেই হবে। তবে কাউকে একেবারে অন্ধ বিশ্বাস করা উচিৎ নয়। কারণ মানুষের মধ্যে ভালো খারাপ দুটি আছে। আপনি যদি সবাইকে বিশ্বাস করেন তাহলে আপনি ঠকবেন।
বেশি টেনশন করবেন না
আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে সারাক্ষণ ভাবতে থাকেন এবং ভেবে ভেবে তিল থেকে তাল তৈরি করে ফেলেন। ফলস্বরূপ অ্যাংজাইটি, দুশ্চিন্তা, শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধে। চিন্তায় জর্জরিত মানুষটি যে কখন অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তা নিজেও বুঝতে পারেন না।
চিন্তা করা মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা। অনেকে হয়তো বুঝতে পারেন না যে তাঁরা অতিরিক্ত চিন্তা করেন। তাঁদের কাছে হয়তো এটাই খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়, এভাবে তাঁরা ধীরে ধীরে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করছেন কি না, সেটা নিয়ে সচেতন হোন। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস হারাবেন না
আমরা অনেক সময় বেশি বেশি ভালো কাজ করার পরও আমাদের উপর বিপদ নেমে আসে। তখন আমরা আল্লাহর প্রতি অসন্তষ্ট হয়ে পড়ি, আল্লাহর প্রতি দোষারোপ করি। এতো ভালো কাজ করছি, নামাজ পড়ছি, রোজা রাখছি, অন্যের উপকার করছি তবুও আমি কেন বিপদে পড়ছি ? আমরা অনেকে জানিনা আল্লাহ আমাদেরকে নানা ভাবে পরীক্ষা করে থাকেন।
তাই আমরা যেই অবস্থায় থাকিনা কেন আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস হারানো যাবেনা। আমাদের সবারই উচিৎ সব কিছুতেই আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। আমরা যেকোন বিপদে পড়লে তার থেকে পরিত্রান চাইবো আল্লাহর কাছে। সংসারের অতি ক্ষুদ্র বা সামান্য জিনিস দরকার হলেও আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। আল্লাহ সব কিছুর ব্যবস্থা করবেন এটা বিশ্বাস করতে হবে।
পাপ কাজ করবেন না
আমরা চলাফেরা করতে কতোই না কাজ করে থাকি। তবে কোন অবস্থাতেই পাপ কাজ করা যাবেনা। পাপ কাজের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অনেকে আছেন যারা পাপকে তুচ্ছ মনে করে অহরহ পাপ কাজ করে থাকেন। এটা মোটেও উচিৎ নয়। কারণ আমাদের দুই কাঁধে কেরামান কাতেবিন (সম্মানিত দুইজন লেখক) আছেন তারা সব কিছু লিখছেন।
তবে কেউ যদি পাপ কাজ করেই ফেলেন, তবে সাথে সাথে তওবা করা উচিৎ। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই ভুলকারী মুসলিম বান্দার জন্য বামপাশের ফেরেশতা ছয় ঘন্টা পর্যন্ত কলম উঠিয়ে রাখে। বান্দা যদি অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে তা মাফ করে দেওয়া হয়, নতুবা একটি গুনাহ লেখা হয়। (তাবারানি, বায়হাকি)।
আত্নীয়দের অবজ্ঞা করবেন না
আত্মার সাথে সম্পর্কিত যারা তাঁরা আত্মীয়।ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক বলতে মাতা ও পিতার দিক থেকে রক্তসম্পর্কীয় নিকটস্থ লোকদিগকে বুঝায়। ঘনিষ্ঠতার পর্যায়ক্রম অনুসারে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, চাচা, ফুফু, মামা, খালা এবং তাদের ঊর্ধ্বতন ও নিম্নতম ব্যক্তিবর্গ ও সন্তানগণ আত্মীয়। এরা সবাই আরহাম,রেহেম রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয় ঘনিষ্ঠতম আচরনের আওতাভুক্ত।
সমাজের কিছু মানুষ শুধু নিজের পরিবার পরিজন নিয়েই ব্যস্ত থাকে এবং আত্মীয়-স্বজনের ব্যাপারে থাকে উদাসীন। আবার এমন বহু লোক আছে, যারা রক্ত সম্পর্কীয় স্বজনকে অবজ্ঞা করে অর্থ-সম্পদ বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয় নয় এমন লোকগুলির পেছনেই অহরহ ব্যয় করে থাকে। দরিদ্র হোক বা ধনী, প্রিয় হোক বা অপ্রিয় হোক আত্নীয়দের সাথে কখনোই অবজ্ঞা করবেন না।
অল্পতে রাগ করবেন না
রাগ করা হারাম। অল্পতেই হোক বা বেশিতে রাগ সব সময় হারাম। রাগ আপনার মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। সামাজিক, ব্যক্তিগত ও পেশাগত সম্পর্ক ধ্বংস করতে পারে। রাগের সময় ভুল এড়ানোর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় যতটা সম্ভব শান্ত থাকা। রাগের সময় কিছু কিছু বিষয় এড়িয়ে চলা জরুরি।
রাগ এমন এক মানসিক অবস্থা যখন মানুষের বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। তাই অনিচ্ছাকৃত ভাবেই ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ভবিষ্যতের বিড়ম্বনা এড়ানোর জন্য রাগের মুহূর্তে ধৈর্য ধরা খুবই জরুরি। রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত নিলে আপনাকে পরে পস্তাতে হতে পারে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখাটা খুবই জরুরি।
লেখকের মন্তব্যঃ
প্রিয় পাঠক বৃন্দ আশা করি মনোযোগ সহকারে আজকের আর্টিকেলটি পড়েছেন এবং অবগত হয়েছেন যে সব সময় শান্তিতে থাকতে চাইলে কোন কোন কাজগুলো করা যাবেনা। এখন এই বর্জণগুলো মেনে চলুন শান্তিতে থাকতে চাইলে। লেখাগুলো ভালো লাগলে অন্যদের মাঝে শেয়ার করে দিন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url