স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন সকালে যে কাজগুলো করবেন জেনে নিন

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল উৎস। শরীর স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে কোন কিছুই ভালো লাগেনা। তাই আমাদের বেশি বেশি শরীর স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা উচিৎ। কিন্তু স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন কি কি করতে হবে তাকি জানেন ?
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন সকালে যে কাজগুলো করবেন জেনে নিন

স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন সকালে যে কাজগুলো করবেন তা আপনাদের জানাবো আজকের আলোচনায়। এখানে জানতে পারবেন কোন কোন অভ্যাসগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো আর কোন কোন অভ্যাসগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ সে সম্পর্কে।

ভূমিকাঃ

নিজেকে এবং নিজের শরীরকে ভালো রাখতে পুরো জীবনটাই নিয়মের মধ্যে চলা জরুরি। সুস্থতার জন্য আপনাকে দিনের শুরুতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। কারণ শুরুর ওপরই নির্ভর করে অনেককিছু। সকালে সেসব নিয়ম মেনে চললে পুরো দিনটা কাটবে ফুরফুরে মেজাজে। আপনার শরীর থাকবে ঝরঝরে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সকালের কোন কাজগুলো আপনাকে সুস্থ রাখবে-

পেজ সূচিপত্রঃ

সকালে উঠে ব্রাশ না করে ১/২ গ্লাস পানি পান করুন
২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন
পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ার চেষ্টা করুন
রাতে ঘুম যথেষ্ট না হলে দুপুরে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিন
লেখকের মন্তব্যঃ

সকালে উঠে ব্রাশ না করে ১/২ গ্লাস পানি পান করুন

সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি পান করবেন এটা ঠিক কিন্তু দাঁত মাজার আগে না পরে সেটা জানা দরকার। কোনটা উপকারি হবে। ঘুমন্ত অবস্থায় মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। আপনি যখন সকালে পানি পান করেন, তখন সেই ব্যাকটেরিয়াগুলিও পেটে চলে যায়। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই সকালে ব্রাশ না করে প্রথমেই পানি পান করা ভালো। 

দাঁত ব্রাশ করার আগে পানি পান শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে, হজম ও হাইড্রেশনে সহায়তা করে। এই অভ্যাস অনেক উপকার করে শরীরের। পুষ্টিবিদদের মতে, সকালে খালি পেটে পানি পান করলে তার বিরাট প্রভাব পড়ে শরীরের ওপর। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানি পান করলে শরীর থাকবে সুস্থ।
  • সকালে ব্রাশ করার আগে পানি পান করলে আপনার হজম শক্তি শক্তিশালী করবে। মুখে ব্যাকটেরিয়া জমতে দিবে না।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। যাদের সহজেই ঠাণ্ডা লেগে যায় তাদের সকালে পানি পান করা উচিত।
  • ব্রাশ না করে পানি পান করলে চুল মজবুত ও চকচকে হয়। ত্বকও থাকে উজ্জ্বল।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য, মুখে ফোসকা ও পেট সংক্রান্ত সমস্যা দূর হয়।
  • উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস থাকলে এই পদ্ধত্তি মেনে চলুন। সকালে খালি পেটে ব্রাশ না করে পানি পান করলে শরীরের চর্বিও কমে।
  • বেশি ভালো হয় সকালে ব্রাশ করার আগে হালকা গরম পানি পান করা। খাবার হজম না হলে হজমে সাহায্য করবে।

২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন

সপ্তাহজুড়ে দৈনিক ৩-৪ কিলোমিটার হাঁটলে দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে, শারীরিক ভারসাম্য ও মানসিক স্বাস্থ্য থাকে ভালো। দৈনিক ২০-৩০ মিনিট হাঁটলে কমপক্ষে ২–৪ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়া হয়। প্রবীণদের জন্য এটা হতে পারে আদর্শ লক্ষ্য। হাঁটা সবচেয়ে সহজ ব্যায়ামের একটি এবং এর উপকারিতা অনেক। হাঁটাহাঁটি মানসিক চাপ কমায় এবং রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্য ভালো রাখে, মন উৎফুল্ল রাখে, শক্তি বাড়ায়। হাঁটলে ওজন ঠিক থাকে, মাংসপেশি মজবুত হয় এবং সন্ধির নমনীয়তা অটুট থাকে।

পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ার চেষ্টা করুন

বাজারদরে পেরে না উঠে অনেকেই রোজকার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ রাখছেন ডিম, দুধ বা মাছ–মাংসের মতো পদ। দিন শেষে তাই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি মিলছে কি না। এই বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েই বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামছুন্নাহার নাহিদ ও ‘নকশা’র নিয়মিত রন্ধনশিল্পী ফারাহ্‌ সুবর্ণাকে এক টেবিলে বসিয়েছিল ‘অধুনা’। 

দামি খাবার বাদ দিয়েও কীভাবে প্রতিদিনের পুষ্টিটা ঠিক রাখা যায়, সেই পরামর্শই দিয়েছেন তাঁরা। সকল পুষ্টি শুধু দামি খাবারে আছে এমনটি নয়। কম দামি অনেক খাবার আছে যেগুলো খেলে পুরোপুর পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। কারও যদি সামর্থ্য না থাকে, সব কটি উপকরণ দামি খাওয়ার কোনো দরকার নেই। 

প্রতিদিন যে শর্করা দরকার, সেটা ভাত বা রুটি ছাড়াও চিড়া, মুড়ি, নুডলসের মতো উপকরণ থেকেও মিলতে পারে। প্রোটিন মানেই যে মাছ–মাংস খেতে হবে, সেটা নয়। সবচেয়ে কম খরচে বেশি প্রোটিন মেলে ডিম থেকে। ডিমের দামও বেশি, কিন্তু মাছ বা মাংসের তুলনায় এখনো কম। 

তিন বেলা ভারী খাবারের পাশাপাশি হালকা নাস্তা যেমন- একটা কলা, একটা পেয়ারা বা অন্য কোনো দেশি মৌসুমি ফল থেকেও পূরণ হতে পারে এই চাহিদা। একদিন হয়তো খেলেন এক বাটি সেদ্ধ ছোলা, কখনো নুডলস বা এক গ্লাস দুধ। এতেই শরীর ঠিক থাকবে।

রাতে ঘুম যথেষ্ট না হলে দুপুরে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিন

সুস্থ্য স্বাভাবিক স্বাস্থ্যে মূল হচ্চে ঘুম। প্রাপ্ত বয়স্কো প্রতিটি ব্যক্তির ৭-৯ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। ভালো ঘুম হলে মন, শরীর ও মস্তিস্কো ভালো রাখে। ঘুম শুধুমাত্র বিশ্রাম দেওয়ার জন্য নয়, এটি শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজন। যথাযথ ঘুম শরীরের হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে, মস্তিষ্কের তথ্য প্রক্রিয়াকরণে সাহায্য করে, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক দিনভর পাওয়া তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে এবং শরীরের কোষগুলো মেরামত হয়।

তবে কোন কারণে যদি রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হয় তাহলে দুপুরে কিছু সময় ঘুমিয়ে নিতে পারেন, এতে দোষের কিছু নেই বরং শরীর ভালো লাগবে। ঘুম আমাদের শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ঘুম হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে, যা আমাদের ক্ষুধা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কম ঘুম ওজন বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত।

কম ঘুম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমায় এবং স্মৃতি দুর্বল করে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানুষ সহজেই রেগে যায় বা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মেজাজ খিটখিটে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে কম ঘুম উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। কম ঘুমানোর ফলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা বেশি খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করে। ফলে শরীর মুটিয়ে যায়।

প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে ঘুম আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞান বলছে, বয়সভেদে সবার ঘুমের প্রয়োজন আলাদা হতে পারে, কিন্তু ৭-৯ ঘন্টা ঘুম একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য আদর্শ। তাই, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য আমাদের ঘুমকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

বিভিন্ন বয়সের মানুষের ঘুমের প্রয়োজন আলাদা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন-এর সুপারিশ অনুযায়ী, বয়সভিত্তিক ঘুমের সময়সীমা হলোঃ
  • শিশু (০-৩ মাস): ১৪-১৭ ঘন্টা
  • শিশু (৪-১১ মাস): ১২-১৫ ঘন্টা
  • শিশু (১-২ বছর): ১১-১৪ ঘন্টা
  • প্রাক-বিদ্যালয় শিশু (৩-৫ বছর): ১০-১৩ ঘন্টা
  • বিদ্যালয়গামী শিশু (৬-১৩ বছর): ৯-১১ ঘন্টা
  • কিশোর (১৪-১৭ বছর): ৮-১০ ঘন্টা
  • যুবক (১৮-২৫ বছর): ৭-৯ ঘন্টা
  • প্রাপ্তবয়স্ক (২৬-৬৪ বছর): ৭-৯ ঘন্টা
  • বয়স্ক (৬৫ বছরের উপরে): ৭-৮ ঘন্টা

লেখকের মন্তব্যঃ

স্বাস্থ্যই সম্পদ। বন্ধুরা এতক্ষণে নিশ্চয় জেনে গেছেন, যে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে আমাদের কি কি কাজগুলো করতে হবে এবং কি কি কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজের স্বাস্থ্য এবং নিজেকে সুস্থ রাখতে চাইলে উপরে বর্ণিত নিয়মগুলো মেনে চলুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪