পায়খানা বা মল স্বাভাবিক রাখতে যে কাজগুলো করবেন বিস্তারিত জেনে নিন

মানব শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শুরু করে নানা রোগ ব্যাধী সৃষ্টি হয় অনেকাংশে পায়খানা স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে। আমরা অনেকেই এই সমস্যায় ভূগে থাকি। এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় জানতে চান ?
পায়খানা বা মল স্বাভাবিক রাখতে যে কাজগুলো করবেন বিস্তারিত জেনে নিন

হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমরা আপনাদের সামনে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল নিয়ে হাজির হয়েছি যে কাজটি আমাদের প্রতিনিয়ত করতে হয়। পায়খানা স্বাভাবিক রাখতে কি কি খেতে হবে কি কি খাওয়া যাবেনা সব কিছু জানতে পারবেন আজকের আলোচনা থেকে।

ভূমিকাঃ

পায়খানা কষা বা শক্ত হওয়াকেই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এটি খুব পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকেরই মাঝে মাঝে পায়খানা খুব শক্ত হয়ে যায়, মলত্যাগের সময় অনেকক্ষণ কসরত করতে হয়। এ ছাড়া পায়খানার পর মনে হয় পেট ঠিকমতো পরিষ্কার হয়নি। তাছাড়া দীর্ঘদিন এই সমস্যা থাকলে বায়ুপথে রোগ ব্যাধী তৈরি হতে পারে। কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে কোনো প্রকার ঔষধ ছাড়াই সম্পূর্ণ ঘরোয়া উপায়েই এই সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব।

পেজ সূচিপত্রঃ

সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানি পান করুন
খাবার খাওয়ার পর মেথি দিয়ে খাবেন
ভাজাপোড়া খাবার থেকে দূরে থাকবেন
দিনে পানি বেশি খাবেন - রাতে পানি কম খাবেন
প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করবেন
খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার রাখুন
ইসবগুলের ভুসি খাবেন
লেখকের মন্তব্য

সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানি পান করুন

পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ কুসুম গরম পানি খেয়ে থাকে। এই কুসুম গরম পানি খাওয়ার বেশ উপকারিতা আছে। পুষ্টিবিদদের মতে, গরম পানি খেলে পেট পরিষ্কার থাকে। পেট পরিষ্কার থাকলে শরীরে কোনো রোগ সহজে বাসা বাঁধতে পারে না। পায়খানা স্বাভাবিক না হলে কোন কাজে মন বসবেনা, শরীর ও মন দুটোই খারাপ লাগবে। তবে আপনার এই সমস্যা যদি হয়েই যায়, তাহলে সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানি পান করুন।

তবে আমরা অনেকেই কুসুম গরম পানি খাওয়ান উপকারিতা জানি না। এ জন্য হয়তো খাইওনা। তবে অনেক রোগ থেকে মুক্তি দেবে এই কুসুম গরম পানি। আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে খেতে পারেন কুসুম গরম পানি। কুসুম গরম পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যার সহজ সমাধান হল কয়েক গ্লাস কুসুম গরম পানি।

খাবার খাওয়ার পর মেথি চিবিয়ে খাবেন

মেথি বীজ ঐতিহ্যগতভাবে হজমের অস্বস্তি, ফোলাভাব এবং বদহজম উপশম করতে ব্যবহার করা হয়েছে, এবং পায়খানা সব সময় স্বাভাবিক রাখতে খাবার খাওয়ার পর একটু মেথি চিবিয়ে খাবেন। মেথি বীজের ফাইবার উপাদান স্বাস্থ্যকর মলত্যাগে সহায়তা করে এবং পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

মনে রাখবেন, মেথি বীজ অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে, এটি একটি সুষম খাদ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ব্যক্তিগত পরামর্শের জন্য একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য, বিশেষ করে যদি আপনার কোনো বিদ্যমান চিকিৎসা শর্ত থাকে বা ঔষুধ সেবন করেন।

ভাজাপোড়া খাবার থেকে দূরে থাকবেন

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে মল ত্যাগ হ্রাস, পেট ফোলাভাব, গ্যাস ও পেটব্যথা হয়। পর্যাপ্ত পানি পান ও বাথরুমে যথেষ্ট সময় কাটানোর পরেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের কারণেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। তাই খাবার গ্রহণে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ভাজাপোড়া খাবার সাময়িকভাবে ভালো লাগলেও এসব খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য অন্যতম কারণ।

নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাথমিক কারণ হল ভাজা খাবার বা ‘ফাস্টফুড’। এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হল- হৃদরোগ ও স্থূলতা। উচ্চমাত্রার সোডিয়াম এবং কৃত্রিম খাদ্য সংরক্ষক মলাশয়ের মধ্য দিয়ে খাবারের প্রবাহকে ধীর করে দেয়। ফলে দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য। ফাস্টফুড বা ভাজা ধরনের খাবার দিনে একবার খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকির পাশাপাশি নানান স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।

দিনে পানি বেশি খাবেন - রাতে পানি কম খাবেন

পায়খানা কষা বা শক্ত হওয়াকেই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এটি খুব পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকেরই মাঝে মাঝে পায়খানা খুব শক্ত হয়ে যায়, মলত্যাগের সময় অনেকক্ষণ কসরত করতে হয়। এ ছাড়া পায়খানার পর মনে হয় পেট ঠিকমতো পরিষ্কার হয়নি। এই সমস্যা সমাধানে ‍দিনের বেলায় বেশি পানি পান করবেন এবং রাতেও পানি খাবেন তবে অল্প পরিমানে।

পানি খাবারের ফাইবারের সাথে মিলে পায়খানাকে ভারী ও নরম করে। এর ফলে পরিপাকতন্ত্রের ভেতর দিয়ে পায়খানা চলাচল সহজ হয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। পানি পায়খানা নরম করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর কর‍তে সহায়তা করে। এ ছাড়া ফাইবারজাতীয় খাবার প্রচুর পানি শোষণ করে।

তাই ডায়েটে ফাইবার বাড়ানোর সাথে সাথে পানি পান করার পরিমাণও বাড়াতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার ও পানি খেলে সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। ফাইবারের সাথে পর্যাপ্ত পানি পান করা না হলে পেটের ভেতরে থাকা নাড়িভুঁড়ির মুখ আটকে যেতে পারে। এমন অবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হয়। এই পরিস্থিতি এড়াতে দিনে কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করতে হবে।

প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করবেন

নিয়মিত শরীরচর্চা বা হালকা ব্যায়াম করতে হবে। শরীর সচল রাখলে তা পায়খানা নরম রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। আপনার বয়স যদি ১৯ থেকে ৬৪ এর মধ্যে হলে সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা মাঝারি ধরনের ব্যায়াম, যেমন দ্রুত হাঁটা বা সাইকেল চালানো উচিত। 

যদি আরেকটু বেশি পরিশ্রমের ব্যায়াম করতে চান তাহলে দৌড়ানো, ফুটবল খেলা, দড়ি লাফ, সাঁতার কাটা- এগুলো বেছে নিতে পারেন। ভারী ব্যায়ামের ক্ষেত্রে সপ্তাহে অন্তত সোয়া ১ ঘণ্টা বা ৭৫ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করতে হবে। ব্যায়ামের মধ্যে ভারী ব্যায়াম বা প্রতিদিন দৌড়ানো বেছে নিতে হবে, তা নয়। 

শরীরকে চলমান রাখতে হাঁটাচলা, হালকা স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম ইত্যাদির মধ্যে যেকোনোটাই বেছে নেওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে হাঁটাহাঁটি বা হালকা শরীরচর্চাও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। অন্যকিছু করার সুযোগ না হলে প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন। 

প্রয়োজনে অল্প অল্প করে শুরু করতে পারেন। এক বেলা দিয়ে শুরু করুন, এরপর সকাল-সন্ধ্যা দুই বেলা করে হাঁটুন। প্রথমে সপ্তাহে তিন দিন এভাবে হেঁটে আস্তে আস্তে সেটা পাঁচ দিনে নিয়ে আসুন। এরপর ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে থাকুন। এতে কিছুটা হলেও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার রাখুন

ফাইবার বা আঁশ হলো এক ধরনের শর্করা। পেট পরিষ্কার হওয়ার জন্য ফাইবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিপাকতন্ত্রের যে জায়গায় পায়খানা তৈরি হয় ও জমা থাকে, সেখানে ফাইবার অনেকটা স্পঞ্জের মত কাজ করে। যা পায়খানা স্বাভাবিক রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

পানি শোষণ ও ধারণ করার মাধ্যমে ফাইবার পায়খানায় পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে পায়খানা নরম ও ভারী হয়, সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার না থাকলে পায়খানা শক্ত হয়ে যায়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকা পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার রাখুন।

ইসবগুলের ভুসি খাবেন

যে কোন সময় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি একটি চমৎকার ঘরোয়া ঔষধ। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ভুসি পানি শোষণ ও ধারণ করার মাধ্যমে পায়খানা নরম করে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। সাধারণত দিনে দুইবার ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। 

তবে এটি খাবার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে, যা বেশিরভাগ মানুষেরই অজানা। ভূল করেও কেউ কখনো ইসবগুলের ভুসি শুকনো খেতে যাবেন না। অবশ্যই এটি নির্দিষ্ট সময়ধরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে তবেই পানিসহ খাবেন। ভুসি খেলে সারাদিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করার বিষয়টি ভুলে যাওয়া যাবে না।

লেখকের মন্তব্যঃ

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে সাধারণত পায়খানা শক্ত হয়, যার ফলে অনেকের মলত্যাগের সময় নানাবিধ সমস্যা তৈরি হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে একটানা তিন–চারদিন পায়খানা নাও হতে পারে। এগুলো সবই সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাইলস বা অর্শ রোগ কিংবা এনাল ফিসার বা গেজ রোগ এর মতো পায়ুপথের রোগ তৈরি হতে পারে। তাই উপরে বর্ণিত কাজগুলো মেনে চললে এই সমস্যা থেকে স্থায়ী সমাধান পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪