বাচ্চারা জেদ করলে যে ৫টি ভূল করবেন না বিস্তারিত জেনে নিন

বাচ্চারা জেদ করবে এটাই স্বাভাবিক। বাচ্চারা জেদ করবে না তো আপনি জেদ করবেন। বাচ্চা জেদ করলেও আপনি তার সাথে ভূলেও জেদ করতে যাবেন না। আবার জেদ থামাতে ভূলেও এই ৫টি ভূল কাজ কখনো করা যাবে না তাকি জানেন ?

এখানে জানতে পারবেন, বাচ্চারা জেদ করলে আমরা সচারচর যে ভূলগুলো করে বাচ্চার জেদ ভাঙ্গায়। হ্যাঁ বন্ধুরা বাচ্চা ‍যতোই জেদ করুক না কেন নিম্নে উল্লেখিত ভূলগুলো কখনোই করতে যাবেন না। আসুন জেনে নেয়া যাক যে ৫টি ভূল পদ্ধতিতে বাচ্চার জেদ ভাঙ্গানো যাবে না সে সম্পর্কে।

ভূমিকাঃ

পৃথিবীর প্রত্যেকটা বাবা-মা তাদের সন্তানদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চান। জীবনদর্শণ, ভালো আচরণ শেখানোর চেষ্টা করেন। অনেকে সফল হোন, আবার অনেকে বিফল হয়ে যান শিশুর জেদের কারণে। আর সে আস্তে আস্তে এতটাই জেদী হয়ে উঠে যে তাকে সামলানো খুবই কঠিন হয়ে যায়। তখন বাচ্চাকে সামলাতে দিয়ে বাবা-মা বাগের মাথায় ভূল করে বসেন, যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

পেজ সূচিপত্রঃ

জেদ থামাতে বাচ্চাকে লোভ দেখাবেন না
উত্তেজিত হয়ে গায়ে হাত তুলবেন না
জেদের প্রতি মনোযোগ দিবেন না
জেদ করে কোন আবদার করলে সাথে সাথেই মেনে নিবেন না
হুমকি দিবেন না
লেখকের মন্তব্যঃ

জেদ থামাতে বাচ্চাকে লোভ দেখাবেন না

জেদ করে না এমন বাচ্চা নেই বললেই চলে। বাচ্চার জেদ থামাতে আমরা সচারচ যে ভূলটা করে থাকি তা হচ্ছে, তাকে আমরা লোভ দেখায়। বাচ্চা জেদ করছে, রাগারাগি করছে, কান্না করছে, তখন তার জেদ থামাতে আমরা বিভিন্ন প্রতিশ্রতি দিয়ে থাকি, যা মোটেও ঠিক নয়। প্রয়োজনে বাচ্চার প্রসংশা করবেন। মিথ্যা আশ্বাস দিবেন না। বাচ্চা কেন রেগে যাচ্চে সে বিষয়ের দিকে নজর দিন।

বাচ্চার সামনে স্বামী-স্ত্রী কখনো রাগারাগি করবেন না। তাদের সামনে ঝগড়া করবেন না। আপনাদের দেখাদেখি তারাও শিখে যাবে। বাচ্চাকে সময় দিন, বাচ্চার সাথে বেশি কথা বলুন। তার রাগের কারণটা অনুসন্ধান করুন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সন্তানের অনুভূতির গুরুত্ব দিন। তাদের কথা শুনুন। তারা হতাশা, ক্ষোভ বা চাহিদা প্রকাশ করে জেদের মাধ্যমে। সেটা বোঝার চেষ্টা করুন।

উত্তেজিত হয়ে গায়ে হাত তুলবেন না

বাচ্চারা জেদ করবে এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে শিখুন। বাচ্চার জেদের সাথে আপনিও জেদ দেখাতে যাবেন না। তার গায়ে হাত তুলবেন না। ধমক দিয়ে তাকে থামাতে যাবেন না। এতে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে লাভের বদলে। তার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করুন। বার বার তার গায়ে হাত তুললে এটা তার অভ্যাসে পরিনত হয়ে যাবে।

বাচ্চা এক সময় নষ্ট হয়ে যাবে। কাউকে ভবিষ্যতে পাসন্ড করে তুলে। তাই এই কাজটি থেকে বিরত থাকুন। শাসন অনেক ভাবে করা যায়। মনে রাখবেন, আপনি যদি চান আপনার বাচ্চা আপনাকে বন্ধু ভাবুক সেক্ষেত্রে মারধর করলে সেই সুযোগ হারাবেন। কেননা, বন্ধুরা মারে না এটাই সত্যি। তাকে বেশি বেশি আদর করুন, ভালোবাসুন এবং সব সময় ভালো কথা বলুন।

জেদের প্রতি মনোযোগ দিবেন না

আমি আগেও বলেছি বাচ্চা জেদ করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে কাজ-কর্ম ফেলে দিয়ে তার জেদের পিছনে পড়ে থাকবেন এটা নয়। বাচ্চারা প্রথম থেকেই জেদ শুরু করেনা। বাচ্চা কি বলতে চায় তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। একদিনে কিন্তু একটা বাচ্চার জেদ তৈরি হয় না, ক্রমাগত প্রত্যাক্ষাণের কারণেও জেদ তৈরি হয়।

তার জেদের প্রতি মনোযোগী না হয়ে তার সাথে অন্য বিষয় নিয়ে গল্প করুন, তাকে নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা বলুন। শিশুকে একা বাসায় রেখে যাবেন না, বা কাজের মেয়ের কাছে রেখে যাওয়াও ঠিক নয়, এতে বাচ্চার জেদি হয়। পরিবারের সাথে থাকার চেষ্টা করুন। শিশুরা তার মা-বাবার কাছ থেকে শেখে, তাই নিজেদের উন্নত করার চেষ্টা করুন।

জেদ করে কোন আবদার করলে সাথে সাথেই মেনে নিবেন না

বাচ্চা জেদ করে যে কোন আবদার করলেই সাথে সাথেই পূরণ করতে যাবেন না। সামর্থ থাকলেও সাথে সাথেই মেনে নিবেন না। তাকে অভাব বুঝতে দিন, সে যেন বুঝতে পারে এটা কিনতে টাকা লাগে, আর টাকা উপর্জন করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আর যেটা একেবারে প্রয়োজন নেই সেটা কখনোই কিনে দেয়া ‍উচিৎ নয়।

অতিরিক্ত চাহিদা, পাওয়ার জন্য জেদ ধরা, না পেলে নানা রকম এলোমেলো আচরণ করা এগুলো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এতে শিশুরা অবিবেচক হয়। মা-বাবার অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতি সচেতনতা থাকে না। মা-বাবাকে কষ্ট দেয়, কোনো জিনিসের ঠিকমতো মূল্য দেয় না। কোনো জিনিসই তাদের বেশিক্ষণ আনন্দ দিতে পারে না এবং অপচয় করতে শেখে।

পাশাপাশি অর্থনৈতিক সচ্ছলতা থাকলেই যে সন্তানের সব আবদার মানতে হবে, তা-ও একেবারে উচিত নয়। সন্তান বই কিনতে চাচ্ছে সে আবদার মেটানো ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে কিন্তু মোটরবাইক, দামি স্মার্টফোন কিংবা গাড়ির আবদার মেটানো হলে তার নেতিবাচক প্রভাব সন্তানের ওপর পড়বেই। সন্তানের কোন আবদার মেটাবেন আর কোনটা মেটাবেন না এটা মা-বাবাদের জানা জরুরি।

হুমকি দিবেন না

ছোট বাচ্চা অতিরিক্ত জেদ করলেও হুমকি দিতে যাবেন না। এতে কিন্তু অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বাচ্চার। শিশুর ভবিষ্যৎ গড়তে কখনো কখনো কঠোর হতে হয় আবার কখনো ভালোবাসা দিয়ে তাদের মন জয় করতে হয়। জানলে অবাক হবেন, আপনি যতই ভালোবাসুন না কেন আপনার চিৎকার, চেঁচামেচি ও বকাবকি শিশুর মনে রাগ ও জেদের সৃষ্টি করে। 

এমন পরিস্থিতিতে আপনার নিজের ভুলগুলো মেনে নেওয়া জরুরি। না হলে যত দিন যাবে শিশু আরও রাগী ও জেদি হয়ে উঠবে। আর আপনার শাসনেও কাজ হবে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব সেই অভ্যাসগুলোতে পরিবর্তন আনা জরুরি। বাচ্চার সাথে ভূলেও খারাপ আচরণ করতে যাবেন না। 

আপনি যদি সন্তানের সঙ্গে নম্র গলায় কথা না বলে সব সময় বকাবকি বা চিৎকার করে কথা বলেন তাহলে সন্তানও আপনার ব্যবহার অনুকরণ করার চেষ্টা করবে। একই সঙ্গে আপনার রাগ ও ক্ষোভ শিশুমনেও রাগের জন্ম দেয়। এভাবেই ধীরে ধীরে শিশু অবাধ্য ও জেদি হয়ে ওঠে। তাই কঠোর ভাবে তাদের আচরণ পরিবর্তণ করতে যাবেন না।

লেখকের মন্তব্যঃ

বাচ্চারা বাবা-মায়ের সঙ্গে জেদ করবে, আপনজনের সাথে জেদ করবে এটাই স্বাভাবিক। তারা জেদ করলেও তাদের সাথে জেদ করা যাবেনা ভূলেও। বিশেষ করে উপরে বর্ণিত ৫টি কাজ কখনোই করা যাবেনা বাচ্চার সাথে। বাড়ির পরিবেশ ভালো করুন, আচরণ ভালো করুন এবং নেতিবাচক কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। ভালোসাবা আদর দিয়ে পরিবর্তণ করার চেষ্টা করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪