চিংড়ি মাছ খাওয়ার অপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
চিংড়ি মাছ বা জাল মাছ অনেকের কাছে খুব প্রিয় হলেও কেউ কেউ আবার অপছন্দ করে। তবে বিভিন্ন সবজির সাথে রান্না করলে সবজির স্বাদ অনেকাংশে বেড়ে যায়। সবজির স্বাদ বাড়াতে চিংড়ির জুড়ি মেলাধার। কিন্তু আমরা কি জানি এই মাছ অপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে ?
হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের জানাবো চিংড়ি মাছ খেলে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয় প্রায় মানুষের সেই সম্পর্কে। এখানে জানতে পারবেন কোন কোন মানুষের চিংড়ি একেবারে খাওয়া যাবে না এবং কাদের জন্য চিংড়ি খাওয়া উপকারিতা সে সম্পর্কে।
ভূমিকাঃ
চিংড়িতে ট্রপোমায়োসিন নামক একটি প্রোটিন থাকে, যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। চিংড়ির অ্যালার্জির লক্ষণ হচ্ছে, এটি খাওয়ার পরে খিঁচুনি, অজ্ঞানতা, হজমের সমস্যা, নাক বন্ধ হওয়া বা ত্বকের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আপনার যদি অ্যালার্জি থাকে, তবে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হল চিংড়ি না খাওয়া।
পেজ সূচিপত্রঃ
চিংড়ি লেখে হজমের সমস্যা হতে পারে
চিংড়ি খেলে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে
যারা চিংড়ি খাবেন না
চিংড়ি খেলে এলার্জির সমস্যা হয়
শাসকষ্টের রোগীদের চিংড়ি খাওয়া উচিৎ নয়
যাদের ত্বকে সমস্যা আছে তাদের চিংড়ি এড়িয়ে চলা উচিৎ
চিংড়ি খাওয়ার উপকারিতা
লেখকের মন্তব্যঃ
চিংড়ি লেখে হজমের সমস্যা হতে পারে
বাঙালি মানেই চিংড়ি। গলদা বা বাগদা দেখলেই জিভে জল। একটু দই, নারকেল দিয়ে রান্না করলে জীবনে একদম অন্যরকম স্বাদে ভরে যায়। রসিয়ে খাওয়া চলে। তবে এই খাবারের প্রোটিন কিন্তু অনেকের শরীরে সহ্য হয় না। সেক্ষেত্রে ফুড অ্যালার্জি হওয়া সম্ভব। তখন খাবার হজম হয় না। এমনকী বমি, বমি বমিভাব, র্যাশ, চুলকনি হওয়া সম্ভব। তাই চিংড়ি নিয়ে আপনাকে সচেতন হতে হবে। তবেই সুস্থ থাকতে পারবেন।
চিংড়ি খেলে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে
চিংড়ি খেলে নাক বচিংড়িতে অনেকের অ্যালার্জি আছে। চিংড়িতে ট্রপোমায়োসিন নামক একটি প্রোটিন থাকে, যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। চিংড়ির অ্যালার্জির লক্ষণ হচ্ছে, এটি খাওয়ার পরে খিঁচুনি, অজ্ঞানতা, হজমের সমস্যা, নাক বন্ধ হওয়া বা ত্বকের প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
যারা চিংড়ি খাবেন না
চিংড়িতে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল থাকে, যা অন্যান্য সামুদ্রিক খাবারের কোলেস্টেরলের পরিমাণের চেয়ে প্রায় ৮৫ শতাংশ বেশি। উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবারগুলো রক্তে কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগ বাড়ায়। যাদের হৃদরোগের সমস্যা আছে তাদের জন্য ২০০ মিলিগ্রামের বেশি কোলেস্টেরল ক্ষতিকর। তাই হাই কোলেস্টেরল, হার্টের বিভিন্ন সমস্যা যাদের রয়েছে তাদের চিংড়ি না খাওয়াই ভালো।
চিংড়ি খেলে এলার্জির সমস্যা হয়
কিছু কিছু লোক রয়েছেন, যাঁদের হরহামেশাই বলতে শোনা যায়, তার এটাতে অ্যালার্জি, তার ওটাতে অ্যালার্জি। অ্যালার্জির অপবাদে দুষ্ট তেমনি কিছু খাদ্য উপকরণ হচ্ছে বেগুন, ডিম, চিংড়ি ইত্যাদি। এসব খাবার খেলে যে অ্যালার্জি হয় না, তা কিন্তু নয়। তবে এসব খাবার খেলেই যে সবার অ্যালার্জি হবে, এমন কোনো কথা নেই। খাবারের অ্যালার্জি নিয়ে বেশ ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে।
চিংড়ি মাছে অ্যালার্জি কারো কারো নিশ্চয় হয়, তবে সবার হয় না। অ্যালার্জির কারণ একেকজনের বেলায় একেক রকম। কারো ধুলায় অ্যালার্জি, কারো রোদে, কারো ঠান্ডায়, কারো গরমে, কারো ডিমে, আবার কারো বেগুনে অ্যালার্জি। নানা ধরনের খাদ্যবস্তু থেকে অ্যালার্জি হতে পারে।
শাসকষ্টের রোগীদের চিংড়ি খাওয়া উচিৎ নয়
যেসব খাবার খেলে এলার্জি হয় (চিংড়ি, গরুর মাংস, ইলিশ মাছ ইত্যাদি), বায়ুর সাথে ধোঁয়া, ধূলাবালি, ফুলের রেণু ইত্যাদি শ্বাস গ্রহণের সময় ফুসফুসে প্রবেশ করলে হাঁপানি হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত সর্দি কাশি থেকে হাঁপানি হওয়ার আশংকা থাকে। বছরের বিশেষ ঋতুতে বা ঋতু পরিবর্তনের সময় এ রোগ বেড়ে যেতে পারে।
যাদের ত্বকে সমস্যা আছে তাদের চিংড়ি এড়িয়ে চলা উচিৎ
চিংড়ি খেলে ত্বকেও অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। ত্বকে র্যাশ বেরোলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রসাধনীকে দায়ী করেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে চিংড়ি খাওয়ার জন্যও ত্বকের উপর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শুনে অদ্ভুত মনে হলেও, এমনটা ঘটে। চিংড়ি, শামুক, ঝিনুকের মতো খাবারে থাকা প্রোটিন, ত্বকের উপর অ্যালার্জির সমস্যা বাড়ায়। এই ধরনের সেলফিশ ইমিউনিটির উপর প্রভাব ফেলে। এতে ত্বকের উপর চুলকানি, আমবাতের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
চিংড়ি খাওয়ার উপকারিতা
চিংড়ি খেলে শুধুযে ক্ষতি হয় এমনটি নয়। চিংড়ি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। বাগদা চিংড়ি বা চিংড়ি মাছ আমাদের বেশ পছন্দের খাবার। তবে চিংড়ি নিয়মিত খেলে স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। সে বিষয়ে আমাদের হয়তো অনেকেরই ধারণা নেই। অন্যদিকে, কিছু চিংড়ি উচ্চ কোলেস্টেরল সামগ্রীর কারণে অস্বাস্থ্যকর। একটু সেদিকে মনোযোগ দিয়ে দেখা যাক।
মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
ক্ষত বা আঘাতের চিহ্ন সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে
ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে
হাড় মজবুত করে। চিংড়িতে আছে প্রায় ১৪ শতাংশ ফসফরাস।
রক্তস্বল্পতা মেটাতে পারে।
হার্টের স্বাস্থ্যকে উন্নীতঃ- চিংড়ি ক্যালোরিতে বেশ কম এবং এতে কোনো কার্বোহাইড্রেট থাকে না। চিংড়ির প্রায় ৯০% ক্যালোরি প্রোটিন থেকে আসে এবং বাকিটা আসে চর্বি থেকে। চিংড়ি বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে যা প্রদাহ কমাতে এবং হার্টের স্বাস্থ্যকে উন্নীত করতে সাহায্য করতে পারে। চিংড়ি খুবই পুষ্টিকর।
আয়োডিন ঘাটতি কমায়ঃ- চিংড়ি মাছ খাওয়া আয়োডিনের সেরা খাদ্য উৎসগুলির মধ্যে একটি ৷ চিংড়ি মাছ লোকের অ্যাটাক্সান্থিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ ঘাটতি পূরণ করে৷ সঠিক থাইরয়েড ফাংশন এবং মস্তিষ্কের জন্য আয়োডিন গুরুত্বপূর্ণ৷ চিংড়ি ওমেগা -৩, ৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভাল উত্স, যা স্বাস্থ্য উপকারিতা সাহায্য করতে পারে।
বার্ধক্য বিরোধীঃ- চিংড়ি বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয় এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করতে পারে। চিংড়ির স্বাস্থ্য উপকারিতার মধ্যে উন্নত হাড় ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য প্রদাহ বিরোধী এবং বার্ধক্য বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। চিংড়ি মাছ খাওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
কার্ডিওভাসকুলার রোগ ঝুঁকি প্রতিরোধ করেঃ- চিংড়ি মাছ কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। চিংড়ির পেস্টে পাওয়া এনজাইমটি কার্ডিওভাসকুলার রোগের বিপদের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এছাড়াও, এটি মাসিকের ব্যথা থেকেও মুক্তি দিতে পারে।
লেখকের মন্তব্যঃ
চিংড়ি চকৎকার একটি মাছ। এর যেমন অপকারিতা রয়েছে তেমনি উপকারিতাও রয়েছে। সকল সমস্যার জন্য যে কেবল চিংড়ি দায়ী এমনটি নয়। হ্যাঁ মানছি যে চিংড়িতে অনেক ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, তাই বলে সবার জন্য নয়। চিংড়িতে রয়েছে ফসফরাস, পটাশিয়াম ও জিংক যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। মোটা দাগে শেষকথা হচ্ছে, যাদের চিংড়ি খেলে সমস্যা হয় তারা এড়িয়ে চলুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url