দ্রুত ওজন বাড়াতে এবং দ্রুত ওজন কমাতে যেসব খাবার খাবেন জেনে নিন

সুস্থ্য থাকার জন্য খুব বেশি ওজন যেমন ভালো নয়, তেমনি একেবারে ওজন কম হলেও সমস্যা। দ্রুত ওজন বাড়াতে বা কমাতে কি খাবার খেতে হবে তাকি জানেন ?
দ্রুত ওজন বাড়াতে এবং দ্রুত ওজন কমাতে যেসব খাবার খাবেন জেনে নিন

হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের জানাবো যারা দ্রুত ওজন বাড়াতে চান তারা কি খাবেন আর যারা দ্রুত ওজন কমাতে চান তারা কি খাবেন সে সম্পর্কে। বডি স্লিম রাখতে যা যা করবেন তাও জানতে পারবেন আজকের আলোচনা থেকে।

ভূমিকাঃ

ওজন বাড়াতে বা কমাতে গেলে অবচেতন মনে চলে আসে বিভিন্ন খাবার দাবারের কথা। এটা খাওয়া যাবে না, ওটা খাওয়া যাবে না বা এটা খেতে হবে, ওটা খেতে হবে। তবে একেবারে না খেয়ে বা অধীক পরিমানে খাবার খেয়ে দিনযাপন করাটা বাস্তবসম্মত পদ্ধতি নয়। সুস্থ থাকতে চাইলে খেতে হবেই। আর খেলেই চলে আসে ক্যালরির হিসাব-নিকাশ। আসুন জেনে নিন কি কি খাবেন আর কি কি খাবেন না।

পেজ সূচিপত্রঃ

দ্রুত ওজন বাড়াতে যেসব খাবার খাবেন
দ্রুত ওজন কমাতে যেসব খাবার খাবেন
বডিকে স্লিম রাখতে যা যা করবেন
লেখকের মন্তব্যঃ

দ্রুত ওজন বাড়াতে যেসব খাবার খাবেন

যাদের শরীর একেবারে হালকা, পাতলা তারা নিজেদের শরীর মোটা করতে চান। উচ্চতা অনুসারে ওজনের যে সঠিক নির্দেশনা রয়েছে, এর কমবেশি হলে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অসুবিধা হতে পারে। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে ওজন বাড়ানোর জন্য কিছু খাবার নিয়মিত খেতে পারেন। এতে ওজন বাড়তে সাহায্য করবে।

শুকনো ফলমূলঃ- শুকনো ফলমূল ওজন বাড়ানোর জন্য আদর্শ খাবার। এগুলোতে ক্যালরির মাত্রা বেশি থাকে। তাই শুকনো কাজুবাদাম, কিশমিশ, খেজুর বা আমণ্ড খেলে আপনার মোটা হওয়ার ইচ্ছা খুব তাড়াতাড়ি পূর্ণ হবে। নিয়মিত সকালে নাশতার সময় ১০-১২টি আমণ্ড বা কাজু, কিশমিশ বা খেজুর খাওয়া শুরু করুন। তবে এগুলো খাওয়ার আগে রাতে আধা কাপ পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খাওয়া ভালো।

পিনাট বাটারঃ- পিনাট বাটার উচ্চ ক্যালরিযুক্ত একটি খাবার। তাই প্রতিদিন একবার করে পাউরুটির সঙ্গে অথবা বিস্কুটে খানিকটা পিনাট বাটার মেখে খেয়ে ফেলুন। এতে কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ওজন বাড়বে। অনেকে কোনো খাবারের সঙ্গে না মিশিয়ে শুধু পিনাট বাটার খেতেও ভালোবাসেন।

সহজলভ্য আলুঃ- কার্বোহাইড্রেট ও কমপ্লেক্স সুগারে পরিপূর্ণ একটি খাবার আলু। তাই এই উপাদান আপনাকে খুব ভালোভাবে সাহায্য করবে ওজন বাড়াতে। প্রতিদিন দুবার করে খাবার পাতে সেদ্ধ আলু খান। এ ছাড়া আলুর তৈরি চিপস জলপাই তেলে ভেজে সংরক্ষণ করে রেখেও খেতে পারেন। দুই মাস নিয়মিত আলু খেলেই নিজের ওজনের পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারবেন।

ডিমঃ- ওজন বাড়ানোর জন্য ডিমের ওপর সহজেই আস্থা রাখতে পারেন। এতে থাকা চর্বি, প্রোটিন ও গুড ক্যালরি আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ওজন বাড়াতে চাইলে নিয়মিত ডিম খাওয়া শুরু করুন। প্রতিদিন তিন-চারটি ডিমের সাদা অংশ খান, দ্রুত ওজন ফিরে পাবেন। তবে কোনোভাবেই কাঁচা ডিম খাবেন না। নিয়মিত ডিম খেলে দুই মাসের মধ্যেই আপনার ওজন বেড়ে যাবে।

ভাতের মাড়ঃ- সবার বাড়িতেই কমবেশি ভাত রান্না হয়। ভাত রান্না করার পরে যে মাড় বের হয়, সেই মাড় খেলেও ওজন বাড়ে। ভাত ছাঁকার পর মাড়টুকু আলাদা করে সংরক্ষণ করে অল্প লবণ গুলে পান করতে পারেন। ভাতের মাড়ে প্রচুর শক্তি থাকে। এটা শরীরকে মোটা হতে সাহায্য করে।

হরেক রকম সবজিঃ- পরোটার সঙ্গে প্রতিদিন কলিজা ভুনা না খেয়ে মাঝেমধ্যে সবজি খান। সবজির মধ্যে আলু, গাজর, শিম ইত্যাদি এক সঙ্গে রান্না করে খান ওজন বাড়ানোর জন্য ভালো। এ ছাড়াও ভাতের সঙ্গে বা খালি মুখে চুমুক দিয়ে ডাল খেলেও ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

তাজা ফলমূলঃ- সকালের নাশতায় তাজা টাটকা ফলমূল রাখতে পারেন। ফলের মধ্যে মিষ্টিজাতীয় ফল যেমন আপেল, আঙুর, কলা, নাশপাতি ইত্যাদি ওজন বাড়ানোর জন্য খুবই উপযোগী।

এই খাবারগুলো নিয়মিত খেতে থাকুন, ওজনের সমস্যা মিটে যাবে সহজেই। তবে ওজন বাড়াতে গিয়ে আবার অতিরিক্ত করে ফেলা কোনো কাজের কথা নয়। তাই কাঙ্ক্ষিত ওজন বাড়ার পর সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। তাহলেই সুস্থ থাকতে পারবেন। তা না হলে কোন ক্রমে যদি ওজন বেড়ে যায় তবে টের পাবেন।

দ্রুত ওজন কমাতে যেসব খাবার খাবেন

দিন দিন যেন বড় এক স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ‘অতি ওজন’। সুস্থ থাকতে চাইলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, বাড়তে দেওয়া যাবে না। অনেকে ওজন কমানোর নামে না খেয়ে থাকেন। সেটাও চলবে না। বরং পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ক্ষুধায় কষ্ট পেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল। খাদ্যতালিকা থেকে কোন কোন খাবার বাদ দিবেন জেনে নিন।

প্রথমেই খাদ্যতালিকা থেকে অপ্রয়োজনীয় উচ্চ ক্যালরির খাবার বাদ দিন। যেমন ফাস্ট ফুড, ভাজাপোড়া, কেক পেস্ট্রি, চকলেট আইসক্রিম বা কোলাজাতীয় পানীয়। এবার নিজের খাদ্যতালিকায় যোগ করুন পুষ্টিকর খাবার, যাতে ডায়েট করতে গিয়ে দুর্বলতা, অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা না পেয়ে বসে। যেমন প্রচুর শাকসবজি, তাজা ফলমূল, ভালো মানের প্রোটিন, যেমন মাছ, ডিম, দুধ, দই ইত্যাদি।

শসাঃ- শসার প্রায় ৮৫ শতাংশই পানি। উচ্চ মাত্রার পানি এবং ফাইবার উপাদান থাকে এই সবজিতে। এছাড়া ক্যালোরি থাকে কম। তাই শসা ওজন কমানোর জন্য উপযুক্ত একটি খাবার। এটি ক্ষতিকারক খাবারে উপস্থিত টক্সিন বের করে দিতেও সাহায্য করে।

সবুজ শাক-সবজিঃ- পালং শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি এবং মেথি পাতার মতো আরও সবুজ শাক আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যোগ করুন। এগুলোতে ক্যালোরি কম, কার্বোহাইড্রেট কম এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বেশি থাকে। যে কারণে ওজন কমানো সহজ হয়।

লেবুঃ- খাবারে লেবু যোগ করুন, সালাদে ছিটিয়ে দিন বা লেবুর পানি তৈরি করে খান। লেবু খাবার হজমে সাহায্য করে, বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে এবং অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতেও সাহায্য করে।

আখরোটঃ- প্রতিদিন মাত্র এক মুঠো আখরোট খেলে তা আপনার ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলতে পারে। এই শুকনো ফলটিতে পুষ্টির সঠিক মিশ্রণ রয়েছে যা হার্টের স্বাস্থ্যকেও উন্নীত করতে সাহায্য করে। তাই এটি খাবারের তালিকায় যোগ করে নিন।

পানিঃ- দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে পানি হতে পরে আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, প্রতিদিন সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবারের পূর্বে ২ গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করলে বছরে ১৭,৪০০ এক্সট্রা ক্যালোরি কমানো সম্ভব। তার মানে বছরে ৫ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমাতে পারেন নিয়মিত পানি পানের মাধ্যমে।

গ্রীন টিঃ- গ্রীন টি ওজন কমাতে খুবই সহায়ক একটি পানীয়। গ্রীন টি-তে থাকা ক্যাটেচিন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্যাট বার্ণ করে। এটি অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গ্রীন-টি এক দিনে ৭০ ক্যালোরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ন করে। তার মানে নিয়মিত গ্রীন টি পানের মাধ্যমে বছরে ৭ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব।

গাজরঃ- ওজন কমাতে গাজরের জুড়ি মেলাভার। এ সবজির ক্যালোরি ভ্যালু খুবই কম। সেই সঙ্গে এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবারও মজুত রয়েছে। যার ফলে দুপুরে গাজর খেলে ওজন কমে। এক্ষেত্রে সালাদ হিসেবেও খেতে পারেন। আবার চাইলে পাঁচমিশালি সবজির তরকারিতে মেশাতে পারেন গাজর। তাতেই উপকার মিলবে বলে জানালেন বিশেষজ্ঞরা।

বডিকে স্লিম রাখতে যা যা করবেন

ঝরঝরে শরীর, ফরফুরে মন, বেশি চর্বি না, আবার একেবারে পাতলাও না, চেহারা কমনীয়। এটাই হলো স্লিম থাকা। শুধু একটু হিসাব করে চলতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম তো আছেই। কিন্তু কী খাচ্ছেন সেটাও বড় ব্যাপার। আসুন দেখে নিন নিজেকে কীভাবে সেই আকর্ষণীয় ফিগারে ধরে রাখত পারবেন।

১. সকালে পেট ভরে সকালের নাশতা করুন। এতে থাকবে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, সবজি ও ফলসমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর উপাদান। দুধ-ডিম খুব ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েইট কন্ট্রোল রেজিস্ট্রির হিসাব অনুযায়ী পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে গড়ে ৩০ কেজি ওজন কমিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন এমন ১০ হাজার ব্যক্তির সবাই সকালে এ ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেয়েছেন।

২. দুপুরে একটু কম খেলেও চলে। ভাত-ডাল-মাছ-মাংস তো থাকবেই। প্লেটের অর্ধেক থাকবে শাকসবজি। বিকেলের দিকে একটা আপেল অথবা একটি পেয়ারা ধরনের দেশি ফল খেতে পারেন। এ সময় দারুণ খিদে পায় বলে তেলেভাজা খাবার খাওয়ার প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয় , যা খেলে আপনার ওজন বাড়িয়ে দেয়।

৩. আঁশসমৃদ্ধ খাদ্য বেশি খাবেন। ফলমূল-শাকসবজি, ঢেঁকিছাঁটা লাল চাল ও লাল আটার রুটি খাবেন যাতে আঁশ বেশি থাকে। আঁশ পাকস্থলীতে অনেকক্ষণ থাকে, ফলে খিদে কম পায়।

৪. বিপজ্জনক খাবার বাসায় রাখবেনই না। যেমন: আইসক্রিম, চকলেট, তেলেভাজা লোভনীয় খাবার প্রভৃতি। এসব যে একেবারে খাওয়া যাবে না, তা নয়। মাঝেমধ্যে চলে। কিন্তু বাসায় হাতের কাছে থাকলেই খাওয়ার ক্ষেত্রে সহজলভ্য হওয়াই বিপদ বাড়তে পারে।

৫. প্রতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিনে ওজন মাপুন। পেট ও কোমরের মাপ নিয়ে দেখুন কমছে, না বাড়ছে। সে অনুযায়ী দরকার হলে পরের সপ্তাহে খাবার কমবেশি করুন। আর নিয়মিত ব্যায়াম করুন। আপনি ইউটিউব দেখে সহজ ও কার্যকরী ব্যায়াম শিখে নিতে পারেন।

লেখকের মন্তব্যঃ

সব কিছুেই দ্রুত করা বা হওয়া মোটেও ভালো নয়। সুস্থ থাকতে চাইলে বডিকে স্লিম রাখতে হবে। খুব মোট, ভারি শরীর খুব বিপদজনক আবার একেবারে হালকা, পাতলা শরীর সেটিও মোটেও ভালো নয়। আপনাদের কাউরি যদি এই দুটি সমস্যার যে কোন একটি থাকে তবে উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে দেখতে পারেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪