সব সময় সুস্থ্য থাকতে চাইলে যে অভ্যাসগুলো থাকা উচিৎ জেনে নিন
সুস্থ্যতা হচ্ছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে একটি বড় নিয়ামত। আমাদের প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবনে শরীর ও মন সুস্থ থাকা খুবই জরুরি। কিন্তু সব সময় সুস্থ্য থাকার উপায়গুলো কি আমরা জানি ?
হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করবো সব সময় সুস্থ্য থাকতে চাইলে কোন কোন অভ্যাসগুলো থাকা দরকার আমাদের। স্বাস্থ্যকর খাবার, শারীরিক ব্যায়াম ছাড়াও কিছু অভ্যাস থাকা উচিৎ যা আমাদের সব সময় সুস্থ্য রাখবে।
ভূমিকাঃ
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলে সুস্থ্য থেকে অনেক শারীরিক সমস্যা এড়ানো সম্ভব হয় এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। এজন্য কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে প্রতিদিনের কর্মসূচিতে। প্রতিদিনের অনিয়ম নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করে। তাই সুস্থ থাকতে কিছু নিয়ম মেনে চলাটাই আমাদের জন্য ভালো। সুস্থ থাকতে সময় মতো খাওয়া দাওয়া থেকে পর্যাপ্ত ঘুম, সবটাই জরুরি।
পেজ সূচিপত্রঃ
খাবার খেয়ে শুয়ে যাবেন না
ঠান্ডা পানি দিয়ে ঔষধ খাবেন না
সব সময় ফোন বাম কানে ধরে কথা বলবেন
দিনের বেলা বেশি করে পানি পান করবেন
বিকেল ৫টার পর ভারী খাবার খাবেন না
লেখকের মন্তব্যঃ
খাবার খেয়ে শুয়ে যাবেন না
সুস্থ্য থাকার জন্য আমরা কতকিনা করছি। ভালো থাকার জন্য ভালো ভালো খাবার খাচ্ছি। শুধু ভালো খাবার খেলেূই হবেনা। সমস্যা সৃষ্টিকারী বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন- খাবার খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়ার কারণে হজমের স্বাস্থ্যকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে এবং হজমশক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
প্রথম সাধারণ ভুলটি হলো আপনার খাবার খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়া। অনেকে তাদের দুপুরের খাবার বা রাতের খাবারের পরে এই অভ্যাসটি অনুসরণ করে। তবে এই অভ্যাসের কারণে অ্যাসিডিটি হতে পারে। পুষ্টিবিদ ব্যাখ্যা করেন, শুয়ে থাকবেন না কারণ খাবার এখনও আপনার পেটে রয়েছে এবং এটি আপনার খাদ্যনালীর মধ্যে চলে যেতে পারে, যার ফলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স এবং অ্যাসিডিটি হতে পারে।
ঠান্ডা পানি দিয়ে ঔষধ খাবেন না
গরমে একটু ঠান্ডা পানি পান করাটাকে স্বস্তি ও তৃপ্তিদায়ক মনে করে থাকে। বাইরে থেকে ফিরে ঘর্মাক্ত অবস্থায় ফ্রিজ থেকে বের করে ঢক ঢক করে পান করে ফেলি ঠান্ডা পানি। একটা কথা মনে রাখবেন গ্রীস্মকাল হোক আর বর্ষাকাল হোক আর যতই গরম পড়ুক কখনোই ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করবেন না। ফ্রিজের ঠান্ডা পানি দিয়ে ঔষধও খাবেন না।
অনেকেরই ধারণা, গরমের দিনে ঠান্ডা পানি পান করে গরম থেকে মুক্ত হওয়া যায়। শরীরও ঠান্ডা হয়। অথচ বিষয়টা হয় উল্টো। আবার অনেক মানুষের গরম হোক আর শীত, ঠান্ডা পানি ছাড়া চলে না। এদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তবে ঠান্ডা পানি শরীরের উপকার নয়, বরং অপকারই করে। সব সময় নরমাল পানি পান করবেন। তবে হ্যাঁ টাটকা পানি অনেক ঠান্ডা থাকে, এতে কোন সমস্যা নেই।
যদি সর্দি বা ফ্লুতে চিকিৎসা করার সময় ঠান্ডা পানি পান করা হয়, ঔষধ খাওয়ার সময় যদি ঠান্ডা পানি দিয়ে ঔষধ খাওয়া হয়, তাহলে শরীরের ভেতরের প্রবাহকে আরও খারাপ করে তোলে। ঠান্ডা পানি পান করা একটি মন্দ অভ্যাস, যা আসলে যেকোনো মানুষের স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে।
সব সময় ফোন বাম কানে ধরে কথা বলবেন
বেশির ভাগ মানুষ ফোনে কথা বলার সময় তাদের ডান কান ব্যবহার করেন। আবার অনেকে আছেন যারা দুই কানে হেড ফোন লাগিয়ে কথা বলেন। একটি গবেষণা অনুযায়ী, ডান দিকের কান সরাসরি মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে। ফলে আপনি ছোট ছোট বিষয় নিয়ে চিন্তিত হতে পারেন। তখন বিকিরণ মস্তিষ্ককে বেশি প্রভাবিত করে।
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষ ডানহাতি। ফলে যেকোনো কাজ করার জন্য প্রথমেই তারা ডান হাত, ডান পা বা ডান কান ব্যবহার করেন। তবে ডান কানের ফোন ধরার জন্য নানা সমস্যা দেখা দেয় ব্যবহারকারীর। বাঁ কানের তুলনায় ডান কান মস্তিষ্কের বেশি কাছে থাকে। ফলে ডান কানে ফোন রেখে কথা বললে ব্রেনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
তাই ফোনে কথা বলার সময় বাঁ দিকের কান ব্যবহার করা উচিত। ফিনল্যান্ডের বিজ্ঞানী এবং নিউক্লিয়ার সেফটি অথরিটির ২০০২ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছিল, যখন মানুষের কোষ ফোনের সংস্পর্শে আসে তখন মোবাইল ব্লাড-ব্রেন ব্যারিয়ার-এর প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত করে। ব্লাড-ব্রেন ব্যারিয়ার-এর বাধা মানবদেহে সুরক্ষা কবচ হিসাবে পরিচিত।
দিনের বেলা বেশি করে পানি পান করবেন
দিনের বেলায় বেশি বেশি পান করা সুস্বাস্থ্য, শক্তি এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার গোপন রহস্য, বেশি বেশি পানি খেলে ওজন কমবে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পাবে। পানির চাহিদা পূরণে ৮*৮ নিয়মটি বেশ জনপ্রিয়। এর মানে প্রতিদিন আটবার পানি পান করা এবং প্রতিবার ২৪০ মিলিলিটার পানি গ্রহণ।
প্রাপ্তবয়স্ক ও কর্মক্ষম নারী-পুরুষের প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। তবে দিনে কতটুকু পানি পান করতে হবে, তা নির্ভর করে মূলত আবহাওয়া ও শারীরিক শ্রমের ওপর। শীতকালের চেয়ে গরমকালে শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায় আবহাওয়ার কারণেই। আর যাঁরা কায়িক পরিশ্রম বেশি করেন, তাঁদের বেশি পানি পান করতে হবে।
যারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘামেন, তাঁদের জন্য একটু বেশি পানি পান করা জরুরি। অনেকে মনে করেন সকালে খালি পেটে অনেক পানি পান করা ভালো। এর সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। তবে কিছু শারীরিক সমস্যায় এই অভ্যাসে উপকার পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সাধারণভাবে যখনই পানির তৃষ্ণা তৈরি হবে, তখনই পানি পান করে শরীরের ঘাটতি মেটাবেন।
বিকেল ৫টার পর ভারী খাবার খাবেন না
বিকেল ৫টার পর কখনোই ভারী খাবার খাওয়া যাবে না। প্রত্যেকটা খাবারের নির্দিষ্ট একটা সময় আছে। সকালের খাবার যেমন- সকাল ৭-৮ টার মধ্যেই খেতে হবে। দুপুরের খাবারের ক্ষেত্রে ১২টার পর থেকে ২টা পর্যন্ত খেয়ে নিবেন। বিকেল ৫টার পর কোন মতেই ভারী খাবার খাবেন না। হালকা নাস্তা করবেন। বিকেল ৫টা থেকে ৫.৩০টা নাগাদ চা-বিস্কুট চলতে পারে। আর সন্ধের দিকে ছোলা, ঘুঘনি, স্যুপের মতো খাবার খেয়ে সেরে নিন টিফিন। এই নিয়মটা মেনে চললেই কিন্তু সুস্থ থাকবেন।
লেখকের মন্তব্যঃ
আমাদের প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবনে শরীর ও মন সুস্থ থাকা খুবই জরুরি। এজন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ছাড়াও কিছু অভ্যাস অনুসরণ করা প্রয়োজন। যে অভ্যাসগুলো আমাদের লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে সহায়তা করে। এছাড়া, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলে অনেক শারীরিক সমস্যা এড়ানো সম্ভব হয় এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। ভালো থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url