অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করলে যে ক্ষতিগুলো হয় বিস্তারিত জেনে নিন

বর্তমানে যোগাযোগ ও বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল। মোবাইল ছাড়া যেন এক মিনিটও চলে না। হ্যাঁ সত্যিই তাই মোবাইল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের কি কি ক্ষতি করছে তাকি আমরা জানি ?
অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করলে যে ক্ষতিগুলো হয় বিস্তারিত জেনে নিন

হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের জানাবো- মোবাইল ব্যবহার করলে যে ক্ষতিগুলো হয় সেই সমস্ত তথ্যগুলো। শুধু যে বাচ্চাদের ক্ষতি হয় এমনটি নয়। মোবাইল ব্যবহারের ফলে ছোট থেকে বড় সবার যে ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে জেনে নিন।

ভূমিকাঃ

বর্তমানে স্মার্ট ফোনের ব্যবহার আমাদের যুব সমাজকে নষ্ট করে ফেলছে। বিভিন্ন ধরনের গেম, ক্যাসিনো, টিকটক ও অশ্লিল ভিডিও দেখতে সব সময়ের জন্য মোবাইলকে সঙ্গি করে নিয়েছে। লেখা পড়ায় মনোযোগ নাই, বাড়ির কোন কাজে সহযোগীতা নাই শুধু ফোন নিয়ে ব্যস্থ। কিন্তু তারা হয়তো জানেই না যে তাদের কি ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। আসুন ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক-
পেজ সূচিপত্রঃ
চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়
মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হয়
রাতের ঘুম কমে যায়
শ্রবণশক্তি কমে যায়
মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়
দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়
শরীরের অলস ভাব বেড়ে যায়
লেখকের মন্তব্যঃ

শরীরের অলস ভাব বেড়ে যায়

অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। একাধিক গবেষণায় ভিত্তিতে হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যায় পড়ছেন ব্যবহারকারীরা। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদদের বিভিন্ন গবেষণায়ও উঠে এসেছে মোবাইল ফোনের নানা ক্ষতিকর দিকসমূহের কথা। আসুন জেনে নেই মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি।

চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়

আমাদের চোখ বেশ নাজুক। স্মার্টফোন ব্যবহার কমিয়ে না আনলে এর নীল পর্দা সহজেই চোখের ক্ষতি করতে পারে। ফোনের স্ক্রিন ফোটোরিসেপ্টরের ক্ষতি, মাথাব্যথা, অস্পষ্ট দৃষ্টি এবং এমনকি শুষ্ক চোখের জন্য দায়ী হতে পারে। আপনার যদি এমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় তবে হতে পারে সেজন্য ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার দায়ী। তাই চোখদুটিকে বিরতি দিন।

গবেষকদের মতে এ বিষয়টি ‘এপিজেনেটিক্স’ সম্পর্কিত বিষয়। অর্থাৎ দীর্ঘ সময় চোখের খুব কাছে রেখে মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার একধরনের জিনগত সমস্যা দেখা দেয়। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে মোবাইল ফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার দৃষ্টিহীনতার কারণ হতে পারে। 

মার্কিন ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন অ্যাসোসিয়েশন এর মতে, মোবাইলের নীলাভ আলো চোখের রেটিনার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মাধ্যমে অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। স্ক্রিনের ফন্ট সাইজ বড় করে, চোখ থেকে অন্তত ১৬ ইঞ্চি দূরে রেখে এবং একটু পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্য স্ক্রিন থেকে চোখ ফিরিয়ে সবুজ গাছপালার দিকে তাকানোর মাধ্যমে এ সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। আর সব সময় মোবাইল স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখার চেস্টা করবেন।

মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হয়

মাইগ্রেনের রোগীদের মাথাব্যথার সময়কাল এবং ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে স্মার্টফোন ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে । মাইগ্রেনের রোগীদের মধ্যে এর অত্যাধিক ব্যবহার খারাপ ঘুমের গুণমান এবং দিনের ঘুমের সাথে সম্পর্কিত; তদুপরি, স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে ঘুমের মান হ্রাস পায়, দিনের ঘুম বাড়ে এবং জীবনের মান হ্রাস পায়।

মোবাইল ফোনের বিচ্ছুরণ থেকে মাথায় যন্ত্রণা, মাথা-ঘোরা ছাড়াও ব্রেন টিউমারও হতে পারে। অ্যাকাউস্টিক নিউরোমা, ম্যালিগন্যান্ট গ্লিয়োমা ইত্যাদির সম্ভাবনার কথা ও গবেষক মহলে জোর চর্চা হতে শোনা যায়। উল্লেখ্য, এইসব বিভিন্ন ধরনের ব্রেন-টিউমার হবার প্রবণতা বড়দের থেকে ছোটদের বেশি থাকে। 

সুইডেন-এর ওরিব্রো হসপিটাল-এর গবেষনা থেকে জানা যাচ্ছে- ছোটদের ব্রেন-এর ‘স্কাল বোন ডেনসিটি’ কম থাকে আর ‘ব্লাড ব্রেন ব্যারিয়ার’ কম কার্যকরি থাকে বলে তিনগুন বেশি রেডিয়েশান শোষন করতে পারে। ছোট ছেলে-মেয়েদের তাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না দেওয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ।

রাতের ঘুম কমে যায়

অন্ধকারে মোবাইল ব্যবহার করলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। রাতে শুতে গিয়ে অন্ধকারে মোবাইল দেখলে দীর্ঘ অনিদ্রা দেখা দেয়, যাকে ডাক্তারি ভাষায় ইনসোমনিয়া বলা হয়। ঘুমের একটা নিজস্ব নিয়ম বা ধারা রয়েছে তার ব্যাঘাত ঘটলে, যেটা ঘুমের নির্ধারিত সময়, সেই আর ঘুম আসতে চায় না। এর থেকে মানসিক বিকারও ঘটতে পারে। শরীরে একটা ক্লান্তি ভাব থাকে ও ঝিমুনি ভাব থাকে। 

আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের শরীর যেমন বিশ্রাম পায় ঠিক তেমন ভাবেই মাথাও বিশ্রাম পায়। ঘুম মাথার ভেতরে বহু হরমোনের গতি নিয়ন্ত্রণ করে। বড়দের মধ্যে এর ফলে অবসাদ দেখা দিতে পারে। এর ফলে মানুষের সম্পর্কগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত এবং একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়। খিদে পায় না। মনোযোগের অভাব হয়। রাতে ঘুম না হওয়ার জন্য চোখের চারপাশে কালো দাগ বা ছোপ পড়তে পারে।

শ্রবণশক্তি কমে যায়

মোবাইলে দীর্ঘক্ষণ কথা বলা, উচ্চ আওয়াজে গান শোনা এবং কানে হেডফোন গুঁজে রাখার মাধ্যমে দেখা দিতে পারে শ্রবণশক্তি হ্রাস হওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা। ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের শ্রবণশক্তি হ্রাসের হার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। দৈনিক ২-৩ ঘন্টার বেশি মোবাইল ব্যবহারকারীদের ৩-৫ বছরের মধ্যে আংশিক বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কানে হেডফোন লাগিয়ে যত্রতত্র চলাফেরায় প্রতিনিয়ত অনেক দূর্ঘটনা ঘটছে। পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হওয়া ট্রেন, বাসসহ নানা যানবাহনগত দূর্ঘটনার বিরাট সংখ্যক কানে হেডফোন লাগিয়ে চলাফেরার কারণে হচ্ছে। প্রয়োজন অতিরিক্ত সাউন্ডে গান না শোনা, সব সময় হোডফোন গুঁজে না থাকা এবং দীর্ঘসময় মোবাইলে কথা বলার প্রবণতা কমিয়ে আনা সহ সর্বোপরি সচেতনতাই হতে পারে এর কার্যকর সমাধান।

ইউরোপের ‘বায়োইলেক্ট্রম্যাগনেটিক্স’-এর একদল বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বাঁদিকের কানে ফোন ধরে কথা বলতে। এতে ব্রেনের ক্ষতি কম হয়। এই মত সমর্থন করে অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অফ অটোল্যারিঞ্জোলজি-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, ডানদিকের কানে ফোন ধরে কথা বললে মস্তিষ্কে সরাসরি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন ধরণের সমস্যা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফোন থেকে নির্গত ক্ষতিকর রেডিয়েশনের প্রভাবে দিনকে দিন কমে যাচ্ছে শ্রবণশক্তি, নষ্ট হচ্ছে কণ্ঠস্বর। দেখা মিলছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ নানা সমস্যা।

মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়

আমরা সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে সর্ব প্রথম মোবাইল ফোন চেক করি এবং সারাদিনের সঙ্গী হিসেবে মোবাইল ফোনকে নিজের সাথে বহন করি।এইভাবে দিনের শুরু থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মোবাইল ফোনই আমাদের সঙ্গী হিসেবে থাকে। এককথায় বলা যায় আমরা আমাদের পরিবার- পরিজন, এবং প্রিয়মানুষগুলোর চেয়েও মোবাইল ফোনকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি।

দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে অনেক সময় ব্যবহারকারীর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। একই সাথে অস্থিরতা ও অমনোযোগীতা বৃদ্ধি পায়। সাধারণত তখন ব্যবহারকারী সহজে এ সমস্যা উপলব্ধি করতেও পারেন না। নিজের অজান্তেই কারো সাথে অশোভন আচরণ করে ফেলেন। এ ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হলে অতিরিক্ত মোবাইল-আসক্তি কমিয়ে আনতে হবে।

দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়

মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের জীবন ও সম্পর্ককে যান্ত্রিক করে তুলছে। তৈরি করছে হতাশা, বাড়িয়ে দিচ্ছে দূরত্ব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মার্টফোন-ট্যাব বা এ জাতীয় হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইসে আমাদের অধিকাংশ সময় ব্যয় হচ্ছে। চাপ পড়ছে মেরুদণ্ডে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নাক-কান-গলা। অতিরিক্ত মাত্রায় এসব ডিভাইস ব্যবহারের ফলে প্রভাব পড়ছে ঘুমে। 

অধিকাংশ সময় এসবের পেছনে ব্যয় করার ফলে পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে না। যার ফলে হাইপার অ্যাকটিভিটি জটিলতায় ভোগেন অনেকে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল ফোন যে নীল আলো ছড়ায়, রুমের লাইট নিভিয়ে দেওয়ার কারণে রাতে সেটি আরও তীখ্ন হয়ে যায়। এটি শুধু দৃষ্টিশক্তির ক্ষতিই করে না, পাশাপাশি শরীরের ওপর বেশ বিরূপ প্রভাব ফেলে।

শরীরের অলস ভাব বেড়ে যায়

মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শরীরে অলসতা ভাব চলে আসে। কারণ মোবাইল বা অন্য যে কোন ডিভাুইস দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের ফলে অন্য কোন কাজে মনে বসেনা। হাত ব্যাথা হয়ে যাবে, ঘাড় ব্যাথা হয়ে যাবে, ক্ষুধা ও ঘুম না থাকার ফলে শরীরে অলসতা ভাব আসে।

আপনি যেকোনো সময়ই অতিরিক্ত টিপলে ক্ষতি হবে, মনে করেন দুপুর একটা দেড়টার দিকে গোসল খাওয়া ফেলে মোবাইল টিপাটিপিতে বিজি থাকলেন তখন কি ক্ষতি হবেনা? হবে আবার সকালে ঘুম ভেঙে উঠে ফ্রেশ না হয়ে নাস্তা না খেয়ে মোবাইল টিপলেন তখনও ক্ষতি হবে।রাতে না ঘমিয়ে মোবাইল নিয়ে পরে থাকলেন তখনও ক্ষতি হবে, অর্থাৎ সবসময়ই অতিরিক্ত মোবাইল টিপলেন তাতে চোখ এবং শারীরিকভাবে ক্ষতি হবেন আপনি, তবে রাত জেগে মোবাইল টিপলে চোখ শরীর দুটোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

লেখকের মন্তব্যঃ

মোবাইল অতি প্রয়োজনীয় ডিভাইস। যার ব্যবহার আমাদেরকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, ঠিক তার চেয়ে বেশি করেছে ক্ষতিগ্রস্থ। বর্তমানে প্রজন্মকে ধ্বংস করার হাতিয়ার হয়ে দাড়িছে এই মোবাইল। নিশ্চয় আমরা এটি ব্যবহার করবো, তবে পরিমিত এবং সময় মত। তবে সব সময় নয়। সঠিক সময়ে দাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে, রাতের ঘুম বাদ দিয়ে এর ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকব ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪