প্রেসার হাই হলে এবং প্রেসার লো হলে কি খাবেন বিস্তারিত জেনে নিন

আমরা আমাদের লাইল স্টাইলের কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হই। বর্তমান সময়ে আমাদের কমন কিছু অসুখ তৈরি হয়েগেছে। যেমন- হাই প্রেসার-লো প্রেসার ও ডায়াবেটিস। হাই প্রেসার ও লো প্রেসার হলে কি কি খাবার খাওয়া উচিৎ তাকি আপনি জানেন ?
প্রেসার হাই হলে এবং প্রেসার লো হলে কি খাবেন বিস্তারিত জেনে নিন

বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলে আপনার জানাবো যে, হাই প্রেসার হলে কোন খাবারগুলো খাবেন আর লো প্রেসার হলে কোন খাবারগুলো খাবেন সে সম্পর্কে। প্রেসার হয়েগেলেও কি ভাবে ভালো থাকবেন তা জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ভূমিকাঃ

একজন সুস্থ মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিমি মার্কারি এইটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে রক্তচাপ ৯০/৬০ মিমি মার্কারির নিচে হলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেসার বলা হয় আর বেড়ে গেলে তাকে হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ বলে। রক্তচাপ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া দুটিই স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। এগুলোর যে কোন একটি সমস্যা হলে নিচের উল্লেখিত খাবারগুলো খেলে ভালো থাকবেন আশা করা যায়।

পেজ সূচিপত্রঃ

হাই প্রেসারের কারণ ও লক্ষণ
প্রেসার হাই বা উচ্চ রক্তচার হলে যা যা খাবেন
লো প্রেসারের কারণ ও লক্ষণ
প্রেসার লো হলে যা যা খাবেন
ডায়াবেটিস হলে করণীয় কি
লেখকের মন্তব্য

হাই প্রেসারের কারণ ও লক্ষণ

হাই প্রেসার বা লো প্রেসার এখন একটি কমন অসুখের নাম। এই দুটির মধ্যে একটিও নেই এমন মানুষ পাওয়া যাবেনা বললেই চলে। এই সমস্যা যে কোন বয়সে যে কোন লোকের হতে পারে। তবে আমাদের কিছু বদ অভ্যাসের কারণে এই সমস্যার স্বীকার হতে হয়।
  • খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ গ্রহণ করা।
  • অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় মদ্যপান করা।
  • শরীরের অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি।
  • ধূমপান।
  • পর্যাপ্ত শাকসবজি এবং ফলমূল না খাওয়া।
  • রাত্রে পর্যাপ্ত না ঘুমোনো (৬-৮ ঘন্টা)।
  • অতিরিক্ত চা , কফি বা ক্যাফিন-যুক্ত পানীয় সেবন।

লক্ষণগুলো

অধিকাংশ লোকই বুঝতে পারে না তার উচ্চরক্তচাপ আছে, অর্থাৎ উচ্চরক্তচাপ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গবিহীন। এ জন্যই উচ্চরক্তচাপকে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার বা নীরব ঘাতক। যেটা আবশ্যক তা হলো নিয়মিত রক্তচাপ চেক করা। যে উপসর্গগুলো হতে পারে তা হলোঃ

  • মাথা ধরা- বিশেষ করে ভোরে বা শেষ রাতে মাথা ধরা। এর সঙ্গে ঘেমে যাওয়া বিশেষ করে রাতের শেষের দিকে ঘামা। মাথাব্যথার সঙ্গে ঘাড়ে ব্যথা বা পিঠের উপরের দিকে ব্যথা বা জ্যাম লাগার অনুভূতি হতে পারে। এর সঙ্গে কান বন্ধ লাগতে পারে; দৃষ্টি শক্তির পরিবর্তন পরিলক্ষিত হতে পারে।
  • অনেক বেশি প্রেশার হলে (বিশেষ করে বয়স্কদের) দাঁড়ালে দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, মতিভ্রম, সন্তস্ত হওয়া, বমি লাগা, গা কাপা ইত্যাদি হতে পারে।
  • উচ্চরক্তচাপের জন্য হার্টের ব্যথা, হৃদস্পন্দনের পরিবর্তন, হার্টের দুর্বলতা/হার্ট ফেইলুরের উপসর্গ নিয়ে আসতে পারে। একই কারণে ব্রেইন বিকল/স্ট্রোক, কিডনি বিকল/রেনাল ফেইলুরের উপসর্গ পাওয়া যেতে পারে হাইপ্রেসারের রোগীদের।

প্রেসার হাই বা উচ্চ রক্তচার হলে যা যা খাবেন

প্রেসার হাই বা লো দুটোই শরীরের জন্য খারাপ। এই সমস্যা একেবারে দূর করা যাবেনা। তবে কিছু টিপস মেনে চললে নিশ্চিন্তে ভালো থাকবেন একেবারে স্বাভাবিক মানুষের মতো। তবে অবশ্যই আপনার লাইফ স্টাইল, খাওয়া দাওয়া, চলাফেরা হবে একেবারে নিয়মের মধ্যে। 

একটু নিয়ম ভাঙ্গলেই আপনার ক্ষতি হবে। উচ্চ রক্তচাপ হলে যা যা খাবেন এবং যা যা খাবেন না নিম্নে তা উল্লেখ করা হলোঃ- ডাব, কলা, বেদানা, আপেল ও তেতুল হাই ব্লাড প্রেসারের জন্য উপকারি।

প্রথমতঃ- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য তেল ও চর্বিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত লবণ ও চিনিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে। এর বদলে খাবেন রঙিন শাকসবজি। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফোলেট থাকে, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

দ্বিতীয়তঃ- মৌসুমি ফল এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে। লেবু, জাম্বুরা, পেয়ারা, আমলকী, আপেল, কমলা, মাল্টা, ডালিম খাদ্যতালিকায় সাধ্যমত রাখতে চেষ্টা করুন। এসব ফলে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রক্তনালির সুস্থতা বজায় রাখে এবং রক্তচাপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

তৃতীয়তঃ- কলা খান। কারণ কলাতে আছে পটাশিয়াম। যা রক্তচাপ কমায়। প্রতিদিন একটি কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সম্ভব হলে সকালে একটা বিকেলে একটা কলা খেতে পারেন। পাশাপাশি খেতে পারেন নাশপতি ও পেঁপে।

চতুর্থতঃ- সামুদ্রিক মাছ খাবেন। সমুদ্রে থাকা মাছে আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যা হৃৎপিণ্ডের সুস্থতাই বজায় রাখে এমনটা নয়, রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। পাশাপাশি অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল ব্যবহার করুন রান্নাবান্নায়। প্রতিদিন সরবিহীন এক কাপ দুধ এবং একটি সিদ্ধ ডিম খাবেন।

পঞ্চমতঃ- পালং শাকে পটাশিয়াম, গাজরে ফেনোলিক যৌগ, টমেটোতে পটাশিয়াম ও ক্যারোটিনয়েডসের আধিক্য, ব্রকলিতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, রসুনের সালফারজাতীয় যৌগ রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাই এগুলো খেতে চেষ্টা করবেন।

লো প্রেসারের কারণ ও লক্ষণ

লো প্রেশার হতে পারে হরমোনজনিত কারণে। আবার কারো কারো দেখা যায় হঠাৎ করেই রক্তচাপ কমে যায়। বিভিন্ন অসুস্থতাজনিত কারণে এটা হতে পারে। আবার ব্যায়াম, ক্লান্তির কাজ এবং ঠিকমত না খেলেও রক্তচাপ কমে যেতে পারে। পানি শুণ্যতা, সঠিক খাবার না খাওয়া, অপুষ্টি, অপর্যাপ্ত ঘুম, ডায়রিয়া হওয়া, দুশ্চিন্তা ও অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলেও লো প্রেশার হয়ে থাকে।

লো প্রেশারের লক্ষণ

কিছু লক্ষণ থেকে আমরা খুব সহজেই লো প্রেসার আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারি। সঠিক সময়ে রোগ চিহ্নিত হলে নিরাময় অনেক সহজ হয়। চলুন এবার লক্ষণগুলো জেনে নেই!

১. মাথা ঘোরানো বা মাথা হালকা অনুভূত হওয়া।

২. বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে হঠাৎ মাথা ঘুরে যাওয়া বা ভারসাম্যহীন হয়ে যাওয়া।

৩. মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

৪. চোখে অন্ধকার বা ঝাপসা দেখা।

৫. বমিভাব হওয়া।

৬. শারীরিক বা মানসিক অবসাদ।

৭. খুব বেশী তৃষ্ণা অনুভূত হওয়া।

৮. ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া।

৯. হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।

১০. প্রস্রাব কমে যাওয়া।

১১. অস্বাভাবিক দ্রুত হৃদ কম্পন হওয়া।

প্রেসার লো হলে যা যা খাবেন

নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেশারে খুবই পরিচিত একটি শব্দ। এটির আরেকটি নাম হাইপোটেনশন। হাই ব্লাড প্রেশার যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তেমনই লো ব্লাড প্রেশারও ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে আপনার প্রেসার দ্রুত বেড়ে যাবে। যেমন- ডিম, মাংস, কেচাপ, পুদিনা পাতা, ওরস্যালাইন ও লবণ।
  • আয়রন, ভিটামিন সি, বি ১২, ও ফলেট শরীরের রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। এই সব খাদ্য উপাদানগুলো যে খাদ্যের মধ্যে পাওয়া যায় সেসব খাদ্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
  • ডিম হাইপোটেনশনের রোগীদের জন্য উপযোগী খাদ্য। ডিমকে আদর্শ খাদ্যও বলা হয়। ডিমে আছে ভিটামিন বি ১২, যা রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।
  • প্রতিদিন তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। স্যুপ, কফি, ফলের রস, দুধ, শরবত ইত্যাদি তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
  • টক জাতীয় ফলে থাকে ভিটামিন সি। এ ছাড়াও পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা সোডিয়ামের কার্যকারিতা ঠিক রাখে। তাই লেবু, মালটা, কমলা জাতীয় ফল প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
  • গরু, মুরগির মাংস, সামুদ্রিক মাছ, ডাল, লাল শাক, পালং শাক, কচু শাক, সিমের বিচি, মিষ্টি কুমড়ার বিচি ও শুকনা ফল আয়রনের ভালো উৎস। এ ছাড়া এতে সোডিয়াম ভালো পরিমাণে থাকে।
  • ডাবের পানিতে থাকে সোডিয়াম, যা রক্তচাপ বাড়ায়। তাই ডাবের পানি খাওয়া ভালো।
  • যাদের ব্লাড প্রেশার একদম লো থাকে তারা ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। এটি রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।
  • অসুস্থতাজনিত কারণে যেমন জ্বর, ডায়রিয়া ইত্যাদি কারণে প্রেশার কমে যেতে পারে।
এ সময়ে তাৎক্ষণিক যেসব খাবার দিলে উপকার পাওয়া যেতে পারে-
  • স্যালাইন প্রেশার বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্যালাইন খেলে তাৎক্ষণিক প্রেশার বাড়তে থাকে। এ ছাড়া লবণ পানির সঙ্গে মিশিয়ে হালকা একটু চিনি যোগ করে খাওয়ানো যেতে পারে।
  • আঙ্গুরের রসও প্রেশার বাড়ানোর জন্য খুবই উপকারী।
  • লবণযুক্ত খাবার যেমন চিপস, স্যুপ খাওয়ানো যেতে পারে।

লেখকের মন্তব্যঃ

অনেকের মতে বিপদের আরেক নাম হলো ব্লাড প্রেশার। এই অসুখে আক্রান্ত রোগীর শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা বারেবারে এই অসুখ নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নইলে যে সমস্যার শেষ থাকবে না। তবে চিকিৎসকের মতে তাদের এমন খাবার খেতে হবে যেন ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই উপরে বর্ণিত নির্দেশিকা মেনে চলুন। সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪