ভালো থাকার কিছু সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে ভালো থাকতে চাই। সবাই কি ভালো থাকতে পারি ? অনেক চেষ্টার পরও কোন কোন সময় ভালো থাকা যায় না। কোন কোন কাজগুলো করলে সব সময় ভালো থাকবেন তাকি জানেন ?
আজ আপনাদের জানাবো ভালো থাকার কিছু কৌশল বা উপায় সম্পর্কে। সর্বদায় ভালো থাকতে চাইলে কোন কাজগুলো করবেন এবং কোন কাজগুলো করবেন না সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
ভূমিকাঃ
মানুষ এক বিচিত্র প্রাণী পৃথিবীর মধ্যে। কোন মানুষ কেমন বাইরে থেকে চেনা যায় না। আপনি যতই শিক্ষিত হন বা অভিজ্ঞ হন না কেন কখন আপনার জীবনে খারাপ কিছু ঘটবে এটা বলা যায় না। তবে খারাপের মাঝে বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে কিছু উপায় অবলম্বণ করে ভালো থাকার নামই জীবন। আসুন জেনে যাক সেই উপায়গুলো-
পেজ সূচিপত্রঃ
কাউকে টাকা ধার দিবেন না
কাউকে অন্ধ বিশ্বাস করবেন না
কারো সাথে বেশি ভাব করবেন না
সেজে কারো উপকার করবেন না
অতিরিক্ত নিস্বার্থ হবেন না
মনের কথা সবাইকে বলবেন না
লোভী মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করবেন না
কৃপন ব্যক্তিদের সাথে মিশবেন না
নিজের দয়ালু ভাবকে সংযত রাখুন
বেশি সহজ সরল হবেন না
অসৎ ব্যক্তি থেকে দীক্ষা নিবেন না
পতিতা নারীর সঙ্গ নিবেন না
ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করবেন না
লেখকের মন্তব্যঃ
কাউকে টাকা ধার দিবেন না
বর্তমানে টাকা ধার দেওয়া খুবই ঝুঁকির কাজ। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে নিজের প্রাণটাই চলে গেছে। টাকা নেওয়ার সময় আদিখ্যেতার অভাব নাই। কিন্তু ফেরত চাইতে গেলেই মহাবিপদ। টাকাতো গেল তার সাথে সাথে সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায়। সাধারণত যারা টাকা ধার দিয়ে থাকেন। তারা খুব সরল মন-মানসিকতার হয়ে থাকে।
যার ফলে কিছু চতুর প্রকৃতির লোকজন ভুলিয়ে ভালিয়ে টাকা নেওয়ার পরে আর ফেরত দিতে চায় না। পরিচিত কাউকে টাকা ধার দিবেন না ৷ যদি একান্তই দিতে হয় তবে সম্ভব গিফট করুন। এতে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয় নেই, আবার টাকা চাওয়ারও বিড়ম্বনা নেই।
অপরদিকে যদি গিফট করা টাকা না চায়তেই ফেরত পান তবে আপনাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও মজবুত হবে। অন্যথায় কেউ টাকা ধার চায়লে সুন্দর একটি অজুহাত দাড় করিয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়ায় উত্তম। এভাবে টাকা ধার দেওয়াও লাগল না আবার সম্পর্কও নষ্ট হল না। আপনি সেফ জায়গায় থাকলেন।
কাউকে অন্ধ বিশ্বাস করবেন না
একা একা এই পৃথিবীতে টিকে থাকা বা চলাফেরা করা সম্ভব নয় নিজেদের প্রয়োজনে আমরা একে অপরের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলি কিন্তু আমরা অনেক সময় একে অফারের উপরে অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ি এবং মানুষকে অন্ধবিশ্বাস করতে শিখে যায় এটি আসলে খুবই ক্ষতিকারক একটি দিক মানুষকে কখনো অন্ধভাবে বিশ্বাস করা উচিত নয়।
আমাদের সবসময় সতর্ক থাকা উচিত কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে সব সময় কোন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই যাচাই-বাছাই এবং সেটা পর্যবেক্ষণ করেই তারপরে সেটাকে বিশ্বাস করা উচিত কারণ অন্ধভাবে বিশ্বাস করলে সবচেয়ে বেশি প্রতারণা শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কারো সাথে বেশি ভাব করবেন না
জীবনে চলার পথে অনেকের সাথে পরিচয় ঘটে। অনেকের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি হয় খুব গভীর ভাবে। কাছের হোক বা দূরের কাউকে খুব বেশি আপন ভাবতে নেই। কারণ আপন মানুষগুলো জানে ঠিক কোথায় আঘাত করলে আপনি বেশি কষ্ট পাবেন। কখন কোথায় আঘাত করতে হবে, আপনার দূর্বলতার জায়গা সে জানে।
কাউকে খুব বেশি ভালো লাগতেই পারে, তবে তাকে ছাড়া আপনি অচল বা তাকে ছাড়া আপনি আর কিছুই ভাবতে পারেন না। এমনটি করবেন না বা তাকে বুঝতে দিবেন না। আর একটি কথা তাকে কখনোই আপনার একেবারে গোপন কথা বা পরিবারের কোন গোপন খবর বলবেন না। এতে কিন্তু আপনার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
সেজে কারো উপকার করবেন না
নিজে থেকে অন্যের উপকার করতে যাবেন না। এতে কিন্তু আপনি বড় ধরনের বিপদে পড়তে পারেন। এই সব কারণে মানুষ মানুষের উপকারের কথা মাথায় নিয়ে আসে না। দেখা যাবে আপনি নিজের ক্ষতি করে নিজে থেকে উপর পড়া হয়ে অন্যের উপকার করলেন এ ক্ষেত্রে সামান্য একটু অপূর্ণতা দেখা দিলে আপনার গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়বে।
এমন একটা সময় ছিল, যখন মানুষ অন্য মানুষের উপকার করে বেড়াতো। এতে সেই মানুষটি অনেক সুখ অুনুভব করতো। হাদিসেও আছে অন্যের উপকারে এগিয়ে আসার ব্যাপারে। তবে কালের বিবর্তনে আস্তে আস্তে সব কিছুই যেন উল্টে যাচ্ছে। এমন অনেক মানুষ আছে যারা অন্যের উপকার করতে এসে সারা জীবন সেই উপকার করার কলংক বয়ে বেড়াচ্ছেন।
অতিরিক্ত নিস্বার্থ হবেন না
কিছু মানুষ তো এতোটাই স্বার্থপর হয় যে প্রয়োজন মিটে গেলে কাছের মানুষটিকেও ছুড়ে ফেলে দিতে এক মুহুর্ত ভাবে না, কখনো কখনো তো এরা তাদের শত্রু বলেও গন্য করে। আসলে এদের স্বভাব কেনানোদিই পাল্টাবে না, এদের মধ্যে কখনোই কৃতজ্ঞতা বোধ জাগ্রত হবে না। এদের যতই ভালোবাসো এরা স্বার্থপরই থেকে যাবে।
কখনোই একেবারে অতিরিক্ত নিঃস্বার্থ হবেন না। আল্লাহ আপনার উপর নারাজ হয়ে যাবেন। অনেক সময় আমরা মানুষেরা চাইলেও নিঃস্বার্থ হতে পারিনা। স্বার্থের কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের আত্নার ও আত্নীয়তার সম্পর্ক নষ্ট হয়। পরিশেষে এই স্বার্থপরতার কারণে আমাদের একা থেকে যেতে হয়। কিন্তু আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি নিঃস্বার্থ মানসিকতায় এনে দিতে পারে আমাদের মানসিক প্রশান্তি। এই ধরণীর বুকেই নেমে আসতে পারে স্বর্গসুখ।
মনের কথা সবাইকে বলবেন না
ভালো থাকতে চাইলে মনের কথা সবাইকে বলতে যাবেন না। কোন কোন সময় কাউরি সাথে এমন ভাব তৈরি হয় যে, মনের সব কথা তার সামনে বলে ফেলে, এমনটি মোটেও ঠিক নয়। আজ হয়তো তার সাথে বন্ধুত্ব আছে, তাই বলে সারা জীবন থাকবে এমনটি নয়। সময়ের পরিক্রমায় তার সাথে গভীর বন্ধুত্ব ছিন্ন হতেও পারে।
লোভী মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করবেন না
বন্ধুত্ব আমাদের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গুলোর মধ্যে একটি। বন্ধুত্বের সম্পর্ক আপনাআপনিই তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু কিছু মানুষ রয়েছেন যারা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থের কারণে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করে থাকেন। তাদের কাছে আসলে এই সম্পর্কের গুরুত্ব নেই একেবারেই। এই ধরণের মানুষ আপনার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই লোভী মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে যাবেন না একেবারেই।
যিনি অনেক বেশি টাকা চেনেন তাকে একটি মুহূর্তের জন্যও বিশ্বাস করতে যাবেন না। তিনি আপনার ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে টাকার বিনিময়ে আপনার অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলবেন। কারণ যারা অরিতিক্ত মাত্রায় টাকা পাগল হন তাদের মধ্যে কোনো ন্যায় নীতি বিচার বুদ্ধি থাকে না। তারা শুধুই টাকা চেনেন বন্ধু চেনেন না।
কৃপন ব্যক্তিদের সাথে মিশবেন না
যে ব্যক্তি সব কিছুতেই কৃপনতা করে তার সাথে মিশবেন না। কৃপণতা মানুষের একটি মন্দ স্বভাব। ইসলামে কৃপণতার কোনো স্থান নেই। কোরআন ও হাদিসে কৃপণতা পরিহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাদের দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন মনে না করে যে তা তাদের জন্য কল্যাণকর, বরং তা তাদের জন্য (খুবই) অকল্যাণকর।
নিজের দয়ালু ভাবকে সংযত রাখুন
সব জায়গাই দয়ালু ভাব দেখাতে যাবেন না। কোন কোন জায়াগাই বা জায়গা বিশেষে কঠোর হতে শিখুন। হ্যাঁ আল্লাহ নিজে দয়ালু এবং তিনি দয়ালুদের পছন্দ করেন। তবে সব জায়াগায় নয়। গরিব, অসহায়দের প্রতি দয়ালু হবেন। তবে অন্যায়কারীদের ব্যাপারে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। তাদের ব্যাপারে দয়ালু ভাব দেখিয়ে মাফ করা যাবে না।
বেশি সহজ সরল হবেন না
কোনো ব্যক্তির খুব বেশী সহজ-সরল হওয়া উচিৎ নয়। কারণ, সোজা গাছ এবং সোজা মানুষদের প্রথমে কাটা হয়। বর্তমানে সহজ-সরল মানুষ পাওয়া খুব কঠিন হয়ে যায় কারণ এখন প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই আরেকটা করে খারাপ মানুষ রয়েছে। যারা সব সময় মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে কিন্তু যে সহজ সরল মানুষ রয়েছে তারাই সব সময় কষ্ট করে। আশেপাশের এই খারাপ মানুষ গুলো মিলে সহজ সরল দু একটা মানুষ রয়েছে তাদেরকে সব সময় কষ্ট দেয়।
অসৎ ব্যক্তি থেকে দীক্ষা নিবেন না
অসৎ ব্যক্তির কাছ থেকে দীক্ষা নেয়া যাবে না। কোন বুদ্ধি-পরামর্শ বা কোন উপদেশ গ্রহণ করা যাবে না। অসৎ ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকুন, তাদের সহচর্জে যাওয়া যাবে না। একেবারে প্রয়োজন ছাড়া তাদের কাছেই যাবেন না। অসৎ ব্যক্তি ধর্মের বিধিবিধান না মেনে অন্যদের উপদেশ দেয় তাও আবার ভূলগুলোই বেশি। এক কথায় অসৎ অসৎই সর্বাবস্থায় তারা পরিত্যাজ্য।
পতিতা নারীর সঙ্গ নিবেন না
একজন পুরুষ মানুষ হিসেবে আপনার বিয়ে করা ফরজ। এক এক করে আপনি চারটি বিয়ে করতে পারবেন, তবুও পতিতা নরীর সঙ্গ নিয়া যাবে না। আপনার যৌবন, আপনার মূল্যবান সময় কখনোই পতিতা নরীর কাছে গিয়ে নষ্ট করবেন না। অনেক মানুষ এমন আছেন যারা বিয়ের আগে এবং বিয়ের পরেও পতিতালয়ে যান বা এদেরকে বাসায় নিয়ে আসেন যা মোটেও ঠিক নয়।
পতিতা নরীর সঙ্গে সঙ্গ দেয়া বা তাদের সাথে ফুর্তি করা ধর্মীয় ভাবেও নিষিদ্ধ। এটা চরম পাপ, যা তওবা করে ফিরে আসা ছাড়া মাফ হবে না। সামাজিক ভাবেও এই কাজটিকে সবায় অপছন্দ করেন। এবং এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে। তবে তাকে সেই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন, তাকে সাহায্য করতে পারেন। বা বিয়ে করে তার জীবনটাকে পরিবর্তন করতে পারেন।
ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করবেন না
ধর্ম এসেছে মানুষের কল্যাণে, মানবতার কল্যাণে। ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। অনেক মানুষ আছে যারা ধর্মের দোহায় দিয়ে টাকা উপার্জন করেন। অনেকে আছেন, তাবিজ বিক্রি করেন। আবার কেউ কেউ ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে চাঁদা আদায় করে নিজের জন্য খচর করেন, মানুষের কাছে মিথ্যা কথা বলে মসজিদ বা মাদরাসার নামে টাকা তোলার পর আত্নসাত করেন।
আমাদের দেশের প্রায় নব্বই শতাংশ জনগণ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও আজ আমাদের সমাজে শান্তি নেই, নিরাপত্তা নেই, সুবিচার নেই। আজ আমরা ইসলামের মূল, ইসলামে বর্ণিত সেই শিক্ষা ও আদর্শ থেকে বহুদূরে সরে এসেছি যার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী। শুধু আমরাই নই বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের আজ একই অবস্থা।
লেখকের মন্তব্যঃ
আমরা সবাই চাই ভালো থাকতে। ভালো থাকার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কত কিছুই না করে থাকি। কখনো সফল হই, আবার কখনো ব্যর্থ হই। তাই বলে কি ভালো থাকার চেষ্টা করবো না। অবশ্যই করবো। প্রিয় বন্ধগণ উপরে বর্ণিত পন্থাগুলো অবলম্বণ করে দেখুন, আশা করি ভালো থাকবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url