জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এর ভূল সংশোনের নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন

১৮ বছরের উপরে বাংলাদেশের নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকাটা অতি জরুরী। অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রে ভূল থাকে, যার ফলে সংশোধন করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু কিভাবে সংশোধন করবেন আপনি কি জানেন ?
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এর ভূল সংশোনের নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন

হ্যাঁ বন্ধুরা আজকের আলোচনা থেকে জানতে পারবেন কিভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভূল সংশোধন করবেন। এখানে জানতে পারবেন আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে আপনি কি করবেন। তো আর দেরি না করে আসুন শুরু করা যাক-

ভূমিকাঃ

জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডে ভূল থাকলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। তাই এই রকম ভূল থাকলে কিভাবে ভূল সংশোধন করবেন তা আজকের আলোচনা থেকে জেনে নিন। নামের কোন অক্ষর ভূল বা পিতা-মাতার নামে ভূল অথবা অন্য কোন তথ্যে ভূল রযেছে ? চিন্তার কোন কারণ নাই। মাত্র ৭/১৫ দিনের মধ্যেই অনলাইনে আবেনদ করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে পারবেন খুব সহজেই।

পেজ সূচিপত্রঃ

জাতীয় পরিচয়পত্র কিভাবে সংশোধন করবেন
অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধন
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন ফরম
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কত দিন লাগে
অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের ফি কত
জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা-মাতার নাম সংশোধনে কি কি লাগে
জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্ম তারিখ সংশোধন
লেখকের মন্তব্যঃ

জাতীয় পরিচয়পত্র কিভাবে সংশোধন করবেন

জাতীয় পরিচয়পত্র কিভাবে সংশোধন করবেন? এই প্রশ্ন যদি হয় আপনার তাহলে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন আর্টিকেলটি। সাধারণত অনেক সময় ভূল থাকার কারণে আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হয়। বিশেষ করে যারা পূর্বে জাতীয় পরিচয়পত্র করেছে তাদের এই ভুলগুলো বেশি হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে যেহেতু অনেক সচেতন মানুষ তাই ভুলগুলো কম দেখা যাচ্ছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই অনলাইনে আবেদন করতে হবে। যেহেতু বর্তমান সময়ে প্রতিটি কাজ অনলাইন এর মাধ্যমে করা হয় তাই অনলাইন ছাড়া অফলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা যাবেনা। তাই অনলাইনের মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুলগুলো সংশোধন করে নিতে পারবেন খুব সহজে।

অনলাইনের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হলে আপনাকে বেশ কিছু অ্যাপস ডাউনলোড করে নিতে হবে। সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ে জেনে নিন কিভাবে ভুল হওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করবেন। প্রক্রিয়াটা অনেক সহজ ও সুন্দর একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ে জেনে নিন সংশোধনের পদ্ধতিগুলো।

অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধন

অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম খুবই সহজ। অনেক সময় দেখা যায় যে আমাদের এনআইডি কার্ডের নাম অথবা পিতা মাতার নামের ভুল হয়ে যায়। এই ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য অনলাইন হচ্ছে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। একটা কথা বলে রাখা ভালো যে, এনআইডি কার্ড সংশোধনী অনলাইন ছাড়া অফলাইনে হয় না।

সাধারণত জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার জন্য বেশ কিছু ডকুমেন্ট স্ক্যান করে জমা দিতে হবে তাই প্লে স্টোরে গিয়ে NID WALLET নামের অ্যাপসটি ডাউনলোড করে ইনস্টল করে নিন।

এর পরে আপনাকে গুগলে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন লিখে সার্চ করলেই যে ওয়েবসাইট প্রথম অবস্থানে থাকবে তার ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। তারপর অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে। যদি আপনি এখানে আপনার একটি একাউন্ট তৈরি না করেন তাহলে আপনি কখনোই আবেদন করতে পারবেন না।

সাধারণত আবেদন করার পরে বেশ কিছু অপশন দেখতে পাবেন সেখান থেকে আপনাকে এডিট অপশন বেছে নিতে হবে। এরপরে যেখানে ভুল ছিল সাধারণত সেই ভুলটিকে সংশোধন করে নিতে হবে। যে বিষয়গুলো সংশোধন করবেন সাধারণত ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নেবেন, যেন এখানে আবার ভূল না হয়।

এরপরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে ফি জমা দিতে হয় সাধারণত আপনি বিভিন্ন অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে জমা দিতে পারবেন। ফি জমা দেওয়ার পরে যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রয়েছে সেগুলো প্রথমে যেই অ্যাপস ডাউনলোড করে ইনস্টল করছেন তার মাধ্যমে জমা দিন।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার জন্য প্রথমে আপনাকে services.nidw.gov.bd এই ওয়েবসাইটের মধ্যে প্রবেশ করতে হবে। সেখান থেকে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ এবং ঠিকানা দিয়ে একাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। সাধারণত এরপরে প্রোফাইল থেকে এডিট অপশনে ক্লিক করে সংশোধন করতে হবে।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের স্ক্যান করাঃ- জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার জন্য আবেদন করার আগে আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলোকে স্ক্যান করে নিতে হবে প্রমাণ হিসেবে। কারণ প্রমাণ ছাড়া আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে দেওয়া হবে না। তাই যথেষ্ট পরিমাণে প্রমাণ নিজের কাছে রাখবেন।

ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হবেঃ- যেহেতু আমরা আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে চাচ্ছি তাই জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার দিয়ে আমাদেরকে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিন সবার প্রথমে। সাধারণত একাউন্ট তৈরি করার জন্য রেজিস্টার অপশনে গিয়ে আপনার এন আইডি কার্ড নাম্বার এবং সকল ঠিকানা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিন।

তথ্য সংশোধন করতে হবেঃ- একাউন্ট তৈরি করার পরে আপনাকে লগইন করতে হবে। সাধারণত এর পরে আপনি ৩ ধরণের তথ্য দেখতে পাবেন ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য ও ঠিকানা। যদি আপনি ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন করতে চান তাহলে ব্যক্তিগত এর উপরে এডিট বাটনে ক্লিক করুন। সাধারণত এখান থেকেই আপনার তথ্যগুলো সংশোধন করে নিন।

ফি প্রদান করতে হবেঃ- এর পরের ধাপে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি জমা দিতে হবে। সাধারণত এটি সরকার দ্বারা নির্ধারিত যদি আপনার কাছে কেউ বেশি পরিমাণে ফি দাবী করে তাহলে মনে করবেন এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বা হ্যাকার। সরকার নির্ধারিত ফি এর বাইরে কেউ কোন টাকা চাইবেনা।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন আবেদন ফরম

আপনাদের সুবিধার্থে বলে রাখি যে চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে কোন ধরনের ভুল থেকে থাকে এবং আপনি এটি সংশোধন করতে চান তাহলে আপনাকে একটি আবেদন ফরম পূরণ করে নির্বাচন অফিসে জমা দিন। আবেদন ফরম এর সাথে অবশ্যই আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো কাছে রাখবেন অবশ্য।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন আবেদন ফরম লিখে গুগলে সার্চ করেন তাহলে আপনার সামনে প্রথমে যে ওয়েবসাইট আসবে তার ভেতরে প্রবেশ করুন। অনেক সময় ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে দেরি হয়। তাই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন তারপরে এখান থেকে আবেদন ফরম ডাউনলোড করুন। আপনি না পারলে যে কোন কম্পিউটারের দোকানে বললেই প্রিন্ট করে দিবে।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে

আমরা অনেকেই আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে চাই। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার সময় কোন ধরনের ডকুমেন্ট গুলো প্রয়োজন হয় এ বিষয়ে আমাদের তেমন কোন ধারণা নেই। তাই জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হলে কোন ধরনের ডকুমেন্ট গুলো প্রয়োজন তা অবশ্যই জানা দরকার।

সাধারণত আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের কোন বিষয়টি সংশোধন করতে চাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে ডকুমেন্ট এর পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমন আপনি যদি আপনার নিজের নাম সংশোধন করতে চান তাহলে যে সকল কাগজপত্র লাগবে সেগুলো হলঃ
  • এসএসসি বা এইচএসসি অথবা সমমানের সার্টিফিকেট
  • আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ ফটোকপি
  • পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স যদি থাকে
  • এমপিও সিট/সার্ভিস বহি
  • বিবাহের কাবিন নামা যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন
  • কমপক্ষে ২ সন্তানের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি অবশ্যই রাখতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কত দিন লাগে

আপনি যদি অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন করে থাকেন তাহলে এটি সংশোধন হতে ৭ থেকে ১৪ দিন সময় লাগতে পারে। যদি সরকারি ছুটি অনেকদিন থাকে তাহলে সময় একটু বেশি লাগবে। সবার ক্ষেত্রেই যে একই রকম সময় লাগবে বিষয়টা এরকম নয়। তবে জেনে রাখুন যে সর্বনিম্ন ৭ দিন এবং সর্বোচ্চ ১৫ দিন মতো সময় লাগে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন হতে।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ফি কত টাকা

আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে যদি ভুল থাকে তাহলে এই জাতীয় পরিচয়পত্র কোথাও ব্যবহার করতে পারবেন না। আপনার চাকরি অথবা কোন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম সমস্যায় পড়ে যাবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন করার আগে ফি কত দিতে হবে এ বিষয়টি অনেকেই জানেন না।

জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন করতে ২৩০ টাকা ফি দিতে হয়। সাধারণত এই ফি সরকার দ্বারা নির্ধারিত। তাছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রের অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য ১১৫ টাকা দিতে হবে। যদি উভয় ধরনের তথ্য সংশোধন করতে হয় তাহলে ৩৪৫ টাকা দিতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের এই ফি বিকাশ অথবা রকেটের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে।

জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা-মাতার নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে

জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম অথবা তথ্য সংশোধন জন্য এবং নিজের পিতা মাতার নাম অথবা তথ্য সংশোধনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। যদি পিতা-মাতার নাম ভুল থাকে এবং সংশোধন করতে চান তাহলে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন পড়বে সেটাও জেনে রাখা ভালো।
  • এসএসসি বা এইচএসসি সমমানের সার্টিফিকেট
  • অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র
  • পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স যদি থাকে
  • পিতা-মাতার উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র
  • পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র
  • ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয়পত্র।

জাতীয় পরিচয়পত্র জন্ম তারিখ সংশোধন

আগেই বলেছি একেক ধরনের তথ্য সংশোধনের জন্য একেক ধরনের ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ সংশোধনে কি কি তথ্য বা কাগজপত্র লাগবে তা আগে থেকে নিজের কাছে রাখতে হবে। এখানে কোন ধরনের ডকুমেন্ট প্রয়োজন তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
  • এসএসসি বা এইচএসসি অথবা সমমানের সার্টিফিকেট
  • অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স যদি থাকে
  • নাগরিক সনদপত্র
  • বিবাহের কাবিন নামা বিবাহিত হলে
  • কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন
  • লেখকের মন্তব্যঃ
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যদি এমন সমস্যা আপনাদের কারো থেকে থাকে তবে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে আপনাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ভূলগুলো সংশোধন করতে পারবনে ইনশাআল্লাহ। আপনি উপকৃত হলে আমার লেখাটা সার্থক হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪