মরিচ গাছের পাতা কোকড়ানো সমস্যা সমাধানে করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন

রান্নায় খাবারের স্বাদ বাড়াতে মরিচের গুরুত্ব অপরিসীম। এই গুরুত্বপূর্ণ মসলা মরিচ চাষ করতে গিয়ে অনেকে ব্যর্থ হচ্ছেন শুধুমাত্র পাতা কোকড়ানো সমস্যার কারণে। আপনি কি মরিচ চাষী ? পাতা কোকড়ানোর সমস্যার সমাধান চান ?
মরিচ গাছের পাতা কোকড়ানো সমস্যা সমাধানে করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন

আজকের আর্টিকেলটি তাহলে আপনার জন্যই। এখানে জানতে পারবেন- কেন মরিচের গাছের পাতা কোকড়ায় এবং এর সঠিক সমাধান কি সে সম্পর্কে। আরো জানতে পারবেন কোন জাতের মরিচ লাগালে বেশি লাভবান হতে পারবেন।

ভূমিকাঃ

মরিচ চাষের প্রধান এবং মেন সমস্যা পাতা কোকড়ানো। অনেক চাষী বিভিন্ন কিটনাশক ব্যবহার করেও আশানরুপ ফল পাচ্ছেন না। কোন ভাবে একবার এই ভাইরাস দ্বারা মরিচের গাছ আক্রান্ত হলে আর রক্ষা নেই। এই রকম সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে মনে করছি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ

কেন মরিচ গাছের পাতা কোকড়ে যায়
মরিচের গাছের পাতা কোকড়ানো রোগের প্রতিকার
মরিচ গাছের রোগ ও প্রতিকার
পাতা কোকড়ানো রোগের ঔষধ
মরিচের গাছের পাতা হলুদ হয় কেন
মরিচ গাছের কীটনাশক
গাছের পাতা কোককানো রোগের ঘরোয়া প্রতিকার
লেখকের মন্তব্যঃ

কেন মরিচ গাছের পাতা কোকড়ে যায়

এ লক্ষণ বেগমো ভাইরাসের কারণে ঘটে, যা প্রাথমিকভাবে সাদা মাছির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে দেখা যায়। এরা সাধারনত ১.৫ মিমি লম্বা হয়, হাল্কা হলুদ শরীরের সাথে মোমাবৃত সাদা পাখা থাকে এবং সাধারনত পাতার নিচে পাওয়া যায়। এরা এতোই ছোট যে খালি চোখে এদের দেখা যায় না। 

এ রোগের বিস্তার বাতাসের অবস্থার উপর নির্ভর করে যা সাদামাছি কতদুর উড়ে যেতে পারে তা নির্দেশ করে। মওসুমের মধ্যভাগ থেকে শেষের দিকে সাদামাছি বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে। যেহেতু এ রোগটি বীজ থেকে ছড়ায় না, তাই এই ভাইরাস বিকল্প আবাসে (যেমন তামাক এবং টমেটো) এবং আগাছাতে বিস্তার লাভ করে। 

এ রোগ ছড়িয়ে যাওয়ার পিছনে অন্যান্য কিছু কারণ রয়েছে যেমন সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত, সংক্রামিত অন্যান্য চারা গাছ এবং আগাছা। নার্সারিতে, চারা অবস্থা এবং বৃদ্ধির পর্যায়ে মরিচে এ রোগ সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশী।

মরিচের গাছের পাতা কোকড়ানো রোগের প্রতিকার

  • ভাইরাস প্রতিরোধী মরিচের জাত ব্যবহার করুন এবং শুধুমাত্র ভাইরাসমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করুন।
  • ভাইরাস প্রতিরোধ করতে জমির চারপাশে ভুট্টা, জোয়ার, মুক্তা বাজরা জাতীয় ফসল চাষ করুন।
  • সাদা মাছি নিয়ন্ত্রণ করুন এবং নাইলনের বিশেষ জাল ব্যবহার করে বীজ রক্ষা করুন।
  • জমিতে মুড়ানো পাতা এবং গাছের বৃদ্ধি রোধ হয়ে যাওয়ার লক্ষণ বোঝার জন্য নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করুন।
  • সাদা মাছিকে আকর্ষণ করে এমন চটচটে হলুদ ফাঁদ আপনার জমিতে রাখুন।
  • জালের নিচে চারা রোপণ করে ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ করুন, যা সাদামাছির আক্রমণ থেকে গাছের চারাকে সুরক্ষিত রাখবে।
  • জমির চারদিকে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন।
  • আক্রান্ত গাছের অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করে দিন এবং পুড়িয়ে ফেলুন।
  • ফসল সংগ্রহের পর গভীরভাবে চাষ দিয়ে গাছের বাকি অংশ মিশিয়ে দিন বা পুড়িয়ে ফেলুন।
  • মিশ্র চাষের মাধ্যমে উপকারি পোকার সংখ্যা বৃদ্ধি করুন।

মরিচ গাছের রোগ ও প্রতিকার

মরিচের পাতা কোকড়ানো ছাড়াও আরো অনেক রোগ বালাই রয়েছে। একজন মরিচ চাষী হিসেবে যা জানা একান্ত দরকার। নিচে সেই সমস্ত রোগের নাম উল্লেখ করা হলো।
  • মরিচের ক্যাংকার রোগ
  • মরিচের হোয়াইট মোল্ড রোগ
  • মরিচের আলফা মোজাইক রোগ
  • মরিচের ব্লাইট রোগ
  • মরিচের ঢলেপড়া রোগ
  • মরিচের কোনিফেরা ব্লাইট রোগ
  • মরিচের ব্যাকটেরিয়াজনিত নরম পঁচা রোগ
  • মরিচের পাতার দাগ রোগ
  • মরিচের কান্ড পঁচা রোগ
  • মরিচের আগা মরা রোগ
  • মরিচের ঢলে পড়া রোগ
  • মরিচের লিফ কার্ল রোগ
  • মরিচের ক্ষত বা এ্যানথ্রোকনোজ রোগ
উপরে উল্লেখিত রোগ সমূহ দেখা দিলে সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা দরকার
  • রোগ দেখা দিলে প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত গাছ অপসারণ করা ।
  • পানি নিস্কাষনের ভাল ব্যবস্থা করা।
  • নাইট্রেজেন সার ভাগ ভাগ করে কয়েকবারে প্রয়োগ করা।
  • জমিতে নাইট্রেজেন সার একবারে প্রয়োগ করবেন না।
  • সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
  • সুষম সার ব্যবহার করা।
  • প্রোভেক্স বা হোমাই বা বেনলেট ১% দ্বারা বীজ শোধন করা ।
  • এবং অনুমোদিত মাত্রায় বালায় নাশক ব্যবহার করুন।

পাতা কোকড়ানো রোগের ঔষধ

জাব পোকা এ রোগের বাহক, তাই এদের দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

নিয়মিত পর্যবেক্ষণ পূর্বক সাদামাছি, জাবপোকা দমন করতে হবে। এজন্য একতারা বা ইমিটাফ বা এডমায়ার বা টাফগর যেকোন একটি প্রতি লিটার পানির সাথে ৮ থেকে ১০ ফোঁটা মিশিয়ে করা যায়।

মরিচের গাছের পাতা হলুদ হয় কেন

মূলত মরিচ গাছের পাতা মাইট/মাকড় এবং ভাইরাসের আক্রমণে কুকড়ে যায়। মাইটের আক্রমণে কোঁকড়িয়ে গেলে পাতা নিচের দিকে বাঁকা হবে ও ডগার কুঁশি কোঁকড়িয়ে বৃদ্ধি রোধ হয়ে যাবে। পাতাতে সবুজ-হলুদের মিশ্রণ থাকবে না। ভাইরাসের ক্ষেত্রে পাতায় সবুজ হলুদের মিশ্রণ থাকবে ও ডগায় কুশি থাকবে।

মরিচ গাছের কীটনাশক

গাছের আক্রান্ত অংশ অপসারণ করতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় শুকনো ছাই প্রয়োগ করা যাবে। পরিষ্কার পানি জোরে স্প্রে করতে হবে, যাতে করে ছোট-বড় পোকগুলো গাছ থেকে পড়ে যায়। ক্ষেত পরিষ্কার /পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হলুদ রঙের ফাঁদ ব্যবহার করুন। 

তামাকের গুড়া (১০গ্রাম), সাবানের গুড়া (৫গ্রাম) ও নিমের পাতার নির্যাস প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করুন । প্রতি গাছে ৫০ টির বেশি পোকা দেখা দিলে এডমেয়ার ২০ এসএল ০.৫ মিলি./লি হারে পানিতে শিশিয়ে স্প্রে করুন।

গাছের পাতা কোককানো রোগের ঘরোয়া প্রতিকার

মরিচ গাছের পাতা কুঁকড়ানো এড়াতে প্রাকৃতিকভাবে ফসল সুরক্ষার পণ্য হলুদ স্টিক ট্র‍্যাপের জুড়ি নেই। চাইলে এই ট্র‍্যাপ ব্যবহার করে পোকা দমন করা যায়। বালাইনাশক হিসেবে ১ কেজি আধা ভাঙ্গা নিম বীজ ২০ লিটার পানিতে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি (ছেঁকে নেওয়ার পর) পাতার উপরের দিকে স্প্রে করা।

মরিচ গাছের পাতা কোকড়ানো বা পাতা নিচের দিকে সরু হয়ে যাওয়া বা হলুদ হয়ে যাওয়া দুর করতে হলে প্রথমে আপনাকে ৪/৫ টি পানের পাতা নিতে হবে এবং এককাপ পরিস্কার পানির সাথে একছিপি ভিনেগান মিশেয়ে দিয়ে ধুয়ে পানিগুলো ধরিয়ে নিতে হবে। এবার স্টীলের একটি পাত্র নিন এবং ২৫০ মিলি গরম পানি নিতে হবে। 

গরম পানির মধ্যে পান পাতাগুলো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে দিন এবং হাত দিয়ে বা চামুচ দিয়ে নাড়াতে থাকুন এবার একটা কাগজি লেবুর অর্ধেকটা কেটে রসটা চিপে দিন ঐ পানির মধ্যে তারপর চা চামুচের আধা চামুচ হলুদের গুড়া দিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে মিশিয়ে নিন। 

ভালোভাবে মিশানোর পর ৫ ঘন্টা রেখে দিন দ্রবনটি। এবার অন্য একটি পাত্রে ছেকে নিন তারপর মিশ্রনটিতে হাফ টেবিল চামুচ হ্যান্ড ওয়াশ মিশাতে হবে। হ্যান্ড ওয়াশ না থাকলে একটেবিল চামুচ ডিটারজেন্ট পাওডার মিশাবেন। এবার বিকেল বেলায় স্প্রে করুন।

লেখকের মন্তব্যঃ

যে কোন ফসল উৎপাদনের মুলে রয়েছে তার বীজ। বীজ ভালো না হলে আপনি যতই পরিচর্যা করুন ভালো ফল পাবেন না। এজন্য সবল এবং রোগ বালাই মুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ তৈরিতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন চারা গাছে কোন প্রকার রোগ-বালাই আক্রমন করতে না পারে। 

পরিচর্যার পরও যদি কোন গাছ রোগ বালাই দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে সাথে সাথেই সেই গাছ তুলে মাটি চাপা দিয়ে দিতে হবে। উপরের বর্ণিত নিয়মগুলো মেনে চলুন আশা করা যায় ভালো ফল পাবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪