নিজের ব্যক্তিত্বকে সুন্দর রাখতে যে কাজগুলো করবেন বিস্তারিত জেনে নিন
ব্যক্তিত্ব মানুষের সব চেয়ে বড় গুণ বা সম্পদ। সমাজে প্রচলিত কথা আছে ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তি পশুর সমান। মানুষ মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে ব্যক্তিত্বের জন্য। আপনারা কি জানেন ব্যক্তিত্ব সুন্দর রাখতে করণীয় কাজগুলি সম্পর্কে ?
হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে নিজের ব্যক্তিত্বকে সুন্দর রাখতে যে কাজগুলো করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। নিজের ব্যক্তিত্ব ধরে রাখার কিছু কৌশল এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। আসুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
ভূমিকাঃ
সুন্দর চেহারা নয় বরং ব্যক্তিত্বের মানবিক গুণাবলির কারণে মানুষ সবার থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। এই ব্যক্তিত্বকে ঠিক রাখতে মানুষকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় না। ভেতরের মানুষকে সঠিক ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারলে ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠবেই। ব্যক্তিত্বকে সঠিক ও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে প্রত্যেকটা মানুষের উচিৎ খারাপ দিকগুলো পরিহার করা।
সূচিপত্রঃ
আগে সালাম দিন
হাসিমুখে কথা বলুন
শুনুন বেশি, বলুন কম
তামাশার ছলেও কখনো মিথ্যা বলবে না
ভূল হলে বিনয়ের সাথে SORRY বলুন
অকারণে বেশি হাসবেন না
ধীরে ধীরে বুঝিয়ে কথা বলুন
আগে অন্যের কথা বলুন, তারপর নিজে বলুন
কোন বিষয়ে তর্কে জড়াবেন না
কারো কাছে নিজেকে বড় প্রমান করার চেষ্টা করবেন না
রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
কেও ভূল করলে ক্ষমা করুন
ছোট বড় সবাইকে সম্মান করুন
কথা দিলে কথা রাখবেন
পোশাকে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
পারলে অন্যদের খাওয়ান, জোর করে খাবেন না
খাবার সামনে এলে আগে অন্যকে দিন
মুখ ও শরীর গন্ধমুক্ত রাখুন
চরিত্র সুন্দর রাখুন
ব্যবহার নম্রতা রাখুন
লেখকের মন্তব্যঃ
আগে সালাম দিন
পরিচিত হোক বা অপরিচিত সবাইকে সালাম দিন। আগে সালাম দিলে ব্যক্তিত্ব কমে না বরং বাড়ে। সমাজে এমন কিছু লোক বাস করে যাদের আগে সালাম দেওয়া যায় না, তারায় প্রথমে সালাম দিয়ে দেয়। সমাজে এদের অবস্থান অনেক উচুতে। সবার কাছে সুন্দর ব্যক্তিত্ব মানুষে পরিনত হয়। মুত্যুর পরও এই লোকটির নাম সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।
হাসিমুখে কথা বলুন
হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলুন। এতে আপনার আশেপাশের মানুষগুলো আপনার উপর আস্থা খুঁজে পাবে। কারণ যার ভেতরে কূটিলতা থাকেনা সেই কিন্তু হাসতে পারে। অন্যের খুশিতে হাসেন, দুঃখে নয়।
শুনুন বেশি, বলুন কম
অতিরিক্ত কথা বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। অতিরিক্ত কথা যেমন নিজের ব্যক্তিত্বকে নষ্ট করে ঠিক তেমনি নষ্ট করে আপনার আশেপাশের পরিবেশ। যে কথাটি প্রয়োজনীয় শুধু সেই কথাটি বলুন। হাদিসেও বেশি কথা বলা নিষেধ আছে। আপনি যত কম কথা বলবেন ততো ভূল কম হবে। এবং সমাজে আপনার দাম থাকবে।
তামাশার ছলেও কখনো মিথ্যা বলবে না
মিথ্যা বলা মহাপাপ। সব ধর্মেই মিথ্যা কথা বলা নিষেধ আছে। মশকরা করে তামাশার ছলেও কারো সাথে কখনো মিথ্যা কথা বলবেন না। আপনি কোন সময় মিথ্যা বলেন না, এই কথাটা সবার জানা থাকলে আপনার মর্যাদা, সম্মান ও ব্যক্তিত্ব অন্য লেবেলে চলে যাবে।
ভূল হলে বিনয়ের সাথে SORRY বলুন
কোন কারণে কোথাও কোন মিসটেক হয়েগেলে বিনয়ের সাথে সরি বলুন। তর্কে না জড়িয়ে বা ভূলটাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা না করে সরাসরি নরম সরে সরি বলুন। এতে আপনার মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব বেড়ে যাবে, কমবে না।
অকারণে বেশি হাসবেন না
হাসি শরীরের জন্য ভালো, তবে অকারণে বেশি হাসা থেকে বিরত থাকুন। অকারণে হাসলে অনেক সময় মানুষ পাগল বলতে পারে। এতে আপনার ব্যক্তিত্ব ক্ষুন্ন হতে পারে। রাসুল (সাঃ) মুচকি হাসতেন, তিনি কোন সময় অট্ট হাসি দিতেন না। মানুষের সুখে হাসুন, দুঃখে নয়।
ধীরে ধীরে বুঝিয়ে কথা বলুন
মানুষের সাথে সব সময় ধীরে ধীরে কথা বলুন। কোন কথা সহজে বুঝতে না পারলেও চিল্লা চিল্লি না করে ধীরে ধীরে বুঝিয়ে কথা বলুন। কোন সময় মেজাজ গরম, বা রাগারাগি করবেন না। একটা কথা আছে, রেগে গেলেন- তো হেরে গেলেন। অনেক মানুষ আছেন, যারা ভালো কথা বলার পরও জোরে কথা বলার কারণে সাধারণ মানুষ তাকে অপছন্দ করেন।
আগে অন্যের কথা বলুন, তারপর নিজে বলুন
কাওরি সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বা গ্রুপের সবার অর্জণ বর্ণনা করার সময় আগে অন্যের কৃতিত্বের কথা বলুন। অন্যদের প্রসংশা করুন, তারপর নিজের। নিজের ঢোল কোন সময় নিজে বাজাতে যাবেন না। একটা কথা মনে রাখবেন- আপনানে বড় বলে বড় সে নয়, লোকে যারে বড় বলে বড় সে হয়।
কোন বিষয়ে তর্কে জড়াবেন না
তর্ক করা মূর্খের কাজ। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। কোন সময় তর্কে জড়াবেন না। হোক সে আপনার চাইতে ছোট বা গরিব। হতে পারে আপনিই সঠিক, তারপরও সর্কে যাবেন না। তর্ক না করে বুঝিয়ে বলবেন, না বুঝলে ছেড়ে দেন এক সময় সে নিজের ভূল বুঝতে পারবে।
কারো কাছে নিজেকে বড় প্রমান করার চেষ্টা করবেন না
অন্যদের কাছে কোন সময় নিজেকে বড় বলে এজাহার করবেন না। কথায় এবং আচার-আচরণে কথায় বিনয়ী হবেন, নম্র হবেন, ছোট হয়ে থাকুন, একদিন দেখবেন নিজের অজান্তেই কখন বড় হয়েগেছেন। এ নিয়ে হরিশচন্দ্র মিত্র এর একটা ছড়া কবিতা আছে-
বড় কে
আপনারে বড় বলে, বড় সেই নয়
লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।
বড় হওয়া সংসারেতে কঠিন ব্যাপার
সংসারে সে বড় হয়, বড় গুণ যার।
গুণেতে হইলে বড়, বড় বলে সবে
বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে।
রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
ভালোবাসা, দুঃখ-বেদনার মত রাগও একটি আবেগ। ছোট কিংবা বড় বিভিন্ন ঘটনায় আমরা রাগ প্রকাশ করি। কিন্তু এই আবেগটি বেশি প্রকাশ পেলে নানা বিপত্তি তৈরি হতে পারে। অনেকেই রেগে গেলে ভাঙচুর করেন, উচ্চস্বরে চিৎকার করেন, এমনকি গায়ে হাতও তুলে ফেলেন।
অতিরিক্ত রাগের প্রভাব পড়তে পারে ব্যক্তিজীবন, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে। হাদিসে বলা হয়েছে, সেই সব চাইতে শক্তিশালি যে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। হঠাৎ রেগে গেলে সেই স্থান ত্যাগ করুন। দাড়িয়ে থাকলে বসে যান, বসে থাকলে শুয়ে যান দেখবেন রাগ আস্তে আস্তে চলে গেছে।
কেউ ভূল করলে ক্ষমা করুন
ক্ষমা করা একটি বড় গুণ। কেউ কোন ভূল করলে তাকে ক্ষমা করে দিন এতে আপনার ব্যক্তিত্ব অনেক গুণে বেড়ে যাবে। আল্লাহ নিজে ক্ষমা করেন, এবং ক্ষমাকারি ব্যক্তিদের পছন্দ করেন। কেউ কোন অপরাধ করলে প্রতিশোধ গ্রহণ না করে যদি ক্ষমা করে দেন তবে সেটি হচ্ছে সব চাইতে উত্তম।
ছোট বড় সবাইকে সম্মান করুন
মানবিক গুণাবলির মধ্যে মানষকে সম্মান করা একটি বড় এবং অন্যতম গুণ। ইসলামে তাই অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গরিব-ধনী, ছোট-বড় সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মান টুকু দিতে হবে। কাউকে সম্মান দিলে আপনার সম্মান কমবেনা বাড়বে।
কথা দিলে কথা রাখবেন
প্রতিশ্রুতি দেওয়া সহজ হলেও রক্ষা করা কঠিন। যেই কথা রাখতে পারবেন না সেই কথা না দেওয়াই ভালো। তাছাড়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা কবিরা গুনাহ। তাই কথা দেওয়ার আগেই চিন্তা করে নিন, রাখতে পারবেন কিনা তারপর কথা দিন এবং কষ্ট হলেও কথা রাখুন।
পোশাকে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ঈমানে অংগ। দামী হোন বা সস্তা যেই পোশাকই পরুন না কেন সেটা যেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়। পোশাকটা যেন মার্জিত হয় সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। অশালিন পোশাক পরলে ব্যক্তিত্ব বাড়ে না কমে। সব সময় রুচিশীল ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরুন।
পারলে অন্যদের খাওয়ান, জোর করে খাবেন না
অপরকে খাদ্য খাওয়ানোর মধ্যে যে কত প্রশান্তি আছে, খাওয়ানো ব্যক্তি ছাড়া কেউ জানে না। ক্ষুধার্ত যে কোন ব্যক্তি খাবার খেতে চাইলে অবশ্যয় তাকে খাবার খেতে দিন। কারণ হাশরের দিন বলবেন খোদ হে আদম সন্তান, আমি চেয়েছিলাম ক্ষুধার অন্ন তুমি কর নাই দান। ক্ষুধার্ত মানুষকে খাওয়ালে খোদার খাওয়ো হয়ে যায়। আর একটা কথা জোরপূর্বক কারো কাছ থেকে খাবেন না।
খাবার সামনে এলে আগে অন্যকে দিন
মজলিসের মধ্যে সবায় বসে আছেন, হয়তো বা খাবারের জন্য অপেক্ষা করছেন এমন সময় খাবার এলো সামনে, এই সময় সবায় কিন্তু আপন আপন প্লেটে খাবার উঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, যা মোটেও উচিৎ নয়। যতই ক্ষুধার্ত থাকেন না কেন, আগে অন্যের প্লেটে খাবার তুলে দিন তারপর নিজে নিন।
মুখ ও শরীর গন্ধমুক্ত রাখুন
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দাত ব্রাশ করুন অথবা মেসওয়াক করুন। অবশ্য মেসওয়াকে আলাদা ফজিলত আছে। যে ব্যক্তি নামাজের জন্য ওযু করার আগে মেসওয়াক করবে সে পাঁচগুণ সওয়াব বেশি পাবে। শরীরকে পাক ও পবিত্র রাখতে গোসলের বিকল্প নেই। নিয়মিত গোসল করলে শরীরের গন্ধমুক্ত থাকে। এছাড়াও সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন।
চরিত্র সুন্দর রাখুন
যে কোন মানুষের ব্যক্তিত্ব বাড়ানোর সব চেয়ে বড় গুণ হলো সুন্দর চরিত্র। যার চরিত্র নাই তার কিছু নাই। চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। চরিত্র বান মানুষকে সবায় পছন্দ করে। চরিত্র সুন্দর হলে ব্যক্তিত্বের উপর প্রভাব পড়ে।
ব্যবহার নম্রতা রাখুন
কথায় আছে না- ব্যবহারে বংশের পরিচয়। উত্তম ব্যবহার অনেক বড় নেয়ামত। অনেকে চেষ্টা করেও মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারেনা। মন্র ভদ্র ব্যবহার অনেক বড় মহৎ গুণ। শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ, মহিলা-পুরুষ, ছোট-বড় সবার সাথে নম্র ব্যবহার করুন।
লেখকের মন্তব্যঃ
ব্যক্তিত্ববান মানুষ হতে কে না চায় । কারণ ব্যক্তিত্ববান মানুষকে সবাই পছন্দ করে। চরিত্রবান হোন। কারণ ব্যক্তিত্ববান কথার মানেই হচ্ছে চরিত্রবান। সৎ কথা বলা, সৎ পথে চলা ও সৎ উপদেশ দেওয়াই চরিত্রবান হওয়ার মূল ভিত্তি। ব্যক্তিত্ব সুন্দর রাখতে উপরের দিক নির্দেশনা মেনে চলুন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url