বাচ্চাদের পুষ্টিকর ৭টি খাবার সম্পর্কে বিস্তারিতা জেনে নিন এখান থেকে

বাচ্চাদের খাওয়ানো নিয়ে মায়েরা খুব টেনশনে থাকেন। বেশির ভাগ সময় খেতে চাইনা, আবার খেলেও খুব অল্প পরিমানে খাই। বাচ্চাদের খাবার ও পুষ্টি নিয়ে চিন্তার দিন শেষ। অল্প পরিমানে খেলেও পুষ্টি পাবে অনেক বেশি এই সব খাবার খাওয়ান। জানতে চান সে খাবার গুলো কি কি ?
বাচ্চাদের পুষ্টিকর ৭টি খাবার সম্পর্কে বিস্তারিতা জেনে নিন এখান থেকে

হ্যাঁ পাঠকবৃন্দ আপনাদের সামনে এমন এক রেসিপি নিয়ে হাজির হয়েছি, যে গুলো বাচ্চারা অল্প পরিমানে খেলেও পুষ্টি পাবে অনেক বেশি। বাচ্চাদের মজার মজার খাবার ও পুষ্টি আধার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আজকের আর্টিকেলটিতে।

ভূমিকাঃ

ছোট বাচ্চারা খেতে চাইবে না, কম খাবে, শুধু খেলতে চাইবে, ঘুরে বেড়াতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে তাদেরকে জোর করে খাওয়ানো যাবে না, বা মারধোর করা যাবে না। অথবা মোবাইলে কাটুন দেখিয়ে বা টিভি দেখিয়ে খাওয়ানো যাবে না। এই সমস্ত বদ অভ্যাস গুলো যেন তৈরি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখবেন। অল্প পরিমানে খেলেও অনেক বেশি পুষ্টি পাবে এমন খাবারের তালিকা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

পেজ সূচিপত্রঃ

পুডিংঃ- ডিম ও দুধ
সাবু দানার পায়েসঃ- সাবু, বাদাম ও দুধ
সবজির চপঃ- সবজি, ডিম ও আলু
প্যানকেকঃ- ওটস, ডিম ও কলা
চালের পায়েসঃ- চাল, দুধ, বাদাম এবং খেজুর
চিকেন ভেজিটেবল স্যুপঃ- মুরগির মাংস, সবজি ও ডিম
নুডুলস / পাস্তাঃ- সবজি, ডিম, মাংস এবং নুডুলস
লেখকের মন্তব্যঃ

পুডিং

 ডিম ও দুধ দিয়ে পুডিং বানালে বাচ্চারা খুব মজা করে খাবে। আবার সব বাচ্চা যে মজা করে খাবে এমন নাও হতে পারে। তবে অল্প পরিমানে খেলেও পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে।

দুধ ১ লিটার নিয়ে প্যানে জ্বাল দিয়ে অর্ধেক করে ফেলুন এবং নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। একটি বাটিতে ডিম নিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে এতে প্রয়োজনমত চিনি দিয়ে ফেটাতে থাকুন। খুব ভালো করে ফেটানো হয়ে গেলে ঘি বা মাখন দিন। তারপর আরও খানিকক্ষণ ফেটিয়ে নিন।

একটি পুডিং বাটি অথবা আপনি যেটাতে পুডিং বানাতে চান, সেই বাটি নিয়ে সামান্য পরিমান চিনি তলায় ছিটিয়ে দিন। প্রায় ১ চা চামচ চিনি বাটিতে ছড়িয়ে কয়েক চামচ পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। চিনি গলে শিরা তৈরি হয়ে লাল ক্যারামেলের মতো তৈরি হয়ে যাবে। বাটিতে ক্যারামেল বসে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করতে দিন বাটিটাকে।

এবার ডিম-চিনির মিশ্রণে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া দুধ ঢেলে ভালো করে মিশিয়ে নিন। মনে রাখবেন যদি দুধ সামান্য গরম থাকে তবে ডিম জমাট বেধে যাবে। তাই দুধ খুব ঠান্ডা করে তারপর মেশাতে হবে। এরপর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া পুডিং মিশ্রণটি বাটিতে পুরো ঢেলে দিন।

একটি বড় সসপ্যান অথবা ঐ ধরনের পাত্র চুলায় বসান। এর ঠিক মাঝে একটি পাতিল রাখার স্ট্যান্ড বসিয়ে দিন। এর মধ্যে দিন ১/৪ অংশ পানি। পুডিংয়ের বাটিটা স্ট্যান্ডের ওপর বসিয়ে ঢেকে দিন। সসপ্যান বা ঐ ধরনের পাত্রটিও ভালো করে ঢেকে ওপরে ভারী কিছু দিয়ে চাপা দিন। এখন জ্বাল দিতে থাকুন।

২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই পুডিং হয়ে যাবে, তাই সতর্ক থাকুন। চুলা থেকে নামানোর আগে একটি কাঠি দিয়ে পুডিং ঠিকমতো হয়েছে কিনা পরীক্ষা করে নিন। এরপর পুডিংয়ের বাটি একটু ঠান্ডা হলে একটি ছড়ানো প্লেটে উল্টো করে দিন। এতে পুডিংয়ের ক্যারামেল অংশটি ওপরে আসবে। ব্যস, এবার মজা করে খাওয়ান বাচ্চাকে।

সাবু দানার পায়েস

 সাবু, বাদাম ও দুধ দিয়ে সাবু দানার পায়েস বানালে বাচ্চারা খুব আনন্দের সাথে খাবে। এই খাবারটি বাচ্চাদের জন্য অনেক পুষ্টিকর। আগের দিনে দেখতাম বাচ্চাদেরকে সাবু দানাই খাওয়াতো। কিন্তু বর্তমানে কি সব হাবিজাবি খাওয়াই যাতে বাচ্চাদের পুষ্টির ঘাটতি পুরণ হয় না।

বাজার থেকে সুন্দর সাবু দানা কিনবেন এবং পরিমান মতো চিনি দিয়ে দুধ গরম করে নিবেন এবং বাদামগুলো কুচিকুচি করে নিবেন। এবার সেই দুধ দিয়ে সাবু দানাগুলো রান্না করুন, দেখবেন বাচ্চারা চেটেপুটে খাবে এবং বাচ্চার শরীরের দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ করতে পারবেন।

সবজির চপঃ- সবজি, ডিম ও আলু

অনেক ভালো খাবার বা মজার খাবার হলেও প্রতিদিন একই খাবার খেতে ভালো লাগেনা, বাচ্চারাও এর বাইরে নয়। মিষ্টি জাতিয় খাবার খেয়ে একঘেয়েমী চলে আসতে পারে। তাই খাবারে বৈচিত্র আনতে সবজি, ডিম বা আলুর চপ বানিয়ে দিতে পারেন। চপের সঙ্গে সবজি খাওয়া হয়ে যাবে, ডিম খাওয়া হয়ে যাবে, আবার আলু খাওয়াও হয়ে যাবে। নিশ্চয় বানানোর প্রক্রিয়াগুলো বলে দিতে হবে না।]

প্যানকেক

ওটস, ডিম ও কলা দিয়ে বানিয়ে ফেলুন বাড়িতেই প্যানকেক। যা বাচ্চারা আনন্দের সাথে মজা করে খাবে। এই কেক খেলে তাদেরে পেট ভরার সাথে সাথে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে অনায়াশে। তাই বাচ্চাকে ভালো করে মানুষ করতে চাইলে এই সমস্ত পুষ্টিকর খাবার একটু কষ্ট করে বানিয়ে খাওয়ান আপনার সন্তানকে।

চালের পায়েস

চাল, দুধ, বাদাম এবং খেজুর দিয়ে পায়েস বানালেও পুষ্টিকর একটি খাবার তৈরি হবে যা খেলে বাচ্চারা খুব মজা করে খাবে। আতপ চালের গুঁড়া ১ কাপ, খেজুর ২৫০ গ্রাম, এলাচ গুঁড়া আধা চা চামচ, দুধ ১ লিটার, কাজুবাদাম ৩ টেবিল চামচ দিয়ে সুন্দর করে বানিয়ে আপনার বাচ্চাকে নিয়মিত খাওয়ান দেখবেন বাচ্চা দারুন পুষ্টি পাবে।
যেভাবে তৈরি করবেন
  • ১. সসপ্যানে দুধ ফুটিয়ে নিন।
  • ২. খেজুর বিচি ফেলে কুচি কুচি করে কেটে নিন।
  • ৩. দুধ ফুটে উঠলে এর মধ্যে চালের গুঁড়া দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে কুচানো খেজুর ও গুড় দিয়ে দিন।
  • মাঝেমধ্যে নেড়ে দিন।
  • ৪. সিদ্ধ হয়ে ঘন হলে এলাচ গুঁড়া ও কাজুবাদাম দিয়ে নামিয়ে নিন।
  • ৫. এরপর ঠাণ্ডা করে বাচ্চা এবং বড়দের সামনে পরিবেশন করুন।

চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ

মুরগির মাংস, সবজি ও ডিম দিয়ে বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদু পুষ্টিকর চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ। এই স্যুপটি অনেক বেশি পুষ্টিকর ও খেতে দারুন মজার। বাচ্চারা অনায়াশে খাবে মজা করে। বাজারের স্যুপ কেনার দরকার নেই, বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারবেন এই স্যুপ।

প্রনালী

৪ কাপ পানি নিন হাঁড়িতে। এর সঙ্গে মেশান আদা কুচি, রসুন কুচি, গোলমরিচের গুঁড়া, ১ চা চামচ তেল, স্বাদ মতো লবণ ও কাঁচা মরিচ। মুরগির বুকের মাংসের বড় একটু টুকরা দিয়ে দিন পানিতে। আরও দিন পছন্দের সবজি। কাঁচা পেঁপে, ফুলকপি, গাজর, মটরশুঁটি, বরবটি ও শাক দিতে পারেন। 

টমেটো টুকরো করে দিয়ে দিন। চাইলে দিয়ে দিতে পারেন ২ টেবিল চামচ কর্ন। এটা না দিলেও চলবে। এবার চুলায় বসিয়ে দিন হাঁড়ি। মাঝারি আঁচে ঢেকে ফুটান ১০ মিনিট। এরপর মুরগির মাংসের টুকরা উল্টে দিয়ে ঢেকে আরও ১০ মিনিট ফুটান। এরপর মাংস উঠিয়ে নিয়ে ছুরি বা কাঁটাচামচের সাহায্যে ছিঁড়ে আবার দিয়ে দিন স্যুপে। 

আধা চা চামচ সয়া সস, ১ চা চামচ টমেটো সস দিন। কর্ন ফ্লাওয়ার পানিতে গুলে অল্প অল্প করে দিন আর নাড়তে থাকুন। কয়েক মিনিট নেড়ে একটি ডিম ফেটিয়ে দিয়ে দিন। নামানোর আগে লেবুর রস ও ধনেপাতা কুচি ছিটিয়ে দিন। ব্যাস হয়েগেল চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ।

নুডুলস / পাস্তা

সবজি, ডিম, মাংস এবং নুডুলস / পাস্তা বানিয়ে ফেলুন এই সমস্ত উপকরণ দিয়ে খুব সহজে এবং তাড়াতাড়ি আপনার বাচ্চার জন্য। স্বাদমত বানাতে পারলে বাচ্চারা খুব মজা করে খাবে এই পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। আগেই বলেছি কোন খাবার যতই সুস্বাদু হোক না কেন, একই খাবার প্রতিদিন খাওয়াতে যাবেন না। 

বাচ্চারা একবার কোন খাবার বিরক্তি হয়ে রিজেক্ট করে দিলে পরে কিন্তু সেই খাবার আর খেতে চাইবে না। তাই সাবধান প্রতিদিন একই ধরনের খাবার খাওয়াতে যাবেন না। খাবারে বৈচিত্র আনার জন্য একেক দিন একেক রকমের খাবার পরিবেশন করুন বাচ্চাদের সামনে। দেখবেন বাচ্চার জন্য বাড়তি পুষ্টির চিন্তা করতে হবে না।

লেখকের মন্তব্যঃ

এক থেকে দুই বছর বা তার চেয়েও কয়েক বছর বড় বয়সী বাচ্চাদের খাদ্যের চাহিদা কম থাকে। এই সময় বাচ্চারা বাইরের খাবার খেতে চায়। যা মোটেও স্বাস্থ্য সম্মত নয়। খাদ্য শক্তি এবং পুষ্টি সরবরাহ করে যা বাচ্চাদের সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত হোক বা অল্প পরিমাণে হোক তা গ্রহণ করা জরুরী। 

উপরে উল্লেখিত খাবারগুলো পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার তাই সেই গুলো প্রয়োগ করে দেখুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, বাচ্চাসহ আপনাদের সুস্থ্যতা কামনা করে আজকের মত শেষ করছি, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪