মেয়েদের যে স্বভাবের কারণে সংসারে উন্নতি হয় না বিস্তারিত জেনে নিন
কথায় আছে সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে। নারীদের কিছু স্বভাবের কারণে সংসারে উন্নতি হয় না। হাদিসের বর্ণনায় তা সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে। সংসারে উন্নতি না হওয়ার সেসব কারণগুলো কি জানতে চান ?
হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি এমন এক আলোচনা নিয়ে যা সবারই জানা খুব জরুরী। আপনাদের জানাবো মেয়েদের যে স্বভাবের কারণে সংসারে উন্নতি হয় না সেসব তথ্য।
ভূমিকাঃ
দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি নির্ভর করে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর। তবে বেশির ভাগ সংসারে উন্নতি না হওয়ার এবং অশান্তির মূল কারণ হচ্ছে স্ত্রীর আচরণ বা স্বভাব। সংসারে সুখ-শান্তির বেশির ভাগ স্ত্রীর কারণেই হয়ে থাকে, আর অশান্তিও স্ত্রীর কারণে হয়ে থাকে। সংসারে সুখ-শান্তি ও উন্নতি করতে চাইলে নিচের আলোচনাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
সকালে দেরী করে ঘুম থেকে উঠা
স্বামীর ইনকামে সন্তুষ্ট না থাকা
স্বামীর মতামতের গুরুত্ব না দেয়া
ফজরের নামাজ কাযা করা
দান সদকাহ না করা
ফরজ গোসলে অলসতা করা
সংসারে পুরুষের থেকেও নিজেকে বিচক্ষণ মনে করা
ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজ দেরী করে আদায় করা
স্বামীকে না জানিয়ে, লুকিয়ে তার টাকা খরচ করা
কথায় কথায় বলা, ‘‘তোমার সাথে বিয়ে হয়ে আমার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে’’
লেখকের মন্তব্যঃ
সকালে দেরী করে ঘুম থেকে উঠা
সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠঃ সকাল সকাল ওঠে যে কোনো কাজ করায় রয়েছে বরকত। সংসারের জন্যও তা প্রযোজ্য। সকাল সকাল কাজ করার গুরুত্ব তুলে ধরে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- اللَّهُمَّ بَارِكْ لِأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا ’হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের (সকালের) বরকত দান করুন।’
তিনি কোনো ছোট কিংবা বড় বাহিনীকে কোথাও পাঠালে দিনের প্রথম ভাগেই পাঠাতেন। (হাদিসটির) বর্ণনাকারী নিজে একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথম ভাগে (ভোরে) পাঠাতেন, ফলে তিনি সম্পদশালী হয়েছিলেন এবং এভাবে তিনি অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন।’ (আবু দাউদ ২৬০৬) শুধু নারীকেই সকাল সকাল উঠলে হবে না, সবাইকে ঘুম থেকে সকাল সকাল উঠতে হবে।
স্বামীর ইনকামে সন্তুষ্ট না থাকা
স্বামীর ইনকামে বেশিরভাগ মেয়ে অসন্তষ্ট থাকে। আর এদের কারণেই স্বামীরা অবৈধ পথে ইনকাম করা শুরু করে, যা সম্পূর্ণ হারাম। স্বামী কম-বেশি যা ইনকাম করবে সেটাতেই সন্তষ্ট থাকা উচিৎ মেয়েদের। মেয়েরা বস্তবতা বুঝতে চাইনা, তারা সব সময় উচ্চভিলাসী হয়ে থাকে। এদের কারণেই সংসারে অশান্তি নেমে আসে এবং উন্নতি কমে যায়।
স্বামীর মতামতের গুরুত্ব না দেয়া
বর্তমান সমাজে স্ত্রীরা স্বামীদের গুরুত্ব দেই না। স্বামীর উপর নিজের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেএবং তা প্রতিষ্ঠিত করে ছাড়ে। স্বামী ভালো কিছু করতে চাইলেও স্ত্রী সেটা না বুঝেই, গুরুত্ব না দিয়েই তাদের মতামতে চলতে বাধ্য করে। আগেকার দিনে স্ত্রীরা স্বামীকে অনেক ভক্তি করতো, এবং অনেক বেশি সম্মান ও গুরুত্ব দিত। এজন্য তাদের সংসারে উন্নতি ছিল।
ফজরের নামাজ কাযা করা
ফজরের নামাজ কাযা করলে রহমত থেকে বঞ্চিত হতে হয়। কারণ ফজরের নামাজ দিয়ে সকাল বেলা বরকত ও রহমতের দিন শুরু হয়। ফজরের নামাজ কাযা করায় সংসারের যাবতীয় রহমত থেকে বঞ্চিত হতে হয়। তাই চেষ্টা করবেন যেন ফজরের আগেই ঘুম থেকে উঠতে পারেন এজন্য রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বেন।
দান সদকাহ না করা
দান-সাদকায় সম্পদে বরকত হয়। তাই কেউ যদি দান-সাদকাহ না করে তবে তার সংসারেও উন্নতি হয় না। এ ব্যাপারে মহিলাদের বেশি সচেতন হতে হবে। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, উল্লেখিত কাজগুলোর ক্ষতি থেকে বিরত থাকা। কোরআন-সুন্নাহর উপর আমল করে সংসারের উন্নতিতে মনোযোগী হওয়া। দান করলে সম্পদ কমে না বরং বাড়ে।
ফরজ গোসলে অলসতা করা
অকানে ফরজ গোসলে দেরি না করায় ভালো। রাতের বেলা কয়েক বার সহবাস করলে, প্রতিবারই গোসল করার দরকার নাই। সর্ব শেষবার সহবাসের পর গোসল করলেই চলবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন গোসলের কারণে নামাজ যেন কাযা না হয়ে যায়। তাছাড়া গোসল দেরিতে করলেও গুনাহ্ হবে না। ফরজ গোসল না করে কোরআন মাজিদ স্পর্শ করা যাবেনা।
সংসারে পুরুষের থেকেও নিজেকে বিচক্ষণ মনে করা
ঘরের নারীরা নিজেকে বেশি বিচক্ষণ মনে করে এমন অনেক সংসার আছে, যেখানে নারীরা নিজেদের পুরুষের চেয়ে বেশি বিচক্ষণ মনে করে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের আগে সমাজে নারীর শাসন চলবে।’ এমনটি হলে ওই সংসারে উন্নতি আসবে না।
ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজ দেরী করে আদায় করা
যারা অলসতা করে সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করে না, তাদের নামাজ কবুল হবে না। দুনিয়াতে তাদের সংসারেও উন্নতি হবে না। কেননা তারা নামাজ সম্পর্কে উদাসীন। তাদের জন্য পরকালে শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এরপর দুর্ভোগ ওই সব মুসল্লির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন।’ (সুরা মাউন: আয়াত ৪-৫)
স্বামীকে না জানিয়ে, লুকিয়ে তার টাকা খরচ করা
স্বামী যদি সংসারের সকল ভরণ পোষন সঠিক ভাবে চালান, সকালের সব চাহিদা পূরণ করেন, এমন অবস্থায় স্বামীর পকেট থেকে না জানিয়ে টাকা নেয়া যাবে না। এই অভ্যাস থাকলে সেই সংসারে কখনো উন্নতি আসে না। প্রতিটা স্বামী তাদের সংসার চালানোর ব্যাপারে একটা পরিকল্পনা থাকে। কত টাকা কোন খাতে খচর করবে। এ অবস্থা তৈরি হলে সংসারে অনটন দেখা দিবে।
কথায় কথায় বলা, ‘‘তোমার সাথে বিয়ে হয়ে আমার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে’’
এটা একটা কমন ডায়লগ মেয়েদের। আমার মনে হয় পৃথিবীতে এমন স্বামী পাওয়া খুব কষ্টকর হবে যে এই কথাটা শুনে নাই। বেশির ভাগ মেয়েরা মনে করে তাদের স্বামীর থেকে নিজের অবস্থানটা অনেক বড়, অনেক বেশি, অনেক উচুঁ। এই কথা বললে সংসারে উন্নতি কমে যায়। হাজারো মেয়ে আছে, যারা এই রকম কথা বলে স্বামীকে ত্যাগ করে অনেক কষ্টে আছে।
তবে সংসারের ভরন পোষন না চালালে অনুমোতি ছাড়াই পকেট থেকে টাকা নেয়া যাবে। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হিন্দা বিনতে উতবা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকটে উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আবূ সুফিয়ান একজন কৃপণ ব্যক্তি। তিনি আমার এবং আমার সন্তানদের জন্য প্রয়োজনীয় খরচাদি প্রদান করেন না।
তবে আমি তার অজ্ঞাতেই তার সম্পদ থেকে প্রয়োজনীয় খরচাদি গ্রহণ করে থাকি। এতে কি আমার কোন দোষ (পাপ) হবে? তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তুমি তার সম্পদ থেকে তোমার ও তোমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট হয় এমন সঙ্গত পরিমাণ নিতে পার। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭১৪, ইফাবা-৪৩২৮]
লেখকের মন্তব্যঃ
দাম্পত্য জীবন মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দাম্পত্য জীবনে সবাই সুখী হতে পারে না। অনেক সময় আয়-রোজকার ভালো করলেও মেয়েদের কিছু কারণে সংসারে উন্নতি হয় না। এ বিষয়ে হাদিসের বর্ণনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সংসারে উন্নতি না হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে যেসব বদ অভ্যাস সেগুলো এতোক্ষণ নিশ্চয় জেনে গেছেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সংসার সুখের হোক, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url