হতাশা - দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির সহজ ও কার্যকরী উপায় সম্পর্কে জেনে নিন

হতাশা ও দুশ্চিন্তা মানুষকে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দার প্রান্তে নিয়ে যায়। আপনি কি হতাশায় বা দুশ্চিন্তায় ভূগছেন ? এর থেকে পরিত্রানের উপায় পাচ্ছেন না ? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
হতাশা - দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির সহজ ও কার্যকরী উপায় সম্পর্কে জেনে নিন

আজ আমরা হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির সহজ ও কার্যকরী উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে হাজির হয়েছি। এখানে জানতে পারবেন হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

ভূমিকাঃ

মানুষ মাত্র সফলতা বা ব্যর্থতা থাকবেই এটাই স্বাভাবিক। ‍ব্যর্থতার বোধ নিয়ে অনেকে হতাশা ও দুশ্চিন্তায় পড়ে নিজের জীবনকে দূর্বল করে ফেলেন। হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে জীবনকে দুর্বিসহ মনে হবে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পেজ সূচিপত্রঃ হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় সহজ ও কার্যকরী উপায়

হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া
দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমাতে ইসলাম
লেখকের মন্তব্যঃ

হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়

হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে, হতাশা ও দুশ্চিন্তা এই দুই বিষয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় জানা দরকার। হতাশা ও দুশ্চিন্তা একই জিনিস নয়। যদিও এগুলো সম্পর্কযুক্ত। হতাশা সাধারণত বিষন্নতা বা নিরাশার অনুভূতি, যেখানে কিছু পরিবর্তন বা উন্নতির আশা থাকে না।

দুশ্চিন্তা হল উদ্বেগ বা অশান্তির অনুভূতি, যা কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বা ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। দুইটি মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু তাদের কারণগুলো ভিন্ন। আশা করি হতাশা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে পার্থক্য টুকু বুঝতে পেরেছেন। চলুন হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় গুলো জেনে না যায়।

নিয়মিত ব্যায়ামঃ ব্যায়াম শরীরের জন্য খুবই উপকারী, এটি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা দান করে। দৈনিক ন্যূনতম ৩০ মিনিট হাটাহাটি, দৌড়ানো বা যোগব্যায়াম করলে হতাশা ও দুশ্চিন্তা অতিরিক্ত টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীরের এন্ডোরফিন নামক রাসায়নিক নিঃসরণ করে যা মানুষকে ভালো মুড রাখতে সাহায্য করে।

মেডিটেশনঃ মেডিটেশন হলো সচেতনভাবে দেহ মন এবং মস্তিষ্ককে শিথিল করার আধুনিক বৈজ্ঞানিক এবং সহজ ও কার্যকরী প্রক্রিয়া। মেডিটেশনের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরকে শিথিল এবং মন ও মস্তিককে প্রশান্ত করতে পারি। ফলে টেনশন অস্থিরতা মুক্ত হয়ে আমরা সচেতনভাবে দেহ-মনে সুখানুভূতি তৈরি এবং সবসময় তা উপভোগ করতে পারি। 

দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি কাজ করতে পারি আনন্দ নিয়ে, পেতে পারি সহজ সাফল্য। অর্থাৎ শারীরিক মানসিক বৈষয়িক প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশান্তিতে থাকার জন্যে, মেডিটেশন হচ্ছে দেহমনে সে অবস্থা সৃষ্টির একটি সহজ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।

প্রিয় শখের সময় কাটানোঃ আপনাকে আনন্দ দেয়, এমন কাজে নিয়োজিত হন। সেটা হোক বই পড়া, ছবি আঁকা, গান শোনা বা আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন সৃজনশীল কাজ। এভাবে হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে কিছুটা সময় অতিবাহিত করার চেষ্টা করুন।

বন্ধুদের সাথে মেলামেশাঃ আপনার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য একজন বিশ্বস্ত বন্ধুর সাথে কথা বলবেন এতে আপনার অনেক সময় স্বস্তি দেবে। বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করলে হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এজন্য একাকীত্ব দূর করবেন।

সঠিকভাবে বিশ্রাম নেওয়াঃ পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম মানুষের শরীর ও মনকে সবসময় সুন্দর ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে পাশাপাশি হতাশা ও দুশ্চিন্তাকে অনেক দূরে রাখে।

খাদ্যাভ্যাসঃ হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে নানান রকমের ফল মূল বিশেষ করে বেরি জাতীয় ফল পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খাওয়া উচিত। অবশ্যই নেশা জাতীয় খাদ্যদ্রব্য থেকে দূরে থাকুন। পাশাপাশি ফাস্টফুড জাতীয় খাবার থেকে দূরের থাকুন। অনেকে হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচতে নেশায় ডুবে থাকেন, যেটা এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সামান্য অবদান রাখতে পারে না।

পেশাগত সাহায্যঃ যদি আপনার হতাশা ও দুশ্চিন্তা অনেক বেশি হয় তাহলে অবশ্যই একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাথে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নিন। ডাক্তারের কাছে গেলে অনেকে পাগল বলতে পারে এমন ভাবা উচিৎ নয়। সঠিক চিকিৎসায় অনেকে ভালো হচ্ছেন।

তাজা ফুলের সুগন্ধ ও সুগন্ধী মোমবাতিঃ খুব টেনশনের সময় তাজা ফুলের সুগন্ধ নিতে পারেন। ঘরে সুগন্ধী মোমবাতিও জ্বালাতে পারেন। অ্যারোমাথেরাপির নিয়মিত এ অভ্যাস অনেকটাই মনের চাপ কমিয়ে দেয় বলে মত মনোবিদদের।

হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া

হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া সম্পর্কে আল কুরআন থেকে দোয়া বিশেষ করে সূরা আল ফাতিহা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করলে হতাশ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এবং সূরা আল ইনশিরাহ ৯৪ নম্বর সূরা পাঠ করলে হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এছাড়াও হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মিত নামাজ পড়া এবং আল্লাহর কাছে আপনার সমস্যার সমাধান চাওয়া অতি উত্তম সিদ্ধান্ত হতে পারে। নামাজ পড়ার সময় যখন মানুষ সিজদা দেয় তখন মানুষের শরীরে অতিরিক্ত তড়িৎ তৈরি হয় সেটা মাটিতে নেমে যায়। তাছাড়া সিজদার সময় মাথাসহ উপরের অংশে পর্যাপ্ত রক্ত চলাচলের কারণেও শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

প্রিয় পাঠক ইসলামিক ভিত্তিতে হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির আরো দোয়া রয়েছে। কেউ যদি হতাশা ও দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় আর সে যদি কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত করে এমনিতেই তার হতাশা কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ। নিচে আরো একটি ঘটনাসহ দোয়া উল্লেখ করা হলোঃ-

আবু সাঈদ আল-খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুল (সাঃ) মসজিদে প্রবেশ করে সেখানে আবু উমামাহ নামক এক আনসারি সাহাবিকে দেখতে পেয়ে তাকে বলেন, হে আবু উমামাহ, কী ব্যাপার! আমি তোমাকে নামাজের ওয়াক্ত ছাড়া মসজিদে বসে থাকতে দেখছি? তিনি বলেন, সীমাহীন দুশ্চিন্তা ও ঋণের বোঝার কারণে হে আল্লাহর রাসুল। 

তিনি বলেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শিখিয়ে দেব না, তুমি তা বললে আল্লাহ তোমার দুশ্চিন্তা দূর করবেন এবং তোমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থাও করে দেবেন?

তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। তিনি (সাঃ) বলেন, তুমি সকাল-সন্ধ্যায় নিম্নোক্ত দোয়া বলবে।’ আবু উমামাহ (রাঃ) বলেন, আমি তা-ই করলাম। ফলে মহান আল্লাহ আমার দুশ্চিন্তা দূর করলেন এবং আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থাও করে দিলেন। (আবু দাউদ, হাদিসঃ ১৫৫৫)

দোয়াটি হলো

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ العَجزِ وَالكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الجُبنِ وَالبُخلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ غَلَبَةِ الدَّينِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজজি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিদ দাইনি ওয়া কহরির রিজাল।

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই ভীরুতা ও কার্পণ্য থেকে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ঋণের বোঝা ও মানুষের রোষানল থেকে।

দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমাতে ইসলাম

দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রথম হলো ইমান ও তাকওয়াকে মজবুত করতে হবে। যার ইমান যত দুর্বল সে তত তাড়াতাড়ি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। আর যার ইমান শক্তিশালী দুশ্চিন্তা তাকে কম স্পর্শ করে। যত সমস্যাই হোক আল্লাহতায়ালা আমার সমস্যা দেখবেন- এ বিশ্বাস রাখতে হবে।

আল্লাহতায়ালা আছেন, তার ওপর আমার ভরসা থাকবে। আমার এ সমস্যার একটা সমাধান হবেই হবে ইনশাআল্লাহ। আর কিছু না হোক আখেরাত আমার সামনে আছে। একজন ইমানদার ডিপ্রেশড হয়ে ভেঙে পড়বে এটা তার জন্য সাজে না। এ জন্য ইমান মজবুত করলে আমরা পেরেশানি থেকে মুক্তি পাব।

এ ছাড়া পেরেশানি থেকে মুক্তির জন্য দরুদ, ইসতেগফার এবং দোয়ায়ে ইউনুস- এ তিনটি আমল পরীক্ষিত। যে কোনো ডিপ্রিশন থেকে বাঁচার জন্য এগুলো মহৌষধ। দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার সর্বোত্তম উপায় হলো- আল্লাহতায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়া।

সর্বশেষ আমল হলো- শেষরাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় চোখের পানি ছেড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। আল্লাহতায়ালা অসাধ্যকে সাধন করে দেবেন ইনশাআল্লাহ। মানুষের কাছে বার বার চাইলে মানুষ বিরক্ত হয়, কিন্তু আল্লাহর কাছে বার বার চাইলে আল্লাহ খুশি হন।

লেখকের মন্তব্যঃ

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আশা করি এতক্ষণে মনোযোগ সহকারে পড়ে উপরের লেখাগুলো থেকে উপকৃত হয়েছেন। হতাশা ও দুশ্চিন্তাকে কোন সময় মনের মধ্যে ঠাই দিবেন না এবং এমন সময় একাকী থাকবেন না। যে কোন কাজে মনোনিবেশ করুন। কাজ না থাকলে উপরের আমলগুলো করুন ‍দুশ্চিন্তা দূর হবেই ইনশাআল্লাহ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪