যে ধরনের মানুষ খুব তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যায় বিস্তারিত জেনে নিন
শারীরিক ও মানসিক সুস্থ্যতা আল্লাতাআলার অনেক বড় নেয়ামত। আগেকার মানুষ ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী এবং সবল। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে অল্প বয়সের বুড়ো হয়ে যাচ্ছ। কেন অল্প বয়সে খুব তাড়াতাড়ি মানুষ বুড়ো হয়ে যাচ্ছ তাকি জানেন ?
হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে যে আলোচনা নিয়ে হাজির হয়েছি তা হচ্ছে- যে ধরনের লোক খুব তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যায় তাদের সম্পর্কে। এখানে জানতে পারবেন কোন কোন অভ্যাস পরিবর্তন করলে আপনি ভালো থাকবেন।
ভূমিকাঃ
সময়ের সাথে সাথে দেহের কোষ ও ফাংশনগুলেঅ হ্রাস পেতে থাকে। মূলত দেহের কোষ যত বেশি বিভাজিত হয়, তত বেশি বয়স বাড়তে থাকে। একটি ভেতরের অর্থাৎ জিনগত, যেটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অন্যটি ব্যক্তিজীবনের চাপের মাত্রা আর জীবনযাত্রার অভ্যাসের কারণে।
বৃদ্ধ হওয়ার এই ন্যাচারাল প্রসেসটাকে আটকে না রাখলেও ধীরগতি করা সম্ভব। জীবনযাত্রার বিভিন্ন অভ্যাস এবং বেশি বেশি ফল আর সবজি খাওয়ার অভ্যাস যেমন শরীর ভালো রাখবে, তেমনি রোগব্যাধি ও বৃদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া ধীরগতি করতে সাহায্য করবে।
পেজ সূচিপত্রঃ
যারা সারা দিনে খুব কম পরিমান পানি পান করে
যারা সব সময় রেগে থাকে
যারা অতিরিক্ত রাত জাগে
সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠে
যারা সব সময় অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনায় মগ্ন থাকে
লেখকের মন্তব্যঃ
যারা সারা দিনে খুব কম পরিমান পানি পান করে
পানির অপর নাম জীবন। একজন প্রাপ্ত বয়স্কো পুরুষের জন্য কম পক্ষে ২ থেকে ২.৫ লিটার পানি পান করা জরুরি আর একজন মহিলার ক্ষেত্রে ২ লিটার। ২০২৩ সালের একটি গবেষণা বলছে, শরীরে পর্যাপ্ত পানির যোগান দিলে বয়সের ছাপ বা বুড়িয়ে যাওয়ার গতি কমিয়ে দেয়। সেইসঙ্গে হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যার মত দীর্ঘ মেয়াদী জটিলতা থেকে দূরে রাখে।
একটি গবেষণায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে দুইটি দলের একটিকে গবেষণার বিষয় ঠিক করে দেন ডেভি। এরপর উভয় দলকেই তিন মাস স্বাস্থ্যকর খাবার বা ডায়েট নীতি মেনে চলতে বলা হয়। কিন্তু শুধু একটি দলকে বলা হয়, প্রতিবার খাওয়ার আধাঘণ্টা আগে আধা লিটার পানি খেতে। পরে দেখা যায়, যে দলের সদস্যরা খাবারের আগে পানি খেয়েছে, তাদের ওজন অন্য দলটির সদস্যদের চেয়ে বেশি কমেছে।
উভয় দলকেই বলা হয়েছিল প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটতে। যারা পানির খাওয়ার নিয়মটি মেনে চলে, তারা হাঁটার নিয়মও আরো ভালোভাবে মেনে চলেছে। এ থেকে ডেভির অনুমান, শরীরে মৃদু পানি শূন্যতা বা ১-২% পানি শূন্যতার বিষয়টি সবার মধ্যেই আছে। সেটি যখন ঘটে, অনেকেই তা বুঝতে পারে না। মৃদু হলেও তা মানুষের মেজাজ ও এনার্জিকে প্রভাবিত করে।
আবার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পানি পান করাও উচিৎ নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অধিক পরিমাণে তরল গ্রহণে রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে ব্রেইন ও ফুসফুস ফুলে যেতে পারে, যেহেতু ওই তরলের কারণে রক্তে সোডিয়ামের ভারসাম্য মাত্রার পরিবর্তন হতে পারে। আমরা যে সব ফল ও শাক-সবজি খায় সেখান থেকেও পানির জোগান আসে সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে।
যারা সব সময় রেগে থাকে
রাগ করা হারাম। ইসলামে রাগের কোন জায়গা নেই। সমাজেও একটা কথা প্রচলন আছে- রেগে গেলেন, তো হেরে গেলেন। সব সময় রেগে থাকাটাও বুড়ো হওয়ার একটা কারণ। রাগ শরীর, মন, সমাজ, পরিবার সব কিছুর জন্যই অনেক বড় সমস্যা। অনেকের এটা অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে আর রাগ করবে না, কিন্তু কখনযে আবার রেগে যায় সে নিজেও জানেনা।
সুস্থ্য থাকতে চাইলে রাগ কমাতে হবে অবশ্যই। রাগ কোন সময় কোন ভাবেই ভালো কিছু বয়ে আনেনা। রাগ শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক সকল ক্ষেত্রেই ক্ষতি বয়ে আনে। বেশি রেগে গেলে সেই স্থান ত্যাগ করুন। অফিসে বা বাসায় রাগারাগি হলে বেরিয়ে পড়ুন এবং হেটে আসুন দেখবেন রাগ চলে গেছে।
যারা অতিরিক্ত রাত জাগে
রাত জাগা খারাপ অভ্যাসগুলোর মধ্যে একটি। আল্লাহ দিন সৃষ্টি করেছেন কর্মের জন্য, আর রাত সৃষ্টি করেছেন বিশ্রামের জন্য। অথচ বিনা কাজে, বিনা কারণে মানুষ রাত জাগে। রাত জাগা যে কতটা ক্ষতিকর সে কথা বলে বুঝানো যাবে না। যারা রাত জাগেন তারা খুব তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যাবেন। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, টানা কয়েকদিন রাত জাগলে শরীর ভেতর থেকে ভাঙতে শুরু করে। শরীরে বাসা বাঁধে নানারকম রোগ-ব্যাধি। এমনকি কমে যায় আয়ুও।
সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠা
বর্তমান জেনারশানের বেশির ভাগ মানুষের ঘুমের ধরন একই রকম। রাতে দেরিতে ঘুমানো আর সকালে দেরিতে ওঠা। কিন্তু এই বিঘ্নিত ঘুমের ধরণ স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়।
রাতে দেরি করে ঘুমানোর অভ্যাস এবং তারপর সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস শরীরে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা অনেক রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
কারণ ঘুম এবং স্বাস্থ্যের মধ্যে খুব গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই ঘুমের ক্ষতি হলে স্বাস্থ্যের ওপরও এর প্রভাব দেখা যায়। কেন সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয় জেনে নিন
স্থুলতাঃ যারা সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন তাঁদের মধ্যে স্থুলতার সমস্যা প্রায়ই বেশি দেখা যায়, কারণ সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে তাঁদের শারীরিক পরিশ্রম কমে যায়। যার কারণে ওজন বৃদ্ধি এবং স্থুলতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তারা খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধ হয়ে যায়।
মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাবসকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার ফলে দিনের শুরুতে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দেখা দিতে পারে এবং সারাদিন তরতাজা অনুভব করবেন না। দেরিতে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে ওঠার কারণে সময়ের অভাবে দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হতে পারে, যা মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
যারা সব সময় অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনায় মগ্ন থাকে
ভেবে-চিন্তে কাজ করা ভালো। তবে সব সয়ম অতিরিক্ত চিন্তায় মগ্ন হয়ে থাকাটা কিন্তু খারাপের লক্ষণ। অতিরিক্ত টেনশন, চিন্তা-ভাবনা আপনাকে বৃদ্ধ বানিয়ে ফেলবে। চিন্তার কারণে সমস্ত চুল পেকে যাবে, চামড়া কুচকে যাবে। তাই দুশ্চিন্তা কোন সময় প্রশ্রই দেবেন না। অতিরিক্ত চিন্তা করলে যে ক্ষতিগুলো হবে-
- আত্নবিশ্বাস কমিয়ে ফেলে।
- শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে।
- মানসিক সমস্যা বাসা বাধে
- সঠিকভাবে কাজ করায় বাধা তৈরি করে
- অল্পতেই ভেঙে পড়ে।
লেখকের মন্তব্যঃ
জীবন হল একমুখী। শুরু থেকে শেষের দিকে এগোয়। প্রথমে শিশুকাল, তারপর যৌবন, এরপর মাঝ বয়স পেরিয়ে মানুষ বার্ধক্যে যান। জীবনের আপন নিয়মেই এই চক্র চলে। কোনও ব্যক্তিই এই চক্রের বাইরে থাকেন না। তাই একটা সময়ের পর সকলেরই বয়স হয়। তবে বর্তমান জীবনযাত্রা আমাদের জীবনের স্বাভাবিক পখচলাকে নষ্ট করে দিচ্ছে।
এতরকম সমস্যার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি যে, অনেক কম বয়সেই মানুষের মধ্যে বয়সের ছাপ দেখা দিচ্ছে। চুল পাকছে, ত্বক হয়ে যাচ্ছে আলগা। আগেকার দিনে মানুষের জীবন এতটা জটিল ছিল না। তাই এত দ্রুত বার্ধক্য আসত না। শুধুমাত্র আমাদের লাইফ স্টাইলের কারণেই আমাদের এই দশা। যাই হোক উপরে বর্ণিত অভ্যাসগুলো পরিহার করুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url