থাইরয়েডের সমস্যা হলে কি খাবেন আর কি খাবার খাবেন না বিস্তারিত জেনে নিন

বর্তমানে থাইরয়েডের সমস্যা সবার কাছে পরিচিতি। কম-বেশি প্রতিটি বাড়িতেই কোন না কোন মানুষ ভাগেন এই সমস্যায়। আপনিও কি এই সমস্যায় ভূগছেন ? জানতে চান কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে আর কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে না ?
থাইরয়েডের সমস্যা হলে কি খাবেন আর কি খাবার খাবেন না বিস্তারিত জেনে নিন

হ্যাঁ বন্ধরা আজ আপনাদের সামনে যে আলোচনাটি নিয়ে হাজির হয়েছি তা হচ্ছে থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে আর কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে না সেই তথ্য জানাতে। এখানে জানতে পারবেন ঔষধের পাশাপাশি আপনার লাইফ স্টাইল কেমন হবে সে সম্পর্কে।

ভূমিকাঃ

ডায়াবেটিস এর মত থাইরয়েডের সমস্যাও এখন অনেকটা কমন রোগ। এর থেকে দেখা দেয় গুরুতর সব অসুখ। এমনকি মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তান ধারনের ক্ষেত্রেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এই থাইরয়েড। এই লক্ষণ দেখা গেলে ওজন কমে যায়, আরও নানা সমস্যা দেখা দেয়। যা শরীরের জন্য একেবারেই ভালো নয়। থাইরয়েড এর সমস্যা থাকলে খাওয়া দাওয়া, জীবনযাপন কড়া নিয়মে বেঁধে দেন চিকিৎসকরা। জেনে নিন থাইরয়েড থাকলে কী খাবেন, কী খাবেন না।

পেজ সূচিপত্রঃ

থাইরয়েড কি ? ও এটি শরীরে কি কাজ করে
থাইরয়েড এর লক্ষণ
থাইরয়েড কমানোর উপায়
থাইরয়েড হলে কি কি খাওয়া উচিত নয়
থাইরয়েড হলে কি কি খাওয়া যাবে
থাইরয়েড হলে কি কি সবজি খাওয়া উচিত নয়
থাইরয়েড রোগীর খাবারের তালিকা
লেখকের মন্তব্য

থাইরয়েড কি ? ও এটি শরীরে কি কাজ করে

থাইরয়েড একটি ছোট, প্রজাপতির আকারের গ্রন্থি যা গলার মাঝখানে অর্থাৎ ভয়েস বক্সের নিচে এবং শ্বাসনালীর(ট্রাকিয়া) চারপাশে আবৃত। এটি একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। থাইরয়েড গ্রন্থি হরমোন তৈরির মাধ্যমে‌ দেহের প্রায় সকল বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।

থাইরয়েড রোগ হল একটি চিকিৎসা অবস্থার জন্য একটি সাধারণ শব্দ যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে সঠিক পরিমাণে হরমোন তৈরি করা থেকে বিরত রাখে। আপনার থাইরয়েড সাধারণত হরমোন তৈরি করে যা আপনার শরীরকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।

থাইরয়েড গ্রন্থিতে খুব বেশি থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন হলে শারীরিক বিপাকীয় প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়। এই অবস্থায় শরীর খুব দ্রুত শক্তি ব্যবহার করে। একে হাইপারথাইরয়েডিজম বলে। খুব দ্রুত শক্তি ব্যবহার করার ফলে হাইপারথাইরয়েডিজমে শরীরে ক্লান্তি অনুভূত হয়। এছাড়াও হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যাওয়া, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, এবং নার্ভাস হয়ে পরা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।

এর বিপরীতে,যখন থাইরয়েড গ্রন্থি খুব কম থাইরয়েড হরমোন তৈরি করে অর্থাৎ হাইপোথাইরয়েডিজম, তখন শরীরে শ্রান্তি আসে। এবং ওজন বেড়ে যাওয়া, ঠান্ডা তাপমাত্রা সহ্য না হওয়া, ডিপ্রেশন, ও ত্বক শুষ্ক হবার মতো আরো অন্য লক্ষণ ও উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়।

এই দুটি প্রধান ব্যাধি বিভিন্ন অবস্থার কারণে হতে পারে। এগুলি পরিবারের (উত্তরাধিকারসূত্রে) মাধ্যমেও প্রাপ্ত হয়। এই দুটি ছাড়াও থাইরয়েডাইটিস, হাশিমোটো-এর রোগ, গ্রেভস রোগ, হাইপারফাংশনিং থাইরয়েড নডিউল প্রভৃতি থাইরয়েড গ্রন্থি সংক্রান্ত সমস্যা দেখা যায়।

থাইরয়েড এর লক্ষণ

শরীরে থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজম এবং বেশি উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিজম। থাইরয়েড সমস্যা হলে শরীরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

এই বিষয় নিয়ে আমাদের বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শাহজাদা সেলিম। রোগটি কতদূর এগিয়েছে তার ওপর নির্ভর করে শরীরে নানা রকম উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দেয়৷ 
এক্ষেত্রে যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলোঃ-
  • ক্লান্তি ক্লান্তি ভাব
  • অল্পতেই শীত শীত লাগবে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
  • হঠাৎ করে অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়া
  • অনেক সময় মুখ ফুলে যেতে পারে
  • গলার স্বর বদলে যেতে পারে
  • পেশীর দুর্বলতা
  • পেশীতে ব্যথা
  • নারীদের ক্ষেত্রে মিন্সট্রুয়াল সাইকেল পরিবর্তন হয়ে যাওয়া
  • ডিপ্রেশন
  • চুল পড়ে যাওয়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়া
  • স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া

থাইরয়েড কমানোর উপায়

থাইরয়েড আমাদের শরীরের ভালো কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। তবে এটি যখন কম বা বেশি হরমোন উৎপন্ন করে তখন শরীরে নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। ওষুধ না খেয়ে ঘরোয়া উপায়েও থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় বলছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকদের মতে, একটি হল হাইপো থাইরয়েড অন্যটি হাইপার। প্রথমটি হলে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে কম হরমোন ক্ষরিত হয়, আর পরেরটিতে হরমোন বেশি পরিমাণে ক্ষরিত হয়। 

তবে এই দুই থাইরয়েডই ক্ষতিকর বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এটি যখন কম বা বেশি হরমোন উৎপন্ন করে তখন শরীরে নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে, যেমন গলগন্ড, থাইরয়েডাইটিস, হাইপারথাইরয়েডিজম, হাইপোথাইরয়েডিজম, গ্রেভস ডিজিজ, থাইরয়েড ক্যানসার, থাইরয়েড নোডুলস এবং থাইরয়েড স্টর্মও হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতীয় আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ডা. ডিক্সা ভাবসার বলেন, ঔষুধ ছাড়া এই ৫টি সুপারফুড খাদ্যতালিকায় রাখলে এই সমস্যা অনেকটাই কমে যেতে পারে।

১. আমলকিঃ ডা. ডিক্সার বলেন, কমলালেবুর থেকে একটা আমলকির মধ্যে আট গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। আবার ডালিমের চেয়ে প্রায় ১৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে আমলকিতে। এটি প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখলে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

২. নারকেলঃ থাইরয়েড রোগীদের অন্যতম সেরা খাবার হতে পারে ডাব অথবা নারকেল। তিনি জানিয়েছেন, নারকেল ধীর এবং অলস বিপাকে উন্নত করতে সাহায্য করে। আসলে নারকেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে এমসিএফএ (মাঝারি-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড) এবং এমটিসি (মাঝারি-চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড) রয়েছে যা বিপাককে উন্নত করতে সহায়তা করে। তাই থাইরয়েড রোগীরা নারকেল খেলে উপকার পাবেন।

৩. কুমড়ার বীজঃ কুমড়ার বীজে জিঙ্ক রয়েছে। এই জিঙ্ক শরীরের অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজগুলিকে শোষণ করতে সাহায্য করে যা শরীরে থাইরয়েড হরমোন সংশ্লেষণ করে ভারসাম্যকে উন্নত করতে সাহায্য করে।

৪. ব্রাজিল নাটসঃ সেলেনিয়াম একটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এটি শরীর থাইরয়েড হরমোনের বিপাকের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি ৪টি থেকে ৩টি রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয়। ব্রাজিল বাদাম এই পুষ্টির সেরা প্রাকৃতিক উৎসগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। চিকিৎসকের মতে আপনি যদি দিনে তিনটি ব্রাজিল বাদাম খান তাহলে এটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং থাইরয়েড মিনারেলের জন্য স্বাস্থ্যকর।

৫. মুগ ডালঃ মুগ ডালে প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, জটিল কার্বোহাইড্রেট এবং প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন এই ডালে ফাইবারের পরিমাণও বেশি। আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন তাহলে থাইরয়েড ভারসাম্যহীনতার একটি সাধারণ পার্শ্ব লক্ষণ বলা হবে। মুগ মটরশুঁটির মতোই আয়োডিন সরবরাহ করে।

থাইরয়েড হলে কি কি খাওয়া উচিত নয়

থাইরয়েড বেড়ে গেলে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যেমন পনির, চিজ খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন। চিনি, রান্না করা গাজর, পাকা কলা, শুকনো ফল, মধু, ময়দার রুটি, সাদা ভাত, মিষ্টি কার্বোহাইড্রে়টের মাত্রা বাড়ায়। থাইরয়েড থাকলে এগুলি কম খাওয়া উচিত। চা, কফি, কোল্ড ড্রিংকও যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।

থাইরয়েড হলে কি কি খাওয়া যাবে

সেলেনিয়াম ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। যেমন-ব্রাজিল নাট, সামুদ্রিক মাছ ও খাবার, অর্গান মিট, আখরোট, ডিম, সূর্যমুখীর বীজ, মটর, কোকো পাউডার, ফ্ল্যাক্সসিড ইত্যাদি

প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার যেমন-লো ফ্যাট টক দই

♦ আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার লবণ ও অন্যান্য আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার তালিকায় রাখতে হবে
♦ গাঢ় সবুজ শাক-সবজি
♦ ভিটামিন ডি ফর্টিফায়েড খাবার ইত্যাদি

থাইরয়েড হলে কি কি সবজি খাওয়া উচিত নয়

ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, ব্রাসেলস স্প্রাউট ইত্যাদি হলো ক্রুসিফেরাস গোত্রের সবজি। এসব সবজিতে কিছু উপাদান থাকে, যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে আয়োডিন ব্যবহারে সামান্য বাধা দেয়। কিন্তু আসলে থাইরয়েডের কার্যক্রম ব্যাহত করতে যে পরিমাণ ক্রুসিফেরাস সবজি খেতে হবে, তা কখনো কারও পক্ষে সম্ভব নয়। 

মানে দৈনন্দিন জীবনে আমরা এসব সবজি যে পরিমাণে খাই, তা একেবারেই নিরাপদ; বরং ব্রকলি ফলিক অ্যাসিডের চমৎকার উৎস, ফুলকপি ও বাঁধাকপিতে আছে প্রচুর ফ্ল্যাভনয়েড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন। এই শীতে এসব সবজি না খেলে আপনি বরং এসব উপকার থেকে বঞ্চিত হবেন। তাই থাইরয়েডের সমস্যা থাকলেই যে এসব সবজি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে, তা একটি ভুল ধারণা। তাই এই সমস্ত সবজি না খাওয়াই ভালো।

থাইরয়েড রোগীর খাবারের তালিকা

লো আয়োডিন লবণ, ডিমের সাদা অংশ, তাজা ফল, লবণবিহীন বাদাম, আলু, মধু, আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন-শুকনা বীজ, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, টার্কি মুরগি, মাংস, গোটা শস্য, সেলেনিয়াম ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার, সূর্যমুখীর বীজ, ব্রাজিল নাট, তোকমা, মাশরুম, 

মটর, কোকো পাউডার, বাদামের দুধ, ক্যালসিয়াম ফর্টিফায়েড খাবার, ভিটামিন ডি ফর্টিফায়েড খাবার, হলুদ, সূর্যমুখী তেল, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, তৈলাক্ত মাছ, গোলমরিচ গুঁড়া, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি খাবার তালিকায় রাখতে হবে।

এ ছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যায় যে বিষয়গুলো আপনাকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হলোঃ

♦ প্রতিদিন রাতে সঠিক সময়ে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে
♦ পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে
♦ সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে
♦ মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে
♦ আপনার চিকিৎসক দ্বারা প্রদানকৃত ওষুধ অবশ্যই সঠিক সময়ে এবং নিয়মিত খেতে হবে

লেখকের মন্তব্যঃ

পরিবারের একজনের থাইরয়েড হলে ভোগান্তির শেষ থাকে না। থাইরয়েড বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি যার অবস্থান গলায়। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে জীবনযাপনে কড়া নিয়ম বেঁধে দেন চিকিৎসকরা। থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বাড়াতে জিঙ্ক, আয়োডিন, অ্যালগি, কপার, আয়রনের মতো কয়েকটি উপকারী উপাদানের মাত্রা শরীরে বেশি হওয়া প্রয়োজন। তাই উপরে বর্ণিত নিয়মগুলি মেনে চলুন এবং সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪