সংসারে দারিদ্রতা ও সচ্ছলতা আসে যে সব কারণে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

সবাই চায় সচ্ছলতা ও সফলতা। অভাব ও দারিদ্রতা কারো কাম্য নয়। অভাবী জীবন চরম কষ্টের ও অপছন্দনীয়। কঠোর পরিশ্রম করার পরও অনেকের সংসারে দারিদ্রতা লেগেই থাকে কেন জানেন ?
সংসারে দারিদ্রতা ও সচ্ছলতা আসে যে সব কারণে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে সংসারে দারিদ্রতা আসার কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। এখানে জানতে পারবেন দারিদ্রতা থেকে মুক্তির উপায় সমূহ।

ভূমিকাঃ

সুখ এবং দুঃখ মানুষের জীবনে অতপ্রত ভাবে জড়িয়ে আছে। কেউ অনেক টাকা উপার্জণ করার পরও দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাইনা আবার অনেকে অল্প পরিমানে আয় রোজগার করার পরও সচ্ছলতার সাথে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন সফলভাবে। আজ মূলত এর কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা থাকছে আজকের আর্টিকেলে। আসুন আর দেরি না করে শুরু করা যাক-

পেজ সূচিপত্রঃ

দ্রারিদ্রতা আসার কারণ
দ্রারিদ্রতা আসে সাত জিনিসের কারণে
সচ্ছলতা আসে যে সাতটি কারণে
ইসলামে দ্রারিদ্রতা
লেখকের মন্তব্যঃ

দ্রারিদ্রতা আসার কারণ

দারিদ্রতা আসার যে কয়টি কারণ আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাপাচার। আল্লাহর বিধান না মেনে গুনাহের কাজে লিপ্ত হলে আল্লাহ রাগান্নিত হন। আর এ ক্রোধের বহিপ্রকাশ ঘটে দারিদ্রতার মাধ্যমে। অনেক মানুষ আছেন যারা অবৈধ পথে অনেক টাকা ইনকাম করলেও মাস শেষে বছর শেষে তাদের কাছে কোন টাকা থাকে না।

আবার এমন মানুষও আছে যারা অল্প আয় রোজগার করেও তাদের সংসার সচ্ছলতার সাথে চালিয়ে সুখি শান্তিতে বসবাস করে থাকেন। আবার অনেক টাকা থাকলেও যে শান্তি থাকবে এমনটিও নয়। সুখ শান্তি জিনিসটা অন্য রকম। বেশি টাকা হলে বেশি বড়লোকি অসুখ বিসুখও হয়। এমনও মানুষ আছে যাদের অনেক টাকা থাকার পরও গরুর মাংশ, খাশির মাংশ খেতে বারণ, শুধু খেতে হয় শাক-সবজি।

দ্রারিদ্রতা আসে সাত জিনিসের কারণে

নিম্নক্তো সাত জিনিসের কারণে আমাদের সংসারে অনেক সময় দারিদ্রতা লেগেই থাকে যা আমরা অনেকেই জানি না। বিষয়গুলো আমরা এমনিতেই সাধারণ ভাবে বদভ্যাস মনে কারে করে থাকি। আসুন জেনে নেয়া যাক সেই কারণগুলো সম্পর্কে

তাড়াহুড়া করে নামাজ পড়ার কারণে

নামাজ অন্য রকম একটি ইবাদত। এখানে তাড়াহুড়া করা যাবে না। নামাজের যেই আরকান-আহকাম রয়েছে সেগুলো সঠিক ভাবে পালন করতে হবে। নামাজ একমাত্র আল্লাহর জন্য। আমরা জানি এবং মনে মনে ভাবি আল্লাহর সামনে দাড়িয়ে, আল্লাহর কুদরতি পায়ে সিজদা করছি। তাহলে এখানে তাড়াহুড়া করার তো কিছু নাই। এটিও দারিদ্রতা আসার অন্যতম কারণ।

দাঁড়িয়ে পেশাব করার কারণে

দাড়িয়ে পেশাব করা শয়তানি কাজ। দাড়িয়ে পেশাব করা ইসলামে নিষেধ আছে। দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার এই অভ্যাস কি আসলে স্বাস্থ্যকর? বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার কারণে পুরুষের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। দূষিত পদার্থ বের হতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে দাড়িয়ে প্রস্রাবের কারণে প্রস্রাবের চাপ কমতে থাকে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

পেশাবের জায়গায় ওজু করার কারণে

ইসলামের বিধান হচ্ছে বাতরুমে আল্লাহর নাম নেয়া যাবে না সেখানে বিসমিল্লাহ বলবেন কিভাবে ? প্রস্রাব খানা এবং পায়খানায় প্রবেশের দোয়া হচ্ছে আল্লাহুম্মা ইন্নি আয়ুযুবিকা মিলান খুবুসে অল খাবায়েস। বাধ্য হয়ে পেশাবের জায়গায় ওজু করতে হলে বেশি করে পানি ঢেলে দিয়ে পরে ওজু করা যাবে।

ফুঁ দিয়ে বাতি নিভানোর কারণে

ফুঁ দিয়ে বাতি নিভানো নিষেধ আছে। অবশ্য এখন আর বাতি দেখা যায় না। কারণ সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়েগেছে। তারপরেও যদি কেউ কখনো বাতি জালান তবে তা ফুঁ দিয়ে নিভানো থেকে বিরত থাকুন। এটাও দারিদ্রতা আসার একটি কারণ।

দাঁত দিয়ে নখ কাটার কারণে

দাঁত দিয়ে নখ কাটার বদভ্যাস অনেকেরই আছে। নখ বড় থাক আর ছোট থাক ওরা দাাঁত দিয়েই কাটবে। এই অভ্যাসটা পরিহার করা উচিৎ। এটিও দারিদ্রতা আসার একটি অন্যতম কারণ। দাঁত দিয়ে নখ কাটলে বাহ্যিক তিনটি ক্ষতি হয়- ময়লা পেটের মধ্যে চলে যায়। নখের সংক্রমন হতে পারে এবং দাঁতেরও সমস্যা হয়।

পরিধেয় বস্ত্র দ্বারা মুখ সাফ করার কারণে

এই কাজটি করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে অন্য কাপড় ব্যবহার করুন। তবে পরিধেও কাপড় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে মুখ মুছা যাবেনা এটা ঠিক নয়। পরিধেও কাপড়ে অনেক সময় ময়লা লেগে থাকতে পারে, সেই জন্যই মুখ না মুছাই ভালো।

সচ্ছলতা আসে সাত জিনিসের কারণে

দারিদ্রতা আসার যেমন কারণ আছে, ঠিক তেমনি সচ্ছলতা আসারও সাতটি কারণ আছে। নিম্নে যে আমল বা কাজগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো কেউ যদি আল্লাহর উপর ভরসা করে করতে পারে তবে তার সংসারে সচ্ছলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।

১। কুরআন তেলাওয়াত করার কারণে।

কোরআন তেলাওয়াত অত্যান্ত ফজিলত পূর্ণ আমল। ঘুম থেকে উঠে এবং ঘুমানোর আগে কোরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস তৈরি করুন। আপনার সংসারে অবশ্যই সচ্ছলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।

২।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার কারণে।

নামাজ হচ্ছে আল্লাহর একটি ফরজ বিধান। মুসলিম হিসেবে আমাদেরকে আবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে সঠিক সময়ে। যে যেখানেই যে অবস্থায় থাকিনা কেন নামাজ আদায় করা লাগবে। নামাজ হচ্ছে অন্য রকম ইবাদত। মরার পর সর্ব প্রথম যে হিসাব নিয়া হবে সেটা হচ্ছে নামাজের। রাসুল (সাঃ) ইনতেকালের আগ পর্যন্ত শুধু নামাজের কথায় বলেগেছেন।

৩। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার কারণে।

সর্বাবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আল্লাহ তাআলার অফুরন্ত নেয়ামত আমরা ব্যবহার করছি। শুধু মাত্র একটি নেয়ামতের শুকুরিয়া আদায় করে শেষ করতে পারবো না। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ বান্দার উপর খুশি হয়ে যান। আর আল্লাহ খুশি হলে বান্দার জন্য আর কি লাগে ?

৪। দরিদ্র ও অক্ষমদের সাহায্য করার কারণে।

দরিদ্র এবং অক্ষম ব্যক্তিদের সাহায্য করলে আল্লাহ অনেক বেশি খুশি হন। এমন মানুষ আছেন যাদের টাকা পয়সার অভাব নেই, কিন্তু গরিব, দুখি মানুষদের সহ্য করতে পারেন না। এমনটি ঠিক নয়, কারণ টাকার ওয়ালা আল্লাহ আপনাকে বানিয়েছেন। আল্লাহ চাইলে মুহুর্তেই আপনার সব সম্পদ শেষ করে দিতে পারেন।

৫। গোনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে।

আল্লাহর কাছে সেই বান্দা বেশি প্রিয় যে বান্দা গোনাহের পর দেরি না করে তাড়াতাড়ি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। নিজের অপরাধ আল্লাহর কাছে স্বীকার করে অপকর্মের জন্য অনতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আর আল্লাহ যদি ক্ষমা করে দনে তবে তার সচ্ছলতা বৃদ্ধি পাবে।

৬। পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদাচরণ করার কারণে।

পিতা-মাতার এবং আত্মীয় স্বজনদের সাথে সদাচরণ করার ব্যাপারে কোরআন মাজিদে সরাসরি আয়াত নাযিল করেছেন। আল্লাহর পরেই পিতা-মাতার স্থান সন্তানদের জন্য। পিতা-মাতা যদি সন্তানের উপর অখুুশি থাকেন তাহলে তার আর সংসারে উন্নতি হবেনা এটা নিশ্চিত। সে এগজতও হারাল ঐ গজতও হারাল।

৭। সকালে সূরা ইয়াসিন এবং সন্ধ্যায় সূরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করার কারণে।

প্রত্যহ সকালে সূরা ইয়াসিন পড়া অনেক ফজিলতের। সূরা ইয়াসিন একবার পাঠ করলে ১০ খতম কোরআন তেলাওয়াতের সওয়াব পাওয়া যায়। সেই রকমই সূরা ওয়াকিয়া একটি ফজিলত পূর্ণ সূরা। এটি বিশেষ করে রাতে পড়ার গুরুত্ব রয়েছে। এর পাশাপাশি সূরা মুলক পড়তে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।

ইসলামে দ্রারিদ্রতা

দরিদ্রতা, অভাব-অনটন মানুষের জীবনের অংশ। এতে হতাশ না হয়ে মহান আল্লাহর কাছে এর বিনিময় আশা করা উচিত। যারা অভাবের দিনে ধৈর্য ধরে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা রাখে, তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর খুশি থাকে, তাদের জন্য দরিদ্রতাও কল্যাণ বয়ে আনে। আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বলেন, একদিন আমি মসজিদে বসে ছিলাম। 

দরিদ্র মুহাজিরদের একটি দলও মসজিদে বসা ছিল। এমন সময় রাসুল (সাঃ) এসে তাদের কাছে বসে বলেন, দরিদ্র মুহাজিররা সুসংবাদ গ্রহণ করুন। তাদের চেহারা উজ্জ্বল হোক। কারণ তারা ধনীদের ৪০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি দেখলাম, তাদের রং পরিবর্তন হয়ে উজ্জ্বল হয়ে গেল। আমারও আশা জাগল, আমি যদি তাদের মাঝে হতাম! (দারেমি, হাদিসঃ ২৭২১)

অভাব-অনটন পেয়ে বসলে তাকে অকল্যাণ ধারণা করা ঠিক নয়। সর্বদা আল্লাহর ওপর সুধারণা করতে হবে, আল্লাহর রহমতের আশা করতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে, ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ এই কষ্টগুলোর প্রতিদান দুনিয়া ও আখিরাতে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে।’ (সুরাঃ ইনশিরাহ, আয়াতঃ ৫)

লেখকের মন্তব্যঃ

সংসার জীবন অনেক কঠিন। কেউ খুব সচ্ছলতার সহিত কাটান, আবার কেউ দারিদ্রতার মধ্যে দিনাতিপাত করেন। আমাদের মহা নবী (সাঃ) ও দরিদ্র ছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন সব চেয়ে দানশীল ব্যক্তি। তারমত কেউ দান করতে পারতেন না। দরিদ্র হলেই যে সুখ-শান্তি থাকবে না এমনটি নয়। সুখ জিনিসটা অন্য রকম। অনেক প্রাচুর্য্যের মাঝেও কিন্তু সুখ নাই। তবে উপরে বর্ণিত আমলগুলো পালন করলে ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪