গণভবনকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘরের রূপান্তর করা হবে জানুন বিস্তারিত
গণভবন হচ্ছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান মন্ত্রীর বাস ভবন। যখন যিনি প্রধান মন্ত্রী হবেন, তিনিই তখন এই গণভবনে থাকবেন এটাই নিয়ম। কিন্তু সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে গণভবন নাকি জাদুঘর হতে যাচ্ছে। কিন্তু কেন গণভবনকে জাদুঘর বানানো হচ্ছে আপনারা কি জানেন ?
হ্যাঁ বন্ধুরা এই জাদুঘর বানানো হচ্ছে মূলত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দিনলিপি ও স্মৃতি চিহ্ন ধরে রাখতে। এখানে থাকবে খুনি হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের নিপীড়ন-নির্যাতনের কাহিনী ও চিত্রসহ আরো অনেক কিছু জানতে নিচের আলোচনাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ভূমিকাঃ গণভবনকে বানানো হচ্ছে জাদুঘর।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিদর্শণ, আহত, নিহতদের পরিচিতিসহ খুটিনাটি তথ্য ও চিত্র এই জাদুঘরে থাকার পাশাপাশি ফ্যাসিবাদি সরকারের নিদর্শণ তথা গত ১৬ বছরের সৈর শাসকের নির্যাতনের চিহ্ন এবং ঘটনাবলী থাকবে এখানে।
সূচীপত্রঃ
গণভবনের পরিচিতি
গণভবনের আয়তন
গণভবনের অবস্থান
গণভবনকে জাদুঘর বানানোর সিদ্ধান্ত
গণভবনে লুটপাট
২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতি চিহ্ন
শেখ হাসিনার বিলাসিতা জীবন চিত্র
বিগত ১৬ বছরের গুম, খুন, নির্যাতনের সামগ্রিক চিত্র
লেখকের মন্তব্যঃ
গণভবনের পরিচিতি
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিন্টো রোডে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট ভবনে অফিস করতেন। প্রেসিডেন্ট ভবন তখন গণভবন নামে পরিচিত ছিল। প্রেসিডেন্ট ভবন এখন সুগন্ধা ভবন নামে পরিচিত যা ফরেন সার্ভিস একাডেমী অফিস।
১৯৭৩ সালে শেরে বাংলা নগরে সংসদ ভবনের পাশে তাঁর বাসভবন ও সচিবালয় নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৪ সালে গণভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে বঙ্গবন্ধু সেখানে অফিস শুরু করেন। তবে তিনি বাস করতেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সামরিক শাসন জারি হলে গণভবনকে সামরিক আদালতে পরিণত করা হয়।
পরবর্তীতে এটি একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের দপ্তর হিসেবেও বরাদ্দ ছিল। ১৯৮৫ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। সংস্কার শেষে ১৯৮৬ সালে এটিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে পরিণত করা হয়, যার নাম রাখা হয়েছিল করতোয়া ভবন। ১৯৮৮ সালে ভবনটি দ্বিতীয় দফা সংস্কার করার জন্য কনকর্ড গ্রুপকে নিযুক্ত করা হয়
এবং সংস্কার শেষ হলে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরিণত হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভায় বৈঠকের মাধ্যমে মাত্র ১ টাকায় ভবনটির ইজারা নিয়ে নেন। সিদ্ধান্তটি গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলে শেখ হাসিনা বিরক্তি প্রকাশ করে গণভবন ত্যাগ করেন।
২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমান সেই ইজারা বাতিল ঘোষণা করেন। খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা আমলে ভবনটির নাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় রাখা হয়, যদিও প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবনটি ব্যবহার করতেন না। শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের
১৩ই অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর সরাসরি উত্তরাধিকারীদের জন্য জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯ সংসদে পাশ হয়। আইন অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে গণভবনটি প্রদান করা হয়।তখন ভবনটিকে আবার সংস্কার করা হয়। সংস্কার শেষে ৫ মার্চ ২০১০ সাল থেকে এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন হিসেবে থাকতে শুরু করেন।
গণভবনের আয়তন
সংসদ ভবনের কাছাকাছি সেরে বাংলা এলাকায় প্রায় ১৫ একর জমির উপর গড়ে উঠে এই গণভবন। এখানে সরকার প্রধান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার বাস ভবন ছাড়াও কয়েকটি অফিসের কাজ চলতো। প্রধান মন্ত্রীর নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থন প্রদান, গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালনা, এনজিও, প্রোটোকল এবং অন্যান্য দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করা হতো।
গণভবনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলীয় নেতা, কর্মী, পেশাজীবী, সিনিয়র নাগরিক, সামরিক কর্মকর্তা ও কূটনীতিকসহ অন্যান্যদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। প্রতি ঈদে গণভবনের গেট সকাল ৯ টায় দর্শনার্থীদের জন্য খোলা হত। ঈদের নামাজের পর দেশি-বিদেশি সকল নাগরিক সারিবদ্ধভাবে তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার সুযোগ পেত।
গণভবনের অবস্থান
গণভবন ছিল বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন, যা ঢাকার শেরে বাংলা নগরে জাতীয় সংসদের উত্তর কোণে অবস্থিত। এর আগে কোনো প্রধানমন্ত্রী এ বাসভবনে থাকেননি। এটি মিরপুর সড়কের পূর্ব পাশে ও লেকসড়কের ক্রসিং-এ অবস্থিত এবং জাতীয় সংসদ ভবন থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি ঢাকার সবচেয়ে নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকা। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জাতীয় সংসদের দূরত্ব সামান্য।
গণভবনকে জাদুঘর বানানোর সিদ্ধান্ত
৫ আগস্ট ২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে নিরাপত্তাহীনতার সুযোগ নিয়ে বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে বিশৃঙ্খল জনতা গণভবনে প্রবেশ করে এর ক্ষতিসাধন করে ও সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। তবে লুট হওয়া বেশিরভাগ জিনিসপত্র পরে ফেরত আসে।
৬ আগস্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভবনটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়। পদত্যাগ-পরবর্তী গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের পঞ্চম বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
গণভবনে লুটপাট
২৮ জুলাই ২০২৪ সালে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দাবি করেন যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাতে, ২০২২ সালের শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভ আন্দোলনের আদলে গণভবন আক্রমণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সত্যি সত্যি ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন।
নিরাপত্তাহীনতার সুযোগ নিয়ে বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে বিশৃঙ্খল জনতা গণভবনে প্রবেশ করে এর ক্ষতিসাধন করে ও সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। তবে লুট হওয়া বেশিরভাগ জিনিসপত্র পরে ফেরত আসে। ৬ আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভবনটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়।
২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতি চিহ্ন
২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগষ্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানা স্মৃতি চিহ্ন থাকবে এই নতুন জাদুঘরে। নতুন ভাবে দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে। অনেকে হয়েছেন স্বামী হারা, কেউবা হয়েছেন বাবা হারা, মেয়ে হারা। আবার কেউ গুলি খেয়ে এখুনো হাসপাতালে যন্ত্রণা নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
কেউবা দু-চোখ হারিয়ে চিরদিনের জন্য অন্ধত্বকে বরণ করে নিয়েছেন। মুলত তাদের কথা, চিত্রসহ তাদের কাহিনীগুলো উল্লেখ থাকবে এই গণবভন জাদুঘরে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে দেয়ালে দেয়ালে ঠাই পেয়েছে এই সব চিত্র, স্লোগান। অনেক দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের গৌরবময় নানা গ্রাফিক্স।
অনেক জায়গাই লেখা হয়েছে বীর শহীদদের নাম। কালের বিবর্তণে এগুলো একসময় হারিয়ে যেতে পারে সেজন্যই গণভবন জাদুঘরে এগুলো স্থান পাবে।
শেখ হাসিনার বিলাসিতা জীবন চিত্র
শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগের পর উত্তেজিত জনতা গণভবনে প্রবেশ করে। সেখানে প্রবেশের পর বিভিন্ন জন বিভিন্ন জিনিস লুট করে নিয়ে যায়। এই সমস্ত জিনিস লুটপাট হওয়ার সময় তার বিলাসিতার পরিচয় পাওয়া যায়। দেশের মানুষ যখন অভাব অনটনে ভূগছেন ঠিক তখন শেখ হাসিনার গণভবন থেকে অনেক দামি দামি খাবার, মূল্যবান জিনিস পত্রসহ অনেক টাকা নিয়ে যায়।
বড় বড় ইলিশ মাছ, আস্ত খাশির রান, বড় পাঙ্গাস মাছসহ আরো অনেক কিছু। দুপুরের খাবারের জন্য রান্না করা হয়েছিল ১২ পদের বুফে ডিনার। সেই খাবারগুলো আল্লাহ সুবহানুহু তাআলা উনার নসিবে রাখেন নি। তাইতো দুপুরের খাবার না খেয়েই তাকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে হয়েছে। গণভবনের গোপন কক্ষে নাকি অনেক টাকা ছিল, কেউ কেউ নিয়ে আসার পর আবার ফেরত দিয়েছেন।
বিগত ১৬ বছরের গুম, খুন, নির্যাতনের সামগ্রিক চিত্র
নাহিদ ইসলাম বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা পাঁচ আগস্ট নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। জনগণের বিজয়কে স্বরনীয় করে রাখার উদ্দেশ্যেই গণভবনের বর্তমান ভগ্নাবশেষ অক্ষত রেখেই জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে যা জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। উপদেষ্টা আরো বলেন, যেকোনো ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারী ও খুনি রাষ্ট্রনায়কদের কী পরিণত হয়,
তা পৃথিবীর বুকে একটা নিদর্শন হিসেবে রাখার জন্য এই ভবনকে গণঅভ্যত্থানের স্মৃতি জাদুঘর করা হচ্ছে। আর জনগণই যে রাষ্ট্র ক্ষমতার আসল মালিক সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে গণভবনকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এজন্য একটি কমিটি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এ কাজ সম্পন্ন করা হবে। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও যারা জাদুঘর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের পরামর্শ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
জাদুঘরে স্থান পাবে গত ১৬ বছরের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গণঅভ্যুত্থানের ৩৬ দিনের ঘটনাবলী, এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল শহিদদের তালিকা, স্মৃতি এসব কিছুর একটি সামগ্রিক উপস্থাপনা থাকবে। পাশাপাশি কিছু ডিজিটাল প্রেজেন্টেশনও থাকবে এখানে।
কতযে মানুষ গুম ও খুনের স্বীকার হয়েছেন তার সঠিক কোন হিসাব নেই। এক কথায় ফ্যাসিস্ট সরকারের অবৈধ ও অনৈতিক সকল কাজ স্থান পাবে এই জাদুঘরে। এবং পরে তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। দেশি-বিদেশি অজানা মানুষদের জানানোর জন্য এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকার।
লেখকের মন্তব্যঃ
গণভবন মূলত শেখ হাসিনার সরকারি বাস ভবন ছিল। বতমান সরকার সেটিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জাদুঘরে রূপান্তরের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সত্যি অনেক সুন্দর। সেখানে বেষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেন সকল স্মৃতি থাকবে, শহীদদের সঠিক তালিকা থাকবে, আহতদের বর্ণনা থাকবে দেশবাসী এখান থেকে জানতে পারবে।
আরো কিছু দাবি দাওয়া শুনতে পাচ্ছি যে, আহত ব্যক্তিদের এবং নিহত ব্যক্তির পরিবারের আবাসন তৈরি করার জন্য সেখানে। তবে আমার মতে অন্য জায়গায় হলেও তাদের পূণর্বাসন করে কর্মে ব্যবস্থা করা উচিৎ। যারা একেবারে অন্ধ হয়েগেছেন তাদের দৃষ্টি ফেরাতে সুচিকিৎসার প্রয়োজন।
সরকার সকল আহতদের চিকিৎসার খরচ বহন করছেন, তবুও আরো বেশি খোজ-খরব নেয়া দরকার। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url