স্বামী-স্ত্রী সহবাসের (যৌন মিলনের) ইসলামী নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন

মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার অনেক নিয়ামতের মধ্যে অন্যতম একটি নিয়ামত হলো স্বামী-স্ত্রী। একজন স্বামী স্ত্রীর সবচেয়ে আনন্দের মূহুর্ত হলো যৌন মিলন বা সহবাস। ইসলামে স্বামী-স্ত্রী সহবাসের যে নিয়ম আছে সেগুলো কি আমরা জানি ?
স্বামী-স্ত্রী সহবাসের (যৌন মিলনের) ইসলামী নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন

হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সামনে স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের ইসলামী বিধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। এখানে জানতে পারবেন- বৈধ্য স্ত্রীর সাথেও যৌন মিলন (সহবাস) করা হারাম।

ভূমিকাঃ

স্বামী-স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম আছে যা আমরা অনেকেই জানি না। এছাড়াও সহবাসের পূর্বে এবং পরে কিছু কাজ থাকে যা আমরা করি না। সমাজে স্বামী-স্ত্রী সহবাসের কিছু কুসংস্কার আছে। সহবাসের আগে কি কি কাজ করা উচিৎ। আমাদের সমাজের প্রচলিত নিয়মের সাথে মিল ও অমিলগুলো থাকবে এখানে।

সূচীপত্রঃ

স্বামী ও স্ত্রী সহবাসের ইসলামী নিয়ম
স্ত্রী সহবাসের দোয়া
স্বামী-স্ত্রী সহবাসের কোন পদ্ধতি আছে কি ?
সহবাসের আগে ও পরের দোয়া
কোন কোন সময় স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ
স্ত্রী সহবাসের পর করণীয়
রমজান মাসে স্ত্রী সহবাসের নিয়ম
সহবাস নিয়ে কিছু কুসংস্কার ও প্রচলিত ভূল ধারনা
স্ত্রী সহবাসের উপকারিতা
লেখকের মন্তব্য

স্বামী ও স্ত্রী সহবাসের ইসলামী নিয়ম

মহান আল্লাহ তায়ালা বিয়ের মাধ্যমে মুসলিম নারী-পুরুষদের একত্রিত হওয়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং তারা দুজনকে বৈধ স্বামী স্ত্রীতে পরিনত করেছেন। স্বামী স্ত্রী উভয়ের যৌন মিলন হালাল করেছেন। আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে ইচ্ছে হলেই সহবাস করতে পারবেন। তবে ইসলামে সহবাসের কিছু নিয়ম নীতি বলে দিয়েছে যেটা আমাদের মঙ্গলের জন্য। 

আমরা যদি ইসলামিক নিয়মে সহবাস করি তাহলে যৌন মিলন যেমন মধুর হবে তেমনি যৌন মিলনের ফলে যে সন্তান আসবে তা নেক সন্তান হবে। স্ত্রীর সহবাসের ইসলামিক নিয়ম গুলো আল্লাহ আমাদের মেনে চলার তৌফিক দান করুক আমিন। যদি ইসলামী নিয়ম মেনে স্বামী-স্ত্রী সহবাস করে তবে শুধু তৃপ্তিই পাবেনা বরং এর ফলে একে অন্যের জৈবিক চাহিদা মেটানোর কারণে সওয়াবও পাবেন।

০১। সহবাসের পূর্বে স্বামী স্ত্রী দুজনেই পবিত্র থাকবে।

০২। বিসমিল্লাহ বলে সহবাস (যৌন কাজ) শুরু করা মুস্তাহাব। তবে বীর্যপাতের আগে যদি মনে পরে তাহলে সাথে সাথে পড়ে নিতে হবে।

০৩। সহবাসের সময় যেমন পবিত্র থাকা জরুরী তেমনি সহবাসের পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত। যা আল্লাহর রাসুলের সুন্নাত।

০৪। দুর্গন্ধ জাতীয় সকল কিছু পরিহার করতে হবে। দুর্গন্ধ আসে এমন কিছুই করা যাবে না এতে মিলনের ইচ্ছা কমে যায়।

০৫। কেবলামুখি হয়ে সহবাস না করা।

০৬। সহবাসের সময় একেবারে উলঙ্গ না হওয়া। প্রয়োজনে স্বামীর পিঠের উপরে একটি পাতলা কাপড় ব্যবহার করতে পারেন ঢেকে রাখার জন্য।

০৭। নিজে তৃপ্তি হওয়ার পাশাপাশি স্ত্রীকে পরিপূর্ন তৃপ্তি দেওয়া। স্ত্রীকে পরিপূর্ন তৃপ্তি না করার পূর্বে বিচ্ছিন্ন না হওয়া।

০৮। স্ত্রীর মাসিকের বা পেরিয়ডের সময় সহবাস না করা।

০৯। স্ত্রীর যৌনাঙ্গের দিকে তাকিলে সহবার না করা।

১০। সহবাসের সময় স্ত্রীর সহিত কম কথা বলা।

১১। স্ত্রীর যৌনাঙ্গ ছাড়া অন্য কোথায় সহবাস না করা।

স্ত্রী সহবাসের দোয়া

স্বামী স্ত্রী সহবাসের পূর্বে এই দোয়াটি পরুনঃ بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

উচ্চারনঃ ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।’

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আরম্ভ করছি (যৌন মিলন বা সহবাস)। তুমি আমাদের কাছ থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এই মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে, সে সন্তাকেও শয়তানের আক্রমন থেকে দূরে রাখ।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল রাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন বা সহবাস করার ইচ্ছা করবে তখন সহবাসের দোয়াটি পড়ে সহবাসে লিপ্ত হও। এই মিলনের ফলে যদি কোন সন্তান জন্ম গ্রহন করে তাহলে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি, মসলিম, মিশকাত)

হজরত আলী (রাঃ) আনহু বলেন, সে ব্যক্তি (স্বামী ও স্ত্রী) সহবাসের ইচ্ছা করে এবং তার নিয়্যাত যদি এই হয় যে, আমি ব্যভিচার থেকে নিজেকে দূরে এবং আমার মন ঠিক রাখবো আর জন্ম নেবে নেককার ও সৎ সন্তান এই নিয়্যাতে (স্ত্রীর সাথে সহবাস) মিলন করলে সওয়ার হওয়ার সাথে সাথে নেক উদ্দেশ্যে পূরণও হবে।

শয়তান ভালবাসে যৌনতাকে পাশাপাশি লজ্জাস্থান দেখতে খুবই পছন্দ করে এবং ভালোবাসে। শয়তান স্বামী স্ত্রীর সহবাসের সময় হাজির হয়ে যৌনতায় নিজেকে জড়ানোর চেষ্টা করে। তাছাড়া শয়তান চায় আমরা যেন যৌনকাজ গুলো ইসলামের নিয়ম না মেনে করি।

যখন আমরা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো সহবাসের দোয়া পড়ে শুরু করব তখন শয়তান সেখান থেকে পালিয়ে যায়। যার ফলে স্বামী স্ত্রী সহবাস হয় শয়তানের প্রভাবমুক্ত ও নিরাপদ। আর এই মিলনের ফলে যদি সন্তান জন্ম নেয় তাহলে তার পরিবর্তী জীবনের সব ক্ষেত্রে শয়তানের দাগা থেকে নিরাপদ থাকে।

স্বামী-স্ত্রী সহবাসের কোন পদ্ধতি আছে কি ?

সহবাসের পজিশনের ক্ষেত্রে ইসলাম কোন বাধা বা নিষেধ করেন নি। সূরা বাক্বারা- ২২৩ বলা আছে – তোমাদের স্ত্রী তোমাদের ফসলক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের ফসলক্ষেত্রে গমন কর, যেভাবে চাও। 
আপনি আপনার স্ত্রী সাথে যেভাবে খুশি সেভাবেই সহবাস করতে পারেন নিদৃষ্ট কোন পদ্ধতি বলা হয়নি। 

আপনি চাইলে শুয়ে, বসে, দাড়িয়ে, স্ত্রীকে আপনার উপরে বা আপনি স্ত্রীর উপরে হয়ে সহবাস করতে পারেন। তবে সহবাসের পথ হবে একটাই যোনিপথ। স্ত্রী মলদ্বারে সহবাস বা যৌনাঙ্গ প্রবেশ করা যাবে না। এটা হারাম। আপনার যখন ইচ্ছা আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে পারেন। তবে আপনার বীর্য বের হয়ে গেলে কিছুটা সময় আপনার স্ত্রীর উপরে শুয়ে থাকতে পারেন এতে আপনার স্ত্রীর ভাল লাগবে।

ইসলামে শুধুমাত্র আপনার তৃপ্তিকেই গুরুত্ব দেয় নি আপনার স্ত্রীর তৃপ্তিকেও গুরুত্ব দিয়েছে। তাই শুধুমাত্র আপনার সুখের কথা চিন্তা করলে হবে না আপনার স্ত্রী খুশি কিনা সেটাও খেয়াল করতে হবে। বেশিরভাগ পুরুষরাই নারীদের যৌন তৃপ্তির প্রতি নজর দেয় না এর ফলে তাদের বৈবাহিত জীবনের পাশাপাশি যৌন জীবনও সুখ নেই।

স্বামী আনন্দ পাচ্ছে, কিন্তু স্ত্রী সুখ বোধ করছে না, অথবা স্ত্রী সন্তুষ্ট, কিন্তু স্বামী সুখী নয়, এরূপ আসন নির্বাচন করা যাবে না। তাতে দাম্পত্য জীবনে আনন্দের ঘাটতি দেখা দিবে। দুজনকেই দুজনের সুখের কথা চিন্তা করতে হবে। তাহলেই সুখি হওয়া যাবে। একজন আনন্দ পবেন আর অন্য জন কষ্ট পাবে এমন করা যাবে না।

সহবাসের আগে ও পরের দোয়া

সহবাস শুরুর আগের দোয়া আছে, যেটা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। আর সহবাসের পরে কোন দোয়া আছে কিনা তার কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। আবার অধিক সময় ধরে স্ত্রী সহবাসেরও কোন দোয়া নাই। তবে কিছু পদ্ধতি অবলম্বণ করলে অধিক সময় ধরে সহবাস করা যায়। তবে সহবাসের সাথে সাথেই গোসল না করলেও গোপনাঙ্গগুলো ধুয়ে নিতে হবে।

কোন কোন সময় স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ

ইসলামিক নিয়ম মেনে সহবাস করলে অনেক সওয়াব হয় এবং আল্লাহ তায়ালা অনেক খুশি হয়ে যান। ভুল ভাবে সহবাস করলে গুনাহ হবে। আমরা অনেকেই নিজের অজান্তেই গুনাহের কাজ করে ফেলি। সহবাস করার যেমন ইসলামে কিছু নিয়ম আছে তেমনি কিছু নিষিদ্ধতাও আছে। যা আমাদের জানা জরুরী।

সর্ব প্রথম মাসিক বা পিরিয়ড চলা কলীন সময় সহবাস করা যাবে না। অনেকেই স্ত্রীকে জোর করে মাসিকের সময় সহবাস করে বলে জানা যায়। পিরিয়ডের সময় নারীদের পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। তাড়াছা এই সময় স্ত্রী সহবাস করা হারাম। নিজেন বৈধ স্ত্রীও হারাম। পিরিয়ড়ের সময়কালঃ সর্ব নিম্ন তিন দিন এবং সর্বোচ্চ সাত দিন এর বাইরে হলে জানতে হবে এটা অসুখ।

এরপরে পায়ুপথে বা মলদ্বারে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা যাবে না। এটা সম্পূর্ন রুপে নিষেধ (হারাম)। আপনার স্ত্রী আপনি যেভাবে খুশি সেভাবেই যৌন মিলন করতে পারেন কিন্তু মলদ্বারে সহবাস বা মিলন করা যাবে না, এতে আপনার অনেক গুনাহ হবে। হাদিসে আছে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন – যে ব্যক্তি স্ত্রীর সাথে মলদ্বারে সঙ্গম করলো আল্লাহ তার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকান না।

এরপরে সহবাসের সময় নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন স্ত্রীর কথা ভাবা বা কল্পনা করা যাবে না। অনেকে এখানে না জেনেই ভুল করেন। আপনার স্ত্রীর সাথে মিলন করার সময় কখনোই অন্য কোন মেয়ের কল্পনার কথা মাথায়ও আনবেন না।

এরপরে রোজা থাকা অবস্থায় কোন ভাবেই সহবাস বা যৌন কাজ করা যাবে না তাহলে রোজে ভেঙ্গে যাবে। তবে স্বামী স্ত্রী একে অন্যকে কিস করতে পারে কিন্তু কোন ভাবেই যেন যৌন রস বের না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রমজান মাসে ইফতারির পরে হতে সেহেরীর আগ পর্যন্ত অনেক সময় আছে তখন আপনি যতখুশি সহবাস করতে পারেন এতে কোন নিষেধ নেই।

এরপরে স্ত্রী অসুস্থ থাকা অবস্থান স্ত্রী সহবাস করবেন না। এতে আপনার স্ত্রী আরো অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও ডাক্তাররাও অসুস্থ অবস্থায় সহবাস করতে নিষেধ করেছেন। স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম আমাদের মেনে চলতে হবে। এর পরে হজ্জ্ব বা ওমরার ইহরার অবস্থান কোন যৌন মিলন করা যাবে না।

স্ত্রী সহবাসের পর করণীয়

পানি পান করুনঃ সহবাসকালে ঘেমে যাবেন এটাই স্বাভাবিক, শরীরের হারানো পানি পুনরুদ্ধারে এক গ্লাস পানি পান করে নিতে পারেন। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি হেলথের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নিকোল স্কট সহবাসের পর নারী-পুরুষ উভয়কে পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন। গবেষণা বলছে, শারীরিক পানিশূন্যতায় শরীরের বিভিন্ন অংশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে- এমনকি গোপনাঙ্গতেও। 

এছাড়া শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকলে মূত্রাশয়-মূত্রনালী থেকে সংক্রমণ সৃষ্টিকারী জীবাণু দূর হয়ে যায়। দই খান: সহবাস পরবর্তীতে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারেন, বিশেষত প্রোবায়োটিক-সমৃদ্ধ খাবার। একটি সেরা প্রোবায়োটিক-সমৃদ্ধ খাবার হলো দই। 

ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি হেলথের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ কেলি কাস্পার বলেন, ‘সহবাসের পর দইয়ের মতো ফার্মেন্টেড ফুডস খেলে গোপনাঙ্গ ভালো ব্যাকটেরিয়া পেয়ে উপকৃত হয়।’ আরো নির্দিষ্টভাবে বললে বলতে হয়, প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার গোপনাঙ্গের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রেখে সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।

গোপনাঙ্গের ভেতর পরিষ্কারের প্রয়োজন হয় না, তবে বহিঃস্থ ত্বক পরিষ্কার করা যাবে। সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সহবাসের পর প্রস্রাব সেরে নেয়া খুবই কার্যকরী উপায়। তবে এতেই গোপনাঙ্গের সুস্থতা পুরোপুরি নিশ্চিত হয় না। গোপনাঙ্গ সুস্থ রাখতে মৃদুভাবে পরিষ্কারেরও প্রয়োজন হতে পারে। কোনো সুগন্ধি সাবান ব্যবহার করবেন না।

রমজান মাসে স্ত্রী সহবাসের নিয়ম

আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘ তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস (রমজান) পাবে, তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে।’ ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫ ও ১৮৩)।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইফতারের পর থেকে ঈশা পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রীর সাথে সহবাস বৈধ ছিল। যদি কেউ এর পূর্বে শূয়ে পড়তো। আর নিদ্রা আসলে পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ হারাম হয়ে যেত। এর ফলে সাহাবাগণ কষ্ট অনুভব করছিলেন। অতপর আল্লাহ আয়াত নাজিল করে মাগরিব থেকে সুভহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগের আদেশ দান করেন।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ইফতার তাড়াতাড়ি করো, আর সেহরি বিলম্ব করো। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা সেহরি খাওয়া মাত্রই নামাজে দাঁড়িয়ে যেতাম। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। 

আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সঙ্গে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদের ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতে রমজান মাসে ইফতারির পর থেকে শুরু করে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস হালাল করেছেন। তবে রমজানে সহবাসের ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধান হতে হবে। কেননা, রমজান মাসে দিনের বেলা রোজা অবস্থায় যদি কেউ সহবাসে লিপ্ত হয়- তাহলে তার ওপর নিম্নে উল্লিখিত বিষয়গুলো বর্তাবে। সেগুলো হলো-

  • সে গুনাহগার হবে।
  • তার সেদিনের রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
  • সেদিনের বাকি অংশ পানাহার ও যৌনমিলন থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • সেদিনের রোজার কাজা করা ওয়াজিব হবে।
  • কাজা রোজা আদায়ের ক্ষেত্রে তাকে একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে।

সহবাস নিয়ে কিছু কুসংস্কার ও প্রচলিত ভূল ধারনা

সহবাস নিয়ে আমাদের সমাজে কুসংস্কারের আর শেষ নেই। কিছু কিছু এমন সব কথা বলে শুনলে হতবাগ হয়ে যায় মানুষ। ইসলামে স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম যেমন আছে তেমন নিষিদ্ধতাও আছে। কিন্তু সেটা না মেনে সমাজের মানুষ ভূল সব জিনিস নিয়ে বসবাস করছে। আমাদের সমাজের প্রচলিত কিছু ভূল ধারণাঃ-

  1. রাত্রি দ্বি-প্রহরের আগে বা দিনের বেলা সহবাস করা যাবে না।
  2. ফলগাছের নিচে সহবাস করা যাবে না।
  3. পূর্ব-পশ্চিম দিকে শুয়ে স্ত্রী সাথে সহবাস করা যাবে না।
  4. স্বপদোষ হলে গোসল না করে সহবাস করা যাবে না।
  5. বিভিন্ন পজিশনে সহবাস করা যাবে না।
  6. ভরা পেটে মানে খাবার খেয়ে এর পরে সহবাস করা যাবে না।
  7. উলঙ্গ হয়ে সহবাস করা যাবে না।
  8. বিদেশে যাওয়ার আগের রাতে স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন করা যাবে না।
  9. স্ত্রীর যৌনাঙ্গে চেয়ে সহবাস করা যাবে না।
  10. চন্দ্র মাসের প্রথম ও পনের তারিখ রাতে সহবাস করা যাবে না।
  11. রবিবার ও বুধবার সহবাস করা যাবে না।
  12. সহবাসের পরে গোসল না করে কিছু স্পর্শ করা যাবে না।

এসমস্ত ভ্রান্ত ও কুসংস্কার মেনে চলার কোন যুক্তিকতা নেই। যে সকল কথা ইসলামে নেই সে সকল কথা আমরা কেন মানতে যাবো। ইসলামে সকল কিছুর সঠিক সমাধান দিয়ে দিয়েছে। তাই আমরা সব কিছুই ইসলামিক নিয়মে চালাবো। আল্লাহ আমাদের সকল প্রকার কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।

স্ত্রী সহবাসের উপকারিতা

আধুনিক বিজ্ঞান যৌন মিলনের অনেক উপকারিতা খুঁজে পেয়েছে যা মন দেহ এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, যার মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হলঃ

  • মিলনের দ্বারা ঈমান মজবুত হয়ে থাকে এবং ইবাদতের দিকে মন ঝুকে থাকে। অন্তরের ভিতর বাজে কোনাে কু-চিন্তা বা কু-কাজের ধারণা উদয় হয় না।
  • নিয়মিতভাবে সহবাস করলে দেহ মন সুস্থ্য থাকে, সাংসারিক কাজ কর্মে আনন্দ এবং স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়।
  • স্বামী- স্ত্রীর সহবাসের দ্বারা মন মস্তিষ্ক সদা সর্বদা প্রফুল্ল থাকে। ঈমানী শক্তি সুদৃঢ় হয় এবং অনাবিল আনন্দ লাভ করে।
  • স্বামী-স্ত্রীর রতিক্রিয়ায় মন মানসিকতা শান্ত ও সংযত থাকে। উশৃঙ্খলতা বা চরিত্রহীনতার নাগ পাশ হতে দুরে থেকে সৎকার্যের দিকে ধাবিত হয়।
  • সহবাস স্বামী-স্ত্রী পরষ্পরের বিশ্বাস এবং ভালবাসা বৃদ্ধি করে।
  • ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী যদি স্বামী-স্ত্রী সহবাস করে, তবে তা আল্লাহ্ তাআলার দেয়া অফুরন্ত নেয়ামতের তুল্য হয়। এটা বেহেশতের ভিতরের অনাস্বাদিত নেয়ামতের তুল্য। পৃথিবীতে সহবাস একটি জান্নাতী উপহার একথা মনে করে সহবাস করলে উভয়ের অন্তর এক অনাকাঙ্খিত আনন্দে ভরে ওঠে।
  • সহবাসের প্রধান উপকারিতা এই যে, আল্লাহর মহান উদ্দেশ্য মানব বংশ বৃদ্ধি হয়, আর এই নিয়তে স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে তাদের সমস্ত জিন্দেগীর যৌন মিলনকে ইবাদতের মধ্যে গণ্য করা হবে এবং কাল কিয়ামতে মুক্তির পথ প্রশস্ত হবে।
সহবাস হার্ট এবং ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং সাময়িকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমায়। যৌন মিলন স্ট্রোক এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। সহবাস করলে শরীরে ক্ষতিকর জীবানু বাসা বাধতে পারে না। গবেষকরা গবেষণা করে জানিয়েছেন যে যারা সপ্তাহে অন্তত দুবার সহবাস করে তাদের শরীরে ক্ষতিকর জীবানু তুলনায় কম থাকে।

লেখকের মন্তব্য

আল্লাহ আমাদের জন্য বিবাহকে হালাল করেছেন। বিবাহিত সম্পর্ক ছাড়া অন্য কারো সাথে যৌন মিলন করা হারাম। এটা চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যেটা থেকে আমাদের অবশ্যয় বেচে থাকতে হবে। হালাল উপায়ে স্ত্রীর সাথে সহবাস করারও কিছু নির্দেশনা আছে ইসলামে, সেটা মেনে চললে শারীরিক চাহিদা মেটার সাথে সাথে সওয়াব হাসিলও হবে। উপরে বর্ণিত পদ্ধতিগুলো মেনে চলি, সুন্দর জীবন গড়ি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪