সূরা আল মুলক এর শানে নুযুল ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
কোরআন মাজিদ আমাদের জীবন বিধান। কোরআনের একটি ফরফ (অক্ষর) পড়লে ১০টি নেকি পাওয়া যায়। কোরআনের ৬৭ তম সূরা হচ্ছে মুলক। সূরা মুলক একটি অত্যান্ত ফজিলত পূর্ণ সূরা। এই সূরাটির শানে নুযুল ও ফজিলত সম্পর্কে আমরা কি জানি ?
হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে সূরা মুলক এর শানে নুযুল ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা নিয়ে হাজির হয়েছি। এখানে জানতে পারবেন- এই সূরা কখন ও কোথায় নাযিল হয়েছিল এবং কোন সময় তেলাওয়াত করা সর্বোত্তম।
ভূমিকাঃ সূরা মুলকের শানে নুযুল ও ফজিলত।
সূরাটিতে আছে তারকারাজি সৃষ্টির রহস্যের কথা, কেয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের অবস্থা এবং তাদের চিন্তা ও গবেষণা করার দাওয়াত এবং বুদ্ধিবৃত্তিকে কাজে লাগানোর আহ্বান। কবরের আজাব থেকে রক্ষা পেতে হলে বেশি বেশি সুরা মুলকের আমল করতে হবে। এ সুরা তার আমলকারীর জন্য কবরের আজাবের সামনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।
সূচীপত্রঃ
সূরা আল মুলক এর শানে নুযুল
রাতে সূরা মুলক পঠের ফজিলত
সূরা মুলক কখন পড়তে হয়
সূরা মুলক এর শিক্ষা
সূরা মুলক সংক্রান্ত হাদিস
সূরা মুলক এর অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ
লেখকের মন্তব্য
সূরা আল মুলক এর শানে নুযুল
এ সূরাটিতে একদিকে ইসলামী শিক্ষার মূল বিষয়বস্তু সমূহ তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে যেসব লোক বেপরোয়া ও অমনোযোগী ছিল তাদেরকে অত্যন্ত কার্যকরভাবে সাবধান করে দেয়া হয়েছে। মক্কী জীবনের প্রথম দিকে নাযিল হওয়া সূরা সমূহের বৈশিষ্ট হলো, তাতে ইসলামের গোটা শিক্ষা ও রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে নবী করে পাঠানোর উদ্দেশ্য সবিস্তারে নয় বরং সংক্ষেপে বর্ণন করা হয়েছে।
ফলে তা ক্রমান্বয়ে মানুষের চিন্তা-ভাবনায় বদ্ধমূল হয়েছে। সেই সাথে মানুষের বেপরোয়া মনোভাব ও অমনোযোগিতা দূর করা, তাকে ভেবে চিন্তে দেখতে বাধ্য করা এবং তার ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তোলার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রথম পাঁচটি আয়াতে মানুষের এ অনুভূতিকে জাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে,
যে পৃথিবীতে সে বাস করছে তা এক চমৎকার সুশৃংখ ও সুদৃঢ় সাম্রাজ্য। হাজারো তালাশ করেও সেখানে কোন রকম দোষ-ত্রুটি , অসম্পূর্ণতা, কিংবা বিশৃংখলার সন্ধান পাওয়া যাবে না। এক সময় এ সাম্রাজ্যের কোন অস্তিত্ব ছিল না। মহান আল্লাহই একে অস্তিত্ব দান করেছেন , এর পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও শাসনকার্যের সমস্ত ইখতিয়ার নিরংকুশভাবে তারই হাতে।
তিনি অসীম কুদরতের অধিকারী। এর সাথে মানুষের একথাও বলে দেয়া হয়েছে যে, এ পরম জ্ঞানগর্ভ ও যুক্তিসংগত ব্যবস্থার মধ্যে তাকে উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করা হয়নি। বরং এখানে তাকে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে। তার শুধু সৎকর্ম দ্বারাই সে এ পরীক্ষায় সফলতা লাভ করতে সক্ষম।
সূরা আল-মূলক পবিত্র কোরআন মাজিদের ৬৭ তম সূরা। এই সূরার আয়াত সংখ্যা ৩০, রুকু আছে ২টি। সূরা আল-মূলক মক্কায় অবতীর্ণ হয়। সূরা আল মূলকের নামের অর্থ, সার্বভৌম কর্তৃত্ব। এই সূরা পবিত্র কোরআন মাজিদের ২৯ নং পারায় আছে।
সূরাটিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজগতের কর্তৃত্ব ও রাজত্ব সবই আল্লাহর। আরও বলা হয়েছে বিশ্বজগৎ সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সৃষ্টিজগতের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নিখুঁত। সূরাটিতে আছে তারকারাজি সৃষ্টির রহস্যের কথা, কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের অবস্থা এবং তাদের চিন্তা ও গবেষণা করার দাওয়াত এবং বুদ্ধিবৃত্তিকে কাজে লাগানোর আহবান।
প্রথম ভাগ ১ থেকে ৪ আয়াত—এ অংশে আছে আল্লাহর ক্ষমতার বর্ণনা।
দ্বিতীয় ভাগ ৫ থেকে ১৫ আয়াত—এ অংশে জাহান্নাম ও জান্নাতের প্রসঙ্গ।
তৃতীয় ভাগ ১৬ থেকে ২২ আয়াত—এখানে আছে অত্যাসন্ন বিপদের বার্তা।
চতুর্থ ভাগ ২৩ থেকে ২৪ আয়াত—সে বিপদে প্রস্তুতির সময় নিয়ে প্রশ্ন।
পঞ্চম ভাগ ২৫ থেকে ২৭ আয়াত—সে বিপদ কবে ঘটবে, তা নিয়ে মানুষের কৌতূহল?
শেষ ভাগ ২৮ থেকে ৩০ আয়াত—আল্লাহর বিপরীতে মানুষের দুর্বলতা।
রাতে সূরা মুলক পঠের ফজিলত
সূরা মুলক পাঠের ফজিলত সীমাহীন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘কোরআনে এমন একটি সুরা আছে, যার আয়াত ৩০টি। এই সূরা যে পাঠ করবে, সেই ব্যক্তির জন্য সুরাটি সুপারিশ করবে এবং তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। সূরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলকু (সূরা মুলক)। (সুনানে আত-তিরমিজি, ২৮৯১)
প্রতি রাতের যেকোনো সময় সূরা মুলক তিলাওয়াত করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। তিরমিজি শরিফের ২,৮৯২ নম্বর হাদিস অনুযায়ী, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সুরা আস-সাজদা ও সূরা মুলক তিলাওয়াত না করে কোনো দিন ঘুমাতেন না। তার মানে এই নয় যে সূরাটি দিনে পড়া যাবে না। যেকোনো সময়ই পড়া যাবে, তবে রাতে বিশেষ জিকির হিসেবে এ সূরা পড়া উত্তম।
সূরাটি নামাজের সঙ্গে পড়াও ভালো। মুখস্থ না থাকলে দেখে দেখে অর্থ বুঝে পড়লে বিশেষ সওয়াব পাওয়া যায়। তবে এই সূরাটি মুখস্ত করার একটা পদ্ধতি আছে তা হচ্ছে, প্রতিদিন মাত্র একটি করে আয়াত মুখস্ত করতে হবে। যেহেতু এই সূরাতে ৩০টি আয়াত আছে, তাই ১ মাসে এই সূরাটি যে কোন ব্যক্তি মুখস্ত করতে পারবেন।
সূরা মুলক কখন পড়তে হয়
সূরা আল মুলক রাতের বেলা পড়া উত্তম, তবে অন্য যেকোনো সময়ও পড়া যাবে। এ সূরাটি অর্থ বুঝে নিয়মিত পড়ার তাৎপর্য রয়েছে। এই সূরা সালাতের সঙ্গে পড়াও উত্তম। মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে অর্থ বুঝে পড়লে বিশেষ সাওয়াব পাওয়া যাবে।
হাদিসে আছে, সূরা মূলক একচল্লিশবার পাঠ করলে সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং ঋণ পরিশোধ হয়। এ সূরা পাঠে কবরের আজাব থেকে বাঁচা যায়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে সূরা মুলক তেলাওয়াত করবে আল্লাহ সুবহাহু তাআলা তার কবরের আজাব মাফ করে দিবেন।
সূরা মুলক এর শিক্ষা
আরও বলা হয়েছে বিশ্বজগৎ সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সৃষ্টিজগতের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নিখুঁত। সূরাটিতে আছে তারকারাজি সৃষ্টির রহস্যের কথা, কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের অবস্থা এবং তাদের চিন্তা ও গবেষণা করার দাওয়াত এবং বুদ্ধিবৃত্তিকে কাজে লাগানোর আহবান।
১। আসমান ও জমিনের তথা সমস্ত সৃষ্টির উপর একমাত্র আল্লাহরই মালিকানা। কাজেই পৃথিবীর সকল রাষ্ট্র চলবে আল্লাহর আইনে। তবেই আসবে শান্তি ও অর্থ নৈতিক মুক্তি।
২। জীবন মরণ আল্লাহর সৃষ্টি এর দ্বারা আল্লাহ পরীক্ষা করবেন কে বাঁচার লোভ ও মরার ভয় ত্যাগ করে নবীর পিছনে থেকে উত্তম আমল করতে পারে।
৩। প্রকৃত পক্ষে নেক আমল কি ?
৪। আল্লাহর সৃষ্ট আইন কানুন কেমন বিজ্ঞোচিত ও আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য।
৫। রাজত্ব যার আইন তার এই একটি বিষয়ে যারা গাফেল তাদের শেষ পরিনতি ও তাদের অনুতাপ ও অনুশোচনা হবে কেমন।
৬। আল্লাহর রাজত্বে আল্লাহর আইন অমান্যকারীদের জাহান্নাম কিভাবে গ্রহণ করবে।
৭। আল্লাহর আইন অমান্যকারীদের মনোভাব আল্লাহ জানেন।
৮। আল্লাহর আইন মেনে চলার যুক্তি।
৯। আল্লাহর অসস্তুষ্টিতে দুনিয়ার পরিনতি কি হতে পারে।
সূরা মুলক সংক্রান্ত হাদিস
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘তোমরা সূরা মুলক শিখ এবং নিজেদের স্ত্রী-পুত্রদের শিখাও। এটা কবরের আজাব হতে রক্ষা করবে এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে এই সূরা পাঠকারীর পক্ষে কথা বলে তাকে মুক্ত করবে।’
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোরআন শরীফে একটি ত্রিশ আয়াতের সূরা আছে। এই সূরা হাশরের দিন উহার নিয়মিত পাঠকারীদের জন্য সুপারিশ করে তাদের সমস্ত গোনাহ মাফ করিয়ে দিবে। উহা সূরা মূলক।’
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করেন, ‘সূরাহ মুলক (তিলাওয়াতকারীকে) কবরের আজাব থেকে প্রতিরোধকারী।
সূরা মুলক এর অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ
(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম)
(১) তাবা-রাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মূলকু ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন কাদির। অর্থঃ বরকতময় তিনি যার হাতে সর্বময় কর্তৃত। আর তিনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।
(২) আল্লাজি খালাকাল মাওতা ওয়াল হায়া-তা লিইয়াবলুওয়াকুম আইয়ুকুম আহছানু‘ আমালাওঁ ওয়া হুওয়াল ‘আজিজুল গাফুর। অর্থঃ যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদের পরিক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালি, অতিশয় ক্ষমাশীল।
(৩) আল্লাজি খালাকা ছাব‘আ ছামা-ওয়া-তিন তিবা-কান মা- তারা- ফি খালকির রাহমা-নি মিন তাফা-উত ফারজি‘ইল বাসারা হাল তারা- মিন ফুতুর। অর্থঃ যিনি সাত আসমান স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোনো অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না। তুমি আবার দৃষ্টি ফিরাও, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি?
(৪) ছুম্মার জি’ইলবাসারা কাররাতাইনি ইয়ানকালিব ইলাইকাল বাসারু খা-ছিআওঁ ওয়া হুওয়া হাসির। অর্থঃ অতঃপর তুমি দৃষ্টি ফিরাও একের পর এক, সেই দৃষ্টি অবনমিত ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।
(৫) ওয়া লাকাদ জাইয়ান্নাছ সামাআদ্দুনইয়া- বিমাসা-বিহা ওয়াযা’আলনা- হা- রুজুমাল লিশশায়াতিনি ওয়া আ’তাদনা- লাহুম ‘আযা- বাছছা’ঈর। অর্থঃ আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপ দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের আজাব।
(৬) ওয়া লিল্লাজিনা কাফারুবিরাব্বিহিম ‘আযা- বুযাহান্নামা ওয়াবি’ছাল মাসির। অর্থঃ আর যারা তাদের রবকে অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে যাহান্নামের আজাব। আর কতই না নিকৃষ্ট সেই প্রত্যাবর্তনস্থল!
(৭) ইজাউলকুফিহা- ছামি’উ লাহা- শাহিকাওঁ ওয়াহিয়া তাফুর। অর্থঃ যখন তাদের তাতে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা তার বিকট শব্দ শুনতে পাবে। আর তা উথলিয়ে উঠবে।
(৮) তাকা- দুতামাইয়াজুমিনাল গাইজি কুল্লামাউলকিয়া ফিহা- ফাওজুন ছাআলাহুম খাজানাতুহাআলাম ইয়া’তিকুম নাজির। অর্থঃ ক্রোধে তা ছিন্ন ভিন্ন হওয়ার উপক্রম হবে। যখনই তাতে কোনো দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তার প্রহরিরা তাদের জিজ্ঞাসা করবে, ‘তোমাদের নিকট কি কোনো সতর্ককারি আসেনি’?
(৯) কা- লুবালা- কাদ যাআনা- নাজিরুন ফাকাজযাবনা- ওয়া কুলনা- মানাজযালাল্লা- হু মিন শাইয়িন ইন আনতুম ইল্লা- ফি দালা- লিন কাবির। অর্থঃ তারা বলবে, ‘হ্যা, আমাদের নিকট সতর্ককারি এসেছিল। তখন আমরা (তাদের) মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করেছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘আল্লাহ কিছুই নাজিল করেননি। তোমরা তো ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছ’।
(১০) ওয়া কা-লুলাও কুন্না- নাছমা’উ আও না’কিলুমা- কুন্না-ফিআসহা-বিছছা’ঈর। অর্থঃ আর তারা বলবে, ‘যদি আমরা শুনতাম অথবা বুঝতাম, তাহলে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসিদের মধ্যে থাকতাম না’।
(১১) ফা’তারাফুবিজামবিহিম ফাছুহক্বললিআসহা-বিছ ছা’ঈর। অর্থঃ অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। অতএব, ধ্বংস জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসিদের জন্য।
(১২) ইন্নাল্লাজিনা ইয়াখশাওনা রাব্বাহুম বিলগাইবি লাহুম মাগফিরাতুওঁ ওয়া আজরুন কাবির। অর্থঃনিশ্চয়ই যারা তাদের রবকে না দেখেই ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও বড় প্রতিদান।
(১৩) ওয়া আছিররুকাওলাকুম আবিজহারুবিহি ইন্নাহু’আলিমুম বিজা- তিসসুদু র। অর্থঃ আর তোমরা তোমাদের কথা গোপন করো অথবা তা প্রকাশ করো, নিশ্চয়ই তিনি অন্তরসমূহে যা আছে সে বিষয়ে সম্যক অবগত।
(১৪) আলা- ইয়া’লামুমান খালাকা ওয়া হুওয়াল্লাতিফুল খাবির। অর্থঃ যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি যানেন না? অথচ তিনি অতি সূক্ষ্মদর্শী, পূর্ণ অবহিত।
(১৫) হুওয়াল্লাজি যা’আলা লাকুমুল আরদা যালুলান ফামশুফি মানা-কিবিহা- ওয়া কুলুমির রিজকিহি ওয়া ইলাইহিন নুশুর। অর্থঃ তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।
(১৬) আ আমিনতুম মান ফিছছামাই আইঁ ইয়াখছিফা বিকুমুল আরদা ফাইযা- হিয়া তামুর। অর্থঃ যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদেরসহ জমিন ধসিয়ে দেওয়া থেকে কি তোমরা নিরাপদ হয়ে গেছ, অতঃপর আকস্মিকভাবে তা থর থর করে কাঁপতে থাকবে।
(১৭) আম আমিনতুম মান ফিছছামাই আইঁ ইউরছিলা ‘আলাইকুম হা-সিবান ফাছাতা’লামুনা কাইফা নাজির। অর্থঃ যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের ওপর পাথর নিক্ষেপকারি ঝোড়ো হাওয়া পাঠানো থেকে তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ, তখন তোমরা যানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী?
(১৮) ওয়া লাকাদ কাজযাবাল্লাজিনা মিন কাবলিহিম ফাকাইফা কা- না নাকির। অর্থঃ আর অবশ্যই তাদের পূর্ববর্তীরাও অস্বীকার করেছিল। ফলে কেমন ছিল আমার প্রত্যাখ্যান (এর শাস্তি)?
(১৯) আওয়ালাম ইয়ারাও ইলাত্তাইরি ফাওকাহুম সাফফা-তিওঁ ওয়াইয়াকবিদন । মাইউমছিকুহুন্না ইল্লাররাহমা-নু ইন্নাহুবিকুল্লি শাইয়িম বাসির। অর্থঃ তারা কি লক্ষ্য করেনি তাদের উপরস্থ পাখিদের প্রতি, যারা ডানা বিস্তার করে ও গুটিয়ে নেয়? পরম করুণাময় ছাড়া অন্য কেউ এদের স্থির রাখে না। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছুর সম্যক দ্রষ্টা।
(২০) আম্মান হা-যাল্লাজি হুওয়া জুনদুল্লাকুম ইয়ানসুরুকুম মিন দু নিররাহমা-নি ইনিল কাফিরুনা ইল্লা- ফি গুরুর। অর্থঃ পরম করুণাময় ছাড়া তোমাদের কি আর কোনো সৈন্য আছে, যারা তোমাদের সাহায্য করবে? কাফিররা শুধু তো ধোঁকায় নিপতিত।
(২১) আম্মান হা- যাল্লাজি ইয়ারজকুকুম ইন আমছাকা রিজকাহু বাল্লাজজুফি ‘উতুওবিওয়া নুফুর। অর্থঃঅথবা এমন কে আছে, যে তোমাদের রিজিক দান করবে যদি আল্লাহ তাঁর রিজিক বন্ধ করে দেন? বরং তারা অহমিকা ও অনীহায় নিমজ্জিত হয়ে আছে।
(২২) আফামাইঁ ইয়ামশি মুকিব্বান ‘আলা- ওয়াজহিহি আহদা আম্মাইঁ ইয়ামশি ছাবি ইয়ান ‘আলা-সিরা-তিমমুছতাকিম। অর্থঃ যে ব্যক্তি উপুড় হয়ে মুখের ওপর ভর দিয়ে চলে সে কি অধিক হেদায়াতপ্রাপ্ত না কি সেই ব্যক্তি যে সোজা হয়ে সরল পথে চলে?
(২৩) কুল হুওয়াল্লাজিআনশাআকুম ওয়া যা‘আলা লাকুমুছছাম‘আ ওয়াল আবসা-রা ওয়াল আফইদাতা কালিলাম মা-তাশকুরুন। অর্থঃ বলো, ‘তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তকরণসমুহ দিয়েছেন। তোমরা খুব অল্পই শোকর করো’।
(২৪) কুল হুওয়াল্লাজি যারাআকুম ফিল আরদিওয়া ইলাইহি তুহশারুন। অর্থঃ বলো, ‘তিনিই তোমাদের জমিনে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদের সমবেত করা হবে’।
(২৫) ওয়া ইয়াকুলুনা মাতা-হা-যাল ওয়া’দুইন কুনতুম সা-দিকিন। অর্থঃ আর তারা বলে, ‘সে ওয়াদা কখন বাস্তবায়িত হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’।
(২৬) কুল ইন্নামাল ‘ইলমু’ইনদাল্লা- হি ওয়া ইন্নামাআনা নাজিরুম মুবিন। অর্থঃ বলো, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই নিকট। আর আমি তো স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র’।
(২৭) ফালাম্মা-রাআওহু ঝুলফাতান সিআত ঊজুহুল্লাজিনা কাফারুওয়া কিলা হা-যাল্লাজি কুনতুম বিহি তাদ্দা’ঊন। অর্থঃ অতঃপর তারা যখন তা আসন্ন দেখতে পাবে, তখন কাফিরদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে এবং বলা হবে, ‘এটাই হলো তা, যা তোমরা দাবি করছিলে’।
(২৮) কুল আরাআইতুম ইন আহলাকানিয়াল্লা-হু ওয়া মাম্মা‘ইয়া আও রাহিমানা- ফামাইঁ ইউজিরুল কা-ফিরিনা মিন ‘আযা-বিন আলিম। অর্থঃ বলো, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি’? যদি আল্লাহ আমাকে এবং আমার সঙ্গে যারা আছে, তাদের ধ্বংস করে দেন অথবা আমাদের প্রতি দয়া করেন, তাহলে কাফিরদের যন্ত্রণাদায়ক থেকে কে রক্ষা করবে’?
(২৯) কুল হুওয়াররাহমা-নুআ-মান্না-বিহি ওয়া’আলাইহি তাওয়াক্কালনা-, ফাছাতা’লামুনা মান হুওয়া ফি দালা-লিম মুবিন। অর্থঃ বলো, ‘তিনিই পরম করুণাময়। আমরা তাঁর প্রতি ইমান এনেছি এবং তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল করেছি। কাজেই তোমরা অচিরেই যানতে পারবে কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে’?
(৩০) কুল আরাআইতুম ইন আসবাহা মাউকুম গাওরান ফামাইঁ ইয়া’তিকুম বিমাইম মা’ঈন।
অর্থঃ বলো, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কী, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভে চলে যায়, তাহলে কে তোমাদের বহমান পানি এনে দিবে’?
লেখকের মন্তব্যঃ
আমরা মুসলমান, আমাদের ধর্ম ইসলাম। আমাদের জীবন বিধান আল কোরআন। মৃত্যুর পর আমাদের মৃতু দেহকে কবর দেয়া হয়। আর এই কবর হচ্ছে পরবর্তী জীবনের প্রথম মঞ্জিল। কররে যারা শান্তিতে থাকবে তারা পরবর্তীতেও ভালো থাকবে। আর কবরে ভালো থাকার উপায় হচ্ছে আল্লাহর সকল বিধান পালন করার পাশাপাশি প্রতিরাতে সূরা আল মুলক তেলাওয়াতের অভ্যাস তৈরি করা।
একটা কথা মনে রাখবেন, আমরা যেমন- প্রতিরাতে খাবার না খেয়ে ঘুমাই না, অসুস্থ্য হলে ঔষুধ না খেয়ে ঘুমাই না, ঠিক তেমনি সুস্থ থাকি বা অসুস্থ থাকি রাতে সূরা আল মুলক না পড়ে ঘুমাবো না ইনশাআল্লাহ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, রাতে-দিনে যখনই সময় পাবেন সূরা মুলক তেলাওয়াত করুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url