ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উৎযাপন করা কি বিদআত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
একজন মুসলমান হিসেবে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উৎযাপনের খবরা খবর বা দিবস পালনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি দেখে থাকি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে ঈদে মিলাদুন্নবী উৎযাপনের খবর পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা কি জানি এই দিবস পালন করা সুন্নাত নাকি বিদআত।
হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উৎযাপন করা সুন্নাত নাকি বিদআত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে হাজির হয়েছি এই আর্টিকেলে। এখানে জানতে পারবেন- রাসুল (সাঃ) ইন্তেকালের পর সাহাবিগণ, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়িনগণ এই দিবস পালন করেছেন কিনা।
ভূমিকাঃ ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উৎযাপন প্রসঙ্গে।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম গ্রহণ উপলক্ষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরুপ উৎযাপন করে থাকে শ্রেণির মুসলমান ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)। রাসুল (সাঃ) জীবিত থাকা অবস্থায়, খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে, তাবেয়ি এবং তাবে-তাবেয়িদের যুগে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) নামে কোন দিবস বা উৎসরের প্রচলন ছিলনা।
সূচীপত্রঃ
ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালন করা কি জায়েজ
ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস
ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে হাদিস
কবে থেকে শুরু হয়েছে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন
ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল
লেখকের মন্তব্যঃ
ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালন করা কি জায়েজ
ইসলাম একটা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এখানে কী কী করতে হবে তা খুব পরিষ্কারভাবে বলে দেওয়া আছে। কী কী করা নিষেধ, তাও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা আছে। এরপরও যদি কেউ ইসলামের নামে কোন নিষিদ্ধ কাজ করে, তাহলে সে কি আল্লাহর নিকট কোন পূণ্য আশা করতে পারে কি ? বরং এর বিপরীতটা পাওয়ার কথা।
আমাদের দেশসহ উপমহাদেশের এক শ্রেণির মুসলিমরা খুব ঘটা করে ১২ই রবিউল আউয়াল নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জন্মদিন হিসাবে “ঈদে মিলাদুন্নবী” পালন করে থাকে। অথচ নবী (সাঃ) ও এই ‘ঈদের ’(!) জানতেন না। শুধু তাই নয়, এই ‘ঈদের’(!) কথা জানা ছিল না সাহাবী, তাবিঈ, তাবে-তাবিঈ কারো।
অতএব এখান থেকে প্রতিয়মান হয় যে, ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালন করা মোটেও জায়েজ নয়। এটা ইসলামে নতুন সৃষ্টি, যা সরাসরি বিদআত বলে উল্লেখ করেছেন অনেক বিগ্য আলেমগণ। তাড়া এটা যদি পালন করার বিধান থাকতো তবে রাসুল (সাঃ) এর সাহাবীগণ সবার প্রথমে এটা পালন করতেন। কারণ আমাদের থেকে তাদের ঈমান এবং রাসুলের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান অনেক বেশি ছিল।
ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস
প্রথম দিকে এই দিনটিতে তারা শুধুমাত্র নবী (সাঃ) এর জন্ম ও জীবন কাহিনী স্মরণ করতেন এবং মানুষজনের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো। লক্ষ্যনীয় যে প্রথম দিকের সেই মিলাদে কিন্তু আজকের মত নবীর রূহের আগমন কল্পনা করে তার সম্মানে উঠে দাঁড়িয়ে ‘ইয়া নাবী সালামু আলায়কা’ বলা, জিলাপী বিতরণটাইপের ‘মিলাদ মাহফিল’ এমন কিছুই হত না।
ছোট্ট বিদআত আস্তে আস্তে ডালপালা মেলে বিশাল আকার ধারণ করল, একেবারে “ঈদে” পরিনত হয়ে গেল। বিদআতী সুফীদের দ্বারা আস্তে আস্তে বিভিন্ন শির্কী আকিদাও এর সাথে যুক্ত হল- মিলাদ মাহফিলের সময়ে নাকি নবী (সাঃ) এর রূহ মোবারক সেখানে হাজির হয় নাউজুবিল্লাহ্ এই আকিদাটি খ্রিষ্টানদের বাইবেল থেকে ধার করা।
দেখুনঃ বাইবেল, মথি ১৮:২০; খ্রিষ্টানরা তাদের নবীর উপর এমন মিথ্যা আরোপ করেছিল। নাউযুবিল্লাহ।এদেশে দু’ধরনের মিলাদ চালু আছে। একটি ক্বিয়াম (দাঁড়ানো) যুক্ত, অন্যটি ক্বিয়াম বিহীন। ক্বিয়ামকারীদের যুক্তি হ’ল, তারা রাসূলের ‘সম্মানে’ উঠে দাঁড়িয়ে থাকেন। এর দ্বারা তাদের ধারণা যদি এই হয় যে, মিলাদের মাহফিলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর রূহ মুবারক হাযির হয়ে থাকে, তবে এই ধারণা সর্বসম্মতভাবে কুফরী।
ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে হাদিস
অনেকে কোরআন হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উৎযাপনের কথা বলে থাকেন যা মূলত বানোয়াট ও মিথ্যা-জাল। একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন- যেন সমস্ত আমল বা অনুষ্ঠান-উৎসব রাসুল (সাঃ) এবং তার সাহাবিগণ করেননি সেটা কখনোই করা যাবেনা। যত বড়ই আলেম বলুক না কেন।
আমরাও রাসুল (সাঃ) কে ভালোবাসি, কিন্তু সাহাবিগণ যত ভালোবাসতেন রাসুল (সাঃ) কে তার তুলনায় আমাদের ভালোবাসা অনেক কম। মিলাদ উদযাপনকারী ভাইদের মিথ্যা ও জাল হাদীস বর্ণনার দুঃসাহস দেখলে শরীর শিউরে ওঠে। সেখানে এই সব লোকেরা কেউবা জেনে-শুনে,
কেউবা অন্যের কাছে শুনে ভিত্তিহীন সব কল্পকথা ওয়াযের নামে মিলাদের মজলিসে চালিয়ে যাচ্ছেন ভাবতেও অবাক লাগে আবার এরাও নাকি আলেম। তারা নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) কে নূরের তৈরি বলে মিথ্যাচার করেন। ‘নূরে মুহাম্মাদী’র আকিদা মূলতঃ আহলে কিতাব খ্রিষ্টানদের কিছু ফিরকা খ্রিষ্টানরা ঈসা (আঃ) কে ফেরেশতা মনে করে
এবং হিন্দুদের অদ্বৈতবাদী ও সর্বেশ্বরবাদী আকিদার নামান্তর। যাদের দৃষ্টিতে স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য নেই। এরা ‘আহাদ’ ও ‘আহমাদের’ মধ্যে ‘মীমের’ পর্দা ছাড়া আর কোন পার্থক্য দেখতে পায় না (নাউযুবিল্লাহ)। তথাকথিত মা‘রেফাতী পীরদের মুরীদ হলে নাকি মিলাদের মজলিসে সরাসরি রাসুল (সাঃ) -এর জীবন্ত চেহারা দেখা যায়।
এই সব কুফরী দর্শন ও আকিদা প্রচারের মোক্ষম সুযোগ হল মিলাদের মজলিসগুলো। বর্তমানে সংবাদপত্র, রেডিও, টিভিতেও চলছে যার জয়জয়কার। হানাফী মাযহাবের কিতাব ‘ফাতাওয়া বাযযারিয়া’তে বলা হয়েছে, ﻣَﻦْ ﻇَﻦَّ ﺃﻥَّ ﺃﺭﻭﺍﺡَ ﺍﻷﻣﻮﺍﺕِ ﺣﺎﺿﺮﺓٌ ﻧَﻌْﻠَﻢُ ﻳَﻜْﻔُﺮُ - ‘যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মৃত ব্যক্তিদের রূহ হাযির হয়ে থাকে, সে ব্যক্তি কাফের’।
কবে থেকে শুরু হয়েছে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন
ঐতিহাসিক ও ফকিহদের মতে হিজরি ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে প্রথম এই উৎসব শুরু হয়। ৩৫২ হিজরিতে বাগদাদের শিয়া শাসক মুইজলি দীনিল্লাহ আশুরা এবং গাদীরে খুম দিবস পালন শুরু করেন। ফাতেমীয় শাসকরা মিসরে ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে মিলাদুন্নবী উদযাপন করতেন।
মুসলমানদের মধ্যে এটি প্রথম চালু করেন ইরবিলের শাসক আবু সাঈদ মুজাফফর উদ্দীন কুকুবুরী। তিনি ৬০৪ হিজরিতে সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে এই উৎসব প্রচলন করেন। সিরাতুন্নবী গবেষকদের মতে, তিনিই মিলাদুন্নবীর প্রকৃত উদ্ভাবক বলে জানা যায়। পরবর্তীতে, এই উৎসব ভারতীয় উপমহাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবেও পালিত হয়। তবে, এই উৎসবের বৈধতা নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এখনও অনেক বিতর্ক রয়েছে। রাসুল (সাঃ) বিদায় হজ্জ্বের দিন বলেছিলেন ইসলামকে আজ তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো। তাহলে আবার নতুন সৃষ্টি কেন ?
ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল
মীলাদ শব্দের অর্থ "জন্ম"। ঈদ মানে আনন্দ। ঈদে মীলাদুন্নবী অর্থ হলো নবী (সাঃ) এর জন্ম উপলক্ষে আনন্দ। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয় এটা তো ভালো জিনিস। নবী করীম (সাঃ) এর আগমন হয়েছে পৃথিবীতে এই দিনে। অবশ্যই এটা খুশির দিন। কিন্তু ইসলাম শুধু আবেগ দিয়ে চলেনা। ভালোবাসা থাকতে হবে শারয়ী নির্দেশনা অনুযায়ী।
যেমন মনে করুন আপনি আল্লাহকে খুব ভালোবেসে ফজরের নামাজ চার রাকাত আদায় করলেন। এটা আপনার ভালোবাসা হয় নি। ভালোবাসা হলো আদেশ নিষেধ সঠিকভাবে পালন করার মাঝেই। কুরআন হাদিসে ঈদ শুধুমাত্র দুটি-ই আছে ঈদে মিলাদুন্নবী নামের কোনো ঈদ কুরআন হাদিসে পাওয়া যায় না।
যদিও ঈদ মেনে নেয়া হয় তবে ঝামেলা আরও বেশি। কেননা নবীজী (সাঃ) এর জন্ম তারিখ নিয়ে মমতানৈক্য রয়েছে। এক বর্ণনায় ৮ রবিউল আউয়াল, আরেক বর্ণনায় ৯ রবিউল আউয়াল আছে। পক্ষান্তরে রাসূল (সাঃ) এর ওফাত ১২- ই রবিউল আউয়াল হয়েছে এটা সুনিশ্চিত। সুনিশ্চিত মৃত্যুর দিনে সম্ভাব্য জন্মের আনন্দ করা বোকামি বৈ কিছুই নয়।
তবে আমাদের দেশের অধিকাংশ লোকেরা নবীজী (সাঃ) কে ভালোবেসেই এটা পালন করে থাকে। কিন্তু ভালোবাসার সঠিক পন্থা তাদের অজানা। আল্লাহ তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। শুধু জন্মদিন নয় কোন ম্যারিজ ডে, মৃত্যুদিবস ইত্যাদি যা-ই হোক না কেন, কোন দিবস-ই পালন করা জায়েজ নয়।
এই ধরণের যত প্রকার দিবস রয়েছে সেগুলোর কোনটাই মুসলিমদের সংস্কৃতি নয়। যদি এগুলো মুসলিমদের সংস্কৃতি হত তবে এগুলো সাহাবাদের যুগ থেকেই পালিত হয়ে আসতো। তাই যেহেতু এগুলো মুসলিমদের সংস্কৃতি নয় তাহলে বুঝাই যাচ্ছে যে এগুলো কাফের-মুশরিক বিজাতীয়দের সংস্কৃতি থেকে এসেছে।
লেখকের মন্তব্যঃ
যেহেতু জন্মদিন, মৃত্যু দিবস পালন করা বিধর্মীদের কাজ এবং রাসুল (সাঃ) এর সাহাবিগণ এই অনুষ্ঠান কখনো পালন করেননি এমনকি বর্তমানেও সৌদি আরবে এই দিবস বা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয় না তাই এই দিবস পালন করা থেকে আমাদের সবাইকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহকে এবং রাসুল (সাঃ) কে ভালোবাসা দেখানো অনেক ইবাদত আছে সেগুলো পালন করলে আল্লাহ অনেক খুশি হবেন।
রাসুল (সাঃ) বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলেছিলেন- আজ ইসলামকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দেওয়া হলো। তাহলে বুঝতে হবে রাসুল (সাঃ) জীবিত থাকতেই ইসলাম পূর্ণতা পেয়েছে। এখানে আরো নতুন কিছু প্রবেশ করানো বা বাদ দেয়া যাবে না। অতএব এই সমস্ত বিদআতি আমল থেকে আমাদের অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকটা আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url