বাংলাদেশের ১২ জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এখানে

২০২৪ সালের আগস্টের শেষ দিক এসে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ কর। যার ফলে অনেক লোকের প্রাণহানি সহ ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। হঠাৎ কেন এবং কোন কোন জেলায় এই বন্যা সে সম্পর্কে কি জানেন ?
বাংলাদেশের ১২ জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এখানে

হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি, বন্যার ভয়াবহতা, খয়ক্ষতির দিক ও হঠাৎ বন্যার কারণ নিয়ে আপনাদের সামনে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

ভূমিকাঃ বাংলাদেশের ১২ জেলার ভয়াবহ বন্যার পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা।

সূচীপত্রঃ

২০২৪ সালের বন্যা পরিস্থিতি
ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ১২ জেলার নাম
ফেনি জেলার বন্যা পরিস্থিতি
বন্যায় এ পর্যন্ত কতজনের মৃত্য হয়েছে
উজানের ঢল কোন অঞ্চল থেকে আসছে
লেখকের মন্তব্যঃ

২০২৪ সালের বন্যা পরিস্থিতি

সারাদেশে বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থেকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। বুধবার (২১ আগস্ট-২৪) পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। বন্যায় সেখানে এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের ত্রিপুরার ডম্বুর হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট বা ডম্বুর গেট খুলে দিয়েছে ভারত। ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতীর জেলা প্রশাসক তরিৎ কান্তি চাকমা তার সরকারি এক্স একাউন্টে (সাবেক টুইটার) এ কথা জানিয়েছেন।

রতন লাল নাথ এর ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-‘‘গোমতি হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রজেক্ট এর কোন গেইট খুলে দেওয়া হয়নি। রিজার্ভারের ধারণ ক্ষমতা ৯৪ মিটার পর্যন্ত। জল এই স্তর অতিক্রম করলেই অটোমেটিক্যালি গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবে। আবার রিজার্ভারের জল স্তর ৯৪ মিটারের নিচে নেমে গেলে অটোমেটিক্যালি গেইট বন্ধ হয়ে যাবে। 

সেই মোতাবেক গোমতী রিজার্ভারের জল স্তর ৯৪ মিটার এর উপরে উঠে আসতেই দুটো গেট দিয়ে অটোমেটিক্যালি জল বেরুচ্ছে। একটি গেইট দিয়ে ৫০% হারে জল বেরোচ্ছে। এতে অযথা আতঙ্কিত হবার কোন কারণ নেই। গোটা বিষয়টি সম্পর্কে প্রশাসন ওয়াকিবহাল। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।’’

এদিকে (২২ আগস্ট-২৪) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ত্রিপুরার গোমতী নদীর উজানে ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে এমন খবর প্রচারে আমরা উদ্বিগ্ন। এটি সঠিক নয়। 

আমরা উল্লেখ করতে চাই, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে এই বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশে বন্যা মূলত বাঁধের নিচের দিকের এই বৃহৎ ক্যাচমেন্টের পানির কারণে। 

এতে আরও বলা হয়েছে, ডুম্বুর বাঁধটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে বেশ দূরে অবস্থিত। বাংলাদেশ থেকে এটি ১২০ কিলোমিটার দূরে উজানে অবস্থিত। এটি একটি কম উচ্চতার (প্রায় ৩০ মিটার) বাঁধ যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে মূলত ব্যবহার হয়। এখান থেকে বাংলাদেশও ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পায়। প্রায় ১২০ কিলোমিটার নদীপথে আমাদের অমরপুর, সোনামুড়া এবং সোনামুরা ২-এ তিনটি জলস্তর পর্যবেক্ষণ সাইট রয়েছে। 

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সমগ্র ত্রিপুরা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে গত ২১ আগস্ট-২০২৪ থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টির পানি প্রবাহের ক্ষেত্রে বাঁধগুলোতে স্বয়ংক্রিয় রিলিজ পরিলক্ষিত হয়েছে। অমরপুর স্টেশন একটি দ্বিপাক্ষিক প্রটোকলের অংশ যার অধীনে আমরা বাংলাদেশে বাস্তব সময়ের বন্যার তথ্য প্রেরণ করছি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২১ আগস্ট-২৪ ভারতের সময় দুপুর ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশকে ক্রমবর্ধমান বন্যার প্রবণতার ডেটা সরবরাহ করা হয়েছে। এদিন ভারত সময় সন্ধ্যা ৬টায় বন্যার কারণে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে যার ফলে যোগাযোগের সমস্যা হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অভিন্ন নদীতে বন্যা একটি যৌথ সমস্যা যা উভয় পক্ষের জনগণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করে 

এবং এর সমাধানের জন্য ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন সব সময়। যেহেতু দুটি দেশের ৫৪টি অভিন্ন আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে, তাই নদীর পানি নিয়ে সহযোগিতা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে পানি সম্পদ এবং নদীর পানি ব্যবস্থাপনার সমস্যা ও পারস্পরিক উদ্বেগ সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

তবে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও তারা সব সময় সত্যটা অস্বীকার করে। অতিবৃষ্টির সময় বেশি পরিমান পানি ছেড়ে দেয় এবং খরার সময় যতটা পানি ছাড়ার কথা তার চেয়ে অনেক কম পানি ছাড়ে। এটা তাদের চিরাচরিত নীতি।

ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ১২ জেলার নাম

১। ফেনীঃ আকস্মিক বন্যায় বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে ফেনীতে। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার পর ফেনী পৌর শহরও গতকাল পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, কোথাও বুকসমান পানি।

২। নোয়াখালীঃ টানা বর্ষণের ফলে নোয়াখালীর আটটি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ডুবে গেছে ফেনী-নোয়াখালী সড়কের চৌমুহনী–মাইজদী অংশের একাধিক এলাকা। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘরবাড়ি ছেড়ে ছুটে চলছে অনেকে।

৩। লক্ষ্রীপুরঃ লক্ষ্মীপুরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল সকালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঞ্ছানগর এলাকার পাটোয়ারীবাড়ির আবুল কালামের স্ত্রী সোমা বেগম বলেন, ‘গ্যাসের সংযোগ বন্ধ। চুলাও পানির নিচে। আগুন জ্বালাতে পারছি না। সকালে রেস্টুরেন্ট থেকে এনে নাশতা খেয়েছি। দুপুরের খাবারও কিনে আনতে হবে। এত বৃষ্টি, এত পানি জীবনেও দেখিনি।’

৪। কুমিল্লাঃ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জে ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে কয়েক শ মাছের ঘের, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা। ঢলের সঙ্গে কুমিল্লায় এক দিনেই ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

৫। ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আখাউড়ায় বাঁধ ভেঙে ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও স্থলবন্দরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঢল আসতে শুরু করে। বুধবার সকাল থেকে ইমিগ্রেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ আছে।

৬। চট্রগ্রামঃ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীর বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যায় পানিবন্দী হয়ে আছেন এই তিন উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহা

৭। খাগড়াছড়িঃ বন্যায় প্লাবিত হয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষাধিক বাসিন্দা। এরই মধ্যে চেঙ্গি, মাইনি ও কাসালং নদীর পানি বিপৎসীমার দুই থেকে ছয় ফিট অতিক্রম করায় আশেপাশের এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

৮। রাঙামাটিঃ তিন পার্বত্য জেলা- রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যোগ হয়েছে পাহাড়ধসের ঘটনা; ডুবেছে চট্টগ্রাম নগরীর অনেক সড়ক।

৯। কক্সবাজারঃ কক্সবাজারের রামুতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ২৩ হাজার মানুষ। বাঁকখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। স্রোতে ভেসে গেছেন চারজন। বিকেল পাঁচটার দিকে এক শিশুসহ দুজনের মরদেহ ভেসে উঠলেও অপর দুজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

১০। সিলেটঃ সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার, শেরপুর-সিলেট অঞ্চলে ১০, মারকুলী এলাকায় ৭, মনু নদের মনু রেলওয়ে ব্রিজে ২৯, খোয়াই নদের বাল্লা এলাকায় ১৯৯, হবিগঞ্জে ১৬৫, গোমতী নদী কুমিল্লায় ১১৯, দেবীদ্বারে ৫৩, হালদা নদী নারায়ণহাটে ১১০ ও পাঁচপুকুরিয়া এলাকায় বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

১১। মৌলভীবাজারঃ মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলের মানুষ তো বিপদে আছে আগে থেকেই। এবার নিয়ে গত তিন মাসে তৃতীয় দফায় বন্যাকবলিত হয়েছে তারা। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরও ত্রিপুরা, মেঘালয়সহ বাংলাদেশের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলীয় ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী ভারতের কয়েকটি রাজ্যে আজ শুক্রবারও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে।

১২। হবিগঞ্জঃ হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি কিছুটা কমলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নদীর সব পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল ৯টায় খোয়াই নদীর পানি বাল্লা পয়েন্টে ১৯১ সেন্টিমিটার, শায়েস্তাগঞ্জে ১৫৩ সেন্টিমিটার ও শহরতলীর মাছুলিয়ায় ১৬৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফেনি জেলার বন্যা পরিস্থিতি

হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি তীব্র ও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ফেনী অঞ্চলে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দাড়িয়েছে ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। এখনো হাজারো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে এসব জায়গায়।

এমন পরিস্থিতিতে এসব এলাকা পুরোপুরি বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে মোবাইল নেটওয়ার্কও। ফেনীর নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, এই এলাকায় ১৯৮৮ সালের পর বন্যা পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়নি আগে কখনো। ভারী বৃষ্টি ও ভারত উজানের ঢল আসায় ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ২২ আগস্ট-২৪ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে জানা যায়, ফেনীতে উদ্ধার কাজে তিনটি কন্টিনজেন্ট কাজ করছে। আগের একটির পাশাপাশি আজ থেকে যুক্ত হয়েছে আরও দুটি কন্টিনজেন্ট।

পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, নৌবাহিনীর আরও দুটি কন্টিনজেন্ট ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়ে ফেনীতে বন্যা দুর্গত এলাকায় উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ করছে। ডুবুরি সামগ্রী, লাইফ-জ্যাকেট, স্পিড বোট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে উদ্ধারকার্যে। জরুরি চিকিৎসা সেবা ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলমান।

ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সবার কল্পনার বাইরে। এখন অনেক মানুষ পানিতে আটকা পড়েছে। তাদেরকে উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড। এতে ব্যবহৃত হচ্ছে হেলিকপ্টার।

বন্যায় এ পর্যন্ত কতজনের মৃত্য হয়েছে

উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে দেশের ১০ জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৩৬ লাখ মানুষ। তবে বন্যাকবলিত আরও দুই জেলার খবর পাওয়া গেছে। পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গত দুই দিনে চার জেলায় ১৫ মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

গত বুধবার থেকে আট জেলায় বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার আরও চার জেলাসহ মোট ১২ জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। জেলাগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। বন্যার্তদের সহায়তায় পাঁচ জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। 

বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ করছেন সেনাসদস্যরা। এমনকি রান্না করা খাবারও বিতরণ করা হচ্ছে সে সব এলাকায়। বন্যার পানিতে রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল (২১ আগস্ট-২৪) থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনেক স্থানে পানি। ওই সড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। 

বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। এতে কার্যত ওই সব এলাকার মানুষ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। আকস্মিক বন্যায় বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে ফেনীতে। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার পর ফেনী পৌর শহরও গতকাল পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, কোথাও বুকসমান পানি।

উজানের ঢল কোন অঞ্চল থেকে আসছে

গত তিন দিনের অবিরাম বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পানিতে বন্যা দেখা দেয়। এতে খোয়াই বাঁধের জালালাবাদ ও লস্করপুরে ভাঙন দিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, দেশের বন্যাকবলিত জেলা ১০টি। আর প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। 

বন্যায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। টেলিযোগাযোগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। বন্যার কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে শফিকুল আলম জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, 

কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশে টানা বৃষ্টি হয়েছে এবার। ১৬ আগস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছিল। ঢলের সঙ্গে কুমিল্লায় এক দিনেই ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব জানান, আগামীকাল শনিবার নাগাদ বৃষ্টি একটু কমতে পারে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আখাউড়ায় বাঁধ ভেঙে ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও স্থলবন্দরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঢল আসতে শুরু করে। বুধবার সকাল থেকে ইমিগ্রেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ আছে।

লেখকের মন্তব্যঃ

দেশের পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলায় আকস্মিক বন্যায় ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়া হয়েছেন। ফসলি জমি, গবাদি পশু, মাছের ঘের সব কিছু বাসিয়ে নিয়ে গেছে সর্বনাসি বন্যায়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ, যা কল্পনাতীত। বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা রাজ্যের উপর যে রেকর্ড পরিমান বৃষ্টিপাত হয়েছে 

তার প্রভাবেই মূলত এই আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে তার জন্য আবহাওয়া সম্পর্কিত ৪টি প্রধান কারণ খুঁজে পাওয়া যায় প্রাথমিক বিশ্লেষনে- ১. এল-নিনো ২. মেডেন-জুলিয়ান দোলন বা সংক্ষেপে এমজেও ৩. জেট স্ট্রিম ও ৪. বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমি লঘু চাপ। আবহাওয়াসম্পর্কিত এই চারটির প্রতিটিই কারণই পৃথক পৃথকভাবে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত ঘটানোর জন্য দায়ী। 

তবুও আরো আগে থেকেই এই বৃষ্টিপাতের এবং বন্যার পূর্বাভাস দিতে পারতেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। কেন দেননি জানিনা। ভবিষ্যতে এমন যেন না হয় সেই জন্য প্রস্তুতি থাকা দরকার আগে থেকে। যাই হোক, যার যতটুকা সম্ভব বন্যার্তদের সাহায্যে আগিয়ে আসুন, তাদের পাশে দাড়ান, তারা আমাদেরেই ভাই, আমাদেরই দেশের নাগরিক। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪