আয়নাঘর কি? আয়নাঘর কোথায় ? আয়নাঘর সম্পর্কে বিস্তারিতা জেনে নিন
খুনি শেখ হাসিনার পতনের পর আয়নাঘর এখন আলোচনার তুঙ্গে। এই আয়নাঘর নিয়ে নানা রকম ছবি, ভিডিও এবং কাহিনী প্রকাশ হচ্ছে। আপনি কি জানেন আয়নাঘর টা আসলে কি ?
হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে আয়নাঘরের যাবতীয় তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি। এখানে জানতে পারবেন- আয়নাঘর কেন তৈরি করা হয়েছে এবং এখানে কাদেরকে বন্দী করে রাখা হতো, আরো অনেক কিছু।
ভূমিকাঃ খুনি হাসিনার আয়নাঘর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
সূচীপত্রঃ
আয়নাঘর কি
আয়নাঘর কোথায়
আয়নাঘর কেমন
আয়নাঘরে কাদেরকে রাখা হতো
আয়নাঘর একটি ভয়ংকর কারাগার
লেখকের মন্তব্যঃ
আয়নাঘর কি
আয়নাঘর নামটা খুবই সুন্দর। মনে হতে পারে আয়নায় মোড়া যেন রূপকথার কোনও জায়গা। কিন্তু, এই রূপকথাসূলভ নামের আড়ালে লুকিয়ে আছে গুম, অত্যাচার, বিনা বিচারের বছরের পর বছর আটকে রাখার ভয়ানক কাহিনি। আসলে, আয়নাঘর হল বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা দফতর বা ডিজিএফআই-এর আওতাধীন এক গুপ্ত গুম ঘর।
গুপ্ত গুম ঘরেটির কোডনেম ছিল আয়নাঘর। কীভাবে এই কোডনেম এল তা স্পষ্ট নয়। হয়ত বা, বাংলাদেশি সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ‘আয়নাঘর’ উপন্যাস থেকে। সেই উপন্যাসেও একটি আয়নাঘরের কথা বলেছিলেন হুমায়ুন আহমেদ। সেটি ছিল জানলাবিহীন ছোট্ট একটা কামরা, যার দেওয়াল জুড়ে প্রাকান্ড সব আয়না ছিল।
জানালা নেই, তাই দরজা বন্ধ করলেই সেই ঘর অন্ধকার হয়ে যেত। তাই ঢুকতে হত প্রদীপ বা মোমবাতি নিয়ে। দরজা বন্ধ করে প্রদীপ বা মোম জ্বাললেই এক অদ্ভূত জাদু পরিস্থিতি তৈরি হত। উপন্যাসের চরিত্র লিলিয়ানের মনে হয়েছিল, আয়নার ভিতর দিয়ে কে যেন তাকে দেখছে। হাসিনার আয়নাঘরের কক্ষগুলিও ছিল এমনই। তবে, কোনও আয়না ছিল না।
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাউন্টার-টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) দ্বারা পরিচালিত একটি গোপন আটক কেন্দ্রের নাম আয়নাঘর। ধারণা করা হয়, এখানে কমপক্ষে ১৬টি কক্ষ রয়েছে, যেখানে একসঙ্গে ৩০ বন্দি রাখার সক্ষমতা রয়েছে। আয়নাঘরটি বাংলাদেশের ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আয়নাঘরে (আয়নাঘর) বলপূর্বক গুমের শিকারদের আটক ও নির্যাতন করছে।
ভারতের জি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়নাঘর। শুনতে যতটা সাদামাটা ততটাই রহস্যময়। শেখ হাসিনার আমলে তৈরি এই আয়নাঘরেই রাখা হতো গুম করে রাখা মানুষদেরকে। আলো বাতাসহীন একটি কক্ষ। সেখানে সারাক্ষণ ঘড়ঘড়িয়ে চলে ফ্যান। সেখানে ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যারা মতবাদ দিয়েছেন বা কথা তুলেছেন তাদের গোপনে আটক করে রেখে নির্যাতন করা হতো ।
আয়নাঘর কোথায় অবস্থিত
আয়নাঘর , রোমানাইজড : Āẏnāghôr , lit. 'হাউস অফ মিররস') বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (DGFI) দ্বারা পরিচালিত একটি গোপন অন্তরীণ কেন্দ্রের নাম। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কচুক্ষেতে অবস্থিত ডিজিএফআই সদর দফতর।
আমেরিকার ‘ম্যাক্সার স্যাটেলাইট’-এর মাধ্যমে, ঢাকার সেনানিবাসের মধ্যে আয়নাঘর জেলখানার ছবিও দেখা গিয়েছে। জানা যায়, এই বন্দিশালায় মোট ৩০টি সেল বা কক্ষ রয়েছে। আরও আছে বেশ কয়েকটি সাউন্ড-প্রুফ কক্ষ। অর্থাৎ, যে ঘর থেকে আওয়াজ বাইরে আসে না, বা, বাইরের আওয়াজ ভিতরে আসে না। সেখানে বন্দিদের নির্যাতন করা হয়।
জেলখানাটির একেকটি সেকশনে আছে পাঁচটি করে কক্ষ। প্রতি পাঁচটি কক্ষের সঙ্গে রয়েছে একটা করে শৌচাগার। শৌচাগারে, একটি লো প্যান, একটি হাই প্যান এবং একটি করে কমোড আছে। খাবার-দাবার ভালই ছিল। বন্দিদের দেওয়া হত বিস্কুট, জল, মাংস ইত্যাদি। কারাগারে ছিল বেশ কয়েকটি বড় বড় এগজস্ট ফ্যান।
প্রতি পাঁচটি কক্ষের সঙ্গে থাকত সেই ধরনের দুটি করে এগজস্ট ফ্যান। দিন-রাত সেই ফ্যানগুলি চলত। তাই শুধু তারই আওয়াজ পাওযা যেত। কিন্তু, ফ্যানগুলি বন্ধ হলেই বিভিন্ন কক্ষ থেকে ভেসে আসত কান্নার শব্দ। কক্ষগুলিতে কোনও জানালা ছিল না। ছিল দুটি করে দরজার কড়া প্রহরা। প্রথম দরজাটি ছিল লোহার শিকের, পরের দরজাটি কাঠের। কাঠের দরজাটিতে ছিল একটি করে ছিদ্র।
গোটা কুঠুরিকে ওই একটি ছিদ্র দিয়েই সামান্য আলো-বাতাস আসত। ডিজিএফআই-এর কাউন্টার টেরোরিজম ইন্টিলিজেন্স ব্যুরো এই জেল পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। সন্দেহের বশে বহু মানুষকে তুলে নিয়ে এসে এই গোপন কারাগারে মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর আটক রাখা হত। এরপর তাদেরকে এমনভাবে আদালতে পেশ করা হত, যেন তাদের সবে মাত্র গ্রেফতার করা হয়েছে।
আয়নাঘর কেমন
আয়নাঘর সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো ভিজুয়াল তথ্য সর্বজনীনভাবে প্রকাশিত হয়নি। এটি একটি গোপন আটক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, এবং এর অভ্যন্তরের ছবি বা বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় না। আয়নাঘরের অস্তিত্বই সরকারিভাবে স্বীকৃত নয়। তাই এর বিষয়ে কোনো সরকারি তথ্য পাওয়া যায় না।
এই ধরনের গোপন স্থাপনার নিরাপত্তার কারণে এর বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয় না। বিভিন্ন সূত্রে আয়নাঘরকে একটি ছোট, অন্ধকার এবং আর্দ্র কক্ষ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই কেন্দ্রটিতে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের আটক রাখা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। এই কেন্দ্রে বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগও রয়েছে।
আয়নাঘরে কাদেরকে রাখা হতো
শেখ হাসিনার আমলে বিরোধীদলের বহু নেতাকর্মী নিখোঁজ হয়ে গেছে। তারা কোথায় তাদের কোনো খোঁজ নেই। এমনকি সেনাবাহিনীর লোকজন রয়েছেন ওই তালিকায়। আয়নাঘর আসলে গোয়েন্দাদের একটি গোপন বন্দিশালা বা ডিটেনশন ক্যাম্প। আনন্দোবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আয়নাঘর’ হচ্ছে ‘গুমখানা’।
হাসিনার শাসনকালে ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে মোট ৬০৫ জনকে গোপনে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে নিখোঁজ হন ৪০২ জন মানুষ। এ তথ্যটি প্রকাশ করে ঢাকা ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অধিকার।
২০১৪ থেকে জুলাই ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৪৪ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৪০ জন ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, ৬৬ জনকে সরকারি হেফাজতে গ্রেফতার অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে ২০৩ জন এখনো গুম রয়েছেন। যারা দীর্ঘদিন গুম থাকার পর ফিরে আসেন, তারা গুমের ব্যাপারে মৌন অবলম্বন করেন।
ধারণা করা হয় এসব মানুষদের গুম করে রাখা হয় আয়নাঘরে। আয়নাঘরে যারা বন্দি থেকেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ মোবাশার হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়। এছাড়াও আয়নাঘর থেকে সম্প্রতি ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশী ব্যারিস্টার এবং
জামায়াতে ইসলামী নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমদ বিন কাসেম, সাবেক সামরিক জেনারেল এবং জামায়াতে ইসলামী নেতা গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আজমি, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সংগঠন ইউপিডিএফের মুখপাত্র মাইকেল চাকমা। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ এইসব ঘটনার জন্য জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থা,
যেমন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারকে নিন্দা প্রস্তাব জানায়। এসময় গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যরা মায়ের ডাক নামে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেন। এখানে যাদের পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ
নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে সরকারি সংস্থা কর্তৃক বলপূর্বক গুমের শিকার হয়েছে সে ঘটনাসমূহকে সামনে আনার জন্য এ সংগঠনের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ বেসরকারি একটি সংবাদ মাধ্যম থেকে ধারণা করছে, যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এরকম আরও বেশ কিছু নির্যাতন ও আটক স্থান থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে সদ্য দেশ থেকে পলায়ন করা শেখ হাসিনা বিরুদ্ধ মত সহ্য করতে পারছিলেন না। আর সেই কারণে রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য তৈরি করেছিলেন আয়না ঘর। যা ছিল রাজনৈতিক বন্দিদের কাছে ত্রাস বা বিভীষিকাময়। হাসিনার তৈরি বিরুদ্ধ রাজনৈতিক কর্মীদের গুমঘর। প্রতিবাদীদের কণ্ঠরোধ করার একটি উপায়।
সারাদেশে ডিজিএফআই’র ২৩টি গোপন আটক কেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি রয়েছে ঢাকায়। ২০২৪ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার বছর, ২০০৯ সাল থেকে তার পতন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬০০টিরও বেশি গুম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী আয়নাঘর থেকে খুব কম বন্দি মুক্তি পেয়েছে। তবে কিছু বন্দিকে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়।
অনেকেই আবার এনকাউন্টারের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে এজাতীয় ঘটনার তদন্ত প্রায় হয় নি বললেই চলে। আয়নাঘরে রাখা অনেকেই দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মারা যায়। তারপর লাস সরিয়ে দেওয়া হয়। যাদের গ্রেফতার করা হয় তাদের খাতা কলমে কোনো তথ্য রাখা হয় না। আর যারা হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন তারাই আয়নাঘরের দায়িত্ব পেতেন। আয়নাঘরের বন্দিদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখা করা বা যোগাযোগের কোনও আইন ছিল না।
আয়নাঘর একটি ভয়ংকর কারাগার
আয়নাঘর হল একটি গোপন আটক কেন্দ্রের নাম যা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা দ্বারা পরিচালিত হয়। সেখানে ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যারা মতবাদ দিয়েছেন বা কথা তুলেছেন তাদের গোপনে আটক করে রেখে নির্যাতন করা হতো ।
আয়নাঘর কে নিয়ন্ত্রণ করতেন
খুনি শেখ হাসিনার পতনের পর নিখোঁজ থাকা তিনজন ফিরে এসেছেন, যাদের দীর্ঘদিন কোনো হদিস ছিল না। এরপরই আলোচনায় আসে ‘আয়নাঘর’। এর আগেই এই ‘আয়নাঘর’ আলোচনায় এসেছে। কিন্তু এটা বাস্তবে আছে কি না, তা নিয়ে তখন অনেকেরই সংশয় ছিল। কিন্তু ফিরে আসা ব্যক্তিরা গণমাধ্যমে মুখ খোলার পর জানা গেল, বাস্তবে ‘আয়নাঘর’ আছে, যেখানে গুম করে রাখা হয় এবং নির্যাতন করা হয়।
আলোচিত গোপন কারাগার 'আয়নাঘর' তৈরিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, ‘আয়নাঘর’ মূলত তৈরি হয়েছে ২০০৯ সালে।
এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলের নেতাদের অপহরণ করে বছরের পর বছর ধরে ‘আয়নাঘরে’ রাখত। আবার কাউকে মেরেও ফেলা হয়েছে। এ বিষয়টি আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষকর্তারা অবহিত ছিলেন।
এসব কর্মকাণ্ড করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা পদোন্নতি পাওয়া থেকে শুরু করে পুরস্কৃতও হয়েছেন। সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে গত ১৫ আগস্ট রাতে গ্রেপ্তার করার পর
‘আয়নাঘর’সহ নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসবাদ করা হচ্ছে। বর্তমানে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিউ মার্কেট এলাকায় হকার শাহজাহান হত্যা মামলায় আট দিনের রিমান্ডে আছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে খুন, গুম ও অসংখ্য ব্যক্তির ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দাদের জেরার মুখে জিয়াউল আহসান ও তারিক আহমেদ সিদ্দিকের নাম বলেছেন। জিয়াউল আহসান দীর্ঘদিন র্যাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২২ সাল থেকে এনটিএমসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভিন্নমত এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল দমন করার জন্য গুমের মতো অপরাধ সংঘটিত হয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ পর্যন্ত গুমের ঘটনা থেকে বাদ পড়েনি কেউই। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র র্যাব ও বাহিনীটির কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এনটিএমসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হলেও এটির নিয়ন্ত্রণ ছিল তারিক আহমেদ সিদ্দিকর হাতে। জিয়াউল এনটিএমসির দায়িত্বে থাকাকালে একের পর এক কল রেকর্ড ফাঁস করেন। রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য হুমকি এমন সব ব্যক্তির স্পর্শকাতর কল রেকর্ড তার নির্দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
তবে জিয়াউল আহসান গত শুক্রবার আদালতে রিমান্ড শুনানিতে ‘আয়নাঘরের’ সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন, ৭ আগস্ট তাকে তুলে নিয়ে ‘আয়নাঘরে’ রাখা হয়েছিল। নাম প্রকাশ না করে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আয়নাঘর’ নিয়ে তারা বেকায়দায় আছেন।
এটি নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। সরকার পতনের আগপর্যন্ত এখানে কয়েকশ মানুষ আটক ছিল বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। এ কর্মকর্তা জানান, ‘আয়নাঘর’ কচুক্ষেত, উত্তরা, মিন্টো রোডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ইউনিটে ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিমান্ডে থাকা সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান নানা তথ্য দিচ্ছেন। ইলিয়াস আলীসহ অন্যদের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
লেখকের মন্তব্যঃ
আয়নাঘর নামটা শুনলেই যেন রূপকথার কোন জায়গার কথা মনে হয়। কিন্তু এই রূপকথাসূলভ নামের আড়ালে লুকিয়ে আছে গুম, অত্যাচার, বিনা বিচারে বছরের পর বছর আটকে রেখে ভয়ানক নির্যাতনের কাহিনী। হাসিনার শাসনামলে, সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিরোধী, সমাজকর্মী, আইনজীবী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, সেনাকর্তা থেকে শুরু করে, বহু মানুষকে গুম করা হয়েছে।
বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়েছে এখানে। অসংখ্য মানুষকে গুম করে এই সমস্ত বন্দিশালায় নির্যাতন করা হতো বছরের পর বছর। ৫ আগস্ট দ্বিতীয় বার দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই আয়নাঘর থেকে বেচেঁ ফিরেছেন অনেকে। তাদের মুখ থেকে অত্যাচার ও নির্যাতনের বিবরণ শুনলে শরীরের লোমগুলো দাড়িয়ে যায়।
আমার মতে এই আয়ঘরটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষনা দিলে দেশ-বিদেশের মানুষ দেখে অনুভব করতে পারতো যে, শেখ হাসিনা কতটা নিষ্ঠুর ও অমানবিক। এখনো যারা মায়া তার জন্য মায়া কান্না কাঁদছেন, তারা নিরোপেক্ষ ভাবে একবার চিন্তা করে দেখেন। বন্দিশালায় নিজেকে একবার ভাবুন। মানুষের জীবন একটাই, এই জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কাউরি নাই। ভালো থাকবেন, ভালো রাখবেন অন্যকেউ। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url