লাল শাকের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

লাল শাক এক প্রকারের সবজি, যার পাতা এবং ডাটা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এই শাক আগে শীতকালে পাওয়া গেলেও বর্তমানে বছরের সব সময় পাওয়া যায়। প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে ১/২ বার আমরা এই শাক খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা কি জানি এই শাকের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।
লাল শাকের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সামনে লাল শাকের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। তো বন্ধুরা আসুন আর দেরি না করে শুরু করা যাক।

সুচীপত্রঃ

লাল শাকের পুষ্টিগুণ
লাল শাকের উপকারিতা
লাল শাকের অপকারিতা
গর্ভবস্থায় লাল শাক খাওয়ার উপকারিতা
কেন খাবেন লাল শাক
শীতে লাল শাক কেন খাবেন
লেখকের শেষকথাঃ

লাল শাকের পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম লালশাকের পুষ্টিগুণ- ক্যালসিয়াম ৩৭৪ মিলিগ্রাম, শর্করা ৪.৯৬ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ৫.৩৪ মিলিগ্রাম, স্নেহ ০.১৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.১৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪২.৯০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১১.৯৪ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ ১.০৬ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৩ কিলোক্যালরি।

লাল শাকের উপকারিতা

দাঁত ও হাড় গঠনে সাহায্য করেঃ- লালশাকে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্য শাকের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। ক্যালসিয়াম দাঁত এবং হাড় গঠনে বেশ উপকারী। তাই দাঁতের সুস্থতা, হাড় গঠন, গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে এই শাক উপকারী।

দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করেঃ- লালশাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধির জন্য খুব উপকারী। এই শাক বিদ্যমান ভিটামিন-এ রেটিনার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে সার্বিকভাবে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে আপনার খাবারের মেনুতে রাখুন লালশাক। 

হজম শক্তি বাড়েঃ- লালশাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা হজমে সাহায্য করে ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজমের আশঙ্কা কমে যায়। সেই সঙ্গে বাওয়েল মুভমেন্ট যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে।

রক্তশূন্যতা দূর করেঃ- রক্তশূন্যতা রোধ করতে লালশাক খুব উপকারী। কারণ এতে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। লালশাক শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই শিশুসহ যাদের রক্তশূন্যতা রয়েছে তাদের সবারই এই শাকটি খাওয়া খুবই দরকার। বড় কোনো অপারেশনের পরে, ৪০ বছরের পরে দেহে রক্তের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। 

পুরুষের তুলনায় নারীদের হাড়ক্ষয় হয় দ্রুত। এই ক্ষয় রোধের জন্য আয়রন, আয়োডিন–জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। লালশাক এই সমস্যাগুলোর জন্য উপযুক্ত খাবার। অ্যানিমিয়া, অর্থাৎ রক্তশূন্যতা, মাতৃদুগ্ধদানকারী নারী, খেলোয়াড়, নৃত্যশিল্পী, যাঁরা নিয়মিত দৈহিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম বেশি করেন, এই ধরনের মানুষের জন্য লালশাক উপযুক্ত একটি শাক।

লালশাক খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফ্রিজে সংরক্ষণের পরিবর্তে যত দ্রুত রান্না করে খাওয়া যায়, ততই ভালো। যাঁদের বদহজমের সমস্যা থাকে, তাঁরা শাক খাবেন না।

ক্যান্সারকে দূরে রাখেঃ- লালশাকের এন্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাছাড়া অ্যামাইনো অ্যাসিড, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন-ই, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন-সি শরীরে উপস্থিত একাধিক টক্সিক উপাদান দূর করে। সেই সঙ্গে ক্যান্সার কোষ যাতে জন্ম নিতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখে।

কিডনি সমস্যা দূর করেঃ- কিডনির ফাংশন ভালো রাখতে ও কিডনি পরিষ্কার রাখতে লালশাক খুব ভালো কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত লালশাক খেলে একদিকে যেমন কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ে, তেমনি অন্যদিকে রক্তে উপস্থিত একাধিক ক্ষতিকর উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

চুল পড়া কমেঃ- চুলের স্বাস্থ্যের জন্য লালশাক অনেক উপকারী। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলে মিনারেল ও পুষ্টি যোগায়। যার ফলে চুল পড়া অনেকাংশে কমে যায়।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ- লালশাকের বিটা ক্যারোটিন হ্নদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। এই শাক রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করতেও লালশাকের ভূমিকা অনেক।

লাল শাকের অপকারিতা

আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি লাল শাকে প্রচুর পরিমান আয়রন থাকে। এত বেশি আয়রন থাকায় আমাদের রাতে ঘুমানে খুবই সমস্যা হয়ে যায়। যাদের লিভারের সমস্যা এবং হার্টের সমস্যা রয়েছে, তাদের সাধারনত আয়রনের পরিমান একটু বেশি থাকে। এজন্য তাদের ক্ষেত্রে লাল শাক খাওয়া উচিৎ নয়।

কোনো মা যখন গর্ভাবস্থায় থাকে তখন লাল শাক গ্রহন করা খুবই উপকারী। কিন্তু উপকারী হলেও যাদের হজমের সমস্যা হয়, বা খাবারের পরে হজম হতে পারে না। তাদের এই শাক খাওয়া উচিৎ নয়।

আমরা জানি লাল শাকে প্রচুর পরিমান ফাইবার থাকে। যদিও আমাদের শরীরের জন্য ফাইবার খুবই প্রয়োজনীয়। তবে রাতের বেলা এই শাক না খাওয়াই ভালো। কারণ হলো রাতে খাবারের পর আমরা সাধারণত শুয়ে যায়, যা হজমের জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ে, তাই রাতে লালশাক না খাওয়াই ভালো।

গর্ভবস্থায় লাল শাক খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য লাল শাক খাওয়া খুবই উপকারী। কারণ লাল শাকে থাকা ক্যালসিয়াম মায়ের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। এমনকি গর্ভবতী এবং নবজাতক শিশুরাও নিয়মিত দৈনিক পুষ্টি ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। প্রতিদিন নিয়মিত লাল শাকসবজি খান। উদ্ভিদ উপাদান থেকে আয়রনের একটি উৎস হল লাল  শাক রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করতে।

হিমোগ্লোবিন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। বাড়ন্ত শিশু, গর্ভাবস্থায় ও যেকোনো জটিল অপারেশনের পরে দেহে রক্তের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। তখন এই ধরনের খাবার বয়ে আনে সুফল। বাড়ন্ত শিশুদের দেহের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য আয়রন, আয়োডিনের চাহিদা বেড়ে যায়। লালশাকের হিমোগ্লোবিন সেই চাহিদা পূরণ করে।

গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি থেকে শিশুর পুষ্টির জন্য আয়রন, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দরকার হয়। গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকের জন্য লালশাক খুব উপকারী। তবে গর্ভাবস্থায় সবাই শাক হজম করতে পারেন না। শুরু থেকেই যাঁরা অ্যাসিডিটি বা বমির সমস্যায় বেশি ভোগেন, তাঁরা অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, শাক, ফাস্ট ফুড যতটা পারেন বাদ দেবে

কেন খাবেন লাল শাক

লালশাকে রয়েছে প্রচুর আয়রন। লালশাক শরীরে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বাড়ায়। তাই অ্যানিমিয়া রোগী এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য এ শাক খুবই উপকারী। নিয়মিত লালশাক খাওয়া হলে কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

শীত কিংবা গ্রীস্মে বাজারে গেলেই টাটকা লাল শাক দৃষ্টি কাঁড়ে। এই লাল শাকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট সবই রয়েছে। লাল শাক শরীরের রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও কিডনির সমস্যা থেকে শুরু করে উন্নত দৃষ্টিশক্তির সবটাতেই লাল শাকের ভূমিকা রয়েছে। যারা ডায়েট করছেন তারা অবশ্যই খাদ্য তালিকায় লাল শাক রাখুন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

প্রতিদিন লাল শাক খাওয়া শুরু করলে শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি-এর ঘাটতি দূর হবে। ফলে রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় কোন রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

ঠাণ্ডা জ্বরের চিকিৎসায়

ঠাণ্ডার কারণে যারা জ্বরে ভুগছেন, তারা এই ঘরোয়া পদ্ধতিটির সাহায্য নিতে পারেন। এক্ষেত্রে একটা প্যানে পরিমাণ মতো পানি নিয়ে তাতে এক মুঠো লাল শাক ফেলে দিন। তারপর পানি ফোটাতে শুরু করুন। যখন দেখবেন ফুটতে ফুটতে পানির পরিমাণ অর্ধেক হয়ে গেছে, তখন আঁচটা বন্ধ করে দিন। এরপর পানি ঠাণ্ডা হলে ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এমনভাবে কয়েকদিন করলেই দেখবেন জ্বর পালিয়েছে।

হার্ট ভালো থাকে

লাল শাকে থাকা ‘ফাইটোস্টেরল’ নামক একটি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর একদিকে যেমন ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে, তেমনি নানাবিধ হার্টের রোগের অ্যান্টিডোট হিসেবেও কাজ করে। সপ্তাহে কম করে ২-৩ দিন যদি লাল শাক খাওয়া যায়, তাহলে হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

শীতে লাল শাক কেন খাবেন

লালশাকে ভিটামিন এ এবং সি, ফাইবার, ফোলেট, আয়রন এবং ক্যালসিয়ামসহ অনেক পুষ্টি থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারিতা নিয়ে আসে। নিয়মিত লালশাক খেলে তো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শীতকালীন ডায়েটে লালশাক রাখার উপকারিতা চলুন জেনে নেওয়া যাক-

রক্ত বিশুদ্ধ করে

লালশাক রক্ত পরিশোধনকারী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এই শাক আপনার শীতকালীন খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা স্বাস্থ্যকর ত্বক এবং বিশুদ্ধ রক্ত তৈরিতে অবদান রাখে। বুঝতেই পারছেন, লাল রঙের এই শাক আপনার জন্য কতটা প্রয়োজনীয়?

ক্ষুধা বৃদ্ধি করে

খাবারে অরুচি হলে তা আপনার স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে। তাই এমন খাবার খেতে হবে যা ক্ষুধা বাড়াতে কাজ করে। তেমনই একটি খাবার হলো লালশাক। এই শাক আপনার ক্ষুধা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে লালশাক রাখতে হবে খাবারের তালিকায়।

লেখকের শেষকথাঃ

বন্ধগণ এতক্ষণে উপরের আর্টিকেলটি পড়ে নিশ্চয় জেনে গেছেন, লাল শাকের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। নিজেকে, নিজের পরিবারকে সুস্থ্য রাখতে হলে প্রতিনিয়ত শাক-সবিজ আমাদের গ্রহণ করতেই হবে। এর বিকল্প নেই। এই বাজারের হরেক রকম শাকের শাকের মধ্যে ললাল শাক পুষ্টিগুণ অনেক বেশি।

তাই নিয়ম করে সপ্তাহে ১/২ দিন অন্য শাকের পাশাপাশি লাল শাক খান। এতে করে উপরে বর্ণিত উপকার গুলো আপনি অনাআসে পেয়ে যাবেন। জীবন যাপনের জন্য প্রতিদিন শুধু মাছ-মাংশ খেলেই হবেনা, শাক সবজি খাওয়ারও প্রয়োজন আছে। নিয়ম করে লাল শাক খান, ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।














এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪