পুঁই শাকের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
পুঁইশাক একটি জনপ্রিয় সবজি হিসেবে আমাদের কাছে অতি পরিচিত। সহজলভ্য বলে এই শাক সবার কাছে কম-বেশি প্রিয়। আমরা প্রতিনিয়ত এই সবজিটি খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা কি জানি এই সবজির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে ?
হ্যাঁ বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে পুঁইশাকের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতা জেনে নিন। তো বন্ধুরা আর দেরি না করে আসুন শুরু করা যাক।
সূচীপত্রঃ
পুঁইশাকের পুষ্টিগুণ
পুঁইশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
পুঁইশাক খেলে কি গ্যাস হয়
পুঁইশাকের বিচির উপকারিতা
সৌন্দর্য বাড়াতে পুঁইশাক
লেখকের মন্তব্যঃ
পুঁইশাকের পুষ্টিগুণ
অন্যান্য অনেক শাকের মত এর মধ্যে অনেক ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, লোহা, ও ক্যালসিয়াম আছে। এছাড়া ক্যালরির ঘনত্ব কম। তদুপরি ক্যালরি-প্রতি আমিষের পরিমাণও বেশি। এর মধ্যে ছিবড়ের পরিমাণ বেশি। সবুজ পাতায় সবুজ ক্লোরফিলের প্রাচুর্যের কারণে এবং লাল পুঁইয়ের ডাঁটায় লাল জ্যান্থফিলের আধিক্যের জন্য এদের রঙ্গক হিসাবেও ব্যবহার করা যায়।
পুঁই শাক পুষ্টিকারক ও তৃপ্তিকারক। পাতাসহ সমগ্র গাছ ভেষজ গুণাবলী সম্পন্ন। পাতা মূত্রকারক। গনোরিয়া রোগে এটি উপকারী। অর্শ রোগে অতিরিক্ত স্রাব, অতিসার প্রভৃতিতে অন্যান্য উপদানের সঙ্গে পুঁই শাকের ব্যবহার আছে। পুঁই শাকের পাতার রস ছোটদের সর্দি, কোষ্ঠবদ্ধতা প্রভৃতিতে উপকার দেয়। পুঁই শাকের রস মাখলে গোদে আরাম হয়।
পুঁইশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
পুঁইশাক শরীরের অনেক পুষ্টিকর ঘাটতি পূরণ করে। পুইশাকে রয়েছে ভিটামিন সি এবং আয়রন সমৃদ্ধ মেটাবলিজম। পুইশাকে অনেক পরিমাণ ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি থাকে। অতিরিক্ত মোটা হলে নিয়মিত পুইশাক খাওয়া খুব উপকারী। কারণ পুইশাক ওজন কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তাহলে আসুন পুইশাকের উপকারিতাগুলো জেনে নিই।
পুঁইশাকের উপকারিতা
আপনি যদি নিয়মিত পুইশাক খেয়ে থাকেন। তাহলে আপনার পাইলস, ফিস্টুলাস এবং হেমোরয়েড হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। কারণ পুইশাকে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা শরীরের সকল ঘারতি পূরণ করে।
- পুঁইশাক ব্রণের সমস্যা দূর করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। যারা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য পুঁইশাক অত্যন্ত জরুরী।
- পুঁইশাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যেটার ফলে শরীরের যে বর্জ্য থাকে সেটা দূর করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- পুইশাকে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। এর ফলে ত্বকের রোগ জীবাণু দূর করতে অনেক বেশি সাহায্য করে এবং শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে এই পুঁইশাক।
- পুইশাক দৃষ্টিশক্তি সুস্থ রাখে এবং চুল মজবুত রাখতে ও সাহায্য করে।
- যাদের গ্যাস, বদহজম, এসিডিটিসহ, নানা সমস্যায় ভুগছেন। তাদের জন্য এই পুঁইশাক অনেক উপকারী। এছাড়াও পুইশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধে এই সবজি খুবই কার্যকরী।
- শরীরের কোনো অংশে যদি ফুলে যায় অথবা আঘাত লাগে। তাহলে পুইশাকের শিকড় সুন্দর করে তুলে নিয়ে এসে পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে বাটা দিয়ে বেটে নিয়ে ফুলে যাওয়া অংশে অথবা আঘাত লাগা অংশে লাগাতে হবে। অল্প কিছু সময়ের মধ্যে আরাম পাওয়া যায়।
- পুইশাকের খেলেও যে উপকার। আবার পুইশাক বিভিন্ন রোগ সংক্রমণেরও ঔষধ। পুইশাক বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের সাথে লড়াই করতে পারে। যেমন স্ক্যাব, ফোড়া।
- যাদের প্রায় প্রতিদিনই মাথাব্যথা হয়ে থাকে তাদের নিয়মিত পুঁইশাক খাওয়া উচিত। তাহলে খুব দ্রুত মাথাব্যথা আরাম পাওয়া যায়। পরিবারের সকলের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে খাবারের তালিকায় নিয়মিত পুইশাক রাখুন।
- এতে করে আপনার পরিবার সুস্থ থাকবে। আমাদের পুঁইশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ে ধারণা রাখা দরকার। এই বিষয় পড়ে আপনি সঠিক ভাবে জানতে পাবেন বলে আশা করছি।
এনার্জি বাড়ায়ঃ বর্তমান যুগে মানুষ অনেক পরিশ্রম করে। অনেক পরিশ্রমের ফলে এনার্জি শেষ হয়ে যায়। সেজন্য পরিশ্রম করতে এনার্জির প্রচুর দরকার পড়ে। এই এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে এই পুঁইশাক।
হজমের ক্ষমতা বাড়ায় পুঁইশাকঃ অনেক মানুষ রয়েছে যারা এই গ্যাসের সমস্যায় ভোগছেন। কিন্তু পুঁইশাক খেলে যে গ্যাসের সমস্যা দূর হয় এইটা কয়জন যানে। এই পুঁইশাক গ্যাসের সমস্যা থেকে রক্ষা দেয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এই পুঁইশাক বেশ উপকারী।
ডায়াবেটিস কমাতে পুঁইশাকঃ আমাদের বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষ এই ডায়াবেটিক সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু এটা জানে না যে পুঁইশাক খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস কমতে পারে। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি, এবং অটোনমিক নিউরোপ্যাথি, কমায়। সে জন্য পুঁইশাক অনেক উপকারী একটি খাদ্য ডায়াবেটিসের জন্য।
চোখ ভালো রাখেঃ চোখের জন্য অনেক কেমিক্যাল ঔষধ সেবন করেন তারপরেও এই সমস্যা থেকে যায়। চোখ ভালো রাখতে আমাদের পুঁইশাক খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। কারণ পুঁইশাকে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ উপাদান। যা চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে খুব ভালো কাজ করে।
ব্লাড প্রেসার কমায়ঃ অধিকাংশ মানুষেরই ব্লাড প্রেসার রয়েছে। পুঁইশাক খেলে ব্লাড প্রেসার কমিয়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করে। পুঁইশাকে রয়েছে পটাশিয়াম সোডিয়াম। নিয়মিত পুঁইশাক খেলে ব্লাড প্রেসার ঠিক থাকবে। তাই খাবারের তালিকায় পুঁইশাক রাখা উচিৎ।
হাড় শক্ত করেঃ পুঁইশাকে রয়েছে ভিটামিন কে। যা আমাদের শরীরের হাড় শক্ত করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। ভিটামিন কে শরীরে কম প্রবেশ করলে হারে মজবুত শক্তি কমে যায়। ভিটামিন কে এর একটি খুব ভালো উৎস। খাবারের তালিকায় পুঁইশাক অবশ্যই রাখবেন। এতে করে আপনার শরীর স্বাস্থ্য খুব ভালো থাকবে।
পুঁইশাকের অপকারিতা
আমরা অনেকেই জানিনা যে পুইশাকের অপকারিতা গুলো কি কি। এইগুলো আমাদের জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। আসুন তাহলে জেনে নিই পুঁইশাকের অপকারিতা সম্পর্কে। যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য পুইশাক খাওয়া ঠিক না।
কারণ পুইশাকে এলার্জির মাত্রা বেশি রয়েছে। যাদের বেশি পরিমাণে এলার্জি রয়েছে তারা এই শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। পুঁইশাক অক্সালেটস সমৃদ্ধ। এটি গ্রহণ করলে শরীরের তরল পদার্থের অক্সালেটস এর পরিমাণ বেড়ে যায়।
ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। পুঁইশাকে পিউরিন নামক উপাদান রয়েছে। যা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরে ইউরিক এসিড বৃদ্ধি পায়। এর ফলে কিডনিতে পাথর গেঁটেবাত ইত্যাদি রোগ হতে পারে। যাদের কিডনি এবং পিত্তথলি বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাদের অবশ্যই পুঁইশাক খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার পর আপনি খেতে পারেন।
পুঁইশাক খেলে কি গ্যাস হয়
পুইশাক শরীরের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। তবে বেশি পরিমাণ পুঁইশাক খেলে গ্যাস হতে পারে। কারণ বেশি কোনো খাবার খাওয়ায় সঠিক নয়। তবে পুঁইশাক খেলে আপনার যদি গ্যাস হয় তাহলে কিছু কথা লক্ষ্য করুন সঠিকভাবে তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।
- সকালের নাস্তা অবশ্যই আপনাকে করতে হবে। এটা কখনো বাদ দেয়া যাবে না।
- সঠিক সময়ে ঘুমানো উচিত। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করতে হবে এবং শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে।
- তৈলাক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এর ফলে আপনার গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। সব সময় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাবেন।
- খাবার খাওয়ার ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করবেন। তাহলে এতে করে আপনার গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
- কিছু কিছু সময় দুধ জাতীয় জিনিস খেলে গ্যাসের সমস্যা হয়। যেমন রসমালাই, পায়েশ, দই, এগুলো গ্যাসের সমস্যা করে এবং বদহজম হয় সেজন্য এগুলো এড়িয়ে চলুন।
- একটানা কখনো বসে থাকবেন না। এতে করে আপনার পেটের ভেতরে গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে। কিছুক্ষণ পর পর একটু হাঁটাহাঁটি করবেন।
- আপনি যদি একটানা কাজ করেন তাহলে একটু বিরত থাকুন। ১৫-২০ মিনিটের মতো বিরত থাকলে শরীরে এনার্জি ফিরে পাবেন এবং গ্যাসের সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন।
পুঁইশাকের বিচির উপকারিতা
পুইশাকের বিচি পছন্দ করে অনেক মানুষ। এই বিচি পাকলে অনেক সুন্দর কালো দেখতে হয়। কম বেশি প্রায় মানুষই এই বিচি পছন্দ করে। এই বিচি খেতে অনেক সুস্বাদু এবং মজাদার। পুইশাকের চেয়ে পুঁইশাকের বিচিতে অনেক বেশি ফাইবার পাওয়া যায়। এই বিচিতে থাকা ফাইবার আমাদের শরীরের ফিস্টুলার সমস্যা ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে অনেক বেশি সহযোগিতা করে।
এই বিচি খেলে ছেলেদের শুক্রানুর সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। এই বিচিতে রয়েছে আয়রন ফলিক এসিড জিংক ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই পুইশাকের বিচি খেলে চর্বি বেড়ে যাওয়ার কোন ভয় থাকে না। আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে এবং অনেক গুরুত্ব পূর্ণভূমিকা পালন করতে এই পুঁইশাকের বিচি অনেক কার্যকরী। পুঁইশাক ও পুঁইশাকের বিচি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী পুষ্টিকর খাবার।
সৌন্দর্য বাড়াতে পুঁইশাক
গ্রাম বাংলায় একটি প্রবাদ আছে-‘‘শাকের মধ্যে পুঁই, মাছের মধ্যে রুই’’। দেশের জনপ্রিয়, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শাকের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুঁইশাক। বাজারে সারা বছরই কমবেশি পুঁইশাক পাওয়া যায়। ইলিশ-পুঁই ও চিংড়ি-পুঁই অনেকের অতি প্রিয় খাবার। নানা ধরনের ভিটামিনসমৃদ্ধ এই শাক এক দিকে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে অন্যদিকে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।
লেখকের মন্তব্যঃ
প্রিয় পাঠক সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ে আশা করি পুঁইশাকের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতার ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েগেছেন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সবায় ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url