মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

মিষ্টিকুমড়া আমরা সবজি হিসেবে প্রায় সবায় খেয়ে থাকি। কাউরি কাছে এটি খুব প্রিয়, আবার কেউ মিষ্টি কুমড়া দেখতেই পারেনা। কিন্তু আপনি কি জানেন এই অবহেলিত সবজিটির গুণের কথা ? হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে মিষ্টিকুমড়ার গুণাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করবো।
মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

এখানে জানতে পারবেন, মিষ্টিকুমড়া খেলে কি কি উপকার পাওয়া ‍যায়। আবার এতো গুণ থাকার পরও কোন কোন ব্যক্তির এটি খাওয়া নিষেধ সে সম্পর্কে বিস্তারিতা আলোচনা থাকছে নিচে। তো আর দেরি না করে আসুন শুরু করা যাক।

সূচীপত্রঃ

মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ
মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
মিষ্টি কুমড়ার ক্ষতিকর দিক
মিষ্টি কুমড়ার বিচির উপকারিতা
মিষ্টি কুমড়া খেলে কি ওজন বাড়ে
মিষ্টি কুমড়ার বিচির অপকারিতা
মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম
লেখকের শেষকথাঃ

মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ

  • মিষ্টি কুমড়া যেমন সুস্বাদু, তেমনি শরীরের জন্যও এটি অনেক উপকারী। পুষ্টিগুণে ভরপুর মিষ্টি কুমড়া নিয়মিত খেলে দূরে থাকতে পারবেন অনেক রোগ বালায়ের হাত থেকে।
  • মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। এই ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সর্দি-কাশি ও জ্বরের মতো অসুখ থেকে দূরে রাখে।
  • কুমড়াতে স্বল্প ক্যালোরি আর প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। ফলে খাবার খুব দ্রুত হজম হয়। হজমের গণ্ডগোলে কুমড়া খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।
  • অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর কুমড়া ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
  • কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে মিষ্টি কুমড়া।
  • কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ রয়েছে। ভিটামিন-এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। চুল ও ত্বকের জন্যও উপকারী এটি।
  • গাজরের তুলনায় কুমড়োতে বেশি পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে যা চোখের জন্য ভালো।
  • কুমড়োতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন-সি যা অবসাদ, ক্লান্তি, ডিপ্রেশন দূর করে।
  • মিষ্টি কুমড়ায় থাকা পটাসিয়াম ব্লাড প্রেশারের রোগীদের জন্য উপকারী।

মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কুমড়ার রয়েছে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কুমড়ায় পাওয়া এই বৈশিষ্ট্যগুলি কীভাবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, আমরা নীচে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করছি। শুধু মনে রাখবেন কুমড়া কোনো রোগের নিরাময় নয়। হ্যাঁ, এটি সুস্থ থাকতে এবং রোগের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • ভিটামিন এ সমৃদ্ধঃ মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। এছাড়াও, এটি ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ মিষ্টি কুমড়ায় ভিটামিন সি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • হজমশক্তি উন্নত করেঃ মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সাহায্য করে।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ মিষ্টি কুমড়ায় ক্যালোরির পরিমাণ কম এবং ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ মিষ্টি কুমড়ায় পটাসিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভালোঃ মিষ্টি কুমড়ায় ফাইবার, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ মিষ্টি কুমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • মধুমেহ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ মিষ্টি কুমড়ায় ফাইবার থাকে যা মধুমেহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

অপকারিতাঃ

অ্যালার্জি হতে পারেঃ কিছু লোকের মিষ্টি কুমড়ায় অ্যালার্জি হতে পারে।
পেট খারাপ হতে পারেঃ অতিরিক্ত মিষ্টি কুমড়া খেলে পেট খারাপ হতে পারে।
গ্যাস হতে পারেঃ মিষ্টি কুমড়া খেলে কিছু লোকের গ্যাস হতে পারে।

মিষ্টি কুমড়ার ক্ষতিকর দিক

মিষ্টি কুমড়া অনেকেরি বেশ পছন্দের খাবার। তাইতো প্রায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকাতেই স্থান পায় এই পুষ্টিকর সবজিটি। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে মিষ্টি কুমড়ার জুড়ি নেই। তাই বলে প্রচুর পরিমাণে কুমড়া খাওয়া কি ভালো? না কি তাতে ক্ষতি হতে পারে?

অতিরিক্ত পরিমাণে কুমড়া খাওয়ার ফলে শরীরের কিছু মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। চলুন জেনে নেয়া যাক অতিরিক্ত মিষ্টি কুমড়া খেলে কী কী সমস্যা হতে পারে-

রক্তচাপ অনেক কমে যেতে পারে

রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতেও যেমন কুমড়ার বিকল্প নেই, তেমনই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও এই আনাজটি খুবই কাজে লাগে। কিন্তু বেশি মাত্রায় খেলে রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে যেতে পারে।

হজমের সমস্যা

অন্য বহু আনাজের তুলনায় কুমড়া হজম করাটা একটু কঠিন। এর কিছু উপাদান পেটের গণ্ডগোলের কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে। অতিরিক্ত কুমড়া খেলে পেট খারাপের সমস্যা হয়ে থাকে।

ওজন বৃদ্ধি

রোজ ১০০ গ্রাম বা তার কম কুমড়া খেলে সমস্যা হওয়ার কথায় নয়। কিন্তু তার চেয়ে বেশি পরিমাণে কুমড়া খেলে ওজন বাড়তে পারে। কারণ এই আনাজটিতে ক্যালোরির পরিমাণ অন্য আনাজের তুলনায় কিছুটা বেশি।

শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে

যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে, তাারা কুমড়া খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে। ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভোগা রোগীদের তাই কুমড়া খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু এটি বেশি মাত্রায় খেলে রক্তে শর্করার হার কমে যেতে পারে। তাতে শরীরে অন্য সমস্যা দেখা দেয়।

মিষ্টি কুমড়ার বিচির উপকারিতা

সবজি হিসেবে মিষ্টি কুমড়া খেলেও এর বীজ বা বিচি অনেকেই খান না। কিন্তু আপনি কি জানেন, কুমড়ার বিচি না খেলেই বড়সড় ভুল করবেন আপনি। সহজলভ্য এ সবজি যতটা পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ঠিক ততটাই উপকারী এ সবজির বীজ। পুষ্টিবিদরা বলছেন, ‘পাওয়ার হাউস’ মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে আছে ভিটামিন বি, ম্যাগনেশিয়াম, প্রোটিন ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব খাদ্য উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম কুমড়ার বিচিতে প্রায় ৫৬০ ক্যালোরি পাওয়া যায়। নিয়মিত কুমড়ার বিচি খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ওজন কমায়, চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ মিষ্টি কুমড়ার বীজে থাকা ম্যাগনেশিয়াম রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা এটি গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ভালো ঘুম হয়ঃ কুমড়োর বীজের ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো এসিড ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
হার্ট ভালো রাখেঃ এই বীজের ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে।

নিয়মিত কুমড়ার বিচি খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ওজন কমায়, চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। যদি ঘুমের সমস্যায় দীর্ঘদিন ভোগেন তবে কুমড়ার বিচিকে কাজে লাগাতে পারেন। কারণ কুমড়ার বিচিতে আছে সেরোটোনিন। এ উপাদান ঘুম এনে দিতে পারে নিমিষেই।

মিষ্টি কুমড়া খেলে কি ওজন বাড়ে

মিষ্টিকুমড়ায় কম ক্যালরি রয়েছে। ১০০ গ্রাম মিষ্টিকুমড়ায় ক্যালরির পরিমাণ ২৬, এর মধ্যে সম্পৃক্ত চর্বি বা কোলেস্টেরল শূন্য। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য এটি উপকারী। মিষ্টিকুমড়ায় আছে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ। বেশি খেলে মানবদেহের ওজন অধিক বাড়িয়ে দেয়। তাই মিষ্টি কুমড়া খেতে হলে অবশ্যই নিয়ম করে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।

মিষ্টি কুমড়ার বিচির অপকারিতা

মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে প্রচুর উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই বলে কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ভালো নয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ৩০ গ্রাম বা দুই টেবিল চামচ পরিমাণ মতো মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেতে পারে। তবে বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়া একদমই উচিত নয়।
  • মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার পর যারা এলার্জি অনুভব করেন বা এলার্জি হয় তাদের এই বীজ খাওয়া উচিত নয়।
  • এছাড়াও প্রেগনেন্ট মহিলা এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়া উচিত নয়।
  • হাইপার টেনশনে আক্রান্ত মানুষদের মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়া একদমই উচিত নয়।
  • এছাড়াও আপনি যদি কম ক্যালরিযুক্ত ডায়েটে থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনার মিষ্টি কুমড়ার বীজের ব্যবহার সীমিত পরিমানে করা উচিত। কারণ মিষ্টি কুমড়ার বীজে ক্যালোর পরিমাণ বেশি থাকে।
  • মিষ্টি কুমড়ার বীজ অতিরিক্ত খেলে পেটের ব্যথা, পেট ফাঁপা, ফোলা ভাব এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • মিষ্টি কুমড়ার বীজ অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে ওজন কমার পরিবর্তে বেড়ে যেতে পারে।
  • এছাড়াও যাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া রোগ রয়েছে অর্থাৎ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম তাদের ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে খেতে হবে।

মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম

বিভিন্ন পুষ্টিবিদদের মতে, মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো সকালের খাবার বা নাস্তার সাথে লবণ ও তেল দিয়ে ভেজে খেতে পারেন। আপনি চাইলে বিকেলেও স্ন্যাকস হিসাবে খেতে পারেন। মিষ্টি কুমড়ার বীজ আপনি রান্না করেও খেতে পারেন। এছাড়াও অল্প সেকে বা আপনি চাইলে কাঁচা ও খেতে পারেন।

লেখকের শেষকথাঃ

প্রিয় পাঠক আশা করছি উপরের লেখাগুলো মনোযোাগ দিয়ে পড়েছেন এবং জেনে গেছেন মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার উপকারিতা-অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। কমদামি সবজি বলে কোন সময় মিষ্টি কুমড়াকে অবহেলা করবেন না। বাজারে এই সবজিটি খুব সহজেই পাওয়া যায়, মাঝে মধ্যে কিনে খাবেন।

আর হ্যাঁ মিষ্টি কুমড়া কাটার সময় এর বীজগুলো ভূল করেও ফেলে দিবেন না। কারণ মিষ্টি কুমড়ার বীজের উপকারিতার কথা তো অবশ্যয় জেনে গেছেন নিশ্চয়। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪