বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিভাবে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রুপ নিলো জেনে নিন
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। চারিদিকে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের গুলি। কিন্তু কেন এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠে আপনারা কি জানেন ?
হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে (বৈষম্যবিরোধী) কোট সংস্কার আন্দোলন কিভাবে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রুপ নিলো সে সম্পর্কে কিছু তথ্য বিভিন্ন মিডিয়া থেকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
ভূমিকাঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিভাবে রক্তক্ষয়ী সংঘাত তৈরি হলো।
সূচীপত্রঃ
২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন
২০২৪ এর কোটা সংস্কার আন্দোলন
১০ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
১১ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
১২ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
১৩ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
১৪ জুলাই প্রধান মন্ত্রীর বক্তব্য
১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য
১৬ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
১৭ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
১৮ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
১৯ জুলাই ২০২৪ সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা
২০ জুলাই সারা দেশে কারফিউ জারি
২১ জুলাই এর ঘটনাবলী
২২ জুলাই এর ঘটনাবলী
২৩ জুলাই এর ঘটনাবলী
২৪ জুলাই এর ঘটনাবলী
২৫ জুলাই এর ঘটনাবলী
২৬ জুলাই এর ঘটনাবলী
২৭ জুলাই এর ঘটনাবলী
২৮ জুলাই এর ঘটনাবলী
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার
লেখকের মন্তব্য
২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন
৮ মার্চ ২০১৮, বাংলাদেশ হাইকোর্ট কোটা পদ্ধতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি আবেদন খারিজ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য কোটা রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে অতিরিক্ত কোটার জন্য ২০১৮ সালে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা কোটার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিলেন।
আন্দোলনকারীরা কোটা বাতিলের পরিবর্তে, কোটা কমিয়ে সংস্কারের দাবি জানাচ্ছিলেন। এই বিক্ষোভের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস থেকে সব কোটা অপসারণের নির্বাহী আদেশ জারি করেন। ২০২০ সালের ১ জুলাই কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। কোটা পদ্ধতি বাতিলের সরকারি আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে একজন মুক্তিযোদ্ধার বংশধর এবং অন্য ছয়জনের কোটা বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করে।
ফলাফল হিসাবে ৫ জুন ২০২৪-এ বাংলাদেশ হাইকোর্ট একটি রায় জারি করে যা সরকারী কোটা বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে এবং এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। এইভাবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগে কোটা পুনরুদ্ধার হয় এবং ৫৬ শতাংশ কোটা ফিরে আসে। সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে।
বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ২০২৪ সালের বাংলাদেশ কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করেছে। আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থার আদেশ জারি করে যা আপিল বিভাগ সরকারী আপিলের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে।
সরকার পন্থী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় কয়েক শত আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে এবং নিহত হয়েছেন অনেকে। বিক্ষোভকারীরা নিজেদেরকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকে।
২০২৪ এর কোটা সংস্কার আন্দোলন
৫ জুন হাইকোর্ট ২০১৮ সালে সরকারের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। আদালতের রায়ের প্রতিবাদে ও কোটা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। ১০ জুন আন্দোলনকারীরা দাবি মেনে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়।
ঈদুল আযহার কারণে আন্দোলনে বিরতি ঘোষণা করে। ৩০ জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে। ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে ও তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে।
২ থেকে ৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে। ৭ জুলাই শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’-এর ডাক দেয় যার আওতায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে। ৮, ৯ জুলাই একই রকম কর্মসূচি পালন করা হয়।
১০ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
এই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে শাহবাগে গিয়ে স্থানটি অবরোধ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান করে। দুপুরে জানা যায় কোটাব্যবস্থা বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে চার সপ্তাহ স্থিতাবস্থা দেওয়া হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি শিক্ষার্থীদের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবরোধের কারণে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা স্থিমিত হয়ে আসে। দূরপাল্লার বাসগুলো আন্দোলনের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে যাত্রিদের পড়তে অনেক ভোগান্তিতে। ঠিকমত জানবাহন না পেয়ে পায়ে হেটে অনেককে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
১১ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
বিকেল ৩টা থেকে শাহবাগ অবরোধের কথা থাকলেও বৃষ্টির ফলে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধাকে অতিক্রম করে ৪:৩০ টায় অবরোধ শুরু করে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধার ফলে পিছিয়ে যায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে শাহবাগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়।
শাহবাগ ছাড়া ঢাকার অন্যান্য স্থানগুলো আন্দোলনের প্রভাবমুক্ত ছিল। রাত ৯টায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শেষ করে তাদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ১২ জুলাইয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয়। এ দিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ হামলা করে। এভাবে বিভিন্ন শহরে পুলিশি নির্যাতনের স্বীকার হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
১২ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
এই দিন বিকেল ৫টায় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে শাহবাগে জড়ো হয়ে অবরোধ শুরা করে। একই দিনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে থাকলে ছাত্রলীগের একদল কর্মী আক্রমণ করে বসে। এ সময় সে অবস্থায় ভিডিও করায় কলেজের এক শিক্ষার্থীকে তুলে হলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।
বিকেল ৫টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজারসংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেললাইন অবরোধ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এতে সারা দেশের সঙ্গে রাজশাহীর রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রেল যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার কারণে যাত্রীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।
১৩ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। ঢাকায় ঢাবির শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন, তারা অভিযোগ করেন ‘মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধার চেষ্টা করা হচ্ছে’।
বগুড়া শহরের পৌর এডওয়ার্ড পার্কের শহীদ টিটু মিলনায়তনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন।
“ কোটা সরকার পুনর্বহাল করেনি। সরকার বরং শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করেছিল। বাতিলের পর কোটাহীনভাবে সরকারি ও অন্যান্য চাকরিতে নিয়োগ হচ্ছে। হাইকোর্ট রায় দিয়েছে কোটা পুনর্বহালের জন্য। সুপ্রিম কোর্ট সেটি স্থগিত করেছে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন।
আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে বা বিচারাধীন বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তাহলে আদালত অবমাননা হবে। এসব বুঝেও যারা জনভোগান্তি ঘটাচ্ছেন, সেই ভোগান্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর এবং আশা করব শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।
১৪ জুলাই প্রধান মন্ত্রীর বক্তব্য
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। শুরুতে আন্দোলন সভা-সমাবেশের মধ্যে স্থির থাকলেও ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের “রাজাকারের নাতি-পুতি” হিসেবে অভিহিত করেন, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যাঙ্গ করে “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার” এবং “চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার” স্লোগান দেয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এলাকায় বিক্ষোভ করে। রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও তালা ভেঙে বেরিয়ে আসেন। সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ৪-জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিতে অপারেটরদের নির্দেশনা দেয়। চট্টগ্রামে রাত সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা
১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য
১৪ জুলাই এর পরের দিন প্রধান মন্ত্রীর সুরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা, মন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নষ্ট করার অভিযোগ আনেন। একই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের উপর রড,
লাঠি, হকি স্টিক, রামদা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। একই সাথে পুলিশও লাঠি, রাবার বুলেট দিয়ে হামলা করে। প্রতিবাদে আন্দোলনকারীও তাদের দিকে ইটের টুকরা ছুড়ে ও উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এইসব ঘটনায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী আহত হওয়ার পাশাপাশি ২০৯ জনের অধিক নিহত হন।
১৬ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের হামলার ভয়ে উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে আশ্রয় নেন। রাত সোয়া ২টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা সেখানে ঢুকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মারধর করে। এর আগে রাত ১২টার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়।
এতে বহিরাগতসহ ছাত্রলীগের দেড় শতাধিক নেতা–কর্মী অংশ নেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্লকের শিক্ষার্থীরা রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে থালা বাজিয়ে বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে আন্দোলন করেন। এরপর রাত ১টা ১০ মিনিট থেকে ১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা
মাদার বখশ হলের প্রথম ব্লকের তৃতীয় তলায় অন্তত ছয়টি কক্ষে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তল্লাশি চালান। তাদের বেশ কয়েকজনের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল বলে জানা যায়। রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা এই সড়ক অবরোধ করেন।
এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ভাটারা এলাকার প্রগতি সরনী ও কুড়িল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
১৭ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
এদিন গ্রামীণফোন কোম্পানিসহ সকল মোবাইল কোম্পানীকে সরকার সকল ধরণের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণহানির ঘটনার পর আন্দোলনকারী ছাত্রীদের তোপের মুখে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের নেত্রীরা।
হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনসহ ১০ নেত্রীকে রাত ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হল থেকে নিয়ে আসে প্রোক্টরিয়াল বডি। পরে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা একটি বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করতে প্রাধ্যক্ষ নিলুফার পারভিনকে বাধ্য করেন। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের অভ্যন্তরে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, অমর একুশে হল, রোকেয়া হল, মহসীন হল, কুয়েত মৈত্রী হল, জহুরুল হক হল, শামসুননাহার হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, সুফিয়া কামাল হলসহ বিভিন্ন হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
সকাল ১০টার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের নিয়ন্ত্রণ শিক্ষার্থীদের হাতে চলে আসে, হল ছাড়লো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সকল হলের প্রোক্টরদের থেকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের নোটিশ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টায় শনির আখড়ার দনিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ যাত্রাবাড়ীর স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন।
১৮ জুলাই ঘটে যাওয়া কিছু তথ্য
১৭ জুলাই রাতে আন্দোলনকারীরা ১৮ জুলাইয়ের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা করেন।
সকালে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকাসহ সারাদেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
সকাল ১১টার দিকে মিরপুর ১০-এ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিসহ মিরপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী এবং পুলিশ। আন্দোলনকারীদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়।
এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর ভর করে স্বাধীনতা বিরোধীদের নৈরাজ্য সৃষ্টির’ প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, যা আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় পুরোপুরি পণ্ড হয়ে যায়। সেই দিন আওয়ামী লীগ দেখেছিল ছাত্রদের শক্তি ও আত্নবিশ্বাস।
১৯ জুলাই থেকে সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রোধ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ পুরো ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ঢাকার সাথে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রেল কর্মকর্তা তাদের বলেন, ট্রেনে চলাচল করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা যাতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করতে না পারে ও ছোট-বড় জমায়েত না করতে পারে তার জন্যই এমনটা করা হয়েছে। ১৮ জুলাইয়ের ধারাবাহিকতায় ১৯ জুলাইতেও সারাদেশে সকল ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়।
২০ জুলাই সারা দেশে কারফিউ জারি
তৃতীয় দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল। সেনাবাহিনীকে দেশের বিভিন্ন অংশে কারফিউর অংশ হিসেবে টহল দিতে দেখা যায়। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল রেখে পুনরায় কারফিউ শুরু হয়। রবি ও সোমবার বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
১৯ জুলাই শুক্রবার মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন প্রতিনিধির সাথে সরকারের তিনজন মন্ত্রীর যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সেই বৈঠক ও বৈঠকে উত্থাপিত দাবি নিয়ে নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল অভিযোগ করে বলেন,
“তারা [গতকাল রাতে মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করা তিন প্রতিনিধি] বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটা পোর্শনও [অংশ] না। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথেই নাই। তারা যদি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে প্রচার করেন, তবে তারা মিথ্যাচার করছেন।” অন্য আরেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন,
“কয়েকজন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ককে দিয়ে জোরপূর্বক গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ প্রচারের চেষ্টা করা হচ্ছে। কারফিউর মধ্যেই যাত্রাবাড়ী, রামপুরা-বনশ্রী, বাড্ডা, মিরপুর, আজিমপুর, মানিকনগরসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এইসব সংঘর্ষে দুইজন পুলিশসহ অন্তত ১০ জন নিহত হন, অন্তত ৯১ জন আহত হন।
২১ জুলাই এর ঘটনাবলী
চতুর্থ দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল ও সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল। ভোরে ঢাকার পূর্বাচল এলাকায় আন্দোলের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে পাওয়া যায় ও পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন তাকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “ডিবি পরিচয়ে রাষ্ট্রীয় একটি বাহিনী আমাকে তুলে নিয়ে যায়।
১৬ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের প্রেক্ষিতে সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি শুরু হয়। সব পক্ষের শুনানি শেষে দুপুর ১টার দিকে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করা হয় ও সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ ও কোটায় ৭ শতাংশ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
২২ জুলাই এর ঘটনাবলী
পঞ্চম দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল ও তৃতীয় দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল। এক নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটি আরও একদিন বাড়ানো হয়। দুপুরের দিকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কিছু ব্যবসায়ী বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও সহিংসতার জন্য বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, শিবিরকে দায়ী করেন ও ‘আরও শক্ত অ্যাকশন’ নেওয়ার কথা জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম চার দফা দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেন, তিনি জানান “আমাদের চার দফার মধ্যে রয়েছে - ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ইন্টারনেট চালু, ক্যাম্পাসগুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাস চালু, সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা প্রদান এবং কারফিউ প্রত্যাহার।
২৩ জুলাই এর ঘটনাবলী
ষষ্ঠ দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল। তবে রাতের দিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমিত আকারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। এছাড়া চতুর্থ দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল। কিছু কিছু জেলায় কারফিউ শিথিল করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে কারফিউর মেয়াদ আরও দুইদিন বাড়ানোর কথা জানায়।
২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পর ২৩ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যাতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য পাঁচ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য এক শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য এক শতাংশ কোটা নির্ধারণের কথা বলা হয়। এছাড়া এই প্রজ্ঞাপনে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবরে জারি করা প্রজ্ঞাপন রহিত করার কথা জানানো হয়।
২৪ জুলাই এর ঘটনাবলী
সীমিত পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকে। পঞ্চম দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল, তবে তা শিথিল পর্যায়ে ছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যু হয় ও নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯৭ হয়। শিক্ষার্থীদের মতে নিহতের সংখ্যা আরও অনেকগুণ বেশি যা ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় জানা যায় নি।
২৪ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় পুলিশ ১,৭৫৮ জনকে গ্রেফতার করে। বিক্ষোভের সময় সেনা মোতায়েন পর জাতিসংঘের লোগোসংবলিত যান ব্যবহৃত হলে জাতিসংঘ এই নিয়ে উদ্বেগ জানায়। সেই সাঁজোয়া যানে UN লিখা ছিল। আসলে এই সাঁজোয়া যান গুলোতো কেবন যুদ্ধে ব্যবহার হয়। তবে কি বাংদেশে যুদ্ধ বেধেগিয়েছিল।
২৫ জুলাই এর ঘটনাবলী
২৫ জুলাই বিকেল পর্যন্ত ব্রডব্যান্ডে ধীরগতির ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে। এখনও সরকার ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রেখেছে। পাশাপাশি মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট এখনও চালু করা হয় নি। এদিন আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আটটি বার্তা দেওয়া হয়।
এর মধ্যে রয়েছে হতাহতদের তালিকা তৈরি, হত্যা ও হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দেওয়ার চাপ তৈরি করা। এছাড়াও আপিল বিভাগের রায়ের পর কোটা সংস্কার করে সরকারের দেওয়া প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কোটা সংস্কারের
যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটিকে তাঁরা চূড়ান্ত সমাধান মনে করছেন না। তাঁরা মনে করেন, যথাযথ সংলাপের পরিবেশ তৈরি করে নীতিনির্ধারণী জায়গায় সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। সেই সাথে নির্বিচারে ছাত্র হত্যার সঠিক বিচার করে দোষিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
২৬ জুলাই এর ঘটনাবলী
শুক্রবার (২৬ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদাপোশাকের এক দল ব্যক্তি। তাঁরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়েছেন বলে সেখানে উপস্থিত এক সমন্বয়কের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রধান ফটককে ‘শহীদ রুদ্র তোরণ’ নামকরণ করে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনায় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি গুলি ব্যবহারের ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এক বিবৃতির মাধ্যমে তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করে।
২৭ জুলাই এর ঘটনাবলী
তিন সমন্বয়ককে ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষটি স্বীকার করে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে তিন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। সহিংসতার বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হবে।
নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকলে তাঁদের পরিবারের কাছে না দিয়ে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলো কেন, সেই প্রশ্ন তুলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি দল। তিন শিক্ষার্থীর খোঁজখবর নিতে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য যান এই শিক্ষকেরা। যদিও শিক্ষকদের সাথে দেখা করতে ডিবিপ্রধান অস্বীকৃতি জানান।
রাত ৯টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের আরও দুই সমন্বয়ককে হেফাজতে নেয় গোয়েন্দা শাখা। তারা হলেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। পরে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ২৮ তারিখের (রোববারের) মধ্যে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ, আসিফ মাহমুদসহ আটক সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তি,
মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থী গণহত্যার সাথে জড়িত মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সকল দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই সাথে রোববার সারাদেশের দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।
পুলিশ হেফাজতে থাকা ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের উপর পুলিশি নির্যাতনের কথা জানান নুরের স্ত্রী। ২৭ তারিখেও ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালু করে নি সরকার। পাশাপাশি, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও ধীর গতিতে চলে।
২৮ জুলাই এর ঘটনাবলী
২৮ জুলাই সারা দেশে (সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সিথিল) কারফিউ অব্যাহত থাকে। এই দিনও সারা দেশে গ্রেফতার করা হয় অনেক জনকে। আইসিটি মন্ত্র, বিটিআরসি এবং সকল অপারেটরদের নিয়ে মিটিং হয়। মিটিং এ সিদ্ধান্ত হয় ২৮ জুলাই বিকাল ৩ ঘটিকা থেকে মোবাইল ইন্টারনেট চালু করা হবে।
সকল অপারেটর সকল গ্রাহককে সর্ব নিম্ন ৫ জিবি ইন্টারনেট ফ্রি দেওয়ার কথা। ২৬ ও ২৭ জুলাই সমন্বয়কদের নিরাপত্তার অজুহাতে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পর ২৮ জুলাই তাদের সাথে ডিবি প্রধানের ডিনারের দৃশ্য মিডিয়াতে প্রচার হয়। তবে মনে হচ্ছিল তাদের মনে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছেল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার।
ডিবি হেফাজতে থাকাকালীন ৬ সমন্বয়করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কর্মসূচী প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। রবিবার (২৮ জুলাই) রাতে ডিবি অফিসে আলোচনা শেষে এক লিখিত ভিডিও বার্তায় এই ঘোষনা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তদন্ত করে বিচারের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
এ সময় সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে আহ্বান জানান সমন্বয়করা। নাহিদ ইসলাম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকে অপ্রত্যাশিত ভাবে আহত এবং নিহত হয়েছেন। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ নানা সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসকল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। তবে তারা এই ঘোষনাটি বাধ্য হয়ে দিচ্ছেন, নাকি স্বইচ্ছাই নিচ্ছেন এটা দেখার বিষয়। তারা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করতেই পারেন, যদি তাদের দাবিগুলো পূরণ হয়ে থাকে। তবে আগের মতো তাদের সহপাঠিদের সাথে নিয়ে এক জায়গায় জমায়েত হয়ে এই ঘোষনাটি হলে ভালো হতো।
আন্দোলন চলবে, জিম্মি করে নির্যাতনের মুখে স্টেটমেন্ট নেওয়া হয়েছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদের ফেসবুক আইডি থেকে জানা যায়, ছয় সমন্বয়ককে জিম্মি করে নির্যাতনের মুখে আন্দোলন বন্ধের স্টেটমেন্ট নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ। একই সঙ্গে আন্দোলন চলবে বলে ঘোষনা দিয়েছেন তারা।
রোববার রাত ১১টার দিকে টেলিগ্রাম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তারা এ ঘোষনা দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের টেলিগ্রামে লেখেন, ‘সমন্বয়কদের জিম্মি করে নির্যাতনের মুখে যে স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হইছে, সেটা কখনোই জাতির নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
আটককৃত সমন্বয়করা ভয়ভীতির মুখে গোয়েন্দা সংস্থার লিখে দেওয়া যে বক্তব্য কেবল রিডিং পড়ে গেছে, আমরা সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং একইসঙ্গে জোরপূর্বক বক্তব্য আদায় করার মতো সরকারের এমন জঘন্য কাজের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি আর বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই- পূর্বে উত্থাপিত ছাত্র হত্যার দায়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। দেশবাসীর প্রতি আহবান, আপনারা কোনো প্রকার বিভ্রান্ত হবেন না। যে কোটার জন্য সরকার এতোগুলা মানুষকে হত্যা করেছে, সেই হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
সিনিয়ররা আগেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল, সমন্বয়কদের মাঝে এক গ্রুপকে তুলে নিয়ে গেলে বাকিরা নেতৃত্ব দেবে। কাউকে যদি আটক করে জোরপূর্বক কোনো বিবৃতি আদায় করা হয় তবে আমরা সেটা না মেনে যারা মাঠে থাকব, তারা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশিদ ফেসবুকে লিখেন, “গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার আগে নাহিদ ভাই, আসিফ ভাই এবং বাকের ভাই তিনজনই স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ‘আমরা যদি না-ও থাকি আন্দোলন চালাইয়া নিবা, আন্দোলন যাতে থেমে না থাকে। আমাদের ওপর অনেক ঝড়-ঝাপটা যাবে, যারা বাইরে থাকবে তারাই অন-কমান্ডে থাকবে।’
তাই সিনিয়রদের শেষ কথাগুলোকে বুকে ধারণ করেই আমরা আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জোরপূর্বক আদায় করা বিবৃতি বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে।” আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার মধ্যে আরও রয়েছেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ, মো. মাহিন সরকার,
সহ-সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ, খান তালাত মাহমুদ রাফি (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)। আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিবৃতি আদায় ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। এদিকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা শুনে ঢাকার আকাশে র্যাবের হেলিকপ্টারের টহল অনেকটা বেড়েগেছে।
অন্য দিকে ছয় সমন্বয়কদের স্বজনরা তাদের সাথে ডিবি কার্যালয়ে দেখা করতে জান। দেখা সাক্ষাত শেষে তাদের স্বজনরা সেচ্ছায় তার তাদের আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। কোন নির্যাতনের মুখে, বা চাপের মুখে নয় দাবি তাদের স্বজনদের। তবে তাদের কাউরি মুখে বিজয়ের হাঁসি ছিলনা। কি নাটক চলছে আল্লাহই ভালো জানেন।
লেখকের মন্তব্যঃ
২৪ জুলাই এর তথ্য অনুযায়ী ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সংগঠন, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, ও সেনাবাহিনীর সম্মিলিত হামলায় সারা দেশে ২০১ জনের অধিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন ৬ হাজারেরও অধিক। তবে এখনো অনেকে নিখোজ রয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সরকার ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন সাংবাদিক নেতারা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এ কথা বলেন। তবে আমি মনে করি সরকারের দূরদর্শিতার অভাবে এবং কোমলমতি ছাত্রদের প্রতিপক্ষ ভাবার কারণে দেশের আজ এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশের নির্বিচার গ্রেফতার এখন সাধারণ মানুষের মনে ভিতি সৃষ্টি করেছে। এদিকে ছাত্রদের আরেক অংশ (সমন্বয়করা) দাবি করেছেন যে, ছয় সমন্বয়কদের জিম্মি করে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করানো হয়েছে, যা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় বলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। নিজেকে নিরাপদে রাখুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url