কোটা সংস্কার - বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার এবং আট দফা দাবি কী কী জানুন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি সমূহ কী ছিল ? কেনই বা সারা দেশ অচল হয়ে গেল ? এতো খয়ক্ষতির দায়ভার কে নেবে ? হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছি।
এখানে আরো জানতে পারবেন- হাই কোর্টের রায়ের পরেও কেন ছাত্ররা সরকারকে দুই দিনের আর্টিমেটাম দিয়েছিল। কি ছিল সেই আল্টিমেটামে জেনে নিন নিচের আর্টিকেলটি পড়ে।
ভূমিকাঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার দফা ও আট দফা।
সূচীপত্রঃ
চার দফা দাবি গুলো কী কী
আট দফা দাবি সমূহ
ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স গঠন
লিগ্যাল এইড ফর স্টুডেন্টস
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ
লেখকের মন্তব্যঃ
চার দফা দাবি গুলো কী কী
চার দফা ‘জরুরি দাবি’ পূরণে সরকারকে আরও দুই দিন আলটিমেটাম দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। চার দফা পূরণ হলেই তাদের মূল আট দফা দাবি নিয়ে আলোচনার পথ তৈরি হবে বলে মনে করছেন তারা। কিন্তু সরকার চার দফা না মানলে আট দফা দাবি নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।
গত ২৩ জুলাই-২৪ মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের পাঁচজন সমন্বয়ক ও একজন সহসমন্বয়ক।
সংবাদ সম্মেলনে চার দফা আবার তুলে ধরেন সমন্বয়কেরা। প্রথম দাবি হচ্ছে ইন্টারনেট সচল করা। দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে কারফিউ প্রত্যাহার করা। তৃতীয় দাবিটি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরিয়ে নিয়ে সরকার ও প্রশাসনের সমন্বয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে আবাসিক হল খুলে দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করা। চতুর্থ দাবি হচ্ছে আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এসব দাবি মানতে গত রোববার রাতে সমন্বয়কেরা সরকারকে দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। এর আগে গত শুক্রবার ১৯ জুলাই-২৪ রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সরকারের তিনজন (আইন মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী ও তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী) মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তারা আট দফা দাবি জানিয়েছিলেন।
আট দফা দাবি সমূহ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে (১) নিহতদের ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে গ্রেফতার ও বিচার করা। (২) শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা (৩) মাসিক ভাতা ও তাদের পিতা-মাতার মতামতের ভিত্তিতে একজন সদস্যকে চাকরির নিশ্চয়তা প্রদান করা।
(৪) সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ দেয়া (৫) সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করা (৬) ছাত্র সংসদ চালু করা (৭) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার করা (৮) কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষার্থীকে সব ধরনের রাজনৈতিক, আইনি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মাধ্যমে একাডেমিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা দেওয়া।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের গতকালের সংবাদ সম্মেলনে অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে আট দফা দাবি জানিয়ে এসেছিলাম। এরপর দুই দিন আগে জরুরি চারটি দাবি জানিয়ে এসেছি।
এই চারটি দাবি পূরণ না করলে বাকি আটটি দাবি নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমরা দুই দিনের আলটিমেটাম দিলেও এখনো এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাইনি। আমরা আবার দুই দিনের একটি আলটিমেটাম দিচ্ছি ওই চারটি জরুরি দাবি মানার জন্য।
আমরা চাই, বৃহস্পতিবারের (২৫ জুলাই-২০২৪) মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা হোক, যাতে শুক্রবার (২৬ জুলাই ২০২৪) সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ফিরে যেতে পারেন। আমরা কবে আন্দোলনের শেষ ঘোষণা করব, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে সরকারের ওপর।
সংবাদ সম্মেলনে লুঙ্গি পরে এসেছিলেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, তাকে তুলে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্যাতন করেছে। এই সমস্ত নির্যাতনের বিচার চান তারা।
ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স গঠন
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ‘ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একই সঙ্গে সারা দেশে প্রতিটি জেলায় মেডিকেল শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বয়কদের স্ব-উদ্যোগে 'ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স' গঠনের আহ্বান জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকায় 'ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স' এর সমন্বয় করবেন- মো. মাহিন সরকার (০১৭৩১৮১৪৪৪৯), রিফাত রশিদ (০১৮৬৩৪০৩৬৬২) এবং সারা দেশে ‘ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স'এর সমন্বয় করবেন- আব্দুল হান্নান মাসুদ (০১৮৬৮৬১২৪৭৮)।
লিগ্যাল এইড ফর স্টুডেন্টস
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সারা দেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মামলা হয়েছে এবং অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আইনি সহায়তা দেয়ার উদ্দেশ্যে ‘লিগ্যাল এইড ফর স্টুডেন্টস' গঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। লিগ্যাল এইড ফর স্টুডেন্টস' এর সমন্বয় করবেন- আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন।
একই সঙ্গে সারা দেশে প্রতিটি জেলায় আইনজীবী, আইনে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও সমন্বয়কদের স্ব-উদ্যোগে 'লিগ্যাল এইড ফর স্টুডেন্টস' গঠনের আহ্বান জানানো হয়।
২৬ ও ২৭ জুলাই সারাদেশে আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসা নিশ্চিতে 'ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স' ও আইনি সহায়তা নিশ্চিতে 'লিগ্যাল এইড ফর স্টুডেন্টস' কে জোরালো কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও শুক্রবার সারা দেশে মসজিদগুলোতে দোয়া ও মোনাজাত এবং মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা করার আহ্বান জানানো হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে বলে জানিয়েছে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চ’ নামে একটি ছাত্র সংগঠন। এ ছাড়া যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে, তাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এলিয়ান কাফী প্রতীকসহ ৯১ শিক্ষার্থীর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৩ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার এবং আমাদের অধিকার আদায়ের দাবিতে সারা দেশে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। এই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছেন। তাদের সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।
এতে বলা হয়, আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনের দাবির মুখে ২৩ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আমাদের আংশিক বিজয় অর্জন হয়েছে। এই কোটা সংস্কারের সঙ্গে আমাদের আরও কিছু যৌক্তিক বক্তব্য রয়েছে। যেমনঃ-
► ছাত্রদের মূল আন্দোলন কোটা সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। এতে আন্দোলনকারীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
► সাধারণ ছাত্ররা জ্বালাওপোড়াও, সহিংসতা এবং ধ্বংসাত্বক কাজের সঙ্গে জড়িত নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এটা সমর্থন করে না। যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে, তাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।
► এই আন্দোলনকালীন সময়ে অনেক নিরীহ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, নিহত ও আহত হয়েছেন। যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করেছেন, তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি এবং আহতদের সুচিকিৎসা এবং নিহত ছাত্রদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
► বিগত ২৩ জুলাই ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধান এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
► অনতিবিলম্বে সারা দেশে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে হবে।
► সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা অহিংস আন্দোলন করেছে তারা যেন হয়রানির শিকার না হন এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
► এ ব্যাপারে আমরা সরকারের পরবর্তী ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।
লেখকের শেষকথাঃ
৫ জুন, ২০২৪, সোমবার সরকারি দপ্তরে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্পেোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় ৬ জুন, ২০২৪, মঙ্গলবার থেকে। যার কিছুটা পরিসমাপ্তি ঘঠে ২৩ জুলাই, রায়ের মধ্য দিয়ে।
তবে এতো সংঘাত, এতো সহিংসতা, এতো আহত, নিহত সব কিছুই কমানো যেত সরকার যদি তাদের কথাগুলো আগে থেকে শুনতেন। শিক্ষার্থীদের এই নায্য দাবির সাথে একমত দেশের সর্বস্তরের মানুষের। কিছুটা ভূলের কারণে সংঘাতটি বেড়ে যায়। যার ফলশ্রতিতে এতোগুলো প্রাণহানি এবং খয়ক্ষতি।
পরে অবশ্য সরকার দলীয় মন্ত্রীরা বলছিলেন শিক্ষার্থীদের এই দাবিই তো আমাদের দাবি। এই কথাটি আরো আগে বললে অনেক ভালো হতো। যাই হোক এখন আপাতত সব সমস্যা মিটেগেছে। আমাদের সবারই দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশের সম্পদের প্রতি ভালোবাসা থাকা দরকার। ভালো থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url