রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে জানুন এবং পরিবারসহ আশেপাশের লোকদের সচেতন করুন

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া / উলুবোড়া নামক সাপের উৎপাত এরই মধ্যে শুরু হয়েগেছে বাংলাদেশের অনেক জেলায়। আমরা কতটুকু জানি এই সাপ সম্পর্কে ?
রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে জানুন এবং পরিবারসহ আশেপাশের লোকদের সচেতন করুন

হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনার সামনে হাজির হয়েছি, কয়েক দশক আগে বিলুপ্ত হওয়া রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপটি আমাদের জন্য কতটা বিপদজনক এবং এই সাপ বাংলাদেশে এলো কোথা থেকে সে সম্পর্কে।

সূচীপত্রঃ

রাসেলস ভাইপার সাপ কি
রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া কতটা বিষধর
রাসেলস ভাইপার কামড়ালে কি হয়
বাংলাদেশের বিষধর সাপের তালিকা
রাসেলস ভাইপার সাপ কামড়ালে কি করা উচিত
সাপে কামড়ালে কি করা উচিত নয়
বিশ্বে বিষধর সাপের সংখ্যা কত ?
বাংলাদেশের কতটি জেলায় বিস্তার ঘটেছে এই সাপের
লেখকের মন্তব্যঃ

রাসেল ভাইপার সাপ কি

বাংলাদেশ থেকে প্রায় দুই দশক আগে বিলুপ্ত ঘোষণা করা রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও সাপটি নিয়ে বেশ আলোচনা হতে দেখা যাচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই দাবি করছেন যে, রাসেলস ভাইপার বিশ্বের দ্বিতীয় ভয়ানক বিষধর সাপ, যার কামড়ে অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু এটি আসলেই কি বিশ্বের দ্বিতীয় ভয়ানক বিষধর সাপ ? শীর্ষ বিষধর সাপের তালিকায় আর কোন কোন সাপ রয়েছে ? সেগুলোর সবক'টি কি বাংলাদেশে দেখা যায়?

চন্দ্রবোড়ার ইংরেজি নাম রাসেলস ভাইপার। আজকাল অনেকেই রাসেল ভাইপার বলছে। আবার কেউ বলছেন রাসেল ভাইরাল। এটা ভুল নাম। স্যার প্যাট্রিক রাসেল আমাদের এই উপমহাদেশের সাপের শ্রেণিবিন্যাসের বা ক্যাটালগিংয়ের কাজ শুরু করেন সতেরো শতকের শেষের দিকে। 

বলা হয়, তিনি প্রথম কাগজে–কলমে এ অঞ্চলের অনেক সাপের পরিচিতি এবং বিশ্লেষণ করেছিলেন। তার মধ্যে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়াও ছিল। তাই আঠারো শতকে সাপের চূড়ান্ত শ্রেণিবিন্যাসের সময় রাসেল সাহেবের সতীর্থ বিজ্ঞানীরা তাঁর নাম জুড়ে দেয় এই সাপটির সঙ্গে। সেই থেকে চন্দ্রবোড়া হয়ে যায় রাসেলস ভাইপার।

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া কতটা বিষধর

বলা হচ্ছে, এটা পৃথিবীর পঞ্চম বিষধর সাপ। কথাটা সঠিক নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক রেটিংয়ে এটা মারাত্মক প্রথম ৩০ সাপের মধ্যেও নেই। বরং এটির অবস্থান আমাদের দেশের গোখরা সাপের পরে। গোখরা সাপ কামড়ালে চিকিৎসা না নিলে গড়ে ৮ ঘণ্টা পর, 

কেউটে সাপের ক্ষেত্রে গড়ে ১৮ ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়ার কামড়ের পর গড়ে ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পরে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগীর অন্য কোনো অসুস্থতা না থাকলে ৭২ ঘণ্টার আগে রোগী সহজে মারা যায় না। বাংলাদেশে এই সাপের কামড়ের পর ১৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকার রেকর্ড আছে।

এখানে সাম্প্রতিক কালের তিনটি ঘটনা বর্ণনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

১. গত বছর ৩ জুলাই সোমবার সকালে পদ্মার চরে (রাজবাড়ী জেলার পাংশা সুর চরপাড় এলাকা) পাটখেতে নিড়ানি দিতে গিয়ে জাহিদুল (৩৫) সাপের কবলে পড়েন। তাঁকে চন্দ্রবোড়া কামড় দিলে সাপটিকে মেরে মরা সাপসহ তাকে অন্য কোথাও না নিয়ে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর স্বজনেরা। কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে যান।

২. অন্য ঘটনায় গত ৫ মার্চ মঙ্গলবার সকালে পদ্মায় মাছ ধরতে গিয়ে চন্দ্রবোড়ার ছোবলের শিকার হন তারিকুল ইসলাম (বাড়ি কল্যাণপুর, শিলাইদহ ইউনিয়ন, উপজেলা কুমারখালী)। তরিকুলের ডান পায়ে সাপ কামড় দিলে তিনি তাঁর সাথিদের বিষয়টি জানাতে একটু সময় নেন। বন্ধুরা আক্রান্ত স্থানে রশি দিয়ে বেঁধে দেন। তাঁদের ধারণা ছিল, এতেই কাজ হবে। 

অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় লোকজন তাঁকে তাঁর বাড়ি নিয়ে যান। এরপর পরিবারের লোকজন তাঁকে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ততক্ষণে রাত হয়ে গেছে অর্থাৎ প্রায় সাত–আট ঘণ্টা সময় পার হয়ে গেছে। পরদিন বুধবার তাঁকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। অথচ কিছু মানুষ বলছেন রাসেলস ভাইপারে কামড়ালে কয়েক মিনিটের মধ্যে সে মারা যায়। আবার কেউ বলছেন এই সাপটি মানুষ দেখলে দৌড়ে এসে কামড় দেয় যা মোটেও সত্য নয়। এই সাপের গায়ে পা পড়লে, অথবা এর আশেপাশে পা বা হাত এলে তবেই কামড় দেয়।

৩. কৃষক হেফজুল হকের গালে গত ৩১ মে কামড় দিয়েছিল রাসেলস ভাইপার সাপ। তিনি সাপটিকে মেরে ব্যাগে ভরে মোটরসাইকেলের পেছনে বসে হাসপাতালে এসেছিলেন। তিন দিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। হেফজুল হকের বাড়ি চারঘাট উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে। তিনি জানান, সকালে ফজরের নামাজ পড়ে তিনি ধান কাটতে গিয়েছিলেন। 

ধান কাটা শেষের দিকে ধানখেতে একটি সাপ দেখা যায়। তিনি ধান কাটা কাঁচি দিয়ে সাপটির শরীরের মাঝবরাবর চেপে ধরেন। মাথা ঝুঁকে সাপটিকে কাঁচি দিয়ে চেপে ধরার সময় সাপ তাঁর গালে ছোবল মারে। তারপর সবাই মিলে সাপটিকে মেরে বাড়িতে নিয়ে আসেন। 

বাড়িতে এসে ভাগ্নের মোটরসাইকেলের পেছনে বসে চারঘাট থেকে সোয়া ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। আইসিইউতে ভর্তি হন। চিকিৎসক তাঁকে অ্যান্টিভেনম দেন। তিন দিন চিকিৎসার পর হেফজুলকে চিকিৎসক জানান, হেফজুল হকের শরীরের বিষের আর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তারপর তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়। 

এত দিন তিনি বাড়িতে বিশ্রামে ছিলেন। এখন শুধু গালের যেখানে সাপ কামড় দিয়েছিল, সেখানে একটু ব্যথা অনুভব করেন। আর কোনো সমস্যা নেই। তিনি এই চিকিৎসকের কাছে কৃতজ্ঞ। তাই দুই সন্তান ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন।

রাসেলস ভাইপার কামড়ালে কি হয়

অধ্যাপক ফরিদ আহসানের মতে রাসেলস ভাইপার কামড়ালে একশ মিনিটের মধ্যে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারলে ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়। মি. সাইদ বলছেন কোবরা বা কেউটে কামড়ালে টেরও পাওয়া যায় না অনেক সময় কিন্তু রাসেলস ভাইপার কামড় দিলে জায়গাটা সাথে সাথে ফুলে যায় এবং সাপটি সাথে সাথেই চলে যায় না।

ছোবলের পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফুলে যায় ক্ষতস্থান। এর বিষ নষ্ট করে দিতে পারে ফুসফুস, কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। বেশিরভাগ সাপ ডিম পাড়লেও রাসেলস ভাইপার বাচ্চা দেয়।

বাংলাদেশের বিষধর সাপের তালিকা

বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। সাপ ও সাপের বিষ নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির প্রধান অধ্যাপক এমএ ফায়েজ বিবিসিকে বলেছেন, দেশে যেসব সাপ রয়েছে, তার মধ্যে সাত থেকে আট প্রজাতির অত্যন্ত বিষধর। এদের কামড়ে বেশি মানুষ মারা যায়।

সাপে কাটার ঘটনা গ্রামাঞ্চলে, এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট এলাকায় বেশি ঘটে থাকে। স্থলভূমিতে থাকা সাপ পায়ে বেশি দংশন করে।

সামুদ্রিক সাপও অত্যন্ত বিষাক্ত হয়ঃ বাংলাদেশে ২৩ ধরনের সামুদ্রিক সাপ রয়েছে, সেগুলো মাছ ধরতে সমুদ্রে যাওয়া জেলেদের দংশন করে। তবে সমুদ্রের গভীরে তাদের অবস্থান হওয়ায় সাধারণত এই সাপের কামড়ের ঘটনা বিরল। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যত মানুষ সাপের দংশনে মারা যায়, 

তার চারগুণ মানুষের নানা রকম অঙ্গহানি ঘটে, কেউ শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়ে যান এবং কেউ দীর্ঘদিন মানসিক ট্রমা ভোগ করেন। বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির হিসেব অনুযায়ী যে সাত প্রজাতির বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায় সেগুলো নিচে দেয়া হল-

নায়া নায়াঃ এটি কোবরা বা গোখরা প্রজাতির সাপ, এর বৈজ্ঞানিক নাম নায়া নায়া। এটি স্থলভূমির সাপ, এটি ফণা তোলে এবং এর ফণায় চশমার মত দুইটি বলয় থাকে। দেশের পশ্চিম অংশেই অর্থাৎ রাজশাহী অঞ্চলের দিকে প্রধানত এ সাপের বসবাস।

নায়া কাউচিয়াঃ এটিও গোখরা প্রজাতির সাপ, স্থানীয়ভাবে একে জাতি সাপ বা জাত সাপও বলে থাকে। এই সাপটিকে জউরা নামেও ডাকা হয়। এ সাপ ফণা তোলে। এটি মূলত দেশের পূর্ব অংশ অর্থাৎ সিলেট, নোয়াখালী এলাকায় বেশি থাকে। দেশে যত সর্প দংশনের ঘটনা ঘটে, এর কামড়ে ঘটে সর্বোচ্চ।

কিং কোবরা বা শঙ্খচূড়ঃ একে রাজ গোখরা এবং পদ্ম গোখরাও বলা হয়। ভয়াবহ বিষধর এই শঙ্খচূড় অন্য গোখরার তুলনায় আকৃতিতে বেশ লম্বা। এর ফণায় অন্য গোখরার মতো চশমার মত বলয় থাকে না। শঙ্খচূড় বাংলাদেশ, ভুটান, বার্মা, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এসব দেশে বেশি দেখা যায়। এই সাপ ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ি এলাকায় থাকতে পছন্দ করে।

ক্রেইট, কেউটে বা শঙ্খিনীঃ এই সাপকে শঙ্খিনী এবং শাঁকিনী সাপ নামেও ডাকা হয়। শ্রীমঙ্গলে দেখা মেলে এই সাপের। পৃথিবীতে ক্রেইট বা শঙ্খিনী জাতের সাপের মোট ৮টি প্রজাতি রয়েছে, এর মধ্যে ৫টি প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এই ক্রেইট জাতের সাপকে স্থানীয়ভাবে কেউটেও বলা হয়। এ সাপ বাড়ির আশপাশে বা লাকড়ির মধ্যে শুকনো জায়গায় থাকে।

কালো নাইজারঃ এটিও শঙ্খিনী জাতের সাপ এবং বাংলাদেশে প্রচুর সংখ্যায় রয়েছে এই সাপ। এটি চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চল, নোয়াখালী এবং সুন্দরবন অঞ্চলে দেখা যায় বেশি।

চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপারঃ চন্দ্রবোড়ার আরেক নাম উলুবোড়া। বাংলাদেশে যেসব সাপ দেখা যায়, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বিষাক্ত। এই সাপটি প্রায় একশো বছর আগে বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, অর্থাৎ পরপর কয়েক দশকে এর একটি সাপেরও দেখা মেলেনি। কিন্তু গত ১০/১২ বছর আগে থেকে আবার এই সাপে দংশনের প্রমাণ দেখা যায়।

টক্সিকোলজি সোসাইটির অধ্যাপক ফায়েজ বলছিলেন, প্রথমে রাজশাহী অঞ্চলে এই সাপের অস্তিত্বের প্রমাণ মিললেও, এখন এই সাপ বেড়ে ক্রমে ফরিদপুর অঞ্চল পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এই সাপ হঠাৎ করে কেন আর কিভাবে ফেরত এসেছে, তা নিয়ে এখন বাংলাদেশে গবেষণা চলছে। এই সাপ কাটলে স্নায়ু অবশ হয়ে আসে, রক্ত জমাট বেধে যায়।

সবুজ বোড়াঃ সবুজ বোড়া বা গ্রিন ভাইপার সাপকে স্থানীয়ভাবে গাল টাউয়া সাপও বলে। এর মাথার অংশ মোটা বলে এই নামকরণ। এই জাতের মোট ছয়টি প্রজাতি বাংলাদেশে দেখা যায়। এই সাপ সুন্দরবন এবং পাহাড়ি এলাকার জঙ্গলে থাকে বলে এটি মানুষের মুখে মাথায় এবং গায়ে দংশন করে।

রাসেলস ভাইপার সাপ কামড়ালে কি করা উচিত

রাসেলস ভাইপারসহ যেকোনো সাপ কামড়ানোর পর ভুক্তভোগীকে রক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। মূলত ভুক্তভোগীকে আশ্বস্ত করা এবং তাকে সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যেই তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে—

১. শুরুতেই ভুক্তভোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, সাপের কামড় মানেই মৃত্যু নয়। প্রকৃতিতে থাকা অধিকাংশ সাপেরই বিষ নেই। আর যেগুলো বিষধর বলে পরিচিত, সেগুলোও সব সময় কামড়ের সাথে যথেষ্ট বিষ ঢালতে পারে না। আর বিষ যেমন আছে, তার চিকিৎসায় অ্যান্টিডটও আছে।

২. কামড়ের স্থান থেকে বিষ যেন শরীরের অন্য অংশে ছড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. সাপের কামড়ের পর ভুক্তভোগীকে স্থির করতে হবে। নড়াচড়া করা যাবে না। যত নড়াচড়া করবে শরীরের রক্তের সাথে ওই বিষ তত মিশে যাবে।

৪.পায়ে কামড় দিলে বসে পড়তে হবে।

৫.হাত বা অন্য কোনো অংশে কামড়ালে সে অংশ নড়ানো যাবে না।

৬. সবচেয়ে ভালো হয়, হাড় ভাঙলে যেভাবে দুপাশে সহায়ক হিসেবে কাঠ বা অন্য কিছু দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়, ঠিক সেভাবে আক্রান্ত স্থানকে মাঝে রেখে বেঁধে ফেললে। এ ক্ষেত্রে ক্ষতস্থানটি অবশ্যই পরিষ্কার করে নিতে হবে। ক্ষতস্থানের ওপর তো বটেই সাথে এর আশপাশের অংশও ব্যান্ডেজ করে ফেলতে হবে।

৭. চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে এই ব্যান্ডেজ কোনোভাবেই খোলা যাবে না।

৮. হাতে পায়ে চুড়ি, আংটি, নুপূর, বা আঁটসাটো পোশাক থাকলে খুলে নিন।

৯. আক্রান্ত ব্যক্তিকে কাত করে লম্বাভাবে শুইয়ে দিন।

১০. শ্বাস নিতে কষ্ট হলে মুখে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করুন।

১১. সাপ মারা বা... তাকে ধরার জন্য অযথা সময় নষ্ট করবেন না।

১২. সাপটিকে যদি মেরে ফেলা হয়, তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় সাপটিও সাথে নিন।

সাপে কামড়ালে কি করা উচিত নয়

১. ক্ষতস্থান অতিরিক্ত শক্ত করে বাঁধবেন না।

২. ক্ষতস্থান কেটে বিষ বের করার চেষ্টা করবেন না।

৩. সাপুড়ে বা ওঝাদের ডেকে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।

৪. বমি হলে, মুখ দিয়ে ফেনা বের হলে বা কথা বলতে কষ্ট হলে মুখ দিয়ে কিছু দিতে যাবেন না।

৫. কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করে বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতস্থানের মুখ বন্ধের চেষ্টা করবেন না।

৬. কোনো ধরনের পাথর, লালা, পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, কাদা, গোবর, কোনো ধরনের বীজ বা ভেষজ ওষুধ প্রয়োগ করতে যাবেন না। সাপের কামড়ের নিদানে এগুলো কিছু করতে পারে না।

৭. অ্যালকোহল বা এ ধরনের কোনো কিছু প্রয়োগ করবেন না।

৮. অ্যাসপিরিন বা কোনো ব্যাথানাশক ওষুধ দেবেন না।

৯. তেল, ঘি, মরিচ ইত্যাদি গৃহস্থালি দ্রব্যাদি অনেক সময় প্রয়োগ করতে দেখা যায়। এগুলো কুসংস্কার মাত্র।

১০. আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। ভুক্তভোগীকে আশ্বস্ত করুন বরং।

১১. চিকিৎসা সেবা নিতে দেরি হয় এমন যেকোনো কাজ থেকে বিরত থাকুন।

বিশ্বে বিষধর সাপের সংখ্যা কত ?

ঝুঁকি মূল্যায়নের বিবেচনায় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে একটি সাপের কামড়ের সম্ভাবনা, কামড়ের সাথে বিষের পরিমাণ, ডেলিভারি মেকানিজমের কার্যকারিতা এবং শিকারের শরীরে কামড়ের অবস্থান। সাপের বিষের নিউরোটক্সিক এবং হেমোটক্সিক উভয় বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। বিশ্বে প্রায় ৬০০ প্রজাতির বিষধর সাপ রয়েছে।

বাংলাদেশের কতটি জেলায় বিস্তার ঘটেছে এই সাপের

১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের সাপ’ বইয়ে বন্য প্রাণিবিশেষজ্ঞ মো. আলী রেজা খান বলেছেন, চন্দ্রবোড়া সাপ রাজশাহী বিভাগে সর্বাধিক পাওয়া যায়। অন্যত্র আছে, তবে তেমন দেখা যায় না।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টার বলেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৯টি জেলায় চন্দ্রবোড়া সাপ দেখা গেছে। ২০১৮ সালে এই সাপ থাকা জেলার সংখ্যা বেড়ে হয় ১১টি। ২০২৩ সালে ২৩টি জেলায় এই সাপ নথিভুক্ত করেছিলেন ভেনম রিসার্চ সেন্টারের গবেষকেরা। সর্বশেষ ২০২৪ সালে জেলার সংখ্যা আরও বাড়ে।

২০১৩ থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত ৩২টি জেলায় এই সাপ দেখা গেছে। জেলার তালিকায় আছে: নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও বরগুনা।

পদ্মা নদী ও তার শাখা নদীর তীরবর্তী জেলাগুলোতে চন্দ্রবোড়ার বিস্তার সবচেয়ে বেশি বলে দাবি করেছে ভেনম রিসার্চ সেন্টার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফজলে রাব্বি চৌধুরী সাপের বিষ নিয়ে গবেষণায় যুক্ত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই সাপ ভালো সাঁতার কাটতে পারে। নদীপথে এই সাপ ছড়ায়। মেহেরপুর, চুয়াডঙ্গার মতো এলাকাতেও এই সাপ কীভাবে পৌঁছাচ্ছে, তা গবেষণার দাবি রাখে।

লেখকের মন্তব্যঃ

প্রিয় বন্ধুরা আশা করছি উপরের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আজ রাসেলস ভাইপার সাপের যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশব্যাপি সেই সম্পর্কে কিছু উল্লেখ যোগ্য ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। সাপ দেখে ভয় পায় না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। হ্যাঁ আমরাও ভয় করবো, কিন্তু আতঙ্কিত হবো না। 

কারণ বেশির ভাগ মানুষ সাপের বিষের চেয়ে আতঙ্কে মারা যায়। একটা কথা মনে রাখবেন রাসেলস ভাইপারসহ যে কোন বিষধর সাপে কামড়ালে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসবেন। অন্যের পরামর্শে কখনোই ওঝা বা কবিরাজের কাছে নিয়ে যাবেন না। নিজে সচেতন হোন, অন্যদের সচেতন করুন, বাড়ির আশপাশ, চলাচলের রাস্তাঘাট পরিস্কার রাখুন। আজকের আর্টিকেল পড়ে উপকৃত হলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।


















এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪