আশুরার রোজা রাখার ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আশুরা অর্থ দশম তারিখ। মহররম হচ্ছে মাসের নাম। হিজরী সনের প্রথম মাস হচ্ছে মহররম মাস। এই মাসের ৯ ও ১০ তারিখে রোজা রাখার ফজিলত ও আমল সমূহ আমরা সবাই কি জানি ?
আশুরার  রোজা রাখার ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আজ আপনাদের সামনে আশুরার রোজা রাখার ফজিলত ও তাৎপর্য এবং আমল সমূহ নিয়ে আলোচনা করবো। এখানে আরো জানতে পারবেন- কবে থেকে এই রোজা রাখা শুরু হয়েছে এবং কি কারণে এই রোজা রাখা হয় সে সম্পর্কে।

সূচীপত্রঃ

আশুরার রোজার ফজিলত ও তাৎপর্য
আশুরার রোজা কয়টি
আশুরার রোজা কবে ২০২৪
আশুরার রোজার হাদিস
আশুরার দিনের ঘটনা
আশুরার দিনের করনীয় কাজ
আশুরার দিনের বর্জনীয় কাজ
আশুরার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
মহররম মাসের ফজিলত ও আমল
লেখকের মন্তব্যঃ

আশুরার রোজার ফজিলত ও তাৎপর্য

রমযানের পর সবচে উত্তম রোজা হল হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররমের রোজা। আর ফরয নামাযের পর সবচে উত্তম নামায হল রাতের নামায (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামায)। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৩। আশুরা মানে হচ্ছে, মুহাররমের ১০ তারিখের আমল সমূহকে বুঝাতে আশুরা শব্দটি ব্যবহার হরা হয়।

মুহাররম মাসের সবচে মহিমান্বিত দিন হচ্ছে ‘ইয়াওমে আশুরা’ তথা মুহাররমের দশ তারিখ। হাদীসে আশুরার দিনের অনেক ফযীলত বিবৃত হয়েছে। এমনকি ইসলামপূর্ব আরব জাহেলী সমাজে এবং আহলে কিতাব- ইহুদী-নাসারাদের মাঝেও ছিল এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা।

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন-

كَانُوا يَصُومُونَ عَاشُورَاءَ قَبْلَ أَنْ يُفْرَضَ رَمَضَانُ، وَكَانَ يَوْمًا تُسْتَرُ فِيهِ الكَعْبَةُ، فَلَمّا فَرَضَ اللهُ رَمَضَانَ، قَالَ رَسُولُ الله صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: مَنْ شَاءَ أَنْ يَصُومَهُ فَلْيَصُمْهُ، وَمَنْ شَاءَ أَنْ يَتْرُكَهُ فَلْيَتْرُكْهُ.

(জাহেলী সমাজে) লোকেরা রমযানের রোজা ফরয হওয়ার পূর্বে আশুরার দিন রোজা রাখত। এ দিন কাবায় গেলাফ জড়ানো হত। এরপর যখন রমযানের রোজা ফরয হল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে এ দিন রোজা রাখতে চায় সে রাখুক। যে না চায় না রাখুক। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫৯২

এ হাদীসদ্বয় থেকে বুঝে আসে- জাহেলী সমাজে এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। এ দিনে তারা কাবা শরীফে গেলাফ জড়াত। এ দিন তারা রোজা রাখত। নবীজীও এ দিন রোজা রাখতেন। হিজরতের পরও এ দিন রোযা রাখতেন। রমযানের রোজা ফরয হওয়ার পূর্বে এ দিনের রোজা ফরয ছিল। রমযানের রোজা ফরয হওয়ার পর এ দিন রোজা রাখা এখন মুস্তাহাব।

এরপর যখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদীনা মুনাওয়ারায় চলে আসেন দেখেন, মদীনার আহলে কিতাব ইহুদীরাও এ দিনে রোজা রাখছে। এ দিনকে তারা বিশেষভাবে উদ্যাপন করছে। নবীজী তাদের জিজ্ঞাসা করলেন-

مَا هَذَا الْيَوْمُ الّذِي تَصُومُونَهُ؟

এ দিনে তোমরা কী জন্য রোজা রাখছ ? তারা বলল-

هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، أَنْجَى اللهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ، وَغَرّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ، فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا، فَنَحْنُ نَصُومُهُ.

এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ দিবস। আল্লাহ তাআলা এ দিনে হযরত মূসা (আঃ) ও তাঁর কওমকে (ফেরাউনের কবল থেকে) মুক্তি দিয়েছেন। এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ (দরিয়ায়) নিমজ্জিত করেছেন। এরপর হযরত মূসা (আঃ) এ দিনে শুকরিয়া আদায় স্বরূপ রোজা রাখতেন এবং কওমের লোকদের রোজা রাখতে বলতেন। তাই আমরাও রোজা রাখি।

নবীজী এ শুনে বললেন-

فَنَحْنُ أَحَقّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ.

হযরত মূসা (আঃ) এর অনুসরণের ক্ষেত্রে তো আমরা তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। এরপর নবীজী নিজেও রোজা রাখলেন এবং অন্যদের রোজা রাখতে বললেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৩০; সহীহ বুখারী, হাদীস ১১২৫, ৩৯৪৩

ইহুদীদের নিকট এ দিনটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এ দিনটিকে তারা ঈদের মতো উদ্যাপন করত। হযরত আবু মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত-

كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ يَوْمًا تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ، وَتَتّخِذُهُ عِيدًا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: صُومُوهُ أَنْتُمْ.

আশুরার দিন এমন একটি দিন, যে দিনকে ইহুদীরা সম্মান করত এবং এ দিনকে ঈদ হিসাবে গ্রহণ করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা এ দিনে রোযা রাখ। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৩১। এই দিনে রোজা রাখলে পূর্ববর্তী ১ বছরের গুনাহ্ আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেবেন।

মুহাররমের ফযীলতের একটি দিক হচ্ছে, এর সাথে তাওবা কবুল হওয়া এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মুক্তি, নিরাপত্তা এবং গায়েবী সাহায্য লাভ করার ইতিহাস জুড়ে আছে। এজন্য এ সময়ে এমন সব আমলের প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত, যাতে আল্লাহর রহমত বান্দার প্রতি আরো বেশি ধাবিত হয়। বিশেষভাবে এ সময়ে তাওবা-ইস্তিগফারের প্রতি পূর্ণ মনোযোগী হওয়া চাই।

এক সাহাবী নবীজীর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন-

يَا رَسُولَ اللهِ، أَيّ شَهْرٍ تَأْمُرُنِي أَنْ أَصُومَ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَان.

ইয়া রাসূলাল্লাহ! রমযানের পর আপনি কোন্ মাসে রোজা রাখতে বলেন? নবীজী বললেন-

إِنْ كُنْتَ صَائِمًا بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ فَصُمُ الْمُحَرّمَ، فَإِنّهُ شَهْرُ اللهِ، فِيهِ يَوْمٌ تَابَ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ، وَيَتُوبُ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ آخَرِينَ.

قال الترمذي : هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ.

তুমি যদি রমযানের পর রোজা রাখতে চাও তাহলে মুহাররমে রোজা রেখ। কেননা মুহাররম হচ্ছে আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একদিন আছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা (অতীতে) অনেকের তাওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও অনেকের তাওবা কবুল করবেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪১

রমযানের পর সবচে উত্তম রোজা হল আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা। আর ফরয নামাযের পর সবচে উত্তম নামায হল রাতের নামায (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামায)। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৩

এ হাদীস থেকে মুহাররমের ব্যাপারে দুটি কথা পাওয়া যায়ঃ-

একঃ- মুহাররম মাস আল্লাহর মাস। সম্মানিত ও মহিমান্বিত মাস।

দুইঃ- এর সম্মান রক্ষা এবং এ থেকে যথাযথ উপকৃত হওয়ার একটি মাধ্যম হচ্ছে, এ মাসে রোজা রাখার প্রতি যত্নবান হওয়া।

কাজেই মুহাররম মাসে রোজা রাখার প্রতি আমরা মনোযোগী হতে পারি। বিশেষ করে দশ মুহাররম আশুরার রোজার কথা তো হাদীসে গুরুত্বের সাথেই উল্লেখ করা হয়েছে। এর প্রতিও আমরা বিশেষভাবে খেয়াল রাখব।

আশুরার রোজা কয়টি

আশুরার দিন রোযা রাখা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ একটি আমল। এ দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। আশুরার রোজা রাখার উত্তম বিধান হল, নয় ও দশ মুহাররম। তবে কেউ যদি নয় তারিখে রোজা না রাখতে পারে সে যেন দশ ও এগার তারিখে রোজা রাখে। নয় তারিখে রাখতে পারলে ভালো। কারণ হাদীসে নয় তারিখের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ). বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আশুরার রোজা রাখছিলেন এবং অন্যদেরকে রোযা রাখতে বলেছিলেন তখন সাহাবীগণ বললেন-

يَا رَسُولَ اللهِ إِنّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنّصَارَى؟

ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ দিনকে তো ইহুদী-নাসারারা (খ্রিস্টানরা) সম্মান করে? তখন নবীজী বললেন-

فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التّاسِعَ قَالَ: فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ، حَتّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ.

তাহলে আগামী বছর আমরা নয় তারিখেও রোজা রাখব- ইনশাআল্লাহ। কিন্তু সেই আগামী বছর আসার পূর্বেই নবীজীর ইন্তেকাল হয়ে যায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৩৪

‘নয় তারিখ রোজা রখব’ মানে দশ তারিখের সাথে নয় তারিখ মিলিয়ে রাখব। এজন্য ইবনে আব্বাস রা. বলতেন-

صُومُوا التّاسِعَ وَالعَاشِرَ وَخَالِفُوا اليَهُودَ.

তোমরা নয় তারিখ এবং দশ তারিখ রোজা রাখ এবং ইহুদীদের বিরোধিতা কর। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৫৫

(একটু চিন্তা করুন তো, ইসলামী শরীয়তে বৈধ এবং কাম্য একটি ইবাদতের ক্ষেত্রে যদি এমন বিরোধিতার কথা আসে তাহলে ইহুদী-নাসারাদের নিজস্ব সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং বিজাতীয় কালচারের ক্ষেত্রে তাদের বিরোধিতা করার বিধান কত কঠোর হতে পারে! )

আর সবচে উত্তম হয়, দশ তারিখের সাথে মিলিয়ে আগে-পরে আরো দুটি রোজা রাখা। নয়, দশ ও এগার সর্বমোট তিনটি রোজা রাখা। কারণ, পুরো মুহাররম মাসব্যাপি রোযার কথা তো সহীহ হাদীসেই আছে। (দ্রষ্টব্যঃ ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার রাহ. ৪/২৪৬)

আশুরার রোজা কবে ২০২৪

যারা ২০২৪ সালে আশুরার রোজা পালনের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে ১০ মহররম, আশুরা, ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে হতে পারে। যেহেতু চাঁদ দেখার দেখার উপর নির্ভর করে ইসলামী আচার অনুষ্ঠানাদী পালন হয়ে থাকে, তাই এ বছর ১৭ জুলাই আশুরার দিন। রোজা রাখতে হবে ১৬ ও ১৭ জুলাই ২৪।

আশুরার রোজার হাদিস

হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এই রোজা বিগত বছরের গুনাহ মুছে দেয়। (মুসলিম: ১১৬২)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দেন, তখন সাহাবিরা অবাক হয়ে বলেন, হে আল্লাহর রসুল, বিধর্মীরা তো এই দিনটিকে মহান দিন মনে করে। এই দিনে তারাও রোজা পালন করে। 

আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি তাহলে তো এদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে। তাদের প্রশ্নের জবাবে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে, আগামী বছর ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব, ইনশাআল্লাহ। (মুসলিম: ১১৩৪)

আশুরার দিনের ঘটনা

আশুরার রোজা মূলত পালন করার উল্লেখ যোাগ্য কারণ হলো, এই দিনে মুসা (আঃ) এবং তার কওমকে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন। ফেরাউন এবং তার দল বল মুসা (আঃ) এবং তার কওমকে একেবারে পৃথিবী থেকে বিদায় করার জন্য ঘিরে ফেলে সব দিক থেকে, তাদের সামনে নীল নদ।

সাগরে ঝাপ দিলেও মরবে, অন্য দিকে ফেরাউন ও তার দলবল ছুটে আসছে, কাছে এলেই তারা তাদেরকে হত্যা করে ফেলবে। এমন সময় মুসা (আঃ) আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা মুসা (আঃ) কে তার হাতে লাঠি দ্বারা দরিয়ার পানিতে আঘাত করতে বললেন। সঙ্গে সঙ্গে দরিয়ার পানির প্রবাহ থেমে গেল, এবং এর ভিতর দিয়ে ১২টি রাস্তা তৈরি হয়ে গেল।

সেই রাস্তা দিয়ে মুসা (আঃ) এবং কওমের লোকেরা দরিয়া পার হয়ে ওপারে চলে গেল। এমন সময় ফেরাউন ও তার দলবল সেই রাস্তা দিয়ে পার হতে গিয়ে যখন মাঝ রাস্তায় উপনিত হল, তখন আল্লাহর হুকুমে দরিয়ার পানি আবার প্রবাহিত হতে লাগলো এবং ফেরাউনসহ তার দলবল পানিতে ডুবে মারা গেল। 

এই মহা বিপদ থেকে বাঁচার জন্য মুসা (আঃ) মহাররম মাসের ১০ তারিখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য নিজে রোজা রাখেন এবং কাওমের লোকদের রোজা রাখতে বলেন। সেই থেকেই মুলত এই রোজার বিধান চালু হয়েছে। সিয়া সম্প্রদায়রা এটাকে কারবালার সেই নিষ্ঠুর দিনের কথা স্বরন করে রোজা রাখেন যা সরিয়ত বিরোধী। 

হযরত (সাঃ) সেই নিষ্ঠুরতার অনেক আগে থেকেই রোজা রেখেছেন এবং সাহাবীদেরকে রাখতে বলেছেন। মহাররমের ১০ তারিখে সিয়া সম্প্রদায় যে সব অনুষ্ঠান পালন করেন তার কোন ভিত্তি নাই। মহররম মাসে বহু স্মরণীয় ও যুগান্তকারী ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় বিভিন্ন দিক দিয়ে এ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। মহররমের দশম দিবসে অর্থাৎ আশুরার দিনে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনাবলির মধ্যে রয়েছে–

১। আকাশ জমিন পাহাড়-পর্বত সবকিছুর সৃষ্টি।

২। আদম (আঃ) -কে সৃষ্টি করা হয়।

৩। নূহ (আঃ) মহাপ্লাবন শেষে জুদি পাহাড়ে অবতরণ।

৪। হজরত ইব্রাহিম (আঃ) নমরুদের প্রজ্বালিত অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তিলাভ করেন।

৫। দীর্ঘ ১৮ বছর রোগ ভোগের পর হজরত আইয়ুব (আঃ) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ করেন।

৬। হজরত সুলাইমান (আঃ)-কে পৃথিবীর একচ্ছত্র রাজত্বদান।

৭। হজরত ইউনুস (আঃ)-কে ৪০ দিন পর দজলা নদীতে মাছের পেট থেকে উদ্ধার করা হয়।

৮। হজরত ঈসা (আঃ)-এর পৃথিবীতে আগমন এবং জীবিতাবস্থায় আসমানে উত্তোলন, যা পবিত্র কোরআনে সুরা আল ইমরানের ৫৫ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।

৯। হজরত ইদ্রিস (আঃ)-কে আসমানে উত্তোলন।

১০। হজরত দাউদ (আ.)-কে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়।

১১। গাজওয়ায়ে খায়বার বিজয় অর্জন।

১২। মাদায়েন ও কাদিসিয়ার যুদ্ধে বিজয় অর্জন।

১৩। প্রথম মানব হজরত আদম (আঃ)-কে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়।

১৪। হজরত আদম (আঃ)-কে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠানো এবং গুনাহ মার্জনার পর তার সঙ্গে বিবি হাওয়াকে আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতে পুনঃসাক্ষাৎ লাভ।

১৫। হজরত নূহ (আঃ)-কে তুফান ও প্লাবন থেকে পরিত্রাণ।

১৬। হজরত সোলায়মান (আঃ)-কে হারানো বাদশাশি ফিরিয়ে দেয়া।

১৭। হজরত ইয়াকুব (আঃ)-এর হারানো পুত্র হজরত ইউসুফ (আঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ।

১৮। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (আঃ) মক্কা থেকে হিজরত করতে মদিনায় যান।

১৯। হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এবং তার ৭৭ ঘনিষ্ঠজন স্বৈরশাসক ইয়াজিদের সৈন্যের মাধ্যমে কারবালা প্রান্তরে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন।

তবে উপরে বর্ণিত ১৯ ঘটনার সাথে আশুরার রোজা রাখার কোন সম্পর্ক নেই। হযরত মুসা (আঃ) ফেরাউনের হাত থেকে চিরতবে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে শুকরিয়া আদায়ের জন্য রোজা রেখেছিলেন সেটাই এই রোজা । অথচ এক শ্রেণির মানুষ এটাকে কারবালার সেই মর্মান্তিক ঘটনার দিন উপলক্ষ্যে রোজা রেখে থাকেন, যা শরিয়ত বিরোধী।

আশুরার দিনের বর্জনীয় কাজ

আইয়ামে জাহেলিয়া যুগে প্রাচীন আরবদের মধ্যে গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হতো এই দিনটি। আশুরার দিন মক্কার মানুষ রোজা রাখতেন এবং কাবাঘরের গিলাফ পরিবর্তন করতেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদের রোজা রাখায় উৎসাহ ও নির্দেশ দেন। এ ছাড়া রমজানের রোজার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা মোস্তাহাব পর্যায়ের ঐচ্ছিক ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়।


আশুরার দিনের করনীয় কাজ

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদের রোজা রাখার উৎসাহ ও নির্দেশ দেন। এ ছাড়া রমজানের রোজার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা মোস্তাহাব পর্যায়ের ঐচ্ছিক ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়।

১। আশুরার দিন রোজা রাখা

আশুরার দিন রোজা রাখলে বিগত এক বছরের সগিরাহ গোনাহ মাফের আশা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবী। হাদিসের বর্ণনায় তা উঠে এসেছে– হজরত আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আশুরার দিনের রোজার দ্বারা আমি আল্লাহর কাছে বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা রাখি।’ (মুসলিম, তিরমিজি)

মহররম মাসে রোজা রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে হাদিসে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

২। ক্ষমার ঘোষণা

আশুরার দিন ও মহররম মাসজুড়ে বেশি তওবা-ইসতেগফার করা। কেননা, এদিন ও মাসের বিশেষ মুহূর্তে তওবাহ-ইসতেগফারে আল্লাহ তাআলা পুরো জাতিকে ক্ষমা করে দেবেন। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মহররম হলো আল্লাহ তাআলার (কাছে একটি মর্যাদার) মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যাতে তিনি অতীতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন।’ (তিরমিজি)

৩। ত্যাগ ও কোরবানির শিক্ষা গ্রহণ

দ্বীন ও ইসলামের কল্যাণে হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবন থেকে আত্মত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করা সব মুসলমানের জন্য একান্ত করণীয়। সবার মাঝে হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর এই ঈমানি চেতনা জাগরিত হলেই ইসলামের পরিপূর্ণ বিজয় আসবে।

৪। অন্যকে ইফতার করানো

এমনিতে ইফতার করানো অনেক ফজিলতপূর্ণ কাজ। সম্ভব হলে আশুরার দিনে নিজে রোজা রাখার পাশাপাশি রোজা পালনকারীদের ইফতার করানো উত্তম। এ ছাড়া সাধ্যমতো দান-সদকাহ করা। গরিবদের পানাহার করানো। এতিমের প্রতি সদয় ব্যবহার ও সহযোগিতা করা।

৫। তওবা করা

তওবা কবুল হওয়া এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তি, নিরাপত্তা এবং সাহায্য লাভ করার ইতিহাসজুড়ে আছে মহররম মাসের সঙ্গে। হজরত আলি (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, রমজানের পর আপনি কোন মাসে রোজা রাখতে নির্দেশ দেন?

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি যদি রমজানের পর রোজা রাখতে চাও, তাহলে মহররমে রোজা রেখো। কেননা, মহররম আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহতায়ালা (অতীতে) অনেকের তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অনেকের তওবা কবুল করবেন।’ (জামে তিরমিজি: ৭৪১)

হাদিস বিশারদদের মতে, হাদিসে যেদিনের কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে সেটি খুব সম্ভব আশুরার দিন। তবে মানুষের উচিত প্রাত্যহিক জীবনে তওবা-ইস্তিগফারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া।

আশুরার দিনের বর্জনীয় কাজ

কারবালার শহীদদের স্মরণে শোক প্রকাশ

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নাতি হযরত হোসাইন (রা.) ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে স্বীয় পরিবার ও অনুসারীদের সঙ্গে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন। ঘটনাক্রমে দিনটি ছিল ৬১ হিজরির ১০ মহররম বা আশুরার দিন। বিষয়টি মুসলিম উম্মাহর কাছে সহনীয় নয়।

তবে একটা শ্রেণি রয়েছে, যারা ১০ মহররম কারবালার শহীদদের স্মরণে শোক প্রকাশ অনুষ্ঠান, মর্সিয়া গাওয়ার ব্যবস্থা এবং তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করেন। সেই সঙ্গে বিলাপ-মাতম করে ও বুক চাপড়ে শোক প্রকাশের রীতি পালন করেন। এগুলো কাম্য নয়। এ জাতীয় কর্মকাণ্ড ইসলাম সমর্থিত নয় এবং আশুরার সঙ্গে এসবের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। উপরন্তু এ ব্যাপারে ইসলামের কঠিন হুঁশিয়ারির বর্ণনা এসেছে।

ভিত্তিহীন ও দুর্বল হাদিস বর্ণনা

অনেকে মহররম ও আশুরার গুরুত্ব ও ফজিলত আলোচনা করতে গিয়ে অসখ্য কল্পকথা ও দুর্বল হাদিস বলেন। এমন একটি কথা হলোঃ ‘যে ব্যক্তি মহররমের প্রথম দশ দিন রোজা রাখে, সে দশ হাজার বছর যাবৎ দিনে রোজা ও রাতে ইবাদতের সাওয়াব পাবে।’ এটি একটি বানোয়াট বর্ণনা। নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে তা পাওয়া যায় না। (আল্-লাআলি, ইমাম সুয়ূতি: ২/১০৮-১০৯)

১। হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুর স্মরণে কাল্পনিক তাজিয়া বা নকল কবর বানানো থেকে বিরত থাকা।

২। তাজিয়া বানিয়ে তা কাঁধে বা যানবাহনে বহন করে মিছিলসহ সড়ক প্রদক্ষিণ করা থেকে বিরত থাকা।

৩। নকল এসব তাজিয়ার সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকা এবং তাজিয়া বা নকল কবরে নজরানা স্বরূপ অর্থ দান করা থেকে বিরত থাকা।

৪। নিজেদের দেহে আঘাত বা রক্তাক্ত করা থেকে বিরত থাকা।

৫। শোক বা মাতম করা থেকে বিরত থাকা।

৬। যুদ্ধসরঞ্জামে সজ্জিত হয়ে ঘোড়া নিয়ে প্রদর্শনী করা থেকে বিরত থাকা।

৭। হায় হুসেন, হায় আলি ইত্যাদি বলে বিলাপ, মাতম কিংবা মর্সিয়া ও শোকগাথা প্রদর্শনীর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বুকে-পেটে-পিঠে ছুরি মেরে রক্তাক্ত করা থেকে বিরত থাকা।

৮। ফুল দিয়ে সাজানো এসব নকল তাজিয়া বা কবরের বাদ্যযন্ত্রের তালে প্রদর্শনী থেকে বিরত থাকা।

৯। হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহ তা’য়ালা আনহুর নামে ছোট বাচ্চাদের ভিক্ষুক বানিয়ে ভিক্ষা করানো। এটা করিয়ে মনে করা যে, ওই বাচ্চা দীর্ঘায়ু হবে। এটা মহররম বিষয়ক একটি কু-প্রথা।

১০। আশুরায় শোক প্রকাশের জন্য নির্ধারিত কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরা থেকে বিরত থাকা।

আশুরার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) হিজরত করে মদিনায় এলেন এবং তিনি মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখলেন। তাদের এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, এটা সেই দিন—যেদিন আল্লাহ মুসা (আঃ) ও বনি ইসরাইলকে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে মেরেছেন। তাঁর সম্মানার্থে আমরা রোজা রাখি। তখন রাসুল (সাঃ) বললেন, ‘আমরা তোমাদের চেয়েও মুসা (আঃ)-এর অধিক নিকটবর্তী।

’ এরপর তিনি এ দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ২৫৪৮)

রুবাইয়ি বিনতে মুআউয়িজ ইবনে আফরা (রা.) বলেন, আশুরার সকালে রাসুল (সা.) আনসারদের সকল পল্লীতে এই নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি রোজা রাখেনি, সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় সকাল শুরু করেছে সে যেন রোজা পূর্ণ করে। বর্ণনাকারী বলেন, পরবর্তীতে আমরা ওই দিন রোজা রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের রোজা রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ওই খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম।

আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত। (সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ১৯৬০)

নবী-রাসুলের কাহিনিকে গুরুত্ব দেওয়াঃ নবী-রাসুলদের শরিয়ত ভিন্ন ভিন্ন হলেও তাঁদের দ্বিন ও দাওয়াতের মূল হলো তাওহিদ বা একত্মবাদ। সব নবী-রাসুলের প্রতি ঈমান আনা ঈমানের অন্যতম রোকন। উল্লিখিত হাদিসে রাসুল (সাঃ) মুসা (আঃ)-এর মুক্তি পাওয়াকে গুরুত্ব দিয়েছেন।

কৃতজ্ঞতা আদায় করাঃ আল্লাহ তাআলা মুসা (আঃ) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা করেছেন এবং তাদেরকে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রাসুল (সাঃ) রোজা রাখাকে বৈধতা দিয়েছেন এবং সাহাবাদের রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ কোনো নিয়ামত দান করলে বান্দার উচিত সে নিয়ামতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

মহররম মাসের ফজিলত ও আমল

রমজানের পর মহররম মাসের রোজা সবচেয়ে উত্তম বলে বর্ণনা করেছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হচ্ছে- আল্লাহর মাস ‘মুহররম’-এর রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হচ্ছে- রাত্রিকালীন নামাজ।-(সহিহ মুসলিম, ১১৬৩)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহররম মাসকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস বলছেন। জানা কথা, সকল মাসই আল্লাহর মাস। এরপরও এক মাসকে আল্লাহর মাস বলার রহস্য হলো, এই মাসের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। তাই একে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। যেমন দুনিয়ার সব ঘরই আল্লাহর ঘর। কিন্তু সব ঘরকে বাইতুল্লাহ বলা হয় না।

‘আল্লাহর মাস’ বলে মহররম মাসকে আল্লাহর সাথে সম্বন্ধিত এর মর্যাদা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া এই হাদিসের মাধ্যমে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহররম মাসে অধিক রোজা রাখার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

লেখকের মন্তব্যঃ

প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে আশুরার রোজার ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবন করতে পেরেছেন। পরিশেষে বলতে চাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের যে যে প্রান্তে সিয়া সম্প্রদায় তাজিয়া মিছিল, মাতন গাওয়া, বুক চাপড়ানো এবং রক্তপাত করে এই গুলো সম্পূর্ণ নাজায়েজ এবং শরিয়ত বিরোধী।

হ্যাঁ আমরা ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও তার পরিবার এবং সঙ্গীসাথিদের সাথে যা ঘটে ছিল তার তীব্র নিন্দা জানায় এবং সহমর্মিতা প্রকাশ করি। আমরা নবী (সাঃ) এর সাহাবীসহ আত্নীয় সজনকে ভালোবাসি। কিন্তু এই রোজাটি কারবালার সাথে কোন ভাবেই সম্পৃক্ত নয়। আসুন সঠিকটা জেনে মানার চেষ্টা করি। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪