প্রতিমাসের প্রথম দিনেই বেতন-ভাতা পাবেন এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা জেনে নিন

আপনি কি একজন এমপিওভূক্ত শিক্ষক ? প্রতিমাসেই বেতন-ভাতা পেতে অনেক দেরি হয় ? সম্মানিত শিক্ষকদের জন্য এটা একটা বড় সমস্যা এবং কষ্টদায়ক ও দূর্ভোগের। আজ আপনাদের সামনে এই সমস্যা সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রতিমাসের প্রথম দিনেই বেতন-ভাতা পাবেন এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা জেনে নিন

এখানে জানতে পারবেন, কোন মাস থেকে এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা প্রতিমাসের প্রথম দিনেই বেতন-ভাতা পেয়ে যাবেন এবং কিভাবে পাবেন। ইএফটির মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবে কিভাব বেতন-ভাতা জমা হবে সব জানতে পারবেন আজকের আলোচনায়।

সূচীপত্রঃ

ইএফটি মানে কী ?
মাসের প্রথম দিন বেতন-ভাতা পাবেন এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা
এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর
এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা ইএ্ফটির মাধ্যমে বেতন পাবেন যেভাবে
প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সেচ্ছাচারিতা বন্ধ হবে
ইএফটিতে টাকা পেতে কতদিন সময় লাগে
ইএফটির সুবিধা ও অসুবিধা
কেন সরকারি কর্মচারীদের বেতন ইএফটির মাধ্যমে প্রদান করা হয়
লেখকের শেষকথাঃ

ইএফটি মানে কী ?

ইএফটি বলতে বুঝায় ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার EFT( Electronic Fund Transfer)। ইএফটি'র মাধ্যমে ওয়্যার পদ্ধতিতে কোন কর্মচারীর হিসাবে বেতন ভাতাদি প্রেরণ করা যায়। কোন রকম ব্যাংক চেক বা কাগজী এ্যাডভাইজ ব্যাংকে প্রেরণ করা লাগবে না। এটি একটি অত্যাধুনিক মাধ্যম যার মাধ্যমে খুব সহজেই গ্রাহকের একাউন্ট ক্রেডিট করা যায়।

একটি ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT), বা সরাসরি আমানত হল এক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ডিজিটাল মানি মুভমেন্ট । এই স্থানান্তরগুলি ব্যাঙ্ক কর্মীদের থেকে স্বাধীনভাবে সঞ্চালিত হয়। ডিজিটাল লেনদেন হিসাবে, কাগজপত্রের প্রয়োজন নেই।

মাসের প্রথম দিন বেতন-ভাতা পাবেন এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা

প্রতি মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অনুমোদন সাপেক্ষে বেতন-ভাতা পাস হয় এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের। পাস হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের প্রধান, ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে পারেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। 

যদিও সরকারি অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ইএফটির ( ইলেকট্রিক মানি ট্রান্সফার) মাধ্যমে মাসের প্রথম দিন দিয়ে দেওয়া হয়। এখন থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরাও মাসের প্রথম দিনই ইএফটির মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবে বেতন-ভাতা পেয়ে যাবেন।

গত ৬ জুন-২০২৪ তারিখে জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ এ তথ্য তুলে ধরেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারীর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ অনুদানের অর্থ ইএফটি-তে প্রদানের কাজ চলমান আছে। এতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া, এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতন-ভাতার অর্থ ইএফটি-তে প্রদানের কাজ চলমান রয়েছে। 

ফলে শিক্ষক ও কর্মচারীরা প্রথম কর্মদিবসে ঘরে বসে তার ব্যাংক হিসাবে সরাসরি ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাবেন এবং তাদের ভোগান্তি চিরতরে বিদায় হবে। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে জানান, সরকার পেনশনারদের পেনশন পাওয়া সহজ করতে নানাবিধ ব্যবস্থা নিয়েছে। 

বর্তমানে কর্মরত সরকারি কর্মচারী ছাড়াও সকল অবসরভোগী সরকারি কর্মচারী ইএফটির মাধ্যমে মাসের শুরুতেই পেনশন পেয়ে থাকেন। পেনশনারদের জন্য পাইলট ভিত্তিতে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে জীবিতাবস্থা যাচাইকরণ (লাইফ ভেরিফিকেশন) চালু করা হয়েছে। অচিরেই সারা দেশে সব পেনশনারকে এ অ্যাপ ব্যবহারের আওতায় আনা হবে। 

এর ফলে পেনশনাররা বছরে একবার ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পাবেন এবং ঘরে বসেই পেনশন পেয়ে যাবেন।

এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর

'সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার' স্লোগানকে সামনে রেখে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয় ৬ জুন (২৪) তারিখে। এতে বাজেটে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সুখবর রয়েছে। এখন থেকে মাসের প্রথম দিন ইএফটির মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবে বেতন পাবেন তারা।

এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা ইএ্ফটির মাধ্যমে বেতন পাবেন যেভাবে

সরকারি অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ইএফটির (ইলেকট্রিক মানি ট্রান্সফার) মাধ্যমে মাসের প্রথম দিন দিয়ে দেওয়া হয়। এখন থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরাও মাসের প্রথম দিনই ইএফটির মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবে বেতন পাবেন। জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ এ তথ্য তুলে ধরেন।

প্রতিষ্ঠান প্রধানদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হবে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বঞ্চনার শেষ নেই। তাঁরা নানা দাবিদাওয়া নিয়ে রাজধানীতে দিনের পর দিন পড়ে থাকেন। আন্দোলন, অনশন-সবই করেন। কিন্তু দিন শেষে তাঁদের খালি হাতে ফিরতে হয়। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের তুলনায় সুযোগ-সুবিধায় অনেক পিছিয়ে তাঁরা। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক নানা কোন্দল ও ব্যক্তির অনিয়মের কারণে অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষক ঠিকমতো বেতন পান না।

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠান প্রধানের কারণে দীর্ঘ দিন ধরে বেতন পাননা। বা মাসের পর মাস বেতন ভাতা আটকে রাখা হয় প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। বিভিন্ন খবরের মারফত জানতে পারা যায় যে, অনেক শিক্ষক-কর্মচারীরা বিনা চিকিৎসায়, অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। যার সমাধান হবে ইএফটির মাধ্যমে।

এমনও প্রধান শিক্ষক আছেন যারা তার সহকর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে, অপমান করে, এমনকি গায়ে হাত পর্যন্ত তোলে। অনেকে আছেন যারা বেতন ছাড়ের জন্য ঘুষ দাবি করেন। নিজে একজন শিক্ষক হয়ে আরেকজন শিক্ষকের সাথে এমন ব্যবহার করতে পারেন কিভাবে।

ইএফটিতে টাকা পেতে কতদিন সময় লাগে

EFT পেমেন্ট প্রসেসিং কত সময় নেয়? ইলেকট্রনিক তহবিল স্থানান্তরের সময় অর্থপ্রদানের পদ্ধতি, দেশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্থপ্রদানের সময় অনুসারে পরিবর্তিত হয়। সাধারণভাবে, প্রক্রিয়াকরণের সময় তাত্ক্ষণিক থেকে তিন ব্যবসায়িক দিনের মধ্যে থাকে।

ইএফটির সুবিধা ও অসুবিধা

নমনীয় এবং সুবিধাজনক ।
EFT এর সহজতা এবং খরচ যারা পরিষেবাটি ব্যবহার করেন তাদের জন্য অসাধারণ সুবিধা দেয়। যাইহোক, প্রতিটি পেয়ারের সেট-আপ প্রয়োজনীয়তা নেভিগেট করা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে।

কেন সরকারি কর্মচারীদের বেতন ইএফটির মাধ্যমে প্রদান করা হয়

সরকারি রোডম্যাপ অনুসারে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা গত এপ্রিল/২১ মাসের মধ্যে ইএফটি’র মাধ্যমে প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। হিসাবরক্ষণ অফিসগুলোও সকল কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি ইএফটি’র মাধ্যমে প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছিল। এতে করে কর্মচারীগণ প্রতিমাসের ০১-০২ তারিখের মধ্যে নিজ নিজ হিসাবে বেতন ভাতাদি প্রাপ্য হচ্ছেন। 

ম্যানুয়ালি এ্যাডভাইজ প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রতিটি লেনদেনের জন্য ব্যাংক চার্জ প্রদান করতে হয়। ইএফটি’র মাধ্যমে একাউন্ট ক্রেডিট হতে কোন প্রকার ব্যাংক চার্জ কর্তন করা হয় না। চেকের মাধ্যমে বেতন ভাতাদি প্রদান করা হলেও চেক ক্লিয়ারিং চার্জ কর্তন করা হয়।

ইএফটি চালু হওয়ার ক্ষেত্রে ভূয়া চেক প্রদানের সুযোগ থাকবে না। সরকারি কোন চার্জ প্রদানের বিধি লঙ্গন হবে না। কোন কর্মচারীকে ক্যাশ লেনদেনের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বহন করতে হবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেনদেনের স্বচ্ছতা আসবে প্রতিটি লেনদেনের স্বচ্ছা ডকুমেন্ট থাকবে। কর্মচারীদের প্রদত্ত বেতন ভাতাদির হিসাব খুব সহজেই বের করা যাবে।

সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০১৯ অনুসারে কোন কর্মচারী এ ঋণ পেতে হলে তার বেতন ভাতাদি ইএফটি’র মাধ্যমে পরিশোধিত করতে হবে। বেতন ভাতাদি ইএফটি’র মাধ্যমে পরিশোধ না হলে যে কোন ব্যাংক লোন পেতেও বেগ পেতে হয় কর্মচারীদের তাই ইএফটি’র মাধ্যমে বেতন ভাতাদি হওয়া জরুরি।

লেখকের শেষকথাঃ

এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের জন্য ইএফটি পদ্ধতি আশির্বাদ হয়ে আসবে, যদি এটা কার্যকর হয় তবেই। কেন কার্যকরের কথা বলছি, কারণ ইতিপূর্বে বিগত ৩ বছর আগেও দেখেছি ইএফটি নিয়ে তোড়জোড় করতে। সেই সময় সবগুলো হাই স্কুলগুলোকে তড়িঘড়ি করে ইএফটির এ্যাকাউন্ট খুলিয়েছিল। 

কিন্তু তার আর এই পর্যন্ত আর খবর নাই। এবাও যেন এমনটি না হয়। আশা করছি সরকারি-বেসরকারির এই বৈশম্য দুর হবে এবার। এমনিতেই এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা অনেক বঞ্জনার স্বীকার। এবার অন্তত তাদের একটি বৈশম্য দুর হবে। ভালো থাকুন,  সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ। 



















এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪