তাল শাঁসের পুষ্টিগুণ ও তাল শাঁসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আমরা এই গরমের সময় প্রায়ই তালশাঁস (পানিতালা) বা তালকুর খেয়ে থাকি। গ্রামে কিংবা শহরে এই তালশাঁস খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা কি জানি এই তালশাঁসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।
তাল শাঁসের পুষ্টিগুণ ও তাল শাঁসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে তালশাঁসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবাে। এই গরমে তালশাঁস কেন খাবেন, তাও জানতে পারবেন আজকের আলোচনায়।

সূচীপত্রঃ

তাল শাঁসের পুষ্টিগুণ
তাল শাঁস খাওয়ার উপকারিতা
তালের শাঁসের অপকারিতা
গরমে তালের শাঁসের যত উপকারিতা
তালের শাঁস খেলে যে রোগ থেকে মুক্তি মিলবে
গর্ভাবস্থায় তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা
তালের শাঁস কখন পাওয়া যায়
তালগাছের যত উপকারিতা
লেখকের শেষকথাঃ

তাল শাঁসের পুষ্টিগুণ

গ্রীষ্মের অন্যতম একটি হালকা মিষ্টি স্বাদের ফল হচ্ছে কাঁচা তাল অর্থাৎ তালের শাঁস। এশিয়ার দেশেগুলোতে গরমে কাঁচা তালের শাঁস খুবই জনপ্রিয় পুষ্টিকর একটি খাবার হিসেবে পরিচিত। তালের শাঁস খেতে অনেকটা নারকেলের মতই। কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়, এর রয়েছে অবিশ্বাস্য পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা।

প্রতি ১০০ গ্রাম তালের শাঁসে রয়েছে ৮৭ কিলোক্যালরি, ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, জলীয় অংশ ৮৭.৬ গ্রাম, আমিষ .৮ গ্রাম, ফ্যাট .১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেটস ১০.৯ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন .০৪ গ্রাম, রিবোফাভিন .০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন .৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম। এসব উপাদান আপনার শরীরকে নানা রোগ থেকে রক্ষা করাসহ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

তাল শাঁস খাওয়ার উপকারিতা

তালশাঁস খেলে মুখের অরুচি এবং বমি বমি ভাব দূর হয়। তালশাঁসে থাকা ক্যালসিয়াস, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের অ্যালার্জি, পানি পড়া ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন থাকায় তালশাঁস রক্তশূন্যতা দূর করতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

  • তালের শাঁস প্রাকৃতিকভাবে দেহকে রাখে ক্লান্তিহীন।
  • গরমের তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানিশূন্যতা দূর করে।
  • খাবারে রুচি বাড়িয়ে দিতেও সহায়ক।
  • তালে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে।
  • তালে থাকা উপকারী উপদান আপনার ত্বকের যত্ন নিতে সক্ষম।
  • কচি তালের শাঁস লিভারের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
  • কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূরীকরণে দারুণ ভূমিকা রাখে।
  • তালের শাঁসে থাকা ক্যালসিয়াম হাঁড় গঠনে দারুণ ভূমিকা রাখে।
  • তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
  • তালে থাকা ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স আপনার পানি পানের তৃপ্তি বাড়িয়ে দেয়।
  • তাল বমিভাব আর বিস্বাদ দূর করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তালের শাঁসের অপকারিতা

অতিরিক্ত ক্যালোরিঃ তাল ফলে সাধারণত উচ্চ ক্যালোরি থাকে, যা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই যারা ওজন কমাতে চান বা ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাদের জন্য তাল শাঁস খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

অ্যালার্জিঃ কিছু মানুষের জন্য তালের শাঁসের সাথে অ্যালার্জি হতে পারে। তালের শাঁস খেলে যাদের এলার্জির সমস্যা হয়, তাদের তাল শাঁস খাওয়া উচিত না। তাই কোনও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যারা আপনার নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন।

গরমে তালের শাঁসের যত উপকারিতা

তীব্র এই গরমে প্রাণ জুড়াতে কাজ করে যেসব ফল, তালের শাঁস তাদের মধ্যে অন্যতম। তালশাঁস হলো তালের কাঁচা অবস্থা, এটি সুস্বাদু ও ঠান্ডা ধাঁচের। অনেকে তালের শাঁস কিনে এনে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে খান। তখন এটি আরও বেশি সুস্বাদু লাগে। তালের শাঁস যে শুধু খেতেই ভালো, তা কিন্তু নয়। এটি নানা পুষ্টিগুণে ভরা।

১. এই ফল শরীরে শক্তি জোগায় ও দৈহিক তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলেই শরীর ভেতর থেকে ঠান্ডা থাকে। এতে থাকা ক্যালসিয়াম হাঁড় গঠনে ভূমিকা রাখে। দাঁত ভালো রাখে ও মজবুত করে ।

২. শরীরকে আর্দ্র রাখতেও তালের শাঁস বিশেষ উপকারী। তবে গরমে এই ফল বেশি খেলে আবার পেট গরম হতে পারে। তাই অল্প পরিমাণে খাওয়াই ভালো। মনে রাখবেন খেতে ভালো লাগছে এবং উপকার আছে বলেই কিন্তু অনেক বেশি খাওয়া যাবে না।

৩. পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা, পেট গরমভাব ও জ্বালাপোড়া কমায় এই তালশাঁস। এই ফল খেলে হজমের সমস্যাও দূর করে। নিয়মিত খেলে তাই দূর হয় রক্তশূন্যতার মতো সমস্যা।

৪. বর্তমানে অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে অনেকেই ভুগছেন লিভারের সমস্যায়। জানেন কি তালের শাঁস লিভারের সুরক্ষায় খুব ভালো কাজ করে। লিভারের ওপর এটি পাতলা আস্তরণের মতো কাজ করে।

৫. তালের শাঁস শরীরের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়া ইত্যাদি রোধ করতে সহায়তা করে ফলটি।

৬. তালশাঁসে রয়েছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করতে সাহায্য করে। শরীরের জন্য উপকারী ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স মেলে এতে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় তালের শাঁস খেলে।

৭. গরমে হাত পায়ে চুলকানি কিংবা অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে এমনটি ঘটে। এ সমস্যারও সমাধান করে তালের শাঁস। তাই গরমে দৈনিক খাদ্যতালিকায় রাখুন তালের শাঁস।

তালের শাঁস খেলে যে রোগ থেকে মুক্তি মিলবে

  • তালের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধি রোগ থেকেও রক্ষা করে রসালো এই তালের শাঁস।
  • তালের শাঁস আমাদের স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে এবং শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে থাকে।
  • বমি ভাব আর মুখের অরুচিও দূর করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • তালের শাঁসে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি দাঁতের জন্য অনেক ভালো। দাঁতের এনামেল ভালো রাখে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।
  • তালের শাঁস হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূরীকরণে দারুণ ভূমিকা রাখে।
  • চোখের এলার্জি সহ অন্যান্য চোখের রোগের প্রকোপ কমাতে তাল অনেক কার্যকরী।
  • তালে শাঁসে খেলে বিভিন্ন রকম মৌসুমী অসুখ থেকে মুক্তি পাই।
  • তালের শাঁস খেলে লিভারের সমস্যা দূর হয়।
  • তালে শাঁস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

গর্ভাবস্থায় তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা

তালশাঁসের ভিটামিন A, E, এবং B7 ত্বক ও চুলের জন্য দারুণ উপকারী। ডায়রিয়া এবং বমি করা রোগীদের ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে এটি মাঝারি পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়াও, গর্ভাবস্থাকালীন ক্লান্তি দূর করার জন্য গর্ভাবস্থায় তালশাঁস খাওয়ার পক্ষে আদর্শ।

গর্ভবতী নারীদের অবশ্যই নিজেকে ক্ষতিকর খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। কেননা ওই সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে গর্ভে থাকা শিশু সুস্থ থাকে। গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের বমি বমি ভাব কিংবা বমি হয়ে থাকে। তবে এই সমস্যা দূর করতে তাল শাঁস খুবই উপকারী।

গর্ভাবস্থায় তাল শাঁস খেলে এই সব স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এছাড়াও এই তালের শাঁসে থাকা পুষ্টিগুণ গর্ভবতী মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাল শাঁস মায়ের বুকের দুধের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি করে এবং পুষ্টিগুণ যোগ করে।

তবে অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো। অতিরিক্ত খেলে পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় তাল শাঁস খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার অভিজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। আশা করি গর্ভাবস্থায় তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন।

তালের শাঁস কখন পাওয়া যায়

তালের শাঁস সাধারণত গ্রীষ্মের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে, আবহাওয়া এবং তালগাছের জাত অনুযায়ী এর সময়কাল একটু এগিয়ে পিছিয়ে যেতে পারে। ফাল্গুন মাসের শেষের দিকেও তালের শাঁস পাওয়া যায়।

তালগাছের যত উপকারিতা

বিশেষজ্ঞারা বলছেন, তালগাছে কার্বনের স্তর বেশি থাকায় তা বজ্রপাত নিরোধে সহায়তা করে। কারণ, তালগাছের বাকলে পুরু কার্বনের স্তর থাকে। তালগাছের উচ্চতা ও গঠনগত দিক থেকেও বজ্রপাত নিরোধে সহায়ক। তালগাছের পাতা অনেক বড় হওয়ার কারণে অক্সিজেন তৈরি হয় বেশি। যা আমাদের জন্য অত্যান্ত প্রয়োজনীয়। 

তীব্র গরমের হাত থেকে বাচতে আমরা তালপাতা পাখা ব্যবহার করে থাকি। তালের রস, তালের গুড়, তালের শাঁস দিয়ে তৈরি মিষ্টি খাবার খুব সুস্বাদু। আরো আছে তালের বড়া, তালের পিঠা ইত্যাদি। বড় বড় তালের গাছ গ্রামের ঘর বাড়ি বানাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তালগাছের উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না।

লেখকের শেষকথাঃ

গ্রামে গ্রামে তালের শাঁস খাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। ছোট-বড়, যুবক সবায় যেন ব্যস্ত এই সুমিষ্টি তালশাঁস খেতে। শহরেও বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে বসে আছে বিক্রেতারা। আপনি এই গরমের সময় যেখান থেকে পারেন, যেভাবে পারেন তালের শাঁস খেতে ভূলবেন না। 

নিশ্চয় উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন তালের শাঁসের পুষ্টিগুণের কথা এবং নানান উপকারিতা। এখুনো যারা খাবো খাবো করে খাননি তারা আশেপাশের কোন জায়গা থেকে কিনে তালের শাঁস খান এবং উপরে বর্ণিত উপকারগুলো পেয়ে যান। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।



















এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪