তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি বেশ কিছু নফল নামাজ রয়েছে। সকল নফল নামাজের মধ্যে অন্যতম নফল নামাজ হচ্ছে তাহাজ্জুদ। এই তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আমরা সবাই কি জানি ?
হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। এখানে জানতে পারবেন তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় ও নিয়ম সম্পর্কে।
সূচীপত্রঃ
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
তাহাজ্জুদ দোয়া কবুলের শেষ্ঠ সময়
তাহাজ্জুদ নামাজের ঘটনা
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত হাদিস
তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়ে উক্তি
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
লেখকের শেষকথাঃ
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
আল্লাহ যেখানে নিজে বান্দার কাছে প্রার্থনা ও ক্ষমার আহ্বান জানান, সেখানে বান্দার প্রার্থনা ও ক্ষমার আবেদন পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ। তাহাজ্জুদের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও নৈকট্য লাভ করেন। দিনের নামাজ আদায় করলে প্রকাশ্য সদকা হয়। আর তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করলে গোপন সদকা হয়।
মধ্যরাতে যখন লোকেরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, পূণ্যার্থী তখন ঘুম থেকে জেগে ইবাদত-বন্দেগি করেন। সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। সুবহে সাদিক হয়ে গেলে এ নামাজ আর পড়া যায় না। যদি রাত দ্বিপ্রহরের পর ঘুম থেকে জেগে ওঠার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে এশার নামাজের পর এবং বিতরের আগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে হয়। তবে রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে তাতে সওয়াব বেশি।
তাহাজ্জুদের মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহ বান্দাদের প্রতি তাদের কাজের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনার আহ্বান জানান।
আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘প্রতি রাতের শেষ এক-তৃতীয়াংশে আল্লাহ জমিনের কাছাকাছি আসমানে নেমে এসে তাঁর বান্দাদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, কে আছ যে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, যাতে আমি তার প্রার্থনার জবাব দিতে পারি? কে আছ যে আমার কাছে কিছু চাইবে, যাতে আমি তাকে তার প্রার্থিত বস্তু দিতে পারি? কে আছ যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, যাতে আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি?’ (বুখারি ও মুসলিম)
মক্কায় অবতীর্ণ সুরা মুজ্জাম্মিলের আয়াত সংখ্যা ২০। এ সুরার শুরুতে আল্লাহ-তাআলা রাসুল (সাঃ)-কে রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার আদেশ দেন। কারণ আল্লাহ তখন তাঁকে নবুয়তের জন্য প্রস্তুত করতে চাচ্ছেন। আত্মসংযমের জন্য বেশি কার্যকর ও কোরআন তিলাওয়াতের সেরা সময় তাহাজ্জুদ। মধ্যরাতের পর শয্যাত্যাগ করাকে তাহাজ্জুদ বলা হয়। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় হলো রাত ২টার পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুমিনের পরিচয়। এর গুরুত্ব অপরিসীম। এর পরই যে নামাজ আল্লাহর কাছে প্রিয় তা হল তাহাজ্জুদ। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস; নবীজী (সাঃ) বলেন-
أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرّمُ، وَأَفْضَلُ الصّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ، صَلاَةُ اللّيْلِ.
রমযানের পর রোযা রাখার উত্তম সময় মুহাররম মাস আর ফরয নামাযের পর উত্তম নামাজ রাতের নামাজ, অর্থাৎ তাহাজ্জুদ। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭২৫
কুরআনের বিভিন্ন সুরায় এ নামাজের প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে। যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবেন, তাদের মধ্যে একশ্রেণির মানুষ হলেন তারা, যারা যত্নের সঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। প্রিয় নবীর পর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়িসহ সব যুগের ওলি ও বিদ্বানরা তাহাজ্জুদ নামাজে রাত কাটিয়েছেন।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, 'ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ তথা রাতের নামাজ।' (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)
এশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবহে সাদিক অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্তের আগ পর্যন্ত সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকায়াত পর্যন্ত পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। সর্ব নিম্ন ২ রাকায়াত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাআত।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে এটা পড়া আবশ্যক নয়। সম্ভব হলে ১২ রাকাআত তাহাজ্জুদ আদায় করা যায়। তবে ৮ রাকাআত আদায় করা উত্তম। সম্ভব না হলে ৪ রাকাআত আদায় করা। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে ২ রাকাআত হলেও তাহাজ্জুদ আদায় করা ভালো। তবে তাহাজ্জুদ নামাজের কোনো কাজা নেই।
তাহাজ্জুদ গুনাহ মিটিয়ে দেয় এবং মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল কারীম (সাঃ) বলেন-
عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللّيْلِ فَإِنّهُ دَأَبُ الصّالِحِينَ قَبْلَكُمْ، وَهُوَ قُرْبَةٌ إِلَى رَبِّكُمْ، وَمَكْفَرَةٌ لِلسّيِّئَاتِ، وَمَنْهَاةٌ لِلإِثْمِ.
তোমরা কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নবান হও। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সালেহীনের অভ্যাস এবং রবের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। আর তা পাপরাশী মোচনকারী এবং গোনাহ থেকে বাধা প্রদানকারী। -জামে তিরমিযি, হাদীস ৩৫৪৯
তাহাজ্জুদের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও নৈকট্য লাভ করেন। দিনের নামাজ আদায় করলে প্রকাশ্য সদকা হয়। আর তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করলে গোপন সদকা হয়। তাহাজ্জুদের নামাজ বান্দাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম করে। এ ছাড়া শত্রুর ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাহাজ্জুদের গুরুত্ব রয়েছে। তাহাজ্জুদ নামাজে রাসুল (সাঃ)–এর সুন্নতের অনুসরণ তো হয়ই, এতে আত্মারও উন্নয়ন হয়।
৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
একটানা ৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের ফজিলত সম্পর্কে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, কেউ যদি তার কোনো ইচ্ছা আল্লাহর কাছে পেশ করতে চায়, মহান আল্লাহর থেকে কিছু পেতে চায়, সে যেন একটানা ৪০ দিন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে তার ইচ্ছা কথা বলে চেয়ে নেয়।
অবশ্যই অবশ্যই তার যেকোনো হালাল ইচ্ছা আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কবুল করে নেবেন। হাদিস-(বুখারী শরীফ) প্রিয় নবীর উপরে তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ ছিল কিন্তু এটি উম্মতে মোহাম্মদের উপরে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ সুন্নত হিসেবে মর্যাদা প্রাপ্ত এই তাহাজ্জুদ নামাজ।
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব এতটাই বেশি যে পবিত্র মক্কা,মদিনায় হারামাইন শরিফাইনে আযান দিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, এবং খুবই গুরুত্ব সহকারে এই পবিত্র তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে সুরা: আযযারিয়াত ১৭-১৮ মহান আল্লাহতায়ালা বলেন-
‘যারা শেষ রাতে ইবাদত ও প্রার্থনা করেন তাদের প্রশংসাস্বরূপ কিয়ামত দিবসে বলবেন, তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে আর রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে। শব্দের অর্থ ঘুম থেকে জাগা, তার জন্য আমাদের সর্বোত্তম সময় হলো এশার নামাজের পর ঘুমিয়ে শেষ রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে-
রাতের অর্ধেক অংশের পর তারা যদি নামাজ আদায় করে, তাহাজ্জুদ নামাজের শেষ সময় হল সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত থাকে। গভীর রাত্রে ঘুম থেকে জেগে উঠার পর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করলে সবচেয়ে বেশি সওয়াব হয় যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে-
তখন মহান আল্লাহ প্রতি রাতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন। তিনি তখন বলতে থাকেন, কে আছো যে আমায় ডাকবে? আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করব। কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করব। হাদিস-(বুখারি শরীফ) আর এই হাদিসটি মুসলিম শরীফের হাদিসেও বর্ণিত রয়েছে।
তাহাজ্জুদ দোয়া কবুলের শেষ্ঠ সময়
রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ। এ নামাজের সেজদায় গিয়ে নিজের মনের ইচ্ছাগুলো প্রকাশ করুন। এ সময় আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের মনের ইচ্ছেগুলো প্রকাশ করলে সবচেয়ে বেশি কবুল হয়। রাসুল (সাঃ) এর হাদিসে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বন্ধু নবিজী (সাঃ) এর প্রতি এ মর্মে আয়াত নাজিল করেন-
كَانُوا قَلِيلاً مِنْ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ - وَ بِالۡاَسۡحَارِ هُمۡ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ
‘রাতের সামান্য সময়ই তাঁরা ঘুমে থাকেন, শেষ রাতে তাঁরা ইসতেগফার করেন।’ (সুরা জারিয়াত : ১৭-১৮)‘ভোরের সময়টি দোয়া গ্রহণের অন্যতম উত্তম সময়। হাদিসে এসেছে যে, ‘যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে, তখন মহান আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং ডাক দিয়ে বলেন যে, কেউ তওবাকারী আছে কি ?
যার তওবা আমি কবুল করবো, কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি ? যাকে আমি ক্ষমা করবো, কেউ কিছু চায় কি ? যাকে আমি দান করব? এইভাবে সুবহে সাদিক এর আগ পর্যন্ত বলতে থাকেন। এই ভাবেই রহমত, মাগফিরাত বান্দাদের মাঝে উজাড় করে বিতরণ করতে থাকেন। যিনি সৌভাগ্যবান তিনি নিজের গুনাহ মাফ করে নেন, আর হতভাগারা ঘুমেয়ে রাত পার করে থাকেন।
রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ শেষ রাতের দিকে পড়া হয়। শেষ রাতের ইবাদত ও দোয়া কবুল প্রসঙ্গে হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ওঠে এসেছে। তাহলো-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে দুনিয়ার কাছাকাছি আকাশে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন-
- কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে ? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো।
- কে আছে এমন যে, আমার কাছে চাইবে ? আমি তাকে তা দেবো।
- কে আছে এমন যে, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে ? আমি তাকে ক্ষমা করবো।’ (মুসলিম, বুখারি, মুসনাদে আহমাদ)
সুতরাং রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ দোয়া কবুলের অন্যতম সময়। এসময় নবিজীর শেখানো পদ্ধতিতে দোয়া করলে মহান আল্লাহ তা কুবল করেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রাতের শেষভাগে তাহাজ্জুদ পড়ার তাওফিক দান করুন। নবিজীর শেখানো পদ্ধতিতে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
তাহাজ্জুদের মাধ্যমে দুয়া কবুল হওয়ার কিছু বিখ্যাত ঘটনা রয়েছে। যেমন, হযরত ইউসুফ (আঃ) তার ভাইদের কাছে ফিরে যেতে তাহাজ্জুদের মাধ্যমে দুয়া করেছিলেন। আল্লাহ তার দুয়া কবুল করেছিলেন এবং হযরত ইউসুফ (আঃ) তার ভাইদের কাছে ফিরে যেতে পেরেছিলেন।
সুতরাং, তাহাজ্জুদের মাধ্যমে অলৌকিকভাবে অসম্ভব দুয়া কবুল হতে পারে। এজন্য, মুমিনদের উচিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দুয়া করা।
তাহাজ্জুদ নামাজের এক ঘটনা
ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহঃ এর উধৃত এক ঘটনা। এক ভদ্রলোক আমার বাসায় আসলেন। তিনি তার মুছিবত বর্ণনা করে দোয়া চাইলেন। ভদ্রলোক তার এক খন্ড জমিতে ফ্ল্যাট বানাতে এক রিয়াল ইস্টেট কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। জমির দলিল হস্তান্তর করেছেন তাদের।
বিল্ডিং তৈরী হলে চুক্তিমোতাবেক তাকে কয়েকটি ফ্ল্যাট দেয়া হবে বাকীগুলো রিয়াল ইস্টেট কোম্পানি নেবে। এখন রিয়াল ইস্টেট কোম্পানি তার জমিতে ফ্ল্যাটও বানাচ্ছে না আবার তাকে তার জমির কাগজও বুঝিয়ে দিচ্ছেনা। পার্টি খুব শক্ত জোড় করার সুযোগ নেই। হুজুর দোয়া করবেন।
আমি সব শুনে ভদ্রলোককে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের পরামর্শ দিলাম। বললাম তাহাজ্জুদ নামাজে সিজদায় গিয়ে আল্লাহ তা’আলার নিকট নিজের মুছিবতের কথা বর্ণনা করুন। আল্লাহ তা’আলার নিকট সাহায্য চান। ভদ্রলোক আমার কথায় রাজি হয়ে চলে গেলেন।
এর মধ্যে অনেকদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। একদিন আমি টিভি প্রোগ্রামের জন্য বাসার বাহিরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় সেই ব্যক্তি বাসায় এসে হাজির। নিজে থেকেই সে বললোঃ হুজুর আপনি যে আমল শিখিয়ে দিয়েছিলেন তা শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই একদিন বাসার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুলে দেখি সেই রিয়াল ইস্টেট কোম্পানির লোক জমির দলিল হাতে দাড়িয়ে।
বলেঃ আপনার জমির কাগজ ফেরত নিন। আমরা আসলে আপনার জমিতে কিছু করতে পারলাম না। তাই আপনার জমির কাগজ ফেরত দিতে এসেছি। হুজুর, আমি তাদের কিছুই বলিনি। নিজে থেকেই তারা আমার জমির কাগজ ফেরত দিয়ে দিয়েছে। আমি খুশীও হয়েছি আবার কষ্টও লাগছে। মনে হচ্ছে আরও কিছুদিন পরে জমির কাগজ ফেরত দিলেই ভালো হতো।
আল্লাহর দরবারে আরও কিছুদিন দোয়া করতে পারতাম। সুপ্রিয় ভাই-বোনেরা রাতের শেষ অংশে সিজদায় পড়ে আল্লাহ তা’আলার নিকট ইবাদতের স্বাদ যারা একবার পেয়ে যায় তারা এ স্বাদ কিছুতেই ছাড়তে চায় না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুক, আ-মীন।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত হাদিস
তাহাজ্জুদ অন্তর ও আত্মার শক্তি সঞ্চয়ের শক্তিশালী মাধ্যম। প্রাণহীন হৃদকে সজীব করার এক শ্রেষ্ঠতম উপায়। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার এক অনন্য মধ্যম সালাতুত তাহাজ্জুদ। ফরজ নামাজের পরে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ নামাজ তাহাজ্জুদের নামাজ।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হচ্ছে রাতের নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৪৫) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদত করবে। কারণ এটা তোমাদের আগের নেক লোকদের অভ্যাস।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৬১৯)
হযরত বিলাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ) প্রতিষ্ঠা করা উচিত। কেননা, এ হলো তোমাদের পূর্ববর্তী নেককারদের অবলম্বিত রীতি। রাতের নামাজ আল্লাহর নৈকট্যলাভ ও গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়; মন্দ কাজের কাফফারা এবং শারীরিক রোগের প্রতিরোধক।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৯)
তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়ে উক্তি
নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি এবং মুসলিম জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের অংশ। এটি আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের একটি মাধ্যম। এমন কোন ওলি আওলিয়া নেই, যারা রাত জেগে জেগে নামাজ পড়েন নাই। নিচে কিছু নামাজ নিয়ে উক্তি উল্লেখ করা হলো যা এর গুরুত্ব ও মহত্ব তুলে ধরেছেঃ
১। "নামাজ মুমিনের মেরাজ।"
- এই উক্তিটি নামাজের মাধ্যমে মুসলমানদের আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার প্রতিফলন করে।
২। "নামাজ হলো মুমিনের নূর, যা তার জীবনের অন্ধকার দূর করে।"
- নামাজের মাধ্যমে একজন মুমিন আত্মিক আলোকিত হয় এবং জীবনের প্রতিটি দিক আলোকিত হয়।
৩। "নামাজ ছাড়া ঈমান অসম্পূর্ণ।"
- নামাজ ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি এবং এটি ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৪। "নামাজ হৃদয়ের প্রশান্তি এনে দেয়।"
- নামাজের মাধ্যমে একজন মুমিন তার সকল চিন্তা ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি পায় এবং হৃদয়ে প্রশান্তি লাভ করে।
৫। "নামাজ হলো জান্নাতের চাবি।"
- নামাজ নিয়মিত পালন করলে জান্নাতে প্রবেশের পথ সুগম হয়।
৬। "নামাজ মুমিনের জন্য ঢালস্বরূপ।"
- নামাজ মানুষের পাপ থেকে রক্ষা করে এবং তাকে নৈতিকতার পথে পরিচালিত করে।
৭। "নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছাকাছি যাওয়া যায়।"
- নামাজ আল্লাহর সাথে মুমিনের সম্পর্ককে মজবুত করে।
৮। "নামাজ হলো জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার চাবি।"
- নামাজ মানুষকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হতে সাহায্য করে।
৯। "নামাজ হলো দিনের সবচেয়ে সুন্দর অংশ।"
- নামাজের মাধ্যমে প্রতিদিনের কাজের মধ্যে শান্তি ও সুস্থিরতা আসে।
১০। "নামাজ মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে।"
- নামাজ মানুষের অন্তরকে পবিত্র করে এবং তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়তা করে।
নামাজ মানুষের জীবনে প্রশান্তি, স্থিরতা এবং আল্লাহর নৈকট্য নিয়ে আসে। এসব উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় নামাজের অপরিসীম গুরুত্ব এবং তা নিয়মিতভাবে পালনের প্রয়োজনীয়তা।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
নামাজ শ্রেষ্ঠ ইবাদত। ফরজ নামাজের পর তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ, তথা রাতের নামাজ।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)
বিজ্ঞ আলেমদের মতে, তাহাজ্জুদ নামাজ একটি নফল নামাজ। নবীজি (সাঃ) থেকে এ নামাজ বেশির ভাগ সময় আট রাকাত পড়তেন মর্মে প্রমাণিত। এর থেকে বেশি বা কম পড়াতেও কোন সমস্যা নেই। যেহেতু নফল, তাই যত ইচ্ছা পড়া যায়। দুই রাকাত দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব পড়তে পারেন। তবে রাসুল (সাঃ) দীর্ঘ সুরা তিলাওয়াত করতেন তাহাজ্জুদ নামাজে।
সাধারণত সাহরির সময়ই হলো তাহাজ্জুদের সময়। এ সময়ে শেষ হওয়ার আগেই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হয়। ঘুম থেকে উঠে ভালোভাবে অজু করে প্রথমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে জায়নামাজে বসে জিকির করবে। এরপর দুই দুই রাকাত করে আট রাকাত নামাজ আদায় করতে পারবেন।
রসুল (সাঃ) দুই দুই রাকাআত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত পড়তে পারবে। আবার দুই দুই রাকাত করে যত রাকাত ইচ্ছা আদায় করা যায়। তবে এই নামাজ আট রাকাত আদায় করা উত্তম। যেহেতু রাসুল (সাঃ) রমজান এবং রমজানের বাইরে বিতিরসহ এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না। তবে যে কয় রাকাতই পড়া হোক, তা নিয়মিত আদায়ের অভ্যাস করা।
হযরত আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন, রমজানে নবীজির নামাজ কেমন হতো? তিনি উত্তরে বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রমজানে এবং রমজানের বাইরে এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাইবাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। (বোখারি ১/১৫৪)
লেখকের শেষকথাঃ
নামাজ হচ্ছে অন্য রকম ইবাদত। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কঠিন বিচারের দিন সর্ব প্রথম নামাজের হিসাব নিবেন। নামাজের হিসাব দিতে গিয়ে যদি কোন নামাজের ঘাটতি থাকে তবে, এই সমস্ত নফল নামাজ দিয়ে পূরণ করবেন। সকল নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ সবচেয়ে উত্তম। যখন পৃথিবীর সকল মানুষ ঘুমিয়ে রাত পার করছে, ঠিক তখনই তাহাজ্জুদে ব্যস্ত থাকে একদল মুমিন।
অন্যান্য নফল নামাজ হতে তাহাজ্জুদ নামাজটা আলাদা। কারণ শেষ রাতের ঘুম সব চাইতে আরামের ও প্রশান্তির। আর এই আরামের ঘুম ত্যাগ করে নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা অনেক কঠিন ও কষ্টের। যারা এই কষ্টকে বরণ করে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বে তারাইতো আল্লাহর কাছে পুরুস্কার পাবেন। তাহাজ্জুদ নামাজের অভ্যাস করুন, ভালো থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url