ফরিদপুরে পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদনের প্ল্যান্টের উদ্বোধনের খবর জানুন

মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে সব চাইতে বেমি আমদানি করতে যে জিনিসটি সেটি হচ্ছে জ্বালানি তেল। বাংলাদেশে কোথাও কোথাও জ্বালানি তেল উৎপাদন হলেও পরিমানে খুব কম। অপর দিকে পলিথিন বর্জ্য হিসেবে অনেক পরিমানে জমে থাকে।
ফরিদপুরে পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদনের প্ল্যান্টের উদ্বোধনের খবর জানুন

এই পলিথিন বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে ফরিদপুরে পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদনের প্ল্যান্ট উদ্বোধন করা হয়েছে। হ্যা বন্ধুরা এই প্রথম ফরিদপুর পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে ডেনমার্কের অর্থায়নে এই প্ল্যান্ট উদ্বোধন করা হয়।

সূচীপত্রঃ

ফরিদপুরে প্রথম পলিথিন থেকে জ্বালানি তেলের প্ল্যান্ট
পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল
পলিথিন থেকে মুক্তির উপায়
পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার কমানোর উপায়
প্লাস্টিক ক্ষতিকর কেন ?
৭ কেজি পলিথিন পুড়িয়ে ৫ লিটার পেট্রোল
লেখেকের শেষকথাঃ

ফরিদপুরে প্রথম পলিথিন থেকে জ্বালানি তেলের প্ল্যান্ট

বাংলাদেশে এই প্রথম ফরিদপুরে সিঙ্গেল ইউজড পলিথিন বর্জ্য থেকে রিসাইকেলিংয়ের মাধ্যমে তেল উৎপাদন কার্যক্রম (পাইরোলাইসিস প্লান্ট) এর উদ্ভোধন করা হয়েছে। এতে করে যেমন তেলের চাহিদা কিছুটা মিটবে তেমনি দূষিত পলিথিন ও প্লাষ্টিকের বর্জ্য থেকে পরিবেশ রক্ষা পাবে। এমন প্ল্যান্ট প্রত্যেকটা জেলা শহরে স্থাপন করা দরকার।

প্র্যাক্টিক্যাল এ্যাকশনের সহযোগিতায় ও ফরিদপুর পৌরসভার উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়েছে। শহরতলীর আদমপুরে অবস্থিত পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে দেশে প্রথমবারের মতো পাইরোলাইসিস প্লান্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০২৪ সালের জুন মাসের ১ম সপ্তাহে।

যার মাধ্যমে প্রতিদিন ৩৬০ কেজি পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হবে। এই প্ল্যান্টটি বাস্তবায়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে ফরিদপুর পৌরসভা, প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশন, বেসরকারি কোম্পানি রিভার-সাইকেল, সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি (এসডিসি) এবং ড্যানিডা মার্কেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ। 

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডেনমার্ক দূতাবাসের কমার্সিয়াল কাউন্সিলর এবং হেড অফ ট্রেড মি. আলী মুলাক বাট। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (ঢাকা) মোঃ জিয়াউল হক, ইউএনআইডিও এর প্রতিনিধি ড. জাকিউজ্জামান, ডাবলু,

এসইউপি এর কান্ট্রি ম্যানেজার প্রকৌশলী উত্তম কুমার সাহা এবং প্রাক্টিক্যাল এ্যাকশনের এশিয়া রিজিওনাল পরিচালক ড. অয়ন এ ব্যাণার্জি। সেমিনারে বক্তারা জানান, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যরে টেকসই ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অধিকাংশ একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও নরম প্লাস্টিক পরিবেশ, নদী-নালায়, সড়কের পাশে গিয়ে জমা হচ্ছে। 

যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরুপ। এ পদ্ধতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এই বর্জ্য সঠিকভাবে কর্মীদের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে। সেজন্য বর্জ্য সংগ্রহকারী কর্মীদের মূল্যায়নেরও আহŸান জানান তারা। এছাড়া এসব বর্জ্য বাসা বাড়িতে আলাদা স্থানে রাখা এবং প্লাস্টিক পণ্য কম ব্যবহারের জন্য শহরবাসীদের আহব্বান জানানো হয়।

পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল

ভোলার চরফ্যাশনে মো. রায়হান নামের এক কলেজছাত্র পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক পুড়িয়ে উৎপাদন করছে জ্বালানি তেল। তার জ্বালানি তেলের মেশিন ও তেল দেখতে বাড়িতে ভিড় করছে এলাকাবাসী। সহযোগিতা পেলে ব্যাপক পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে তেল উৎপাদন করতে চায় রায়হান।

সরেজমিনে দেখা যায়, রায়হান বাড়ির পাশে খালি জায়গায় একটি ড্রাম বসিয়ে জ্বালানি তেলের মেশিন বানিয়েছে। পরিত্যক্ত ও পরিবেশ বিনষ্টকারী পলিথিন কুড়িয়ে ওই মেশিনে বা ড্রামে দেয়। তারপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় তাপ দেয়। আগুনের তাপে ড্রাম থেকে নির্গত বায়োগ্যাস পাইপ দিয়ে প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে রাখা পানিতে ঠান্ডা হয়। 

পরে ছোট চারটি কন্টেইনারে জমা হচ্ছে তরল পদার্থ বা জ্বালানি তেল। কন্টেইনারগুলোতে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও বায়োগ্যাস জমা হয়। কলেজছাত্র রায়হান জানায়, ইউটিউবে ভিডিও দেখে হাটবাজার থেকে পরিত্যক্ত পলিথিন সংগ্রহ করে বাড়ির উঠানে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু করে। 

যন্ত্রাংশ বলতে একটি তাপ সহনশীল ড্রাম, চারটি কন্টেইনার, একটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের পাইপ। শুরুতে ড্রামের মধ্যে পলিথিনের কুণ্ডলি বানিয়ে দেয়। পরে মুখ বন্ধ করে আগুনের তাপ দেয়। এতেই পলিথিন গলে ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল ও বায়োগ্যাস উৎপাদন হয়। সেগুলো আগুনে জ্বালিয়ে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষাও করেছে সে।

রায়হান আরও জানায়, বর্তমানে এক লিটার ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ১০-১৫ টাকা। সরকারি সহায়তা পেলে প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ঘটিয়ে প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারবে। তখন বাণিজ্যিকভাবে তেল উৎপাদনের মাধ্যমে জ্বালানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলেও জানায় সে।

মো. আল-আমিন ও মো. আব্বাস নামে স্থানীয় দুজন জানান, প্লাস্টিক বর্জ্য ও পলিথিন মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ফসল ও পরিবেশের ক্ষতি করছে। সম্প্রতি রায়হান ফেলে দেওয়া এসব বর্জ্য থেকে পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদন করছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। সরকারিভাবে তাকে সহযোগিতা করা হলে তেল উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশদূষণ থেকেও বাঁচা যাবে।

চরমানিকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন রাসেল বলেন, ‘রায়হানের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমরা তার এ কাজকে আরও বেগবান করতে পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করব।’

পলিথিন থেকে মুক্তির উপায়

পিই রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হল বর্জ্যের ধরন এবং রঙের উপর ভিত্তি করে বাছাই করা এবং সংগ্রহ করা। সহজ প্রক্রিয়াকরণের জন্য PE তারপর ছোট টুকরা মধ্যে চূর্ণ করা আবশ্যক. PE-এর এই টুকরোগুলোকে গলিয়ে নতুন পণ্যে পরিণত করা হয়, যেমন প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল বা পাইপ।

পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার কমানোর উপায়

কেনাকাটা করার সময় একটি পুনঃব্যবহারযোগ্য ব্যাগ বা পাত্র ব্যবহার করে আপনার নিষ্পত্তিযোগ্য শপিং ব্যাগের ব্যবহার হ্রাস করুন। একাধিক শপিং ট্রিপের জন্য পুরানো প্লাস্টিকের ব্যাগ পুনরায় ব্যবহার করুন। ট্র্যাশ লাইনার বা পোষা বর্জ্য ব্যাগ হিসাবে প্লাস্টিকের ব্যাগ পুনরায় উদ্দেশ্য. সহজে বহনযোগ্য কেনাকাটার জন্য একটি ব্যাগ প্রত্যাখ্যান করুন।

প্লাস্টিক ক্ষতিকর কেন ?

অন্যান্য উপকরণ থেকে ভিন্ন, প্লাস্টিক বায়োডিগ্রেড করে না । এটি ভেঙ্গে যেতে 1,000 বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, তাই যখন এটি বাতিল করা হয়, এটি একটি সংকট পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত পরিবেশে তৈরি হয়। এই দূষণ সামুদ্রিক বন্যপ্রাণীকে শ্বাসরোধ করে, মাটির ক্ষতি করে এবং ভূগর্ভস্থ জলকে বিষাক্ত করে এবং স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

৭ কেজি পলিথিন পুড়িয়ে ৫ লিটার পেট্রোল

পলিথিন থেকে শুধু জ্বালানি তেলই নয়, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ওয়েল্ডিং মেশিনও (ঝালাই মেশিন) তৈরি করছেন তিনি। ১২ ভোল্টের তিনটি ড্রাইসেল (শুষ্ক) ব্যাটারি দিয়ে তৈরি এ মেশিনে প্রায় ৫০টি স্টিক ঝালাই করা সম্ভব। নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এ মেশিনটি তৈরিতে খরচ পড়েছে প্রায় ৪২ হাজার টাকা।

ইদ্রিস আলী বলেন, পরিত্যক্ত ও নোংরা পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল তৈরি করা হচ্ছে এমন একটি ভিডিও তিনি ইউটিউব চ্যানেলে দেখেছেন। আর এ বিষয়টি তাকে তিন মাস চিন্তা ভাবনা করেন। এরপর তিনি বাস্তবে সেই ভাবনাকে রূপদান করেন। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে বাজার থেকে তেলের একটি বড় টিনের ড্রাম (ব্যারেল), একটি মাঝারি প্লাস্টিকের ড্রাম, 

ছোট দুইটি কন্টেইনার, প্রায় ১৫ ফুট স্টিলের চিকন পাইপ ও কয়েক হাত প্লাস্টিকের ফিতা কেনেন। এরপর গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সাল থেকে জ্বালানি তেল তৈরি শুরু করেন। তিনি বলেন, নোংরা ও পরিত্যাক্ত পলিথিন ১০ টাকা কেজি করে টোকাইদের কাছ থেকে কিনে নেন। এরপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিথিনগুলো টিনের ড্রামে ভরে প্রায় আধাঘণ্টা ড্রামের নিচে খড়ি দিয়ে জ্বাল দেন। 

এরপর ড্রাম থেকে নির্গত গ্যাস স্টিলের পাইপ দিয়ে এসে প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে রাখা পানিতে ঠাণ্ড হয়ে প্রেট্রোল এবং ডিজেল ছোট কন্টেইনারে জমা হচ্ছে। ৭ কেজি পলিথিন থেকে প্রায় ৫ লিটার পেট্রোল জাতীয় পদার্থ, আধা লিটার ডিজেল বের করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

লেখকের শেষকথাঃ

পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাষ্টিকের বর্জ্য থেকে অভিনব পদ্ধতিতে তেল উৎপাদন শুরু হয়েছে এটা একটা দারুন খবর। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য। যেহেতু এই দেশের মানুষ অসচেতন, আমরা যেখানে সেখানে পলিথিন বা প্লাষ্টিক ব্যবহারের ফেলে দিই। যা পরে পরিবেশের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর। এই ক্ষতির হাত থেকে দেশ এবং দেশের মানুষকে বাচানোর শেষ্ঠ মাধ্যম হবে পারে এই প্ল্যান্ট।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪