কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও কাঁঠালের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। মিষ্টি এবং সুস্বাদু এই কাঁঠাল খেতে আমরা সবায় পছন্দ করি। কিন্তু আমরা সবায় কি জানি কাঁঠালের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।
কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও কাঁঠালের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে সবার অতিপরিচিত ফল কাঁঠাল নিয়ে আলোচনা করবো। তো আর দেরি না করে আসুন জেনে নেয়া যাক কাঁঠালের পুষ্টিগুণের কথা ও অনেক উপকারিতা সম্পর্কে।

সূচীপত্রঃ

কাঁঠালের পুষ্টিগুণ
কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁচা কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা
কাঁঠালের বিচি খাওয়ার ‍উপকারিতা
কাঁঠাল গাছের ‍উপকারিতা
পাকা ও মিষ্টি কাঁঠাল চেনার উপায়
কাঁঠাল খেলে কি ক্ষতি হয় ?
ওজন কমাতে কাঁঠাল কিভাবে খাবেন ?
লেখকের শেষকথাঃ

কাঁঠালের পুষ্টিগুণ

যেসকল পুষ্টি মানুষের দেহে প্রয়োজন তার প্রায় সবই কাঁঠালের মধ্যে আছে। এজন্যই বাঙালিরা পুষ্টির অভাব পূরণ করার জন্য কাঁঠাল খেয়ে থাকেন। শুধু তাইনয় কাঁঠাল পুষ্টির রাজা এবং গরিবের খাদ্য হিসেবে পরিচিত। কাঁঠাল কাঁচা, পাকা, খোসা, বীজ, শিকড় সবভাবেই খাওয়া যায় এবং প্রতিটি স্তরই পুষ্টির চমৎকার উৎস। কাঁচা কাঁঠাল ও কাঁঠালের বিচি রান্না করে তরকারি বা হালুয়া ও ভর্তা হিসেবে খাওয়া হয়।

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে শক্তি ৩৯৭ কিলোক্যালরি, খাদ্য-আঁশ ২.০০ গ্রাম, চিনি ১৯.০৮ গ্রাম, স্নেহ- ০৬৪ গ্রাম, প্রোটিন ১.৭২ গ্রাম, ভিটামিন এ ৫ মাইক্রোগ্রাম, ভিটা ক্যারোটিন ৬১ মাইক্রোগ্রাম, লুটিন জিয়াক্সানথিন ১৫৭ মাইক্রোগ্রাম, থায়ামিন (বি১) ০.১০৫ মিঃগ্রাম, রিবোফ্লাবিন (বি২) ০.৫৫ মিঃগ্রাম, নায়াসিন (বি৩) ০.৯২ মিঃগ্রাম, 

প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) ০.২৩৫ মিঃগ্রাম, ভিটামিন (বি৬) ০.৩২৯ মিঃগ্রাম, ফোলেট (বি৯) ২৪ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ১৩.৮ মিঃগ্রাম, ভিটামিন ই ০.৩৪ মিঃগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৪ মিঃগ্রাম, লৌহ ০.২৩ মিঃগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৯ মিঃগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.০৪৩ মিঃগ্রাম, ফসফরাস ২১ মিঃগ্রাম, পটাসিয়াম ৪৪৮ মিঃগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিঃগ্রাম, জিংক ০.১৩ মিঃগ্রাম ও অন্যান্য।

কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঁঠালে থাকা প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে।

  • কাঁঠালে থাকা ভিটামিন সি চুল,দাঁত ও দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া ক্যান্সার ও টিউমারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
  • কাঁঠালে থাকা ভিটামিন এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস আলসার, পাইলস ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং বার্ধক্য ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • কাঁঠালে রয়েছে পটাশিয়াম, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন, যা চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • কাঁঠালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে ও বলিরেখা কমিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। মুখে বলিরেখা পড়তে বাধা দেয়। এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে সৃষ্টিকারী ফ্রি রেডিক্যাল প্রতিরোধ করতে লড়াই করে। যা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী।
  • কাঁঠালে থাকা সোডিয়াম ও পটাশিয়াম শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্সকে ঠিক রাখে, যা উচ্চরক্তচাপ ও হার্টও ভালো রাখে।
  • কাঁঠালে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোরি। এজন্যই কাঁঠাল খেলে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়।
  • কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় হজমের সমস্যা দূর করে। যা হজমশক্তি বাড়ায়, পেট পরিষ্কার রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

  • কাঁঠালে থাকা ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড় মজবুত করে ও অস্টিওপোরসিস রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • কাঁঠালে আয়রন থাকে, যা রক্তে লোহিতকণিকার পরিমাণ বাড়ায়। রক্তাল্পতায় রোগীদের জন্য কাঁঠাল খুবই উপকারী যা দেহের রক্তস্বল্পতা দূর করে।
  • কাঁঠালে কোনো ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই এবং ক্ষতিকারক ফ্যাটের পরিমাণ কম হওয়ায় ওজন বাড়ার খুব একটা আশঙ্কা থাকে না
  • টেনশন, নার্ভাসনেস ও বদ হজম কমাতে কাঁঠালে ভূমিকা অনেক।
  • দুগ্ধদানকারী মা তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
  • কাঁঠালে থাকা ম্যাঙ্গানিজ ও খনিজ উপাদান যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • কাঁঠালে থাকা ভিটামিন বি-৬ হৃদরোগের ঝুঁঁকি কমায়।
  • মায়ের পুষ্টিতে: প্রতিদিন ২০০ গ্রাম পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়ে যায়।

কাঁঠালের অপকারিতাঃ

কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। কাঁঠালের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি কাঁঠালের অউপকারিতাও রয়েছে। এখানে আলোচনা করব কাঁঠালের অপকারিতা সম্পর্কে। কাঁঠালের অপকারিতা নিচে উল্লেখ্য করা হলো জেনে নিনঃ

যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের কাঁঠাল খাওয়ায় কিছুটা বিধিনিষেধ আছে। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, তাদের কাঁঠাল না খাওয়াই ভালো। তাছাড়াও অধিক পরিমাণে কাঠাল খেলে তা বদহজম হতে পারে।

কাঁঠালের বিচি খাওয়ার ‍উপকারিতা

মিষ্টি রসালো ফল কাঁঠাল অনেকের পছন্দ হলেও অনেকে এমনও আছেন যারা এটি খেতে পছন্দ করেন না। অনেকে এ রসাল ফলটি না খেলেও এর বিচি খেতে পছন্দ করেন। কাঁঠালের বিচি ভর্তা করে, মাছ-মাংসের সঙ্গে রান্না করে অথবা শুধু ভেজেও খাওয়া যায়।

আপনি জানলে অবাক হবেন, কাঁঠালের বিচির রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। এর প্রতি ১০০ গ্রামে শক্তি পাওয়া যায় ৯৮ ক্যালরি। এ ছাড়া প্রতি ১০০ গ্রামে থাকে কার্বোহাইড্রেট ৩৮.৪ গ্রাম, প্রোটিন ৬.৬ গ্রাম, ফাইবার ১.৫ গ্রাম, চর্বি ০.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ০.০৫ থেকে ০.৫৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.১৩ থেকে ০.২৩ মিলিগ্রাম, আয়রন ১.২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম ও পটাশিয়াম ৪.০৭ মিলিগ্রাম।

এত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন কাঁঠালের বিচির রয়েছে অনেক উপকারিতা।

১. এটি হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং বদহজম রোধ করে

২. এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে

৩. এত থাকা প্রোটিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস মানসিক চাপ কমাতে অনেক কার্যকরী

৪. এটি বলিরেখা দূর করে ওবং ত্বকের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখে

৫. এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'এ' থাকায় এটি শিশুদের চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ও শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে

৬. এটি রাতকানা রোগ কাটাতে সাহায্য করে

৭. এটি খেলে চুলের আগা ফাটা সমস্যা রোধ করে ও চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে

৮. এটি নিয়মিত খেলে তা শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে

৯. এটি অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে

কাঁঠাল গাছের ‍উপকারিতা

কাঁঠাল গাছের শেকড় হাঁপানী উপশম করে। শেকড় সেদ্ধ করলে যে উৎকৃষ্ট পুষ্টি উপাদান নিষ্কাশিত হয় তা হাঁপানীর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। চর্মরোগের সমস্যা সমাধানেও কাঁঠালের শেকড় কার্যকরী। জ্বর এবং ডায়রিয়া নিরাময় করে কাঁঠালের শেকড়।

কাঁঠাল গাছের পাতা ছাগলের আদর্শ খাবার। কাঁঠাল গাছের পাতা ছাগলে খুব পছন্দ করে। অনেকে আছেন যারা প্রতিবছর কাঁঠাল গাছের পাতা বিক্রি করে দেন। কাঁঠাল গাছের কাঠ দিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। এক কথায় কাঁঠালের সব কিছুই মানুষের উপকারে আসে।

পাকা ও মিষ্টি কাঁঠাল চেনার উপায়

কাঁঠালটি মিষ্টি কিনা, তা বোঝার জন্য প্রথমে দেখে নিন কাঁঠালটির রং কেমন। যদি দেখেন কাঁঠালের অনেকটা অংশ সবুজ তাহলে বুঝতে হবে কাঁঠালটি এখনও পাকেনি। কাঁচা থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই কাঁঠাল মিষ্টি হবে না। কাঁঠালের রং যদি উজ্জ্বল হলুদ হয় তাহলে কাঁঠালটি পাকা।

পাকা কাঁঠাল চেনার আরও এক উপায় হলো এর গন্ধ পরীক্ষা করা। কাঁঠালের সুবাস অনেক তীব্র হয়। কাঁঠাল পাকা কি না তার এর গন্ধেই টের পাওয়া যায়। যদি কাঁঠালের গা থেকে সুগন্ধ বের না হয় তাহলে বুঝবেন সেটি এখনো পাকেনি।

কাঁঠাল খেলে কি ক্ষতি হয় ?

কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ খুব কম থাকায় খেলেও ওজন বাড়ার কোনো শঙ্কা নেই। তবে কাঁঠালে বিচিতে আঁশ থাকে তাই বেশি খেলে হজমে ব্যঘাত ঘটতি পারে। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের কাঁঠাল খাওয়ায় কিছুটা বিধিনিষেধ আছে। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, তাদের কাঁঠাল না খাওয়াই ভালো।

ওজন কমাতে কাঁঠাল কিভাবে খাবেন ?

কাঁঠালের একটি স্বতন্ত্র মিষ্টি স্বাদ রয়েছে এবং এটি কাঁচা বা রান্না করেও খাওয়া যায়। আমরা যদি সঠিক উপায়ে কাঁঠাল খাই তাহলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। কাঁঠাল একটি উচ্চ আঁশযুক্ত সবজি বা ফল, যা হজম ও বিপাক প্রক্রিয়ার উন্নতিতে সাহায্য করে। এটি ক্যালোরিতে খুব বেশি নয়, এক কাপ কাটা কাঁঠালে প্রায় ১৫৫ ক্যালোরি থাকে।

ওজন কমায়ঃ কাঁঠালে ফ্যাট না থাকা ও ক্যালরি কম থাকায় এই ফল খাওয়াতে ওজন কমে ও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

রক্তচাপ কমায়ঃ কাঁঠালে পটাশিয়াম বেশি থাকায় তা রক্তচাপ কমায়, এর ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোকের মতো রোগ প্রতিরোধ হয়।

হজম শক্তি বাড়ায়ঃ কাঁঠালে ফাইবার বা আঁশ বেশি থাকায় তা হজম শক্তি বাড়ায়।

লেখকের শেষকথঃ

গ্রীষ্মকাল মানেই মৌসুমী নানা ফলের সমারোহ। একেক জানের কাছে একেক ফল প্রিয়। তেমনি অনেকের কাছে সুপারফুড হিসেবে পরিচিত কাঁঠাল। এই গরমের সময় বেশ জনপ্রিয়, উপকারি ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন জাতীয় ফল কাঁঠাল নিয়মিত খান। এতে করে মিলবে অনেক উপকারিতা ও রোগের হাত থেকে ‍মুক্তি।

আমাদের সমাজে একটি কথা প্রচলণ আছে, গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল- কথাটা আমরা অনেক সময় ব্যবহার করে থাকি। কাঁঠালের যত গুণ তাতে এই কথাটার ।যথার্থতা রয়েছে । যারা কাঁঠাল একেবারে খান না, তাদের বলি কাঁঠালের পুষ্টিগুণ জানুন, খেয়ে দেখুন কত উপকারিতা।


















































































এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪