ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
ড্রাগন একটি বিদেশে ফল হলেও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ফলের চাষ হচ্ছে। এই ফল চেনেন না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না বললেই চলে। কিন্তু আমরা কী জানি এই ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে ?
হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের জানাবো ড্রাগন ফলের পুুুষ্টগুণ ও এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এখানে আরো জানতে পারবেন সঠিক ড্রাগন ফল চেনার উপায় ও এই ফলের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
সূচীপত্রঃ
ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ
ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময়
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা
বাচ্চাদের ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
ড্রাগন ফলের উৎপাদন কলাকৌশল
ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফল
লেখকের শেষকথাঃ
ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ
ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি আছে। ক্যালরি কম থাকায় এই ফল খেলে ওজন বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। এতে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম, ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড, বিটা-ক্যারোটিন ও লাইকোপেনের মতো অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আছে। আরও আছে ফাইবার ও আয়রন, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
দেহে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি নিশ্চিত করতে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় নানা ধরনের ফল ও শাক-সবজি রাখা দরকার। এ রকম একটি ফল হলো ড্রাগন। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই ফলটি সাদা ও লাল মাংসযুক্ত নানা জাতের হয়। ড্রাগন ফলের রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। তবে ফলের ধরন এবং পরিপক্বতার ওপর পুষ্টির মান পরিবর্তিত হতে পারে।
আনুমানিক ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) ড্রাগন ফলে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে তা নিচে দেওয়া হলোঃ
সাদা মাংসযুক্ত ড্রাগন ফলঃ প্রতি ১০০ গ্রাম সাদা ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রায় ৬০ গ্রাম ক্যালরি, ৯-১৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৮-১২ গ্রাম চিনি, ১-২ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার, ১-২ গ্রাম প্রোটিন, ১ গ্রামের কম চর্বি।
লাল মাংসযুক্ত ড্রাগন ফলঃ প্রতি ১০০ গ্রাম লাল ড্রাগন ফলে রয়েছে ৫০-৬০ গ্রাম ক্যালরি, ৯-১৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১-২ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার, ৮-১২ গ্রাম চিনি, ১-২ গ্রাম প্রোটিন, ১ গ্রামের কম চর্বি।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
ড্রাগন ফল ক্যান্সারের সঙ্গে অনেক লড়াই করে। এই ফলটিতে ক্যারোটিন নামক এক উপাদান রয়েছে, যা আমাদের শরীরে থাকা টিউমারকে ধ্বংস করতে সক্ষম । বেশি পরিমাণ আঁশ থাকায় ড্রাগন ফল খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণও অনেকেটা স্থিতিশীল হয়ে যায় ।
ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা গুলো হলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে,ড্রাগন ফল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল, ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন বি এবং ফোলেট নবজাতকের জন্মগত ত্রুটি রোধ করতে সহায়তা করে। শরীরের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে ড্রাগন ফল।
নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে, ড্রাগন ফলের কালোজিরার দানার মত ছোট ছোট বীজে রয়েছে ওমেগা থ্রি, ওমেগা নাইন ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, তাই ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ড্রাগন ফল হার্টের জন্য অনেক উপকারী।
বিশেষ গুণাবলী সমৃদ্ধ এই ফল ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ব্যবহার করতে পারেন। বেশ কিছু প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মেলে ড্রাগন ফল থেকে। এগুলো আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান সমৃদ্ধ এই ফল ফাইবার সমৃদ্ধ ও ফ্যাট ফ্রি, যার ফলে অনাআসে ডায়েট লিস্টে রাখতে পারেন ড্রাগন ফল।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি মেলে ড্রাগন ফল থেকে। ড্রাগন ফল আপনার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন এতে করে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। শরীরের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে ড্রাগন ফল। আয়রনের চমৎকার উৎস রয়েছে রঙিন ড্রাগন ফলে।
রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর করতে চাইলে তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন, স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই ড্রাগন ফল। ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ড্রাগন ফল। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে উপকারী এই ড্রাগন ফলের।
- ঘুমের ঘনত্ব বাড়ে
- পেটের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে
- হজম শক্তি বাড়ে
- হার্মোন স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে
- হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
- সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে
- স্নায়ুসংক্রান্ত প্রতিরোধশীলতা গড়ে তোলে
- ক্যান্সার প্রতিরোধশীলতা বাড়ে
- মনোবল ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখে
- স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর
- স্বাস্থ্যকর চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি করে
- স্বাস্থ্যের বিষাক্ত পদার্থ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
- তাই আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ পাকা ড্রাগন ফল।
অপকারিতা
অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয় আপনি যদি বিশেষ পুষ্টিগুণের আশায় মাত্র অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খেয়ে ফেলেন, তাহলে এর সাইড ইফেক্ট হিসেবে আপনার শরীরে অ্যালার্জি হতে পারে।
ড্রাগন ফলের বীজ চিবিয়ে না খেলে কখনো কখনো হজম না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই ড্রাগন ফলের বীজ অবশ্যই চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। স্বাভাবিক নিয়মে ড্রাগন ফল খেলে কোন সমস্যা হয় না। তাই খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন।
বিশেষ করে লাল ড্রাগন ফল খাওয়ার পর প্রস্রাবের রং লাল হতে পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই কিন্তু অবশ্যই নিয়ম মাফিক খাওয়াটাই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে। কারণ উপকারের জন্য অতিরিক্ত খেয়ে যদি ক্ষতি হয় তাহলে পরিমান মত খাওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
খাওয়ার পদ্ধতিঃ জুস করে খেতে পারেন। এ জন্য প্রথমে খোসা ফেলে কেটে নিয়ে ব্লেন্ডারে দিয়ে জুস করে নিন। চাইলে সালাদ করে খেতে পারেন। আবার ইচ্ছা হলে সাধারণ ফলের মতো কেটে সরাসরিও খেতে পারেন।
ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময়
ফল খাওয়ার আদর্শ সময় হল সকাল। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে খালি পেটেই ফল খেলে অনেকেরই সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে মুখ ধুয়ে, জল খেয়ে, তার কিছু ক্ষণ পর ফল খেতেই পারেন। ঘুম থেকে ওঠার পর ফল খেলে তা হজম হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি। তাছাড়া রাতের বেলা খেলে ঘুম ভালো হয়।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় নারীদের জন্য ড্রাগন ফল অত্যন্ত উপকারী এই ফলটি খাওয়ার জন্য ডাক্তারেরা পরামর্শ দেন। কারণ এই ড্রাগন ফলে যে পুষ্টিগুণ রয়েছে সেটি গর্ভবতী মা ও গর্ভে থাকা শিশু দুইজনেরই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাই আপনি চাইলে গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খেতে পারেন এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে অতিরিক্ত না খেয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবেন।
বাচ্চাদের ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিজেন আছে। ক্যালসিয়াম আছে ভালো পরিমাণে। যাদের বোন ডেনসিটি বা হাড়ের কোনো সমস্যা আছে তাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করার জন্য ড্রাগন ফল অত্যন্ত উপকারী। বাচ্চাদের ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিনের চাহিদা পূরণে ড্রাগন ফল দেওয়া যেতে পারে।
শিশু কঠিন পদার্থ শুরু করার জন্য প্রস্তুত হওয়ার সাথে সাথে ড্রাগন ফল চালু করা যেতে পারে, যা সাধারণত ৬ মাস বয়সী হয় । ড্রাগন ফল হল একটি ক্যাকটাসের ভোজ্য ফুল যা আমেরিকার স্থানীয় এবং আজ, বিশ্বব্যাপী ক্রান্তীয় অঞ্চলে ড্রাগন ফল চাষ করা হয়।
ড্রাগন ফলের উৎপাদন কলাকৌশল
উচ্চ জৈব পদার্থসমৃদ্ধ বেলে-দোঁআশ মাটিই এ ফল চাষের জন্য উত্তম। উপযোগী জাত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সফলভাবে চাষ করার জন্য বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার থেকে অবমুক্তায়িত বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা) বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল) চাষ করা যেতে পারে। এ ছাড়া হলুদ ড্রাগন ফল ও কালচে লাল ড্রাগন ফলও চাষ করা যেতে পারে।
ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফল
ত্বকের যেসব উপকার করে ড্রাগন ফল
ড্রাগন ফল যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তেমনি ত্বকের জন্যও সমান উপকারী। এই ফলের ফেস প্যাক ব্যবহার করলে মিলবে অনেক উপকারিতা।
১.মুখের বিভিন্ন ধরনের দাগ তুলতে সাহায্য করে এই ফল। দীর্ঘদিন ত্বকের যত্নে এই ফল ব্যবহার করলে মুখে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আসে।
২. ড্রাগন ফলের হাইড্রেটিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি ব্যবহার করলে ত্বক ময়েশ্চারাইজড হয়। ফলে ত্বক থাকে নরম ও কোমল।
৩. ফলটিতে ভিটামিন বি-৩ রয়েছে যা রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে অনন্য। এছাড়া অতিবেগুনি রশ্মির কারণে হওয়া প্রদাহ, লালভাব এবং চুলকানি থেকে পরিত্রাণ করে।
৪. ড্রাগন ফল ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ভাঙতে বাধা দেয় এবং এটিকে আরো স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল রাখে।
৫. ড্রাগন ফলের ভিটামিন সি নিস্তেজ ত্বকে প্রাণ ফেরায়। ত্বক সতেজ এবং পুনরুজ্জীবিত করতে এই ফলের ফেস প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করুন।
৬. ড্রাগন ফলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য। এছাড়া ড্রাগন ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। বলিরেখা এবং সূক্ষ্ম রেখার সমস্যাও মেটায়।
৭. ড্রাগন ফলের প্রদাহরোধী গুণ রয়েছে। এগুলো ত্বকের লালচে ভাব কমাতে সাহায্য করে।
৮. এই ফলটি ত্বক স্ক্রাব করতেও কাজ করে। ফলে সহজেই ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়। ড্রাগন ফল ত্বকে জমে থাকা ময়লা দূর করে।
লেখকের শেষকথাঃ
দেহে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি নিশ্চিত করতে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় নানা ধরনের ফল ও শাক-সবজি রাখা দরকার। এ রকম একটি ফল হলো ড্রাগন। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই ফলটি সাদা ও লাল মাংসযুক্ত নানা জাতের হয়। ড্রাগন ফলের রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ।
ড্রাগন ফল সরাসরি কেটে খাওয়া যায়, আবার বিভিন্ন খাবারের সাথেও যোগ করে খাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য ড্রাগন ফল খুব উপযোগি। অথচ এই ফল সাধারণত মেয়েরা অপছন্দ করে। যাই হোক ছোট-বড়, ছেলে-মেয়ে, সবার জন্য এই ফল অত্যান্ত উপকারি। তাই নিয়মিত ড্রাগন ফল খান, সুস্থ্য থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url