গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন
বিবাহের মধ্য দিয়ে পরিবারের পথ চলা শুরু হয়। আর সব পরিবারের চাওয়া থাকে একটা সুস্থ স্বাভাবিক ফুটফুটে সন্তান। আর সুস্থ সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চার জন্য গর্ভবতী মায়ের যত্ন এবং নিরাপদ মাতৃত্বের কোন বিকল্প নেই।
আজ আমরা জানবো গর্ভবতী মায়ের সেবা যত্ন ও নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য পরিবারের কার কতটুকু দ্বায়িত্ব-কর্তব্য। নতুন মেহমানকে বরণ করার জন্য কি কি প্রস্তুতি নিতে হবে। গর্ভবতী মায়ের পরিচর্যা, গর্ভস্থ সন্তান ও মা এর অকাল মৃত্যুর কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কেও এখানে আলোচনা করা হবে।
সূচীপত্রঃ
গর্ভাবস্থায় প্রাথমিক লক্ষণ ও উপসর্গ সমূহ
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি
গর্ভবতী মায়ের যত্ন বই
গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও নিরাপদ মাতৃত্ব
গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ
গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা
লেখকের শেষকথাঃ
গর্ভাবস্থায় প্রাথমিক লক্ষণ ও উপসর্গ সমূহ
অভিনন্দন - আপনি মা হতে চলেছেন! প্রথম বার বাবা বা মা হওয়া একটি রোমাঞ্চকর এবং ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতা। গর্ভাবস্থার প্রথম ১৩ সপ্তাহ সময় আপনার ও সন্তানের শরীর ক্রমশঃ বাড়তে থাকবে এবং পরিবর্তিত হবে। আপনারা যেহেতু একসাথে এই আশ্চর্যজনক যাত্রা শুরু করেছেন, সেহেতু যেসব বিষয় আপনাকে জানতে হবে সেগুলো এখানে রয়েছে।
নিয়মিত ঋতুচক্র (মাসিক) হয় এমন নারীদের জন্য ঋতুচক্র (মাসিক) হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া হ’ল গর্ভাবস্থার প্রথম লক্ষণ । কখনও কখনও রক্তস্রাব হতে পারে। এতে হাল্কা ঋতুচক্র (মাসিক) বা দাগ কাটার মতো রক্ত দেখা যায়। তবে এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। আপনি যদি গর্ভাবস্থায় এমন রক্তস্রাব দেখতে পান, তবে আপনার অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে ক্লান্তি, বমি-বমি ভাব বা ঘন ঘন প্রস্রাবের মতো নিচের কিছু লক্ষণ আপনার ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে।
সাধারণ লক্ষণ
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকের সপ্তাহগুলোতে হরমোনের পরিবর্তন আপনার পুরো শরীরকে প্রভাবিত করবে। যদিও দুটি গর্ভাবস্থা কখনই একরকম নয়, তবে প্রথম তিন মাস আপনি কিছু লক্ষণ অনুভব করতে পারেন। লক্ষণগুলো নিম্নরূপঃ
- স্তন নরম হয়ে যাওয়া
- মেজাজে চরম পরিবর্তন হওয়া
- বমি-বমি ভাব বা বমি (প্রভাতকালীন অসুস্থতা)
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
- ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়া
- চরম ক্লান্তি বোধ হওয়া
- মাথাব্যথা করা
- বুকজ্বালা করা
- পায়ে খিল ধরা
- পিঠের নিচের অংশ এবং যোনিতে ব্যথা হওয়া
- নির্দিষ্ট কিছু খাবারের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হওয়া
- নির্দিষ্ট কিছু খাবারের প্রতি নতুন করে অপছন্দ তৈরি হওয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা
মনে রাখবেন প্রথম তিন মাস খুব সাবধানতা অবলম্বণ করতে হবে কারণ এই তিন মাসেই এবরশনের হার সবচাইতে বেশি থাকে। সেই সাথে এমন খাবার খাবেন না যা বাচ্চার জন্য খারাপ হবে। পেঁপে, আনারসের সাথে সাথে কাঁচা বা আধা সিদ্ধ প্রোটিন যেমন মাছ, মাংস, ডিম এসব পরিহার করে চলতে হবে। প্রোটিন ভালো করে রান্না করে তবেই খাবেন।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে গর্ভবতী মায়েদের শরীরে হরমোনগত পরিবর্তনের বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন বমিভাব, বমি, মাথা ঘোরা, শরীর খারাপ লাগা, ক্লান্তিবোধ, স্তনের পরিবর্তন, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, বুক জ্বালাপোড়া করা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। গর্ভাবস্থায় এগুলো স্বাভাবিক। কিন্তু এ সময় কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। সুতরাং প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা ও সঠিক চিকিৎসা।
ঝুঁকি
১। গর্ভপাতঃ ৭৫ শতাংশ গর্ভপাত হয় প্রথম ৩ মাসেই। নানা কারণে গর্ভপাত হতে পারে। যেমন বাচ্চার জিন বা গঠনগত ত্রুটি, মায়ের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য, এসএলই, অ্যান্টি-ফসফোলিপিড সিনড্রোম, ইনফেকশন ইত্যাদি নানা কারণে গর্ভপাত হয়ে থাকে।
২। জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ বা এক্টোপিক প্রেগন্যান্সিঃ নিষিক্ত ভ্রূণ জরায়ুর ভেতরে স্থাপিত না হয়ে বাইরে স্থাপিত হয়, বিশেষ করে ডিম্বনালিতে ভ্রূণ বাড়তে থাকে, যা পরে ফেটে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না হলে মায়ের মৃত্যুও হতে পারে। এজন্য যে কোন সমস্যা হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৩। মোলার প্রেগন্যান্সিঃ নিষিক্ত ভ্রূণ থেকে বাচ্চা না হয়ে আঙুরের থোকার মতো একধরনের টিউমার হয়, যার সঠিক চিকিৎসা না নিলে পরে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। এজন্য সব সময় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের আন্ডারের সব সময় সেবা নিতে হবে।
৪। বাচ্চার জন্মগত ত্রুটিঃ গর্ভের প্রথম তিন মাস ভ্রূণ গঠনের মূল সময়। এ সময় ধূমপান, মদ্যপান, মায়ের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, নানা সংক্রমণ, ক্ষতিকর ঔষধ সেবন, যেমন ওয়ারফেরিন, মৃগী রোগের ঔষধ, ক্যানসারের ঔষধ, উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ, রেডিয়েশন ইত্যাদি বাচ্চার জন্মগত ত্রুটির কারণ হতে পারে।
করণীয়
গর্ভধারণের পূর্বপ্রস্তুতিঃ গর্ভধারণের আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে ও কোনো রোগ নির্ণয় হলে চিকিৎসা করতে হবে।
গর্ভধারণের এক মাস আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড সেবন করতে হবে।
গর্ভধারণের সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে ও ক্ষতিকর ঔষধ বর্জন করতে হবে।
বিশ্রামঃ এ সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম দরকার। কমপক্ষে রাতে আট ঘণ্টা ও দুপুরে দুই ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হবে।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভ ধারণের কারণে গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় যার ফলে দেখা দিতে পারে রক্ত স্বল্পতা। কারণ মায়ের শরীর থেকে মূল্যবান পুষ্টিগুণ গর্ভস্থ শিশুর দেহে শোষিত হয়। তাই মা ও শিশুর যত্নে পর্যাপ্ত পরিমানে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি।
দুগ্ধজাত খাবারঃ
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তে গর্ভধারণের প্রথম মাসে গর্ভবতী মায়ের প্রচুর পরমানে ক্যালসিয়াম, ক্যালরি ও লৌহ জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। কারণ এ সময় গর্ভবতী মা যে খাবার খান সেটা তারা নবজাতক সন্তানের বেড়ে ওঠাকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তাই এসময় প্রচুর পরিমানে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার যেমনঃ দই, পনির, চিজ ও মাখন বেশি পরিমানে খেতে হবে।
আমিষ জাতীয় খাবারঃ
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তে আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই। দেশি মাছ ও সামুদ্রিক মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে আমিষ পাওয়া যায়।
শাক সবজিঃ
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তে সবুজ শাক সবজি থাকা জরুরী। এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় সবুজ শাক-সবজি যেমনঃ ফুলকপি, বাধাকপি, ব্রোকলি, পালংশাক, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়ো, টমেটো, আলু, গাজর, লাউ, ভুট্টা ইত্যাদি রাখা যেতে পারে।
শস্য জাতীয় খাবারঃ
গর্ভাবস্থায় শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য শস্য জাতীয় খাবার খুবই প্রয়োজনীয়। যেমনঃ ওটমিল, যব, বাদামী চাল, বাজরা, ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, আয়রন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, সেলেনিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের ভালো উৎস। সুতরাং গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা এর দিকে খেয়াল রাখা দরকার।
বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারঃ
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার রাখা উচিত কেননা এতে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। যা মা ও শিশুর জন্য খুবই উপকারী।
আয়োডিন
আয়োডিন স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে। তাই গর্ভাবস্থায় আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ বা আয়োডিন যুক্ত লবন ব্যবহার করুন।
ফাইবার
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তে ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার রাখা অতি জরুরি। ফাইবার দেহের কোলস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে এবং গ্লুকোজের মাত্রা কম করে। সাধারণত শিম জাতীয় খাবার যেমন মটরশুঁটি, শিম, ডাল ও ফলমূল জাতীয় খাবার যেমনঃ আপেল, কমলা, গাজর ও শসা ফাইবারের ভালো উৎস।
গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে চার গুণ বেশি ফলিক অ্যাসিড খাওয়া উচিত। পালংশাক, লেটুস, কলিজা, শুকনো সিমের বিচি, ডিম, ডাল, দুধ ইত্যাদি ফলিক অ্যাসিডের উৎস। ক্যালসিয়াম: নবজাতকের হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য শেষ তিন মাসে প্রচুর ক্যালসিয়াম দরকার হয়। একজন গর্ভবতী নারীর দৈনিক অন্তত এক হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদান উপস্থিত আছে কি না সে বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। এর পাশাপাশি গর্ভকালীন সময়ের অতিরিক্ত পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য আপনাকে কিছু ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদানের ট্যাবলেট বা বড়িও সেবন করতে হবে। যা আপনার ও আপনার গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
গর্ভবতী মায়ের যত্ন বই
গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
গর্ভাবস্থাকালীন সময় প্রত্যেক মহিলার কাছেই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় হাসিখুশি থাকা যেমন জরুরি তেমনই সাবধানে থাকাও ভীষণ জরুরি। গর্ভাবস্থায় অন্যান্য সময়ের থেকেও খাবার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন হতে হয়। কারণ মায়ের খাবার থেকেই গর্ভের শিশু পুষ্টি পায়। তাই এ সময় গর্ভবতীদের উচিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে এমন কোনো খাবার খাওয়া ঠিক নয়।
আনারস
গর্ভবতীরা আনারস খাবেন না। আনারসে ব্রোমেলাইন থাকে, এটি একটি এনজাইম যা প্রোটিনকে ভেঙে দেয়। গর্ভপাত ঘটাতে পারে এই ফল।
ক্যাফেইন জাতীয় খাবার
ক্যাফেইন জাতীয় খাবার অর্থাৎ কফি, কোল্ড ড্রিঙ্ক এই ধরনের খাবার থেকে গর্ভবতী মহিলাদের দূরে থাকতে পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
প্রসেস ফুড
গর্ভাবস্থায় প্রসেসড বা জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলাই ভালো। যে খাবারে অতিরিক্ত কৃত্রিম ভিটামিন দেওয়া থাকে বা ভাজা অবস্থায় স্টোরড থাকে তেমন খাদ্য না খাওয়াই ভালো।
হাফ বয়েল ডিম
গর্ভকালীন সময়ে হাফ বয়েল ডিম না খাওয়াই ভাল। এতে গর্ভবতীর মায়ের স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব পড়ে। হাফ বয়েল ডিমে পেটে ব্যথা, বমি ভাব, জ্বর ইত্যাদি হতে পারে। এ ছাড়া কেক, মেওনিজ অর্থাৎ যেসব খাদ্যে কাঁচা ডিম ব্যবহার করা হয় তা না খাওয়াই শ্রেয়।
সামুদ্রিক মাছ ও পেঁপে
সামুদ্রিক মাছ ও পেঁপে এড়িয়ে চলুন। সামুদ্রিক মাছে পারদ জাতীয় পদার্থ থাকায় তা গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। পাশাপাশি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কাঁচা বা আধ পাকা পেঁপে খাওয়াও বিপজ্জনক। এতে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
তেঁতুল
তেঁতুল এড়িয়ে চলুন। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি দেহে প্রোজেস্টেরনের ক্ষরণ কমিয়ে দেয় এবং প্রোজেস্টেরনের স্তরের কমলে গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে।
মিষ্টি
মিষ্টির বদলে কিসমিস, খেজুর, ফল খেতে পারেন। নোনতার বদলে বাদাম, কাজু, পেস্তা ইত্যাদি খান।
মিষ্টি, ভাজাভুজি, মশলাদার খাবার কম খান। তবে পছন্দের খাবার পুরো বন্ধ করে দিলে স্ট্রেস মা ও সন্তানের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। কাজেই ব্যালান্স করে সব খাবারই খান।
অতিরিক্ত খাবার
অতিরিক্ত কোনও খাবারই খাবেন না। এতে ভাবী মায়ের ওজন বাড়ে। পাশাপাশিডায়াবিটিস, প্রেশার ও আরও কিছু জটিলতা বাড়তে বাড়ে।
অতিরিক্ত আবেগ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ভয়, রোগ-শোক ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, তাই এসব এড়িয়ে ভালো চিন্তা করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করা যাবে না। পানিশূন্যতা রোধে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার।
গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও নিরাপদ মাতৃত্ব
মা শুধু পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ডাক বা অনুভূতিই নয়, মাতৃত্ব একজন নারীর সবচেয়ে বড় সার্থকতা। কিন্তু একজন নারী যখন প্রথমবার গর্ভধারণ করেন তখন অনেক কিছুই তার অজানা থাকে। তাই সন্তান ধারণ থেকে শুরু করে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত একজন মা’কে অনেক বিষয়ে সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করতে হয়।
একজন গর্ভবতী মায়ের যথাযথ যত্ন নিশ্চিতে পরিবারের সদস্য ও কাছের মানুষরাই প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু নিজেরও অসতর্ক হলে চলবে না। কারণ মায়ের সুস্থতার উপরে আগত সন্তানের সুস্থতা নির্ভরশীল।
প্রসব একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, কিন্তু মনে রাখতে হবে, যে কোনো মুহূর্তে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। যদি অদক্ষ এবং অপরিচ্ছন্নভাবে প্রসব করানো হয় তবে মা ও শিশু উভয়ের প্রসবকালীন সংক্রমণ এবং শিশুর টিটেনাস হতে পারে। সবকিছু স্বাভাবিক হলেও এসময়ে যত্নের প্রয়োজন রয়েছে।
প্রসবের সময়ে যত্ন নেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে –
- সংক্রমণ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া।
- যতটুকু সম্ভব মা ও শিশুর কম আঘাতের মাধ্যমে প্রসব সম্পন্ন করা।
- যে কোনো ধরনের জটিলতাকে মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকা।
- শিশুর যত্ন নেয়া, যেমন: শ্বাস-প্রশ্বাস সঞ্চালনে সহায়তা, নাড়ির যত্ন, চোখের যত্ন ইত্যাদি আর এসবই শিশুর সংক্রমণ রোধ ও সুস্থতার জন্য প্রয়োজন।
মা ও শিশুর জীবনের ঝুঁকি এড়াতে নিরাপদ প্রসব ব্যবস্থা এবং পরিকল্পনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিবারের সদস্যদের প্রসবকালীন সময়ে করণীয়, প্রসূতি ও নবজাতকের তাৎক্ষণিক যত্ন ও জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পূর্বপ্রস্তুতি থাকা জরুরি ।
- স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ক্লিনিকে প্রসব করানোই নিরাপদ। এখানে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেবাদানকারীরা থাকেন এবং যেকোনো জরুরি অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থাকে, তাই আগে থেকে কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, ক্লিনিকে বা হাসপাতালে প্রসব করাবে তা ঠিক করে রাখতে হবে।
- জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাবার জন্য যানবাহনের বাবস্থা রাখতে হবে।
- ২/৩ জন রক্তদাতা ঠিক করে রাখতে হবে।
- গর্ভাধারণের শুরু থেকেই টাকা-পয়সা জমিয়ে রাখতে হবে।
- যদি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ক্লিনিকে প্রসব করানো সম্ভব না হয়, তবে সেক্ষেত্রে বাড়িতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ধাত্রী বা স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে প্রসব করাতে হবে। এজন্য তার সাথে আগে থেকেই যোগাযোগ করে রাখতে হবে ।
- বাড়িতে প্রসব হলে প্রসব সরঞ্জাম যেমন, পরিষ্কার সুই -সূতা, সাবান, শুকনা সূতি কাপড় /তোয়ালে, ব্যান্ডেজ , ক্লিপ সংগ্রহ করে রাখতে হবে। প্রসবের জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
- প্রসবকালীন সময়ে যে কোনো জাতিলতা দেখা দিলে গর্ভবতীকে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ
- গর্ভ ধারণ করার পর প্রথম কয়েক মাস প্রায় সব ধরনের ঘরের কাজই করা যেতে পারে। তবে পেটের চাপ পড়ে বা মানসিক অশান্তির কারণ হয়, এমন কোনও কাজ গর্ভবতী মহিলাদের করা উচিত। গর্ভবতী মহিলাদের হাসিখুশি এবং টেনশন-মুক্ত থাকা খুবই জরুরি।
- ভারী কিছু বহন করতে হবে এমন কোনও কাজ গর্ভবতী মহিলারা করবে না। কোনও আসবাব একদিক থেকে অন্যদিকে সরানোর কাজ করা যাবে না।
- পর্দা পালটানো বা ফ্যান পরিষ্কার করার মতো কাজ এই সময় করবেন না। উঁচুতে উঠে করতে হবে, এই রকম যো কোনও কাজ গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
- বাড়িতে পোষ্য থাকলে বিশেষ করে বেড়ালের বর্জ্য গর্ভবতীরা যেন কোনওমতেই পরিষ্কার না করেন। বেড়ালের বর্জ্যে টক্সোপ্লাজমা গোনডি নামে এক ধরনের রাসায়নিক থাকে, যা হবু মা এবং গর্ভস্থ সন্তানের বড় ক্ষতি করতে পারে। ঘরে আর কেউ না থাকলে যদি একান্তই গর্ভবতী মহিলাকে পরিষ্কার করতেই হয় তাহলে খুবই সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে।
লেখকের শেষকথাঃ
বন্ধুরা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন গর্ভবস্থায় মা ও সন্তানের যত্নে করণীয় সম্পর্কে। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া এবং সঠিক পরিচর্যা আর চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে নিরাপদ প্রজনন সম্ভব। একটা কথা মনে রাখবেন। ছোট খাটো কোন সমস্যা হলে কখনো অবহেলা করবেন না। কারণ আপনার একটু অবহেলা দুইটি জীবনে বিপদ ডেকে আনতে পারে।
শুধু ভালো খাবার এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললেই হবে না। গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসি-খুশি রাখতে হবে। পরিবারের সবায় তার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে সমান ভাবে। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আপনি ও আপনার আগত সন্তানের জন্য দোয়া ও শুভ কামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url