মশা-মাছি ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ঘর থেকে দূর করার উপায় জেনে নিন

 আপনি কি মশা-মাছি এবং ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ে খুব বিপদের মধ্যে আছেন ? এদের কারণে ঘরে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারছেন না ? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্যই। কিভাবে ঘর থেকে মশা-মাছি তাড়াবেন খুব সহজেই এবং তাড়াতাড়ি তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

মশা-মাছি ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ঘর থেকে দূর করার উপায় জেনে নিন

শহর কিংবা গ্রাম মশা-মাছির উপদ্রুপ নেই এই রকম এলাকা পাওয়াই মুসকিল। আবার অনেক সময় তেলাপোকা নিয়ে অনেককে বিপাকে পড়তে হয়। এদের কে কিভাবে ঘর থেকে দূর করার উপায় আপনাদেরকে জানাবো।

সূচীপত্রঃ

মশা তাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়াতে লাগাতে পারেন যে গাছ
মশা থেকে মুক্তি পেতে রসুন
মশা থেকে মুক্তি পেতে সাবান পানি
মশা থেকে মুক্তি পেতে কফি গ্রাউন্ড
মশা থেকে মুক্তি পেতে পিনিয়ন কাঠ
ক্রিমের ব্যবহার
মশা প্রতিরোধক স্প্রে
মশা মারার বৈদ্যুতিক যন্ত্র
লেখকের শেষকথাঃ

মশা তাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায়

মশার কামড়ে বিরক্ত হননি এমন মানুষ বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মশার কামড় থেকে মানব শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ। মশারি, কয়েল, স্প্রে ব্যবহার করেও অনেক সময় মশা তাড়ানো যায় না। তবে কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি কিন্তু আছে, যেগুলো কাজে লাগালে মশা আপনাকে এড়িয়ে চলবে। চলুন জেনে নিই সেগুলো।

লেবু আর লবঙ্গ

একটা লেবু নিয়ে তা মাঝখানে খণ্ড করে কেটে ভেতরের অংশে অনেকগুলো লবঙ্গ পুরোটা গেঁথে দিন। শুধু লবঙ্গের মাথার দিকের অংশ বাইরে থাকবে। এরপর লেবুর টুকরাগুলো একটি প্লেটে করে ঘরের কোণায় রেখে দিন। জানালার গ্রিলেও রেখে দিতে পারেন। এতে মশার উপদ্রব কমে যাবে। কিছুদিন পর পর লেবু বদলে নিন, এতে করে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে।

কর্পূর

মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে কর্পূর হতে পারে কার্যকর সমাধান। কর্পূরের গন্ধ মশা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। যে কোনো ঔষধের দোকান বা মুদি দোকান থেকে কর্পূরের ট্যাবলেট কিংবা গুঁড়া এনে পানি দিয়ে পূর্ণ ছোট পাত্রতে ঘরের এক কোণে রেখে দিন। অল্প সময়ের মধ্যেই দেখবেন মশা কমতে শুরু করেছে।

নিমের ঔষধি গুণাগুণের কথা সবাই জানে। নিমের তেল ত্বকের জন্য উপকারী। এ ছাড়া এই তেলের রয়েছে মশা তাড়ানোর বিশেষ গুণ। এই শীতে মশার কামড় থেকে বাঁচতে নিমের তেল ও নারিকেল তেল সমপরিমাণ মিশিয়ে হাত-পায়ের চামড়ায় লাগিয়ে রাখতে পারবেন। এটি মশাকে আপনার থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।

চা পাতা

মশা তাড়ানোর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো চা পাতা পোড়ানো। চা পাতা কমবেশি সবার ঘরেই থাকে। আপনার ব্যবহৃত চা পাতা ফেলে না দিয়ে তা ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। শুকনো চা পাতা পোড়ানোর ধোঁয়ায় ঘরের মশা-মাছি পালিয়ে যেতে শুরু করবে।

রঙিন কাপড় পরবেন না

কিছু প্রজাতির মশা আছে যারা রঙিন কাপড় বিশেষ করে কালো, লাল, নীল এসব রঙে আকৃষ্ট হয়ে থাকে। তাই মশার হাত থেকে বাঁচতে চাইলে তাদের পছন্দের রঙের পোশাক এড়িয়ে চলুন।

সুগন্ধি ব্যবহার

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীরে আতর, পারফিউম কিংবা লোশন মাখলে মশা আপনার কাছে কম যাবে। কারণ মশারা সুগন্ধি পছন্দ করে না।

সিট্রোনেলা

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মশা, মাছি, পিঁপড়ের উপদ্রব কমাতে অনেকেই ঘর মোছার পানিতে সিট্রোনেলা তেল মিশিয়ে থাকেন। সিট্রোনেলা তেল একটি অপরিহার্য তেল যা সাইম্বোপোগনের বিভিন্ন প্রজাতির পাতা এবং কাণ্ড থেকে পাওয়া যায়। এটি প্রধানত এর বৈশিষ্ট্যযুক্ত গন্ধের কারণে বিভিন্ন পোকামাকড় নিরোধক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

মশা তাড়াতে লাগাতে পারেন যে গাছ

তুলসী গাছ

তুলসী গাছ ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর। শুধু রোগজীবাণুই নয়, মশাকেও দূরে রাখতে সাহায্য করে এটি। আপনার বাড়ির টবে কয়েকটি তুলসী গাছ লাগিয়ে রাখুন। মশা কমবে।

পুদিনার ব্যবহার

জার্নাল অফ বায়োরিসোর্স টেকনোলোজির গবেষণা মতে, তুলসির মতো পুদিনা পাতাও মশাকে দূরে রাখতে সক্ষম। শুধু মশাই নয়, পুদিনার গন্ধ অনেক ধরনের ক্ষতিকর পোকামাকড়কে ঘর থেকে দূরে রাখে। গ্লাসে একটু পানি নিয়ে তাতে ৫ থেকে ৬ গাছি পুদিনা রেখে দিন খাবার টেবিলে। ৩ দিন পরপর পানি বদলে দেবেন। এ ছাড়া, পুদিনা পাতা ছেঁচে পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানির ভাপ পুরো ঘরে ছড়িয়ে দিতে পারেন। দেখবেন ঘরের সব মশা পালিয়ে গেছে। চাইলে পুদিনার তেলও মাখতে পারেন।

লেমনগ্রাস

বাড়িতে এই গাছ রাখলে আলাদা করে 'রুম স্প্রে' ব্যবহার করার প্রয়োজন না-ও হতে পারে। শুধু তাই নয়, মশা, মাছি, পোষ্যের গায়ে বাস করা পরজীবী পোকামাকড়ের কমিয়ে ফেলতে পারে লেমনগ্রাস।

মশা থেকে মুক্তি পেতে রসুন

রসুনের বেশ কিছু গুণ রয়েছে যা মশাকে নিরুৎসাহিত করে। এই পোকামাকড়রা রসুন এড়াতে চেষ্টা করে কারণ তারা এতে থাকা সালফার অপছন্দ করে। এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করার জন্য আপনি রসুনের কুঁচি গুঁড়ো করে পানিতে সিদ্ধ করতে পারেন, একটি স্প্রে বোতলে দ্রবণটি পূরণ করতে পারেন এবং সারা ঘরে কুয়াশার মতো ছড়িয়ে দিতে পারেন।

মশা থেকে মুক্তি পেতে সাবান পানি

মশারা পানির কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে, তাই তাদেরকে দাঁড়ানো পানির জায়গায় প্রলুব্ধ করে তাদের ধরা সহজ করে দিতে পারে। গোপনীয়তা হল ঘরের বিভিন্ন অংশে মোটা লেদার দিয়ে সাবান পানি দিয়ে রাখা। এটি মশার অন্যতম সেরা ঘরোয়া প্রতিকার কারণ পোকা একবার সাবানের জল স্পর্শ করলে ফেনায় আটকে যায়।

মশা থেকে মুক্তি পেতে কফি গ্রাউন্ড

কফি গ্রাউন্ড মশা পরিত্রাণ পেতে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সব-প্রাকৃতিক উপায় এক. আপনার বাড়িতে দাঁড়িয়ে জলের সমস্যা থাকলে কফি গ্রাইন্ডস একটি চমৎকার সমাধান। শুধু এটা কফি গ্রাউন্ড যোগ করুন. অক্সিজেন ছাড়া, পানিতে মশার ডিম পৃষ্ঠের উপরে উঠে নষ্ট হয়ে যাবে। কফি গ্রাউন্ড বিদ্যমান মশা এবং অন্যান্য বিরক্তিকর প্রাণীদের তাড়ায়।

মশা থেকে মুক্তি পেতে পিনিয়ন কাঠ

আপনার যদি অগ্নিকুণ্ড থাকে তবে পিনিয়ন কাঠ সংরক্ষণ করার কথা ভাবুন। কারণ এই নির্দিষ্ট কাঠের গন্ধের সংস্পর্শে এলে মশা মারা যায়। নিশ্চিত করুন যে আপনি প্রকৃত পিনিয়ন কাঠ কিনছেন কারণ কিছু নির্মাতারা আপনাকে বোকা বানিয়ে পাইন কাঠ বিক্রি করতে পারে।

ক্রিমের ব্যবহার

মশা প্রতিরোধক হিসেবে বেশ পরিচিত মশা তাড়ানোর ক্রিম। অল্প করে হাতে-পায়ে লাগিয়ে নিলে মশা থেকে অনেকটাই নিস্তার পাওয়া সম্ভব। এটি তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় সিট্রোনেলা তেল, অ্যালোভেরা ও বাদামের তেল। ত্বকের জন্য এই ক্রিম ক্ষতিকর নয়। তাই সাধারণ ক্রিমের মতো এটি ব্যবহার করা যায়। ত্বকে লাগিয়ে নেওয়ার পর ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে।

দুই মাস বয়সী শিশু থেকে শুরু করে যে কেউ এই ক্রিম ব্যবহার করতে পারবেন। বারডেম হাসপাতালের মা ও শিশু বিভাগের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ডা. ফাহমিদা রহমান বলেন, ‘স্কুলে যাওয়ার সময় শিশুদের হাত-পা কিংবা পোশাকে অল্প করে এই ক্রিম লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে, তবে এ জাতীয় কোনো কিছু মুখের ত্বকে লাগানো যাবে না।

মশা প্রতিরোধক স্প্রে

বাজারে প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক, দুই ধরনের মশার স্প্রে পাওয়া যায়। এটি কাপড়ের ওপর এবং উন্মুক্ত ত্বকে ব্যবহার করা যায়। তবে কাপড়ের নিচে কিংবা ঢেকে রাখা ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে, স্প্রে করার সময় চোখে যেন না যায়। একবার স্প্রে করলে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এটি মশা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।

মশা মারার বৈদ্যুতিক যন্ত্র

বৈদ্যুতিক ল্যাম্প এবং ব্যাটও হতে পারে মশা-মাছি ও পোকামাকড় থেকে বাচার উপকরণ। দুটির কাজ করার পদ্ধতি প্রায় এক রকম। বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে ঘরের এককোণে রেখে দিলেই সেটি মশা মারার কাজ করে। ব্যাট হাতে নিয়ে নিজের কিছুটা কষ্ট করতে হয়। সুইচ অন অবস্থায় মশা-মাছি এগুলোর ভেতরে প্রবেশ করলে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়।

লেখকের শেষকথাঃ

প্রিয় বন্ধরা এতক্ষনে নিশ্চয় জেনে গেছেন মশা-মাছি এবং পোকামাকড় তাড়ানোর সহজ এবং ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে। মশা-মাছি এবং অন্যান্য যে কোন পোকামাকড় যে কতটা ক্ষতিকর তা অনেকেই ভালোমতো জানেনা। যদি জানতো তবে এগুলো হাত থেকে বাচতে মানুষ অনেক টাকার বিনিময়ে হলেও খরচ করতো।

বন্ধুরা উপরের লেখাগুলো পড়ে আপনার বাড়িতে বাস্তবায়ন করুন। নিজে উপকৃত হলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। মশা-মাছি ও পোকামাকড় মুক্ত থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪