ফুটফুটে হয়ে যাবে মুখ, রাতে ঘুমানোর আগে মুখে যা লাগাতে হবে জেনে নিন

 দাগহীন উজ্জ্বল ফুটফুটে চেহারা বানাতে চাইছেন ? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। ঘরোয়া টোটকা কিছু পদ্ধতি অবলম্বণ করলে আপনার চেহারা হবে ফুটফুটে উজ্জ্বল দাগহীন।

ফুটফুটে হয়ে যাবে মুখ,  রাতে ঘুমানোর আগে মুখে যা লাগাতে হবে জেনে নিন

যদি গরমকালে প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে এই ঘরোয়া টোটকার কথা মাথায় রাখা যায় তাহলেই মিলবে উজ্জ্বল দাগহীন ত্বক। নিচের লেখাগুলি মনোযোগ দিয়ে পড়ে জেনে নিন ফুটফুটে ত্বক বানাবেন কিভাবে।

সূচীপত্রঃ

মুখের যত্ন কিভাবে নিতে হয়
রাতে মুখে পাউডার দিয়ে ঘুমালে কি হয়
প্রতিদিন মুখের যত্ন
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন
গরমে রাতে ত্বকের যত্ন
রাতে ঘুমানোর আগে মুখের যত্ন ছেলেদের
সকালে ত্বকের যত্ন
রাতে ঘুমানোর আগে রূপচর্চা
লেখকের শেষকথাঃ

মুখের যত্ন কিভাবে নিতে হয়

দ্রুততা আর কর্মব্যস্ততার এই যুগে মানুষের হাতে সময় নেই মোটে। তাই নিয়ম করে নিজের যত্ন নেওয়া সম্ভব হয় না কারও পক্ষেই। কিন্তু একেবারেই যদি নিজের কিংবা ত্বকের যত্ন নেওয়া না হয় তাহলে, গুরুতর সমস্যা দেখা দেবে।

তাই বলে সর্বদা পার্লারে গিয়ে নিজের ত্বকের যত্ন নেওয়া সত্যি সে ভাবে সম্ভব হয় না। খরচও পরে যায় প্রচুর। আর সময়ও পাওয়া যায় না। কিন্তু আছে উপায়। আমাদের চারপাশে বা হাতের কাছে থাকা জিনিস দিয়েই ঘরোয়া ভাবে নেওয়া যায় ত্বকের

বিশেষত এই গরমের দিনে যখন শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে হিট ওয়েভে, একইভাবে জলহীন হয়ে পড়ছে ত্বকও। আর তাতেই বাড়ছে দাগ ছোপ, কালচে ভাব যাকে আমরা ট্যান বলে থাকি। তবে যদি গরমকালে প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে এই ঘরোয়া টোটকার কথা মাথায় রাখা যায় তাহলেই মিলবে উজ্জ্বল দাগহীন ত্বক।

শশার রস- গরমকালে শরীরের পাশাপাশি ত্বকের যত্ন নিতে শশা অপরিহার্য। শশার রস ত্বককে শীতল রাখে। গরমের জন্য সৃষ্ট একাধিক ত্বকের সমস্যা দূর করে এটি। ত্বককে আদ্রতা ফিরিয়ে দিতে এই একটি উপকরণের জুড়ি মেলা ভার।

প্রতিদিন যদি রাতে ঘুমানোর আগে মুখ ধুয়ে ভাল করে শুকিয়ে নিয়ে এই শশার রস হালকা করে লাগিয়ে সারারাত রেখে দেওয়া হয় তাহলে, ব্রণর সমস্যা দূর হয় চিরতরে। ব্রণর সমস্যা দূর করার পাশাপাশি ত্বককে স্বাভাবিকভাবেই উজ্জ্বল রাখে এটি।

দই- চুল ও শরীরের পাশাপাশি দই ত্বকের জন্যও বেশ উপকারী। দইতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিনের পাশাপাশি ভিটামিন ডিও, যা ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে। যদি প্রতিদিন ত্বকে দই লাগানো হয় তাহলে, ব্রণর পাশাপাশি চোখের তলার কালির

কী ভাবে বানাবেন দইয়ের অব্যর্থ ফেসপ্যাক? একটি পাত্রে অল্পপরিমাণে দই নিয়ে প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে গোটা মুখে ভাল করে লাগিয়ে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। কিন্তু ধুয়ে ফেললে চলবে না। দইয়ের মিশ্রণটি এরপর সারারাত মুখে লাগিয়ে রেখে দিতে হবে। পরদিন সকালে ভাল করে পরিষ্কার জল দিয়েই মুখ ধুয়ে নিতে হবে। মাত্র দিন দুয়েকেই চোখে পড়বে ফারাক।

রাতে মুখে পাউডার দিয়ে ঘুমালে কি হয়

আপনি যখন আপনার দিনের পুরানো ফাউন্ডেশন, পাউডার এবং চোখের মেকআপে ঘুমান, তখন এটি আপনার ক্রিজে এবং সূক্ষ্ম রেখায় বসতি স্থাপন করতে পারে, যার ফলে নিস্তেজ, শুষ্ক, চুলকানি ত্বক হতে পারে। নিস্তেজ চেহারা এড়াতে একটি কার্যকর মেকআপ অপসারণের অনুশীলন অনুসরণ করুন তা নিশ্চিত করুন।

♦ মেকআপের আগে প্রাইমার হিসেবেও ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এটি আপনার ত্বকে সফট এবং স্মুথ ভাব তৈরি করে, যার ফলে ফাউন্ডেশন সুন্দরভাবে ত্বকে বসে যায়।

♦ অনেকের আইল্যাশ এত ছোট এবং পাতলা যে মাশকারা দেওয়ার পরেও যেন শান্তি পান না। আর সব সময় তো ফলস আইল্যাশ ব্যবহার সম্ভব হয় না। সমাধান পাবেন পাউডারে। প্রথমে হালকা করে এক কোট মাশকারা লাগিয়ে একটা ছোট আইশ্যাডো ব্রাশে পাউডার নিয়ে আইল্যাশে লাগিয়ে নিন এবং অতিরিক্ত পাউডার ঝেড়ে ফেলুন। তারপর আবার ভালো করে কয়েক কোট মাশকারা লাগিয়ে নিন। পরিবর্তন আসবে।

♦ যাদের ত্বক বেশি তৈলাক্ত এবং ত্বক পরিষ্কারের বেশ কিছুক্ষণ পরেই আবার তৈলাক্ত হয়ে যায়। তারা একটু পাউডার নিয়ে পুরো মুখে লাগাতে পারেন। এটি আপনার মুখের অতিরিক্ত তেল কমিয়ে ত্বকে একটা ফ্রেশ লুক এনে দেয়।

♦ পিম্পল এবং একনি স্পট হাইডে বেবি পাউডার এখন বেশ জনপ্রিয়। কারণ, বেবি পাউডার ময়শ্চার শুষে নেয়, যার ফলে পিম্পল শুকিয়ে আসে। এ জন্য একটি ছোট বাটিতে ২ চা চামচ বেবি পাউডার নিয়ে এর মধ্যে পরিমাণ মতো পানি মিশ্রণ করে পেস্ট তৈরি করুন। এবার এটি শুধু পিম্পল অথবা স্পট রয়েছে সেখানে লাগান। ৩০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

প্রতিদিন মুখের যত্ন

ত্বকের ধরন অনুযায়ী মধু, লেবুর রস, ডিমের সাদা অংশ দিয়ে মাস্ক সপ্তাহে দুই দিন ত্বকে মেখে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। শসার রস ফ্রিজে রেখে আইস কিউব করেও রাখতে পারেন। রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই ফেস টোনার এবং কটন দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। এছাড়াও প্রচুর পানি খেতে হবে, ফল এবং ফলের রস নিয়মিত খান।

খুব অল্প সময় ব্যয় করে আপনি ত্বকের জেল্লা শুধু ধরেই রাখতে পারবেন না, বাড়াতে পারবেন ত্বকের গ্লামার ভাবও। এর জন্য নিয়মিত তিনটি বিষয় আপনাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এগুলো হলো-

১। বেশি রাত না জাগা। ভোরে ঘুম থেকে উঠে হালকা ব্যায়াম করে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলা। এতে করে প্রতিটি কোষে রক্ত সঞ্চালন হয়ে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য উজ্জ্বীবিত হয়ে ওঠে।

২। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন। ডায়েটে প্রাধান্য দিন স্বাস্থ্যকর খাবারকে। দৈনিক ৮ ঘন্টা ঘুম ও ৩ লিটার পানি নিশ্চিত করুন।

৩। রূপচর্চার জন্য সময় বেছে নিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। এই সময়েই ত্বকের যত্ন নেয়ার উপকারিতা সবচেয়ে বেশি কার্যকরী থাকে। এরজন্য আপনি একটি ভালো ব্র্যান্ডের ফেসওয়াস দিয়ে মুখ ধোয়ার পর ত্বকে একটু অয়েল ম্যাসাজ করে নিতে পারেন।

ম্যাসাজের পর আবারও একই পদ্ধতিতে মুখ ফেস ওয়াস দিয়ে ধুয়ে নিন। ১০ মিনিটের জন্য মুখে ম্যাসাজ করুন চন্দনের গুঁড়া ও গোলাপ জলের পেস্ট। মুখে চন্দনের প্রলেপ শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এবার ভালো ব্র্যান্ডের কোনো ময়েশ্চারাইজার মুখে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।

রাতে এ পদ্ধতি মেনে চলা বেশি কার্যকরী হওয়ার কারণ হলো রাতে ঘুমানোর সময় ত্বকের রিপেয়ার সিস্টেম একটিভ হতে শুরু করে। এই সময় ত্বকের একটু যত্ন নিয়ে ঘুমালেই ত্বক আজীবন তার জেল্লা ধরে রাখার সুযোগ পায়। তাই নিয়মিত এ তিনটি বিষয় অবশ্যই মেনে চলুন। আর আগের চেয়ে আরও দ্বীপ্তিময় লাবণ্যে চমকে দিন সবাইকে।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন

যে কোনো জিনিসকে ভালো রাখতে যেমন যত্নের প্রয়োজন ঠিক তেমনি ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতেও নিতে হবে যত্ন। নাহলে হারিয়ে যাবে ত্বকের আসল রং। অনেকেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম বা কেমিক্যাল জাতীয় ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করে থাকেন। এতে যেমন ত্বকের ক্ষতি হয় তেমনি দেখা দিতে পারে বিভিন্ন রকম সমস্যা।

হলুদ

হলুদ হলো একটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ঠ্য সমৃদ্ধ মসলা। এতে রয়েছে কারকিউমিন যা কেবল ত্বকের উজ্জ্বলতাই বৃদ্ধি করে না এটি ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে।

যেভাবে ব্যবহার করবেন

আধা চা চামচ হলুদের গুঁড়া এক কাপ বেসনের সঙ্গে মেশান। এরপর দুধ/পানি যোগ করে একটি মশৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এবার কয়েক ফোঁটা গোলাপ পানি মিশিয়ে নিন। এরপর এ মিশ্রণটি আপনার মুখে ও ঘাড়ে লাগান এবং শুকানো পর্যন্ত রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

মধু

মধু ত্বকের ময়েশ্চারাইজার এবং ত্বককে ভালোভাবে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। মধুর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং বাড়িতে দাগ ও ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। মধুর ব্লিচিং বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ এবং পিগমেন্টেশন দাগ দূর করতে যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখে।

যেভাবে ব্যবহার করবেন

মধু সরাসরি মুখে এবং ঘাড় এলাকায় লাগাতে পারেন, তবে অবশ্যই আপনার ত্বক পরিষ্কার এবং স্যাঁতসেঁতে হতে হবে। মধু মুখে লাগিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য ম্যাসাজ করুন। এরপর শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

অলিভ অয়েল

ত্বকের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে অলিভ অয়েল। এটি ত্বকের দ্রুত বার্ধক্য রোধ করে। এই তেল ত্বকের ক্ষতি সারাতে বেশ পরিচিত। তাই সূর্যের সংস্পর্শে আসার পর ত্বকে অলিভ অয়েল তেল লাগালে ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষগুলো ধ্বংস করে দেয়। এই তেল শুধু ত্বকের জন্যই ভালো নয়, এটি ত্বকে সুন্দর চকচকে আভাও দেয়।

যেভাবে ব্যবহার করবেন

প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল নিয়ে সারা মুখে ও ঘাড়ে লাগান। ২-৩ মিনিটের জন্য ওপরের দিকে ম্যাসাজ করুন। এবার একটি তোয়ালে গরম পানিতে ডুবিয়ে অতিরিক্ত পানি ছেঁকে নিন এবং মুখে ও ঘাড়ে প্রায় ১ মিনিট রাখুন। আবার তোয়ালে গরম পানিতে ডুবিয়ে মুখে ও ঘাড়ের অতিরিক্ত তেল আস্তে আস্তে মুছে ফেলুন। এবার আরেকটি পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুখ ও ঘাড়ের অংশ শুকিয়ে নিন।

কমলার রস

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলের মধ্যে একটি হচ্ছে কমলালেবু। এটি ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করতে পারে। এক গ্লাস কমলালেবুর রস ত্বকের রং পরিষ্কার করতে এবং অল্প সময়ের মধ্যে ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতে দারুণ কার্যকর। ব্রণ নিয়ন্ত্রণে এবং ত্বককে দৃঢ়তা দিতে কমলার রস যথেষ্ঠ উপকারী।

প্রতিদিন সকালে কমলার রস খাওয়ার অভ্যাস করুন। এই রসে এক চিমটি লবণ এবং কিছু কালো মরিচ যোগ করতে পারেন। এ ছাড়াও আপনি কয়েক টুকরো কমলার খোসা নিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন এবং তাতে কয়েক ফোঁটা গোলাপ পানি দিয়ে পিষে নিতে পারেন। এই পেস্টটি আপনার সারা মুখে লাগান এবং ১৫ মিনিট পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

দুধ

দুধ ত্বকে টাইরোসিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। তাই সুন্দর ত্বক পেতে কাঁচা দুধ একটি সহজলভ্য উপাদান।

যেভাবে ব্যবহার করবেন

কাঁচা দুধ সরাসরি আপনার ত্বকে লাগাতে পারেন বা অন্য কোনো উপাদানের সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করেও লাগাতে পারেন।

গরমে রাতে ত্বকের যত্ন

রাতের বেলায় রূপচর্চার জন্য রুটিন অনেক কিছুর ওপর নির্ভরশীল। যেমন- বয়স, ঋতু, আবহাওয়া, বাতাসের আর্দ্রতা ইত্যাদি।শুষ্ক ত্বকের জন্য

ত্বক

সুন্দর ত্বকের মূলমন্ত্রই হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। ত্বকের ময়লা ঠিকমত পরিষ্কার করা না হলে ব্রণ হতে পারে। ত্বক হয়ে পড়ে খসখসে, রুক্ষ ও অমসৃণ। তাই রাতে ঘুমানোর আগে মুখটাকে পরিষ্কার করে ঘুমালে সারা রাতের লম্বা সময় ত্বক হয়ে উঠবে একেবারে তরতাজা। আমাদের গরমের দেশে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ায় ত্বক তেলতেলে ও আর্দ্র হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে মৃদু সাবান ও পানি দিয়ে মুখ ধোয়া খুব ভালো। অবশ্য শুষ্ক ত্বকে সাবানের বদলে ক্লিঞ্জিং লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা উচিত ভিজে তুলো।

ধাপ-১

প্রথমে মুখ ধুয়ে নিন আপনার ত্বকের সঙ্গে খাপ খায় এমন কোনো ফেইসওয়াশ দিয়ে। স্পর্শকাতর ত্বক হলে ব্যবহার করতে পারেন ভেষজ ফেইসওয়াশ।

ধাপ-২

এরপর ব্যবহার করুন ফেইসপ্যাক। ঘরেই তা বানাতে পারেন।

শুষ্ক ত্বকের জন্য

১ চা চামচ টকদই এবং ১ চা চামচ দুধের সর বা দুধ মিশিয়ে।

তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বকের জন্য

১ টেবিল চামচ উপটান এর সাথে ১ চা চামচ টকদই ও ১ চা চামচ লেবুর রস।

এগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। পুরোটা শুকাবেন না, অর্ধেক শুকিয়ে এলে মুখ হালকা ঘষে ধুয়ে ফেলুন। প্যাকে মেশাতে পারেন গোলাপজল, যা সব ধরনের ত্বকের জন্য ভালো।

ধাপ-৩

ময়েশ্চারাইজার হিসেবে শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা ভেজা মুখে স্রেফ ২-৩ ফোঁটা যে কোনো বেবি অয়েল মেখে নিন। তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করাই উচিত।

রাত্রে লাগানোর ক্রিম ভিটামিন ই যুক্ত হলে উপকার হয়। কারণ ভিটামিন ই ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখে। এছাড়া ক্রিমের মধ্যে এই ভিটামিন মেশানো থাকলে, ক্রিমটি অনেকদিন পর্যন্ত ভালো ও ব্যবহারযোগ্য থাকে। ভালো কোম্পানির ওভারনাইট ক্রিম সব বয়সের জন্যই ভালো। বিদেশী নারিশিং ক্রিম ব্যবহার করাই ভালো।

ত্বকে ব্রণের জন্য

যাদের ত্বক তৈলাক্ত ও ব্রণ আছে তারা প্যাক ধুয়ে ফেলে ময়েশ্চারাইজারের বদলে ব্যবহার করুন অ্যাসট্রিনজেন্ট (Astringent)। ঘরোয়া অ্যাসট্রিনজেন্ট হলো গোলাপজল ও শশার রস। এগুলো ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে নিলে আরও ভালো। শশার রস করে বরফ জমানোর পাত্রে রেখে আইস-কিউব করে নিতে পারেন। প্রতি রাতে রস বানানোর ঝামেলায় না গিয়ে একটি কিউব মুখে ঘষে নিন।

সমপরিমাণে পুদিনা পাতা ও নিমপাতা বেটে শুধু ব্রণ ও দাগের উপর লাগিয়ে ঘুমান। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন ফেসপ্যাকেও। ব্রণের জন্য ভীষণ উপকারী।

রাতে ঘুমানোর আগে মুখের যত্ন ছেলেদের

অনেকে মনে করেন রূপচর্চা শুধু মেয়েদের জন্য। কিন্তু এ ধারণাটা ঠিক নয়। যেহেতু ছেলেদের কাজের প্রয়োজনে বাইরে বেশি যেতে হয়, তাই তাদের ত্বক আরও দ্রুত কালচে হয়। এক্ষেত্রে সঠিক পরিচর্যা করলে চেহারার উজ্জ্বলতা আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ত্বককে বাইরের ধুলাবালি ও রোদ থেকে রক্ষা করুন।

রাতে ঘুমানোর আগে একটা আইসকিউব নিয়ে সম্পূর্ণ মুখে ভালোভাবে ঘষে নিন। এতে করে ত্বকে রক্ত চলাচল সচল থাকে। আর ত্বকের রক্ত সঞ্চালন প্রবাহ ভালো থাকলে ত্বক দ্রুত উজ্জ্বল হয়। এরপর যেকোনো একটা মশ্চারাইজার ক্রিম লাগিয়ে আঙুল দিয়ে ঘষে ম্যাসাজ করে নিন।

একটা লেবু কেটে খোসাসহ মুখে ভালোভাবে ঘষে নিন। লেবুর সাইট্রিক এসিড ত্বকের অতিরিক্ত তেল, পিগমেন্টেশন, রোদে পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন সি মুখের কালো দাগ দূর করে ত্বককে আরও ফর্সা করতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন বাসায় ফিরে মুখ ধোয়ার আগে শসার টুকরা দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখ ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে নিন। এটি প্রতিদিন ব্যবহারে ত্বক অনেক পরিষ্কার হয়। এছাড়া শসার রস ত্বকের প্রাকৃতিক মশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। এক চামুচ কাচা হলুদের সঙ্গে কাচা দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে সম্পূর্ণ মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। কাচা হলুদ ত্বকের কোমলতা ধরে রাখে ও কাচা দুধ স্কিনের কমপ্লেকশনকে আরও ফর্সা করতে সাহায্য করে।

অ্যালোভেরার জেলে পচুর পরিমাণে আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ফাটা ত্বক সারিয়ে তুলতে অনেক উপকারী। সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন অ্যালোভেরা জেল মুখে মেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে নিন। এটি ত্বকের মৃত কোষগুলো বের করে ত্বককে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।

আধা চামচ মধুর সঙ্গে এক টুকরা লেবুর রস মিশিয়ে মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। শুষ্ক ত্বকের জন্য এটি অনেক উপকারী।

সকালে ত্বকের যত্ন

শরীরের যত্ন নিলে যেমন শরীর সুস্থ থাকে তেমনই ত্বকের যত্ন নিলে ত্বকও ঠিক থাকে। ব্রণ, বলিরেখা, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া এসবের থেকে দূরে থাকা যায়। সকালে উঠে যদি এই নিয়মগুলি মেনে টলতে পারেন তাহলে সারাদিন ত্বক থাকবে তরতাজা। সেই সঙ্গে ত্বক হবে সোনার মত উজ্জ্বল।

দিনের শুরুতেই খুব ভাল ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এতে মুখের অতিরিক্ত তেল থাকবে না। ত্বক হবে নরম ও সুন্দর। ত্বক যাতে ভিতর থেকে কন্ডিশনিং হয় তার জন্য কম পিএইচ- যুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করুন। এতেই গভীর থেকে পরিষ্কার হবে। ক্লিনজারের পর অবশ্যই একটি ভাল টোনার ব্যবহার করবেন। ভাল টোনার ত্বকের তেল-ময়লা সহজেই পরিষ্কার করে দেবে

ত্বকের ধরণ অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু এখন গরম তাই ক্রিম বেসের পরিবর্তে জেল বেস ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলেই সবথেকে ভাল। ত্বকের কোলাজেন গঠনের জন্য সিরাম ব্যবহার জরুরি। তাই ভাল একটা সিরাম বেছে নিন, সকালে অথবা রাতে অবশ্যই ব্যবহার করবেন।

সকালে বাড়ির বাইরে বেরনোর সময় সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। সারাবছরই কিন্তু সানস্ক্রিন ব্যবহার করা খুবই জরুরি।

রাতে ঘুমানোর আগে রূপচর্চা

রাতে ঘুমানোর সময় ত্বক নিজেকে মেরামত করে নেয় নিজ দায়িত্বেই। রাতের আট ঘণ্টায় পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় ত্বক। তবে শুধু ঘুমালেই হবে না। ত্বককে কীভাবে আপনার ঘুমের জগতে নিয়ে যাচ্ছেন, সেটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যত ক্লান্তই থাকুন না কেন, রাতে ত্বক পরিষ্কার করে ঘুমানোর ওপর জোর দেওয়া হয় সংগত কারণেই। 

প্রতিদিনের মানসিক ও পারিপার্শ্বিক চাপ সামলানো, ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখা, বলিরেখা পড়া রোধ করা ইত্যাদি বিষয় ত্বক মোকাবিলা করে রাতের এই ঘুমের সময়ই। পুরো প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করে যখন রাতের রূপচর্চাটাও হয় ঠিকভাবে। রাতের রূপচর্চার ধাপগুলোতে যেসব পণ্য ব্যবহার করবেন, সেটা বাছাই করতে হবে ত্বকের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ী। 

সব ধরনের ত্বককেই পরিষ্কার করে নিতে হবে প্রথমে। সম্ভব হলে প্রথমে ফেস অয়েল দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। এরপর ত্বক অনুযায়ী ফেসওয়াশ বেছে নিন। ত্বক তৈলাক্ত হলে তেল নিয়ন্ত্রণ করবে, এমন ফেসওয়াশ বেছে নিন। তেমনি ত্বক শুষ্ক হলে মিল্ক ক্লিনজার আর সংবেদনশীল ত্বকের জন্য প্রয়োজন মেডিকেটেড ক্লিনজার। এরপর আসবে স্ক্রাব ব্যবহারের পালা। তবে প্রতিদিন নয়। সপ্তাহে দু-তিন দিন স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। বাড়িতেও বানিয়ে নিতে পারেন।

টক দই আর ওটস মিশিয়ে বানানো স্ক্রাব সব ধরনের ত্বকের জন্যই মানানসই।

পরের ধাপে ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক করার জন্য টোনার লাগাতে হবে। বাড়িতে টোনার তৈরি করে নিতে পারেন শসার রস আর গোলাপজল মিশিয়ে। তুলার সহায়তায় লাগালে ত্বকের ওপর বাড়তি কোনো ময়লা থাকলে চলে যাবে। তবে টোনার কিন্তু ত্বক পরিষ্কারের জন্য নয়। ত্বকের সমস্যা অনুযায়ী টোনার বেছে নিতে পারেন। পিগমেন্টেশনের জন্য নির্দিষ্ট টোনার, ব্রণ থাকলে সেটার জন্য মানানসই টোনার ব্যবহার করতে হবে। টোনারকে ত্বকের ভেতরে যাওয়ার জন্য অন্তত ৬০ সেকেন্ড সময় দিন।

বলিরেখা রোধ করা, উজ্জ্বলতা বাড়ানো, ব্রণ কমানো বা ডার্ক স্পট কমানো—লক্ষ্য যেটাই থাকুক না কেন, সিরামটাও বেছে নিন সে অনুযায়ী। ত্বকের শুষ্কতা থেকে শুরু করে বলিরেখা রোধ করা পর্যন্ত যত রকম সমস্যা আছে ত্বকের, সব সমস্যার সক্রিয় সমাধান পাওয়া যাবে সিরাম থেকে।

ত্বক শুষ্ক হলে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সিরাম, ত্বক উজ্জ্বল করার জন্য গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি বেছে নিতে পারেন, ত্বকে ব্রণের সমস্যা থাকলে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড আছে, এমন সিরাম দরকার ত্বকের জন্য। তবে এ ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো। এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী নাইট ক্রিম লাগাতে হবে।

সকালে উঠে ত্বক কিন্তু আবার পরিষ্কার করে নিতে হবে। অনেকে মনে করেন, রাতে এত যত্ন নিলাম, সকালে কিছু না করলেও হবে। বিষয়টি একেবারেই উল্টো। সকালে মুখে পানি দিয়ে, দাঁত ব্রাশ করে বের হয়ে গেলেই হবে না। রাতে ত্বক থেকে যেই সিবাম বের হয়, সেটা দীর্ঘক্ষণ অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে ত্বকের ওপর মিশে থাকলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা দেখা দেবে। এ কারণে সকালেও একই প্রক্রিয়ায় ত্বকের যত্ন নিতে হবে। বাড়তি যুক্ত হবে সানস্ক্রিন।

চেহারার পর আসবে চুলের বিষয়টি। আপনার আরামের ওপর নির্ভর করে বেঁধেও ঘুমাতে পারেন, আবার চুল খোলা রেখেও ঘুমাতে পারেন। চুল বাঁধতে চাইলে ঢিলেঢালাভাবে বাঁধুন। চুলের গোড়ায় চাপ না পড়লেই হলো।

লেখকের শেষকথাঃ

ফুটফুটে দাগহীন ত্বক সবায় চাই। ছেলে-মেয়ে সবায় চাই তাদের ত্বক যেন উজ্জ্বল ও সুন্দর দেখায়। ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য দরকার নিয়মিত যত্ন। তাই বলে টাকা খরচ করে পার্লারে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। খুব সামান্য খরচেই আপনি ত্বকের যত্ন নিতে পারেন বাড়িতেই। কিন্তু এই যত্ন মাঝে-মাঝে নিলে চলবে না। করতে হবে নিয়মিত।

প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে ত্বকের যত্ন নিতে হবে। উপরে বর্ণিত আলোচনা থেকে যদি আপনি উপকৃত হন তবে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন। নিয়ম মেনে প্রতিদিন মুখের ত্বকের যত্ন নিন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪