এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সার্বজনীন পেনশন স্কিমে আনতে কমিটি গঠন
আপনি কি বেসরকারি এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আজকে আলোচনায় জানতে পারবেন, এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আনতে কমিটি গঠন করেছেন শিক্ষা মন্ত্রনালয় সে সম্পর্কে।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সুপারিশের আলোকে ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদের কাজ কী ? এই সার্বজনীন পেনশন কী শিক্ষকদের জন্য ভালো হবে নাকি ক্ষতি হবে জেনে নিন বিস্তারিত।
সূচীপত্রঃ
সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কি
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ২০২৩
সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়েছে কবে
সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
সর্বজনীন পেনশন এপসসার্বজনীন পেনশন সমতা
সর্বজনীন পেনশন সুবিধা ও অসুবিধা
মাসে কত টাকা দিলে কত পেনশন পাবেন
শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশনে আনতে কমিটি
এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সুখবর
সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নের লক্ষে কর্মপরিকল্পনা
সার্বজনীন পেনশন কি শিক্ষকদের জন্য বাধ্যতামূলক ?
পেনশন নিয়ে টেনশন আন্দোলনে নামছেন শিক্ষকরা
লেখকের শেষকথাঃ
সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কি
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বৎসর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বৎসরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী কর্মীগণও এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ২০২৩
সার্বজনীন পেনশন সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক স্বেচ্ছায় এই পেনশন পেতে পারেন, ভবিষ্যতে এই পেনশন সবার জন্য বাধ্যতামূলক হবে। পেনশন পেতে হলে একজন নাগরিককে কমপক্ষে দশ বছরের জন্য অবদান রাখতে হবে, যার পরিমাণ তিনি নিজেই নির্দিষ্ট করতে পারবেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়েছে কবে
এর ধারাবাহিকতায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ প্রণীত হয় যার অধীনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ১৭ আগস্ট ২০২৩ তারিখ সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন।
সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম
প্রত্যয় স্কিমে একজন ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা নিজ বেতন থেকে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে একই পরিমাণ টাকা ৩০ বছর চাঁদা প্রদান করলে তিনি অবসর গমনের পর অর্থ্যাৎ ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা হারে পেনশন প্রাপ্য হবেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প সম্পর্কে অধ্যাপক আবু আহমেদ মন্তব্য করেছেন, ‘লক্ষ কোটি টাকা যদি পেনশন ফান্ডে জমা পড়ে, সেই অর্থ হবে সরকারের জন্য হিসাববিজ্ঞানের পরিভাষায় দায়। দায় যদি সম্পদে রূপান্তর না হয় তাহলে একটা সময় পেনশন কর্তৃপক্ষ দায় নিয়ে জনগণের যারা পেনশন ফান্ডে অনেক বছর ধরে চাঁদা দিয়েছে, তাদের পাওনা মেটাতে পারবে না।
পেনশনে প্রদেয় চাঁদা হবে পাবলিক ফান্ড বা জনগণের অর্থ। এ অর্থকে সরকারের আয় (রেভিনিউ) হিসাবে দেখা যাবে না। এ অর্থের মালিক যারা চাঁদা দিয়েছে তারা এবং তারা ভবিষ্যতে বর্ধিত আকারে আয় পাবে ভেবেই আজকে ওই ফান্ডে চাঁদা দেবে। এখানে ফান্ডের নিরাপত্তার বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ।
মানুষ ভাবে, সরকার থেকে বেশি নিরাপত্তা অন্য কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা তাদের প্রদেয় ফান্ডের ক্ষেত্রে দিতে পারবে না। সে জন্য এ ফান্ডে চাঁদা অনেকেই দিতে চাইবে। অবসরে বা ৬০ বছর পর একটু আর্থিক নিরাপত্তা কে না চায়?
অধ্যাপক আবু আহমেদ সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের বিষয়টি আমাদের নজরে এনেছেন। একটি নতুন ধরনের আর্থিক কর্মকাণ্ডের চ্যালেঞ্জগুলো যদি যাত্রাকালেই চিহ্নিত করা যায়, তাহলে এর চেয়ে ভালো কিছু হবে না। যারা পেনশন স্কিমের চাঁদা দেবেন তারা সঠিক আশাটাই করবেন।
চাঁদার পিরিয়ড পার হওয়ার পর প্রতিশ্রুত লাভসহ প্রদত্ত চাঁদা ফেরত পাবেন। বাংলাদেশে যারা সরকারি চাকরি করেন, চাকরিজীবনের শেষে তারা হয়রানিমুক্তভাবে তাদের পেনশনের অর্থ ফেরত চান। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সরকারের নানা প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও চাকরিজীবনের শেষে নানা রকম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। পেনশনকে কেন্দ্র করে নানা রকম দুর্নীতিও হয়।
সারাজীবন নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে অবসরে যাওয়ার পর পেনশনের ফয়সালা হতে যদি কয়েক বছর লেগে যায়, তাহলে এ পেনশন অবসরভোগীর জন্য সেভাবে কাজে আসবে না।
অধ্যাপক আবু আহমেদ সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের বিষয়টি আমাদের নজরে এনেছেন। একটি নতুন ধরনের আর্থিক কর্মকাণ্ডের চ্যালেঞ্জগুলো যদি যাত্রাকালেই চিহ্নিত করা যায়, তাহলে এর চেয়ে ভালো কিছু হবে না। যারা পেনশন স্কিমের চাঁদা দেবেন তারা সঠিক আশাটাই করবেন।
চাঁদার পিরিয়ড পার হওয়ার পর প্রতিশ্রুত লাভসহ প্রদত্ত চাঁদা ফেরত পাবেন। বাংলাদেশে যারা সরকারি চাকরি করেন, চাকরিজীবনের শেষে তারা হয়রানিমুক্তভাবে তাদের পেনশনের অর্থ ফেরত চান। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সরকারের নানা প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও চাকরিজীবনের শেষে নানা রকম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।
পেনশনকে কেন্দ্র করে নানা রকম দুর্নীতিও হয়। সারাজীবন নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে অবসরে যাওয়ার পর পেনশনের ফয়সালা হতে যদি কয়েক বছর লেগে যায়, তাহলে এ পেনশন অবসরভোগীর জন্য সেভাবে কাজে আসবে না।
সর্বজনীন পেনশন এপস
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। চালু করা হবে মোবাইল অ্যাপ। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্তির জন্য www.upension.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করা যাচ্ছে। গ্রামীণ পর্যায়ে নিবন্ধন করতে সহযোগিতা করছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার।
কেউ অনলাইনে পেনশন স্কিমের জন্য নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে তা করতে পারবেন। তারপরও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় কিছু ঘাটতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে কিছুদিনের মধ্যে মোবাইল অ্যাপ চালু করা হবে।
গত ১৭ আগস্ট পেনশন স্কিম উদ্বোধনের পর ব্যাপক সাড়া মিলেছে। প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিম, সুরক্ষা স্কিম এবং সমতা স্কিম– এ চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার। পরে প্রত্যয় নামে আরো একটি এপস চালু করা হয়।
সার্বজনীন পেনশন সমতা
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বৎসর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বৎসরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী কর্মীগণও এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সর্বজনীন পেনশন সুবিধা ও অসুবিধা
সর্বজনীন পেনশনের সুবিধা এবং অসুবিধার বিষয়টি অনেক দিক থেকে বিবেচনা করা যায়ঃ-
সুবিধাঃ
অর্থনৈতিক সহায়তাঃ বৃদ্ধ এবং দুর্বল সমাজের সদস্যদের জন্য সর্বজনীন পেনশন অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করে যা তাদের জীবনযাপনের খরচে সাহায্য করে।
সোশাল সুরক্ষাঃ সর্বজনীন পেনশন সোশাল সুরক্ষা প্রদান করে যাতে দুর্বল এবং অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের মানব সম্প্রদায়ের অংশ হিসাবে গর্ব ও স্বাধীনতা অনুভব করতে পারে।
সমাজের নিয়মিত অংশঃ সর্বজনীন পেনশন সমাজের নিয়মিত অংশ হিসাবে কাজ করে এবং নিরাপত্তা এবং অবকাঠামো সৃষ্টি করে যা সমাজের স্থিতিশীলতা ও সমন্বয়ের প্রতীক।
অসুবিধাঃ
অর্থনৈতিক সঙ্কটঃ সর্বজনীন পেনশনের জন্য সরকার অনেক সময়ে অর্থনৈতিক সঙ্কট অতিক্রম করতে সক্ষম হতে পারে, যা পেনশনারদের জীবনযাপনের সীমা করে তোলে।
সামাজিক নিঃশুল্কতার চাপঃ সর্বজনীন পেনশনের দ্বারা সামাজিক নিঃশুল্কতার চাপ বাড়াতে পারে এবং সামাজিক সুযোগ ও সুবিধা প্রদানে সর্বজনীন পেনশন নিয়ে আনুমানিক অভিজ্ঞতা থাকতে পারে।
ব্যবহারের প্রতিষ্ঠানঃ কোনও সরকারী পেনশন প্রদানের সুবিধা উপভোগ না করা প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতির কারণে অনেকের জীবনযাপনের স্তর নিম্ন হতে পারে।
সর্বমোট মন্তব্য হল, সর্বজনীন পেনশন একটি গুরুত্বপূর্ণ সোশাল সুরক্ষা ব্যবস্থা হলেও, এর প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাগুলির সঠিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে।
মাসে কত টাকা দিলে কত পেনশন পাবেন
শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশনে আনতে কমিটি
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় নিয়ে আসতে কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সুপারিশের আলোকে ১৫ সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে। সদস্য সচিব করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিবকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ), কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব কর্তৃক মনোনীত যুগ্মসচিব/উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক কর্তৃক মনোনীত পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক কর্তৃক মনোনীত পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক মনোনীত পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক মনোনীত পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (বাজেট), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কর্তৃক মনোনীত যুগ্মসচিব/উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা, অর্থ বিভাগের সচিব কর্তৃক মনোনীত যুগ্মসচিব/উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত যুগ্মসচিব/ উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের শরীফ আহমদ সাদী, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব মো. শাহজাহান আলম সাজু।
সদস্য সচিব কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, কমিটি এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল ও অবসর সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান জটিলতা স্থায়ীভাবে নিরসন এবং বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের শিক্ষা সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির দ্বিতীয় সভায় এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল ও অবসর সুবিধা প্রদানের জটিলতা স্থায়ীভাবে নিরসন এবং বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের সার্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সুখবর
সরকারি চাকরিজীবীদের মতো বেসরকারি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদেরও পেনশনের আওতায় আনার আলোচনা চলছে। এ ব্যবস্থাপনায় অবসরের পর শিক্ষকরা এককালীন টাকার পাশাপাশি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতাও পাবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষকদের কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডের আর্থিক বিষয়ে আলোচনা করতে একটি অনানুষ্ঠানিক সভা হয়। এতে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ছাড়াও শিক্ষা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বেসরকারি শিক্ষকদের পেনশন চালুর প্রস্তাব করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষকদের পেনশন স্কিম চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে অবসর বোর্ডের আইন পরিবর্তন করতে হবে। সেজন্য সভায় উচ্চ পর্যায়ের একটি কারিগরি কমিটি গঠনের প্রস্তাব উঠেছে। এই কমিটিই সবকিছু নির্ধারণ করে দেবে।
সূত্র আরও জানায়, পেনশন ব্যবস্থা চালু হলে শিক্ষকরা চাকরি শেষে অবসরের পুরো টাকা একসঙ্গে পাবেন না। অবসরের অর্ধেক টাকা এককালীন পরিশোধ করা হবে। বাকি অর্ধেক টাকা শিক্ষক-কর্মচারীরা পেনশন আকারে পাবেন। পেনশনের টাকা আজীবন পাওয়া যাবে। কোনো কারণে উপকারভোগী মারা গেলে, তার নমিনিকে পেনশনের টাকা দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৯৯০ সাল থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা পাচ্ছেন। আর ২০০৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে অবসর সুবিধা। এই দুই সুবিধা বাবদ এককালীন অর্থ পেয়ে থাকেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। তবে েএই টাকা পেতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয় শিক্ষকদের। অনেকেই এই টাকা ভোগ করতে পারেন না, মারা যাওয়ার কারণে।
সার্বনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা
সার্বজনীন পেনশন কি শিক্ষকদের জন্য বাধ্যতামূলক ?
মাউশি ও শিক্ষক নেতারা বলছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে বাধ্য করার বিষয়টি তাদের জানা নেই। যদিও তারা স্বীকার করেছেন, বেসরকারি শিক্ষক যেহেতু অবসরের পর খুব একটা সুবিধা পান না, তাই তাদের জাতীয় পেনশনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। চলমান সুবিধা বাতিল করে পেনশনের আওতায় নিয়ে আসা হতে পারে।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয় গত বছরের ১৭ আগস্ট। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন। সরকারি চাকরিজীবী ব্যতীত দেশের সকল নাগরিককে এই পেনশন সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক স্কিম চালুর চিঠিতে শিক্ষকদের মাঝে বিরাজ করছে নানা ভয়।
তবে স্কিম চালুতে শিক্ষকদের খুব একটা সাড়া নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। শিক্ষক নেতারা বলছেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাধ্যতামূলকভাবে করার জন্য সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশ নেই। সুতরাং শিক্ষা কর্মকর্তারা কীভাবে বাধ্যতামূলকভাবে স্কিম চালুর নির্দেশ দিচ্ছেন তা বোধগম্য নয়।
আবার বাধ্যতামূলকভাবে পেনশন স্কিম চালু করলে চলমান সুবিধাগুলোর কী হবে তা-ও পরিষ্কার নয়। তাদের ভাষ্য, সরকারের উচিত শিক্ষকদের একটি সুবিধার মধ্যে নিয়ে আসা। চলমান অবসর এবং কল্যাণের সুবিধা বাড়ানো অথবা এগুলো বিলুপ্ত করে পেনশন স্কিম চালু করা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা অবসরের পর এককালীন আর্থিক সুবিধা পান। এর বাইরে অন্য কোনো সুবিধা পান না। তবে অবসরের পর এই এককালীন অর্থ তুলতে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা বোর্ড ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়।
তাই শিক্ষকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সরকার তাদের পেনশন চালু করার চিন্তা করছে। এটি চালু হলে অবসরের পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এককালীন টাকার পাশাপাশি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবেন। এ নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সভাপতিত্বে শিক্ষা প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশন চালুর আলোচনা চলছে। শিক্ষকরা চাকরিজীবন শেষে অবসরের পুরো টাকা একসঙ্গে পাবেন না। অবসরের অর্ধেক টাকা এককালীন পরিশোধ করা হবে। বাকি অর্ধেক টাকা তাদের পেনশন আকারে দেওয়া হবে। পেনশনের টাকা শিক্ষকরা আজীবন পাবেন।
কোনো শিক্ষক মারা গেলে তার মনোনীত ব্যক্তিকে (নমিনি) পেনশনের টাকা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় নিয়ে আসা যায় কি না, সেই বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তিনি আরও বলেন, আমরা শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় নিয়ে আসতে চাই। তবে এই মুহূর্তে বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেই।
পেনশন নিয়ে টেনশন আন্দোলনে নামছেন শিক্ষকরা
দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী ১ জুলাই থেকে যারা নতুন করে সরকারি চাকরিতে ঢুকবেন তাদের জন্য পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।
লেখকের শেষকথাঃ
এমপিওভু্ক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হওয়া শুরু করেছেন। এর আওতায় রয়েছেন বেসরকারি স্কুল, কলেজ, স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের চিঠি পেয়ে তারা তড়িঘড়ি সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গত কয়েকদিনে চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকার বিপুল সংখ্যক এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারারী সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হয়েছেন। গত ১৮ ও ১৯ এপ্রিল চাপাইনবাবগঞ্জ সদর ও গোমস্তাপুরের শিক্ষকরা স্থানীয় সোনালী ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দিয়েছেন। তবে শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, এই টাকা তারা সঠিক সময়ে ফেরৎ পাবেন কিনা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url